বাইরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির সাথে থেমে থেমে চলছে বজ্রপাত। এর মধ্যে চলছে লোডশেডিং। বৃষ্টি আর লোডশেডিং এর কারনে সারা এলাকা ভুতুড়ে অবস্থা।
বাসর ঘরে তন্নী বসে আছে। ঘরের এক কোনে টেবিলের উপরে এক টা মোমবাতি জ্বলছে। বাতাসের দাপটে সেই মোমবাতি নিভে যায় যায় অবস্থা। সেইসব কোন দিকেই তন্নীর খেয়াল নেই। সকালে বাসা থেকে পালিয়ে সে আজ মাহমুদকে বিয়ে করে ফেলেছে। মাহমুদের বাবা মা তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু তন্নীর বাবা কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে রাজি নন। বিকেলে দুই বার তন্নী তার বাবাকে ফোন করে। দুইবার ই তিনি এক কথা বলে ফোন রেখে দেন, “যার সাথে গিয়েছো তার সাথেই ভাল থাকো। আমাদের সাথে যোগাযোগের আর কোনো চেষ্টা করবে না। যে মেয়ে বাপের মানসম্মান এর চিন্তা করে না তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই।” বিকেল থেকে তন্নীর কানে শুধু তার বাবার কথাগুলি বেজে যাচ্ছিল। বুকের ভেতর থেকে ঠেলে আসা কান্না আড়াল করতেই সে বার বার ফুঁপিয়ে উঠছিল।
পুরো বাড়ি জুড়ে আজ মোমবাতি একটাই ছিল।বাসায় আইপিএস থাকার কারনে আর মোমবাতি কিনে রাখা হয় না। বিকেল থেকে লোডশেডিং এর কারনে আইপিএস এর চার্জ ও ফুরিয়ে এসেছিল। বাসর ঘরের একমাত্র নিভু নিভু মোমের আলোতে ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে উঠা নববধূ তন্নী তার বর মাহমুদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। মিনহাজ সাহেব ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে একটু কাশলেন। এরপর তন্নীকে বললেন, — “বৃষ্টির কি অবস্থা দেখেছো,বৌমা? আজ মনে হয় সারারাত ই বৃষ্টি হবে!” তন্নী কিছু বলল না। মাথা নিচু করে বসে রইল। মিনহাজ সাহেব আবার বলে উঠলেন, “ইয়ে বৌমা, একটু চা বানিয়ে খাওয়াতে পারবা? তোমার শাশুড়িকেই বলতাম বানানোর কথা কিন্তু সে এখন শুয়ে পড়েছে। চা বানানোর কথা বললেই আবার তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে।”
শ্বশুরের কথা শুনে তন্নী বেশ অবাক হল। এ বাড়িতে সে পা রেখেছে মাত্র ১০ ঘন্টা আগে। এ বাড়ির মানুষদের ই এখনো সে ঠিকমতো চেনে না। রান্নাঘর, চায়ের কেটলি, চা চিনি সে কই খুঁজবে? চা ই বা কিভাবে বানাবে? তন্নী বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “অবশ্যই পারবো, বাবা। আপনি শুধু আমাকে রান্নাঘরটা কোনদিকে তা বলে দিন।” মিনহাজ সাহেব খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললেন, “আসো বৌমা, দেখিয়ে দিচ্ছি আমি সব। দাঁড়াও মোমটা সাথে করে নিয়ে নেই!” এই বলে মিনহাজ সাহেব মোমবাতি হাতে করে রান্নাঘরের দিকে এগুতে লাগলেন। তন্নী শ্বশুরের পেছন পেছন চলতে লাগল, আর মনে মনে বলতে লাগল, “মাহমুদ , তুমি কই?” তন্নী কেটলিতে চায়ের পানি চুলায় দিয়েছে।
মিনহাজ সাহেব পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মোমবাতি হাতেই। যেন মোমটা কোথাও রাখলে একনিমিষেই নিভে যাবে। তন্নী মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “আমার অবুঝ ছেলের কান্ড দেখেছো? নতুন বউ রেখে সেই সন্ধ্যাবেলা বের হয়েছে,আর এখন বাজে রাত প্রায় ১১টা, কোনো খবর নাই। এইরকম একটা অবুঝকে কি দেখে যে তুমি পছন্দ করলে, তাই ই আমার মাথায় আসেনা।” তন্নী কোন উত্তর দিল না। তার কেবল বুক ফেটে কান্না বাইরে বের হয়ে আসতে চাইলো।
মিনহাজ সাহেব আবার বলে উঠলেন, “বৌমা, চা কিন্তু ২ কাপ বেশি বানাইও! ” অবাক হয়ে তন্নী বলল, “২ কাপ বেশি কেন, বাবা??” মিনহাজ সাহেব কিছু বলার আগেই দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হল। মোমবাতি হাতে নিয়েই মিনহাজ সাহেব দরজা খুললেন। পেছনে ছিল তন্নী। তন্নী দেখতে পেলো, বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেছে মাহমুদের। তার সাদা পাঞ্জাবী শরীরে লেপ্টে আছে। মাথার চুল বেয়ে অনবরত পানি গাল বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। সেই পানি সে তার বাম হাত দিয়ে মুচ্ছছে আর ডান হাত দিয়ে আশ্রাফের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির মাথার উপর একটি ছাতা শক্ত করে ধরে আছে। মিনহাজ সাহবের হাতে থাকা মোমবাতির আলোতে মাহমুদের পাশে থাকা লোকটিকে তন্নী দেখতে পেলো।
দেখা মাত্রই সে ছুটে গিয়ে লোকটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে উঠলো, “বাবা!” লোকটি তন্নীর মাথায় আদর করে হাত বুলাতে লাগলেন আর কান্নাজড়ির কন্ঠে বললেন, “এই পাগলটা আমাকে না নিয়ে আসবেই না। সন্ধ্যা থেকে পা ধরেই বসে ছিল। এতদিন শুধু আমার একটা পাগলী মেয়ে ছিল, আজ থেকে আর একটা পাগল ছেলেও কপালে জুটল!”
( বিয়ে মানে দুজনের খুশি না।।তার মধ্যে দুটি পরিবারের সাথে সম্পর্কিত সকল মানুষের খুশি জড়িত থাকে। আর বাসর রাত হলো প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রত্যাশিত রাত।।আমাদের জীবনের প্রথম ভালোবাসার রাত।তার মধ্যে যদি বাবা মায়ের দোওয়া না থাকে তাহলে জীবন কিভাবে সুখের হবে।। ভূল তো ছেলে মেয়েরাই করে।।বাবা মা ক্ষমাও করে দেয়।। যদি ক্ষমাটা চাওয়ার মতো চাওয়া হয়।।)