আমার স্বামী নূর।
আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই বছর।
মোটামুটি সুখের সংসার আমাদের।
আমাদের সংসারে এখনো কোন বাচ্চা আসেনি কারণ আমি কখনো মা হতে পারবো না, নূরের কোন আপত্তি ছিলো না এতে, আমাদের বিয়ে প্রেমের বিয়ে তাই হয়তো ভালোবাসার টানে ও সব মেনে নিয়েছে, তবে আমার ধারণা একদিন ভেঙ্গে গেল, এখন ব্যাপারটা এমন যে “নূর ভালোবাসার টানে আমার সঙ্গে সংসার করছে ঠিকি তবে অন্য কোথাও ওর আরেকটা সংসার আছে এবং সেই স্ত্রী খুব শীঘ্রই বাচ্চার সুখ দিতে যাচ্ছে।
ঘটনাটা জানার পর যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, আমি দ্রুত নূর কে ফোন দিলাম-
– হ্যালো নূর…
– হ্যা বলো..
– অফিস কখন শেষ হবে?
– সন্ধ্যা ৭ টার দিকে, কেন!
– তুমি অফিস শেষ করে দ্রুত বাসায় আসবে, রাখি।
নূর কিছু বলার আগে ফোনটা রেখে দিলাম, সাড়ে সাত’টার দিকে নূর বাসায় আসে, দরজা খুলে দিতেই নূর চিন্তিত কণ্ঠে বলে-
– কি হয়েছে ফাতেমা?
– কি না হওয়ার মত রাখলে?
– মানে!! খুলে বলো…
– তোমার আরেকটা সংসার আছে আমায় বলোনি কেন?
নূর ঘাবড়ে গেল, কপাল ছুঁইয়ে ঘাম পড়ছে, আমি খুব রেগে বললাম-
– তুমি এতটা নিচে নামতে পারলে? ছিঃ
– এতে নিচে নামার কি হলো?
– লজ্জা করেনি একজন স্ত্রী রেখে আরেকজন কে স্ত্রী বানাতে?
– লজ্জা লাগলে তো আর বানাতাম না।
– ছিঃ ছিঃ নূর তুমি এতটা নির্লজ্জ হয়ে গেলে! এসব কথা আমায় এভাবে বলছো?
– তো কীভাবে বলবো? কোলে বসিয়ে চুমু খেতে খেতে বলতো যে “আমি আরেকটা বিয়ে করেছি?”
নূরের কথায় আমি হতভাগ হয়ে যাচ্ছিলাম।
রাগারাগির এক পর্যায়ে নূর ফুলদানী দিয়ে আমার মাথায় জোরে আঘাত করে, আমার কপাল ফেঁটে রক্ত বের হতে থাকে, আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে নূরকে বললাম-
– প্লীজ নূর আমাকে বাঁচাও! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে..
– তুই মর, তুই মরলে আমি আমার পোয়াতি বউকে এই বাসায় এনে রাখবো…
– নূর তুমি বুঝতে পারছো না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে বাঁচাও….
– তোকে বাঁচাবো আমি? দাড়া ওপারে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি…
নূর ওর ভারি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে, আমি ধরপর করে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লাম, চারদিকে তাকিয়ে দেখি খুব অন্ধকার, দ্রুত রুমের লাইট জ্বালিয়ে পাশে তাকালাম, নূর দিব্যি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে স্থীর করে মনে মনে ভাবলাম “এমন ঘটনা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব,বাস্তবে এই লক্ষী ক্যাবলা নূর নাক ডেকে ঘুমাবে নাকি আমার গলা চেপে ধরবে!! ওর বুকের কলিজাই বা কত বড় যে আমাকে রেখে আরেকজন কে বিয়ে করবে!!”
বলেই একটু মুচকি হেসে দিলাম।
নূর একটু নড়েচড়ে উঠে বললো-
– কি গো বউ, লাইট জ্বালানো কেন? ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে তো..
– এখনি বন্ধ করছি, তুমি শান্তিতে ঘুমাও…
মনে মনে ভাবলাম বাঁচা গেল!
এটা শুধুই স্বপ্ন ছিল!