‘ও মৌ
তুমি জানো না যে মাঝরাতে
একঘেয়ে এই বিছানাতে
আজও কথা বলি কার সাথে
জানি না কার কী যায় বা আসে তাতে
তাই গান গাই রাস্তাতে
আর ভুলে যাই পস্তাতে
জীবন….’ গলা দিয়ে রক্ত উঠে এলো অনিন্দিতার।টলমল পায়ে ছাদ থেকে নেমে আসলো।মেজাজ খিটখিটে লাগছে।শরীর খারাপ বেশি হলেই ও একেবারে বদমেজাজি হয়ে ওঠে।ভয়াবহ বিরক্ত লাগে।রুমে এসে নির্জিবের মতো মেঝেতেই শুয়ে পড়লো।তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে।
-অনি
–
-অনিপু
–
-এই অনি
অনিন্দিতার মনে হলো সমুদ্রের ওপার থেকে ডাকটা আসছে।মেঝেতে শোয়ার জন্য পিঠ ব্যথা হয়ে আছে।টলতে টলতে উঠলো। মাঝরাতে ডাকাডাকি।উহ! দরজা খুললো।পাশের ফ্লাটের মেয়েটি।ফারিয়া।অনিকে বড়বোনের মত দেখে।
-নির্জন টেক্সট করছে।আন্সার দিয়ে দাও।
নির্জন অনির বেস্ট ফ্রেন্ড। ফারিয়া আর নির্জন রিলেশনশিপে আছে।
-কয়টা বাজেরে?
-সাড়ে দশটা।
-সকালে আসিস।
-এখন তো সকালই।রুম আন্ধার করে রাখলে বুঝবা কেমনে।
অনি বুঝলো এক ঘুমে রাত পার করেছে ক্লান্তিতে।
ফোন হাতে নিয়ে টেক্সট করলো।
-শোনো
-বলো
-আমি আজ থেকে তোমাকে একটা নামে ডাকবো।নির্জন নামে তো সবাই ডাকে তোমাকে।আজ থেকে তুমি ‘অনুরাগ’। আমার ‘প্রিয় অনুরাগ অনুবর ‘।
-তুমি আমার অনুমনা।
অনি ফোন ফেরত দিলো।
-কি হইলো?
-ঠিক আছে।
-ইশ! অনিপু। তুই না থাকলে যে কি হইতো!
-যা তো।ঘুমাবো।
-উঁহু। তুমি না বলছিলা আজ ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট আছে। যাও।দেখায়ে আসো।
-যাই
অনিন্দিতা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেলো।
অহনের সাথে অনি একটা এগ্রিমেন্ট ভিত্তিক রিলেশনশিপে আছে। সেইটা নিয়ে ওর কোনো আফসোস নেই। অহন আছে এইটুকুতেই ও খুশি। নির্জনের মাঝে মাঝে রাগ হয়।মাঝে মাঝে অবাক হয়। একটা মানুষ এতটা ভালোবাসতে পারে! অহন নির্জনেরও বন্ধু। দুজনই ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে।আজকে অনির বাসায় যাওয়া হবে।একসপ্তাহ ধরে প্ল্যান প্রোগ্রামিং হয়েছে। ঠিক হলো সবাই ভার্সিটি থেকে মোহাম্মদপুর আসবে। তারপর একসাথে চলে যাবে বাসায়।
অনিই আগে বেরিয়েছে ভার্সিটি থেকে। অহন যখন অনিকে দেখলো তখন ও কয়েকটা টোকাই ছেলেমেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। কাছে যেয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো তিনজনকে আঙুর ভাগ করে দিচ্ছে। মজা পেলো অহন। মেয়েটা পাগলি আছে খানিকটা।
-নিরু কই?
-আছে তো
-চলো
অনি অহনের হাত ধরে ফেললো বেখেয়ালে। অনিন্দিতা জানে অহন কিসে বিরক্ত হয়,কিসে রাগ হয়। পারতপক্ষে সেই কাজ গুলো করে না ও।নিরুকে বিকাশের দোকানে পাওয়া গেলো।
-কিচ্ছে রে পোলা?
-কি নিয়ে যাবো বলতো?
-ফাইজলামি করিস না বাপ।চলতো।
বসিলা ব্রিজে ওঠার সময় একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে,ব্রিজ থেকে দেখা যায়।অনি একভাবে তাকিয়ে রইলো। কৃষ্ণচূড়া অনির প্রিয় ফুল।
রাতের খাওয়া করে তিনজনই ছাদে চলে গেলো। অনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো অহন।
নির্জন বলেই ফেললো,
-অনি
-বল
-আমার একটা অনি নাই
-পিচ্চি আছে
-তা আছে।কিন্তু অনি তো নাই।
এটা সেটা গল্প করতে করতে লেখা নিয়ে কথা উঠলো। অনি,অহন,নির্জন তিনজনই টুকটাক লেখালেখি করে।
বই নিয়ে কতক্ষন কথাবার্তা হলো। অহন আচমকা নির্জনকে বললো,
-তোর সমস্যা কি জানিস নিরু?
-কি?
-তুই তোর সমস্যাগুলো নিজের মধ্যে চাপায়ে রাখিস।
নিরু মনে মনে বললো ‘পিচ্চি তো বোঝে না বললেও।’
অনি গুনগুন করে গাচ্ছিলো’পাপড়ি কেনো বোঝেনা ‘ । নিরু বললো,
-গানটা গা তো অনি
অনি গাইলো অহনের সাথে
‘তুমি আমি কেনো দূরে দূরে
খুঁজে বেড়াই ঘুরে ঘুরে
মন কি যে চায়
কাঁদে শুধু বেদনায়
পাপড়ি কেনো বোঝেনা
তাই ঘুম আসে না’।
আচমকা একটা বিষণ্ণতা ঘিরে ধরলো ওদের। চারটা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ওরা ঘুমুতে গেলো।
বসিলা ব্রিজের গোড়ায় মদিনা ফার্মেসীতে গেলো অনি।ওকে দেখে ফার্মাসিস্ট লোকটি হাসলো।
-কি অবস্থা আম্মু?
-এইতো আংকল।প্রেশার মেপে দিন।
-রোজা ছিলে?
-আজ ছিলাম না
প্রেশার দেখলো। আশি বাই পঞ্চাশ।পালস লো।
-আম্মু মেডিসিন নিচ্ছ ঠিকমতো?
-হ্যা
-মাছ, ডিম, দুধ খাচ্ছ?
-হ্যা
-ওয়েট দেখি
অনি ওয়েট মাপলো।ষাট। ফার্মাসিস্ট লোকটি গম্ভীর হয়ে মাথা ঝাঁকালো।মেয়েটি খুব দ্রুত ওয়েট লস করতেছে।একমাস আগেও ছিলো পঁচাশি।
-তুমি কি তোমার ডাক্তারের সাথে কথা বলেছো?
-হ্যা
-রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন গুলো দেখি।
অনিন্দিতা বের করে দিলো।
ফার্মাসিস্টের চোখ কপালে উঠলো। মাই গুডনেস!মেয়েটার পুরো শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেছে। এই মুহূর্তে মেয়েটার দরকার কমপ্লিট রেস্ট। অথচ গুট গুট করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর যে প্রেশার। এই লো প্রেশার নিয়ে ঘুরতেছে। এই মেয়ে কি মানবী নাকি দানবী?
-আম্মু, তুমি নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও ঘাপলা রেখেছো।
অনি হাসলো।
-আংকল, আমি ইনোসেন্ট ।
ফার্মাসিস্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেয়েটা বড় হলেও বয়স বাড়ে নি। আসলেই ইনোসেন্ট। কেন যে ক্যান্সারের মত রোগটা মেয়েটারই হলো!
‘এখন তো আমি অন্ধ হয়েছি
তোমারি বিরহ তরে।
যারে যা উড়ে যা পাখি তারে বলে যা
সে যেন আমারে কখনো ভোলে নারে
যারে যারে যা। ‘
গানটার লিরিক্স ভুল হচ্ছিলো বারবার। নেটে সার্চ দেবে ভেবে ফোন হাতে নিলো অনি। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।নেট নেই।নক করলো নির্জনকে।
-একটা হেল্প কর না মনা
অনলাইন দেখাচ্ছে। অথচ পাঁচমিনিট পার হওয়াতেও মেসেজ সিন না হওয়ায় অন্য একজনকে নক দিলো ।অনির আইডিটা নতুন খোলা। দুই একজন ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। ফ্রেন্ডও কম। আফনান হিল্লোল।ছেলেটার সাথে আগে পরে কখনো কথা হয় নি।নক দিলো।
-শুনুন
দুই মিনিট পর রিপ্লে এলো।
-বলুন
-আমার একটা হেল্প করবেন?আমার এখানে নেট পাচ্ছে না। যারে যা উড়ে যা বাই হাসান গানটার লিরিক্স সার্চ দিয়ে কপি করে দেবেন?
-একমিনিট
দুমিনিট পরেই লিরিক্স পাঠিয়ে দিলো হিল্লোল।
-অনেক ধন্যবাদ হিল্লোল
-সর্বদা স্বাগতম
এতক্ষনে নির্জন টেক্সটের রিপ্লে দিয়েছে।
-বল
-তুই কি ব্যস্ত এখন অফিসে?
-একটু।অফিসে না।বাসাতেই।কিন্তু অফিসের কাজ করতে হচ্ছে।
-আচ্ছা।
-শোন। পিচ্চির ফ্রেম কি রেডি?
-না। প্যারিস প্লাস্টারের কাজ করিনি।
-একটা বিকাশ নাম্বার দিস।
-থাব্রা চিনস?
-না। চিনবার চাই।
-কাজ কর।রাতে খাওয়া করে নিস।
-আচ্ছা।
নির্জনের কয়েকদিন ধরেই খটকা লাগছে একটা বিষয় নিয়ে। পিচ্চি যে টাইপের কথাবার্তা বলে, সেইটা আসলে ওর সাথে যায় না। কেন জানি মনেহচ্ছে কোথাও একটা ঘাপলা আছে। মেসেঞ্জার টুংটাং করে উঠলো নির্জনের।রুদ্রভাই মেসেজ করছে।
-কাকা।কি অবস্থা?
-হারামজাদা। অনির সমস্যা কি?এক মাস আগে মেয়েরে চকলেট আর পোর্টেট দিয়ে আসছি তাজুরে পৌঁছায়ে দিতে। মাইয়া গেসে কই?আইডি ডিএক্টিভ।
-ও অসুস্থ কাকা। আর আগের আইডিটা ডিজেবল করে রাখছে কিছুদিনের জন্য।
-আচ্ছা শোন।মাইয়ারে দ্রুত সুস্থ কর।আমি ঢাকায় এসে যাবো কিন্তু ওর বাসায়।
-আচ্ছা
নির্জন অনিন্দিতাকে নক করলো,
-ঘুমাস নাই?
-আরে ঘুম। প্যারায় আছি।কাল এক্সাম। তুই খাইছস?
-হ।তুই?
-হ
-সত্য কথা?
-এক্কেরে
-তরে লাইথামু অনি। খাওয়া করে মেডিসিন খেয়ে নে।
-খাইছি। ঘুমা তো ব্যাডা।
-তুই ঘুমা। আমি রাতে ডেকে দিবনে তিনটায়।
-আচ্ছা
অনি অফলাইন হয়ে গেলো।নির্জন ভাবতে লাগলো পিচ্চিকে নিয়ে।
কিছু একটা ঘাপলা আছে তো বটেই।
-অনি
-বল মনা
-আজকে আসতেছি।পিচ্চি আসতে বলছে ।
-আচ্ছা
অনি ক্লাসে যাওয়ার আগে বাড়িওয়ালী খালাকে বললো ‘খালা গেস্ট আসবে। রান্না করিও।’
তিনটার দিকে অনিকে ফোন করলো নিরু।
-কই তুই?
-ইয়ার।ফাঁইসা গেছি মাইনকার চিপায়। বাসায় চইলা যা তোরা।
-চাবি?
-অহনের কাছে আছে।
-আচ্ছা
অনি জানে অহনের কাছে বাসার চাবিটা নেই। তাই এক্সট্রা চাবি দিয়ে এসেছে ফারিয়ার কাছে।
নির্জন ছাদে বসে আছে। অনি আর অহন গেছে নীচে। ওরা একসাথে থাকলে ঘুমানো হয় কম।সারারাত ছাদে বসে আড্ডা হবে এটা নিপাতনে সিদ্ধ। আর রোজার মাস। একেবারে সাহরী করে ঘুমায় অধিকাংশ রাতখোরই। দুজন নীচে গেছে নুডলস করতে। অনির ফোনটা নিরুর পাশেই আছে। কি মনে করে ফোনটা হাতে নিলো ও।লক খোলা। ডাটা অন দেখাচ্ছে।একটা মেসেজ আসলো নিলাশা জান্নাত আইডি থেকে। পিচ্চির আইডিতে তেমন কোনো কিছু খুঁজে পায়নি নির্জন। ইগনোর করতে যেয়ে মেসেজটি সিন হয়ে গেলো। নির্জনের বুকে ঘুষির মত লাগলো। ও মাত্রই ফারিয়াকে যে মেসেজ দিয়েছে সেটার স্ক্রিনশট দিয়ে লেখা ‘অনি, কি উত্তর দেবো? ‘ দ্রুত হাতে সব গুলো মেসেজ দেখলো নির্জন। যে আইডি দিয়ে পিচ্চি নির্জনের সাথে কথা বলে সেটাও চেক করলো। যা ভেবেছে। পিচ্চি অনিকে মেসেজ করেই ডিলিট দেয়। নির্জন স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলো।
-অনুরাগ, খাওয়া করসো?
খাওয়া শব্দটা অনি ব্যবহার করে।
-অনু, ভালোবাসি তো। আমি আছি তো।
এই কথা গুলো অনি বলে।’দোস্ত, চিন্তা করিস না।আমি আছি তো।’
-তুমি কি ক্লাসে?
অনি জানে ওর ক্লাস শিডিউল।রুটিন চেয়ে নেয়।
ওর মন খারাপ হলে অনি কথা বললেই বুঝতে পারে।
নির্জন পাজলের টুকরোগুলো মিলিয়ে ফেললো। এতদিন ওর অনুভূতিগুলো আসলে অনিন্দিতাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। পিচ্চিকে না। নির্জন বরাবরই ওর অনুভূতিকে প্রাধান্য দেয়। আর সেই অনুভূতি কিনা অনিকে ঘিরে!
-কি রে! তোর কি শরীর খারাপ?
নির্জন ভ্যাবলার মত উঠে বসলো।
-এইভাবে শুয়ে আছিস কেন?
-তোরা ছিলিস না। তাই।
-আহা! তোর পিচ্চিরে ডাকলেই পারতিস।
নির্জনের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো ‘আমার পিচ্চি তো তুই।পিচ্চিকে সামনে রেখে কেয়ার করেছিস তুই। আমার অনুভূতিই তো তুই অনিন্দিতা।’
কয়েকটাদিন প্রচণ্ড টালমাটাল গেছে নির্জনের। অনুভূতির ব্যবচ্ছেদ নিয়ে ও বড্ড বিধ্বস্ত ছিলো।অনি ঘুরে ফিরে এসেছে ওর সামনে। নির্জন অনির বাসায় চলে এলো।
আজ অহন নেই। নির্জন অনি সামনা সামনি।
অনির মনে কি একটা কুডাক ডাকছে । হৃদয়ে প্রচন্ড রকমের কাঁপুনি।
নির্জন চুপচাপ। কিছু বলছে না। ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে অনির। সব সময় কথা বলা চঞ্চল নির্জন এতটাই শান্ত যে তার পায়ের নিচের মাটিও আজ বুঝছে না নির্জন দাঁড়িয়ে আছে।
-নির্জন!
প্রচন্ড কষ্ট চেপে হাসিমুখে বললো,
-হু
-তুই কি অসুস্থ?
-না তো!
-কিছু বলছিস না। আজ একদম চুপচাপ যে?
-না, এমনি।
প্রশ্নের উত্তরের বাইরে একটা বারতি কথাও আজ বলছে না নির্জন।এমনি সময়ে একটা কথা পেলেই বকবকিয়ে মাথা ধরিয়ে ফেলে ছেলেটা।
-কিছু জরুরী কথা বলবি বললি যে?
-হ্যা।
-তো বল?
-তোর কি খুব তাড়া আছে?
-না না। তা না! কিন্তু তোর সাথে চুপচাপ থাকায় অভ্যস্ত নই তো তাই খারাপ লাগছে।
-আচ্ছা শোন!
-হ্যা বল।
-আমার ভিসা কমপ্লিট
আকাশ থেকে পড়লো অনি।
-মানে টা কি?
-মানে আমার কানাডার ভিসা কমপ্লিট।
-কার ভিসা? কিসের ভিসা!?
-আরে পাগলী শোন। বলা হয় নি তোকে। কেউই জানতো না ব্যাপারটা। অনেক আগেই ভিসার জন্য এপ্লাই করেছিলাম। দেশের যে অবস্থা! আব্বু আম্মু চায় না আমি দেশে থাকি।
-তুই একবার জানাতে পারতিস! তুই এভাবে চলে যেতে পারিস না নির্জন।
-চুপ কর পাগলী। দূরদেশ হলেই দূরদেশি হয় না। মনের কোনে রয়েই যাবো দেখিস।
-কিন্তু তোর কাছে আমরা থাকলাম না তো।
-থাকবি তো, আছিস তো!
কথা শুনে এই মুহুর্তে প্রচুর অপরাধী মনে হচ্ছে অনির। এর ক্ষমা করা নির্জন তো দূরে অনি নিজেই কি নিজেকে পারবে?
-পিচ্চির কি হবে?
-কোন পিচ্চি? আমার মনের পিচ্চি নাকি কথিত পিচ্চি?
-মানে?
-বুঝেও বুঝবি না। বোঝাতেও পারবো না।
-একটু বোঝায় বল মনা।
-আজ উঠি রে। এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবি আমার সাথে কাল?
-মানে কাল তোর ফ্লাইট?
-হ্যা!
-মনা তুই…
কথাটা শেষ না হতেই নির্জন হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো অনির। গুনগুণিয়ে বললো ‘অনুরাগ, আমি প্রিয় অনুরাগ।’
আর কোন কথা বলার সুযোগ পেলোনা অনি।
চলে গেছে নির্জন দ্রুত পায়ে, অনেকটা দূরে।
রাতে মেসেঞ্জারে সময় জানতে চেয়ে অনি মেসেজ করলো।
সময়টা জানিয়ে দিল নির্জন।আর ফারিয়া যেন এ ব্যাপারে না জানে তার কড়া একটা মেসেজ।
প্লাটফর্মে অনি অহন নির্জন রুদ্র।
অনি আজ অহনের হাত ধরে কিংবা অহনের পাশে দাঁড়ায় নি। কোন এক অজানা অনুভূতিতে নির্জনের পাশে দাঁড়িয়ে নির্জনকে নির্দেশনা দেয়ায় ব্যস্ত।
নির্জন এক নয়নে তাকিয়ে অনির সব কথা শুনছে। মনের মধ্যে শুন্যতা টা বেশ অনুভব করছে! নির্জনের ইচ্ছে করছে অনি বলুক ‘নির্জন যাস না প্লিজ। ‘ ও থেকে যাবে। চন্দ্রিমা উদ্যান রোডের কৃষ্ণচূড়া ছাওয়া রাস্তায় ওদের একসাথে হাঁটা হয়নি এখনো।
এনাউন্স হলো। ফ্লাইটে উঠতে হবে নির্জনের ।
শেষ বিদায় সবার থেকে নিলেও একজনের থেকে নেয়া হলো না। সে অনুভূতিহীন, অন্যের অনুভূতিতে নির্ভরশীল।
শেষ বারের মত অনিকে একবার ছুঁয়ে নিলো নির্জন। হাতে দুটি চিরকুট দিয়ে বললো ‘একটা ফারিয়ার একটা তোর পিচ্চি।’
নির্জন চলে গেছে।অনি ফারিয়া অহন রুদ্রের থেকে অনেক দূরে।
অনি ছাদে একা একা বসে আছে হাতে নির্জনের দেয়া চিরকুট।পাশে ছাদের দখলদার কাকেরা।
চিরকুটটা কাঁপা কাঁপা হাতে খুললো অনি।
অশ্রুঝরা নয়নে তাকিয়ে পড়ছে।
‘অনি, আমাকে যে বুঝতে পারে সে আমার কিংবা আমি তার সাধ্যের বাহিরে। ভালোথাকিস পিচ্চি ভালো থাকবে তোর অনুরাগ।’।।