ভালোবাসি মা

ভালোবাসি মা

কিছুদিন আগে ফেসবুকেই একটা ট্রল পড়েছিলাম।
ছেলে- তোমায় আমি বিয়ে করে আমার বাসায় রেখে দিব।
মেয়ে- কী আছে তোমার বাসায় যে আমাকে সেখানে নিবে?
ছেলে- আমার বাসায় এসি আছে।
মেয়ে- কবুল, কবুল, কবুল।
সামান্য একটা কৌতুক হলেও নিঃসন্দেহে এর থেকে গরমের ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। তাপমাত্রা কতটা যন্ত্রণাদায়ক হয় তা আর বুঝার বাকি থাকে না।

আমার এক ফেসবুকীয় আপু তার মোবাইলের ওয়ালপেপারে বরফের ছবি সেভ করেছেন যেন মোবাইলের দিকে তাকালেই একটা শীতল অনুভূতি কাজ করে। এই প্রচন্ড গরমে একটু ঠান্ডার পরশ পেতে সবাই কতই না ব্যাকুল!

এইতো সেদিন আম্মু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রেশার প্রচন্ড হাই! মাথা তুলে বসতেও পারছেন না। বিছানায় শুয়ে থাকলেন। এদিকে ঘরে রান্না বান্না কিছুই হয়নি। দুইবোন মিলে ভাবনা চিন্তা করলাম আজ দুইজন মিলে রাঁধবো, সে যাই পারি না কেন। আম্মু শুয়ে থাকলেও চিন্তা করতে লাগলেন যে, মেয়েগুলো কীভাবে কী করবে, তার অকর্মা মেয়েগুলো আবার ডালে লবণ দিতে গিয়ে চিনি দিয়ে ফেলে কি না! হলুদ দিতে গিয়ে মরিচ দিয়ে ফেলে কি না! আপু আম-ডাল রাঁধলো। আমি আবার ফিসফিসিয়ে বললাম, “আপু, তুমি রাঁধতে পারবা তো? না পারলে বলো, আমি নেটে সার্চ দেই।” আপু ফিক করে হেসে দিল। যাই হোক, খুব সাফল্যের সাথে আম-ডাল রাঁধার পাট চুকিয়ে ভাত বসানোর তোড়জোড় শুরু হলো। চাল ধুয়ে চুলায় বসালাম। এটা সেটা আনা নেওয়া, ঘর গুছানো, আব্বুর খেয়াল রাখা, আম্মুর যত্ন নেওয়া, রান্না বান্না সবকিছু করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, মায়েদের এক অসাধারণ ক্ষমতা থাকে। যেখানে আমরা একই সাথে অনেকগুলো কাজ করতে হিমশিম খাই, সেখানে তারা একহাতে দশহাতের কাজ সেরে ফেলে! মানুষ পানিতে গোসল করে আর আমরা দুই বোন আজ ঘামে ভিজে গোসল করেছি। চুলার এতোটা তাপ, যেন তা গায়ে ভ্রমরার মতো হুঁল ফুঁটাচ্ছিল। রোজা রেখে কাজগুলো করতে গিয়ে যেন মাথা চক্কর দিয়ে উঠছিলো। ভাবছিলাম যেখানে এই সামান্য গরমেই আমাদের জিভ বেরিয়ে আসে, তাহলে কীভাবে মায়েরা এতো কষ্ট করে সারাদিন চুলোর ধারে গরম তাপে রান্না বান্না করে, পুরো সংসার সামলায়! এই ক্ষমতা একমাত্র মায়েদেরই থাকে।

তারা বিনা বেতনে শুধু পরিবারের সকলের মুখের হাসি দেখার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যায়। শ্রমিক দিবসে সবাই ছুটি কাটায়, একটা দিন তাদের শ্রমের জন্য সম্মান জানানো হয়। কিন্তু আমাদের মায়েদের তো সামান্য সেই ছুটিটুকুও নেই। তারা শুধু জানে ৩৬৫দিন অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে, আপনদের মুখে হাসি ফোটাতে।

আজ বিশ্ব মা দিবস। দিবসটা শুধু আজকের জন্য নয়, প্রতিটি দিনের জন্য। যেই মানুষটি নিখাঁদ ও নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে আমাদের তরে নিজের সবকিছু বলি দেয়, আমাদের গায়ের চামড়া দিয়ে সেই মানুষটির পায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও ঋণ শোধ হবে না। অজস্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সকল মায়ের প্রতি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত