অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি,বউ বললো, এই শোন,একটু কষ্ট করে আমাকে একটা বেবিচেক এনে দিয়ে যাবে?
আমি কথাটা শুনে প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম, তারপর ইয়াহু বলে চিৎকার দিয়ে বউকে কোলে তুলে নিলাম।
বউ অবাক হয়ে বললো, কি ব্যাপার পাগল হয়ে গেলে নাকি?
বিয়ে করেছি পাঁচ বছর, বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখা হয়নি। বাংলাদেশের যত বড় বড় ডাক্তার আছে, সব দেখা হয়ে গেছে,কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নষ্ট। এমন কোন টেস্ট নাই যা ডাক্তার করায় নি,এমনকি নাক কান গলার টেস্ট ও করিয়ে ছেড়েছে, কি জানি যদি ওখানে কোন সমস্যা থেকে থাকে!
আমার এক কলিগ মিজান কথায় কথায় ইন্ডিয়ার উদাহরণ টানে, একদিন একা পেয়ে বললো, মিয়া ইন্ডিয়া যাও,ওখানে গেলেই দেখবা ডাক্তার চিকিৎসা করে গড়গড় করে বাচ্চা বের করে দিচ্ছে, বাংলাদেশের ডাক্তার কোন ডাক্তারই না,ওদের উচিত ছিল কসাই হওয়া, ভুল করে ডাক্তার হয়ে গেছে। আহা! ইন্ডিয়ান ডাক্তার কত মোলায়েম করে কথা বলে, শুনলেই ঘুম এসে যায়!তুমি মিয়া ছুটি নিয়ে ইন্ডিয়া চলে যাও,চেন্নাই গিয়ে এক মাস ঘুরে আস, আসার সময় কোলে করে বাচ্চা নিয়ে আসতে পারবা।
আমি বললাম, ভাই এক মাসে বাচ্চা! কেমনে কি? ওরা কি রেডিমেড বাচ্চা পয়দা করে দেয়?
মেয়ে কলিগ ফরিদা বললো, মাজারে মানত করেন,কাজ হবে। আমার খালাতো বোনের কাজ হয়েছে।
অন্য কলিগ রহমান বললো, ভাই, টোটকা চিকিৎসা করেন,এতে কাজ হবে। টোটকা চিকিৎসা হচ্ছে আসল চিকিৎসা।
আরেক কলিগ ফরিদ আড়ালে ডেকে নিয়ে কানে কানে বললো, ভাই মিজানের কথা বিশ্বাস করবেন না, ঔ ব্যাটা ইন্ডিয়ার দালাল। কবিরাজি চিকিৎসা নিয়েছেন কখনও? এতে ভালো ফল দেয়, আমার এক দূরসম্পর্কের আত্বীয়ের কাজ হয়েছে। মানিক গঞ্জে একজন ভালো কবিরাজ আছে, আমি ঠিকানা দিচ্ছি, কালই ভাবীকে নিয়ে চলে যান,কাজ হবে ইনশাল্লাহ!
বাংলাদেশের লোকজন যে ডাক্তার কবিরাজ সম্পর্কে এতো কিছু জানে তা আমি জানতামই না। কবিরাজ আমার দুই চোখের বিষ, আমর ধারণা মূর্খ, গরীব এই টাইপের লোকজন কবিরাজি করে।সবই ধান্ধাবাজি। আজ পর্যন্ত কোন ভালো শিক্ষিত কবিরাজ আমার চোখে পড়েনি।
প্রতিদিন ফরিদ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে,ভাই কবিরাজ দেখান,অনেক কামেল কবিরাজ, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, বিফল হবেন না।
অনিচ্ছা সত্বেও একদিন সকালে বউকে নিয়ে মানিকগঞ্জ রওনা হলাম। অনেক কষ্টে কবিরাজ বাড়ি বের করলাম।
বেশ কামেল কবিরাজ মনে হচ্ছে, প্রচুর লোকজনের আনাগোনা। ডাক্তারদের মতো সিরিয়াল নিতে হয়।তার হাদিয়া বেয়াল্লিশ টাকা চার আনা।একজন লোক বারবার বলছে, চারআনা ভাংতি নিয়ে আসবেন, কমবেশি হাদিয়া দিলে কাজ হবে না।
এক ঘন্টা পর আমার সিরিয়াল আসলো, আমি তার আস্তানায় ঢুকলাম। সত্তর বছরের একজন বৃদ্ধ লোক।খুকখুক করে কাশছে,হাঁপানি রোগ আছে মনে হয়। দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ।
তিনি কাশতে কাশতে বললেন, বলুন, আপনার কি সমস্যা?
আমি বললাম, আমার সমস্যা পরে বলি, আগে কাশি থামান,আপনার তো দেখি মহা সমস্যা,কাশতে কাশতে তো যে কোন সময় অক্কা পেয়ে যাবেন, আগে ঝাড় ফু দিয়ে নিজের রোগ ভালো করুন, তারপর আমার চিকিৎসা করুন।
লোকটা রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, কবরে যাওয়ার আগে এসব ভণ্ডামি ছাড়ুন। নইলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেব। বউ কবিরাজের হাত থেকে পানি পড়া নিয়ে আমাকে জোর করে বাইরে বের করে আনলো।
আজ বউ যখন বেবি চেকের কথা বললো, তখনই খুশিতে মনটা নেচে উঠলো, তাহলে কি কবিরাজের পানি পড়া কাজ দিচ্ছে? বেবি চেক কিনে দিয়ে অফিসে চলে এলাম।মনটা বেশ ফুরফুরা লাগছে।
খুশি মনে কাজ করছি, সবাই আমাকে দেখে অবাক হচ্ছে, কলিগেরা এতো খুশির কারনও জানতে চাইছে।মনে মনে ভাবছি, আহা! কবিরাজের সাথে খারাপ ব্যবহার না করলেও পারতাম।
দুপুরে লান্ঞের পর বউ ফোন করে বললো, এই আমার আলট্রাসনো লাগবে।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না,বউয়ের ফোন পেয়ে সবার সামনেই ইয়াহু! চিৎকার দিয়ে উঠেছি।সব কলিগ ছুটে এসে বললো, ভাই, কি হয়েছে?
ফরিদকে জড়িয়ে ধরে বললাম, বউ আলট্রাসনোর কথা বলেছে!
ফরিদ, বললো, ভাই, দেখেছেন কবিরাজের কেরামতি? আপনি তো বিশ্বাস করতে চাননি! আমাদের খাওয়াতে হবে।
বসের থেকে ছুটি নিয়ে সব কলিগ মিলে তখনই ছুটলাম চাইনিজে।আজ আমি দিল দরিয়া, যে যা খেতে চায় সব খাওয়াবো।
চাইনিজ শেষ করে তখনি ছুটলাম বাসায়। দরজা খুলতেই বউকে পাঁজা কোলে তুলে নিলাম। বউ তো অবাক, কাহিনী কি?
বউকে কোলে রেখেই বললাম, রেজাল্ট কি?
বউ অবাক গলায় বললো, কিসের রেজাল্ট?
বেবি চেকের।
আরে, বেবি চেক তো আমার জন্য না,ওটা পাশের ফ্লাটের ভাবির জন্য।ভাই বাসায় নাই তাই আমাকে এসে বলল,,,,
তবে যে আলট্রাসনোর কথা বললে?
আরে গাধা! আলট্রাসনোর কথা বলি নাই,আলতা স্নোর কথা বলেছি, স্নো শেষ হয়ে গেছে, আমার পায়ের পাতা ফেটেছে, আলতা দিলে নাকি ফাটা ভালো হয়ে যায়।
ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেখি বউ আমার হাত ফসকে নীচে পড়ে কোঁকাচ্ছে।