“আপনাকে উপর থেকে বেশ ভালো মানুষই মনে হয়। আপনি কি আসলেই ভালো মানুষ?”
বিছানা গোছাচ্ছিলাম। কেরোসিন তেলের বাতিটা টিমটিম করে জ্বলছে। আসার পথে যতটুকু লক্ষ করেছি এই গ্রামে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ হয়নি এখনো। এক তো নতুন জায়গা তার উপরে গোছ-গাছের একটা ব্যাপার আছে। আর তাছাড়া আসতেও একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো স্টেশনে নেমে কোনো ভ্যান রিক্সা পাচ্ছিলাম না বলে। স্টেশনে থাকা পর্যন্ত বুঝতে পারিনি এর কারণ; তবে হ্যাঁ অনেক কষ্টে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে যখন আসলাম তখন বেশ ভালো মতই টের পেয়েছি।
আগে থেকেই আমাকে ঠিকানা দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমি যে ভদ্রলোকের বাড়িতে থাকবো কিছুদিন তার সাথে এর আগে আমার টেলিযোগাযোগ হয়েছে কয়েকবার। তিনি আমাকে সেইদিনই বলে দিয়েছিলেন স্টেশনে নেমে তার নাম বলি যেন তবে যেকোনো ভ্যান কিংবা রিক্সাওয়ালা চিনতে পারবেন । নাম বলাতে চিনতে তো পারলো কিন্তু যেতে রাজি হলো না। ভদ্রলোক আরও বলেছিলেন আমি যেন রিক্সাওয়ালার হাতে বিশ টাকা ধরিয়ে দিই, কিন্তু আমাকে আজ চুক্তি করতে হলো পঞ্চাশ টাকা দিয়ে।
দীর্ঘ ১ ঘন্টার পথ পাড়ি দেওয়ার পর ভ্যানওয়ালা জানালো, বাবু চলে এসেছি। ভ্যানওয়ালার কথায় তার দেখিয়ে দেওয়া বাড়ির দিকে তাকালাম। বড় বাড়ি, বেশ ভালো করে সাদা চুন দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। আশে পাশে কাউকে দেখছিলাম না কাকে প্রশ্ন করি কাকে প্রশ্ন করি এই নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেলাম। কিন্তু এই চিন্তার অবশান ঘটলো ভ্যানওয়ালার অারেক কথায়,
-বাবু চলুন আপনাকে বাড়ির ভেতরে রেখে আসি। বেশ বড় ব্যাগ দেখছি একা নিতে পারবেন না।
-তা বেশ তো । তবে আরও দশ টাকা বাড়িয়ে দিবো।
আমার কথাটা শুনেই ভ্যানওয়ালা মুখ দিয়ে একটা চ্যাৎ চ্যাৎ ধরনের শব্দ করে বললো,,
-না না বাবু এমনিতেই বেশি নিয়েছি আর নিবো না। চলুন দিয়ে আসি।
আমিও আর কথা বাড়ালাম না। বাড়ির সদর দরজার সামনে এসেই ভ্যানওয়ালা একটা ডাক ছাড়লো,,
– বাবু মশাই বাড়ি আছেন নাকি? মেহমান এনেছি।
ডাকটা বাতাসে মিলিয়ে যেতেই ভেতর থেকে একটা প্রবীন মানুষ বেরিয়ে আসলো লাঠিতে ভর দিয়ে। কথাবার্তা শুনে মনে হলো ইনিই বাড়ির কর্তা। তার মানে আমি যার কাছে এসেছি তার বাবা।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে আর বেশি দেরি নেই। আমার থাকার জন্য উপরের তলায় একটা ঘরের বন্দবস্ত করা হলো।
– অনেক ধকল গেল তুমি বিশ্রাম করো একটু পর তোমার নাস্তার ব্যবস্থা করছি।
ঘরে ডুকিয়ে দিতেই প্রবীন ভদ্রলোক কথাটা বললো।
-না না তার আর দরকার হবে না এক বারে রাতে হলেই চলবে।
কথাটা বলেই একটু আশেপাশে তাকাতে লাগলাম।
-আজমল তো বাড়িতে নেই। শ্বশুরবাড়ি গেছে, আসতে দুইদিন সময় লাগবে।
শ্বশুরবাড়ি! কিন্তু আমাকে তো কিছু বললেন না।
-কিন্তু আমাকে তো বললেন তিনি আমার সাথেই থাকবেন।
-হ্যাঁ তা তো থাকবেই। কিন্তু আজকে সকালে জরুরি ফোন এসেছে শাশুড়ি খুবই অসুস্থ । তাই না গিয়ে পারলো না।
-কিন্তু আমাকে বললেই তো হতো সেটা।
-বললে কি আর আসতে তুমি?? আর তাছাড়া মাঝপথ থেকে তো আর ফিরে যাওয়া যায় না।
হ্যাঁ আজমল সাহেব যদি সকালে গিয়ে থাকেন তবে তখন আমি বাসা থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছি।
আর কথা বাড়ালাম না, প্রবীন ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমি ব্যাগ থেকে কাপড়-চোপড় বের করে বিছানার উল্টোপাশের আলমারিতে সাজিয়ে রাখা শুরু করলাম। কারণ এখানে আমাকে দিন ১৫ থাকতে হবে।
একটু পরই ঘরে অন্ধকার নেমে আসলো। পকেট থেকে লাইটার বের করে টেবিলের উপর রাখা বাতিটা ধরিয়ে দিয়ে বিছানা ঠিক করতেই দরজার ওপাশ থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠে ভেসে আসলো,
“আপনাকে উপর থেকে বেশ ভালো মানুষই মনে হয়। আপনি কি আসলেই ভালো মানুষ?”
কথাটা শুনেই দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম একটা অষ্টদশী মেয়ে দাড়িয়ে আছে। পরনে শাড়ি, পায়ে নূপুর পরা। দেখা যাচ্ছে না তবে নূপুরের শব্দ কানে আসছিলো। প্রশ্নের জবাবে যে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। ভালো কি না সেটা তো বলতে পারবো না কিন্তু যথেষ্ট ভদ্র হিসাবে একটা নাম আছে।
-দাদু পাঠালো, আপনার কি কিছু লাগবে?
আবারো প্রশ্ন করলো।
-না আপাতত কিছু লাগবে না। তবে এই বাতির তেল কতক্ষণ থাকবে সেটা নিয়েই ভাবনা।
-টেবিলের নিচে বোতলে তেল আছে । ঢেলে দিবো নাকি নিজেই ঢেলে নিবেন?
– তাহলে ঠিক আছে নিজেই সময় মত ঢেলে নিবো।
রমনী আর কোনো কথা বললো না, দরজার ওপাশ থেকেই চলে গেল। বুঝলাম মেয়েটা আজমল সাহেবের মেয়ে হবে। কারণ আমি যতটুকু জানি আজমল সাহেবের কোনো ভাই নেই।
যথারীতি আটটা নাগাদ খেতে যাওয়ার জন্য বলা হলো। এমনিতে এত অাগে খাওয়ার অভ্যাস নেই কিন্তু এটা তো আর শহর না তাই কোনো কিছু না ভেবেই খেতে গেলাম। খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজরদারি ছিলো বলতে হয়।
কিন্তু বিলম্ব ঘটলো ঠিক তখনই যখন পাতে ধনিয়া পাতার চাটনি পড়লো। নতুন জায়গায় এসেছি না তো করতে পারি না। তাই যতটুকু পারি খেয়ে উঠে পড়লাম।
ঘরে ঘরে বসে বই পড়ছি। ভাবছি শরৎ বাবুর কথা। কিভাবে গ্রামীন পরিবেশ তুলে ধরতে পারে মানুষটা? চিন্তার ছেদ ঘটলো তখন যখন কানে আসলো,
-ধনিয়া পাতা বুঝি পছন্দের না?
কথাটা কানে আসতেই আধশোয়া থেকে উঠে বসলাম।
– না আসলে অভ্যাস নেই।
-সে আপনার মুখের অবস্থা দেখেই বুঝেছি। সমস্যা নেই পরের বার আর খেতে হবে না।
-কিছু বলবেন? মানে রাতে…
-আমাকে তুমি করেই বলবেন, কারণ আমি যথেষ্ট ছোট আপনার থেকে। আর যদি উত্তর দিতে হয় তবে বলবো, নাহ্ কিছু বলবো না। দেখতে আসলাম কি করছেন। বিরক্ত হলেন বুঝি?
– না না বিরক্ত হবো কেন? বলছিলাম যে…
-ভয় নেই দাদু পাঠিয়েছে।
-তিনি আসলেন না?
-এ মা বাতিতে দেখছি তেল নেই, নিভে যাবে তো।
এতক্ষণ বাতির দিকে লক্ষ করিনি। মেয়েটার কথা শুনে তাকাতেই দেখলাম বাতিটা নিভু নিভু করছে। ভাগ্যিস হাতে করে বাতি নিয়ে এসেছিলো।
-তা পারবেন না তখন বললেই হতো।
টেবিলের নিচ থেকে তেলের বোতলটা বের করে বাতিতে তেল ঢালতে ঢালতে কথাটা বললো।
-এই তেল তুলে দিলাম, আশা করি ঘণ্টা ৩-৪ আর লাগবে না। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে রাত জাগার অভ্যাস। আবার তেল শেষের পথে আসলে পরী বলে ডাক দিবেন উড়ে চলে আসবো। হি হি হি হি
কথার শেষে যে হাসিটা হাসলে সেই হাসিতে আটকে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। শরৎ বাবু যদি এখানে উপস্থিত থাকতো তবে নির্গাত এই হাসিটাকে নিয়েই একটা উপন্যাস লেখা আরম্ভ করতো।
-তোমার নাম বুঝি পরী?
প্রশ্ন করলাম।
-এই না না পরী হতে যাবে কেন? এটা তো আমি রসিকতা করে বললাম, লতা।
-এ্যাহ্?
-লতা, এটাই আমার নাম।
-বনলতা?
মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেল।
-হি হি হি না শুধু লতা। বনলতা তো জীবনানন্দ দাসের কবিতার নায়িকা।
আবারো সেই মন ভোলানো হাসি হাসলো লতা। লতা? আচ্ছা মেয়েটা কি লতার মত ইনিয়ে বিনিয়ে চলে? যে সেই ভাবেই চলুক সে যে খুব চঞ্চল সেটা আর বুঝতে বাকি রইলো না।
লতা চলে গেছে ঘণ্টা খানেক হলো। কিন্তু হাসিটা এখনো আমার কানে বাজছে। উপন্যাসে মন নেই, টেবিলের উপরে রাখা বাতিটা দিব্বি জ্বলছে। কিন্তু আমি তো চাই তেল ফুরিয়ে যাক তাড়াতাড়ি। আর তখনই দরজার বাইরে গিয়ে ডাকবো পরী নামে। হয়তো উড়ে আসবে না, কিন্তু নূপুরের ঝুমুরঝুমুর শব্দ করে ঠিকই আসবে। কিন্তু যদি ঘুমিয়ে পড়ে? নাহ্ হয়তো ঘুমাবে না। কারণ, যদি ঘুমিয়েই যেতো তাহলে তো আর বলতো না ডাকতে। হয়তো জেগে আছে।
সকালে ঘুম ভাঙলো কারো ডাকে। চোখ খুলে বুঝলাম কালকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন বুঝতেই পারিনি। টেবিলের উপর রাখা বাতিটা নিভে গেছে। হয়তো তেল ফুরিয়ে গেছে। বিছানা ছেড়ে দরজাটা খুলে দিতেই দেখলাম মাঝ বয়সী এক মহিলা দাড়িয়ে আছে। মুখে হাসি আর সেই হাসি মুখেই বললো,
-রাতে ভালো ঘুম হয়েছিলো তো?
-হ্যাঁ তা হয়েছে।
-সবাই খেতে বসেছে, তাই তোমাকে ডাকতে আসলাম। তুমি যাবে নাকি খাবার পাঠিয়ে দিবো?
এই শেষ কথাটা মনে ধরলো, “পাঠিয়ে দিবো? “তার মানে নিশ্চয় লতা নিয়ে আসবে? আর আসলেই একটা হাসি তো দিবেই। কিন্তু উত্তরে বললাম,
-না না আমিই যাচ্ছি।
মহিলা আর কোনো কথা বললেন না। চলে গেলেন।
ঘরে এসে ঘড়ির দিকে তাকাতে বুঝলাম এটা সকালের খাবার না বরং দুপুরের। কারণ, আমার ঘড়িতে এখন ১টা বেজে কয়েক মিনিট।
খাওয়া দাওয়া করে রুমে শুয়ে আছি। দক্ষিন দিকের জানালাটা খোলা, বেশ ঠাণ্ডা বাতাস এসে শরীর ছুয়ে দিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বাইরে থেকে একটা কথা শুনলাম,
আরে এই ভাবে না তো, এই ভাবে উঠ। এতদিন এটাও জানিস না? দাড়া দাড়া আমি উঠছি। তোরা নিচে থাক।
বেশ কৌতুহল হলো। জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম। আরে এটাতো পরী মানে লতা। গাছে উঠছে? গ্রামের মেয়েরা যে গাছে উঠতে উস্তাদ সেটা আমি আগে থেকেই জানি। কিন্তু একটা বিষয়ে বেশ অবাক হলাম লতা ছোট বাচ্চাদের গাছে উঠানো শিখাচ্ছে হা হা হা।
উপর তালা থেকে নেমে আসলাম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরও দেখি লতা তার কাজ করেই চলছে। কিন্তু আমাকে দেখেই বললো,
-এই তোরা যা, শহর থেকে বাবু এসেছে। আজকে এই বাবুকে গাছে উঠনো শিখাবো। হি হি হি হি।
লতার কথা শুনে সব বাচ্চারা চলে যেতেই আমার কাছে এসে বললো,
-গাছে উঠতে পারেন?
-একটু একটু
জবাবে বললাম।
-বাবার আসতে তো দিন দুই তিন দেরি হবে। তারপর আপনার কাজ শুরু হবে। চলেন এই কয়দিন আমি আপনাকে গাছে উঠানো শিখাবো।
আজমল সাহেব যদি আরও দেরি করে আসে তবুও আমার কোনো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। কিন্তু গাছে উঠানো শিখাবে? হা হা
-তার চেয়ে বরং গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাও।
-ওমা গ্রাম দেখবেন? চলুন। পুরো গ্রাম আমার কাছে হাতের মুঠোর মত। সব দেখাবো।
বলেই সামনে হাঁটা দিলো। আমি পিছু। কখনো পাশাপাশি, আবার কখনো ছুটে যাচ্ছে ফড়িংয়ের পিছু, কখনও লাফ দিয়ে গাছের ডাল ছুয়ে দিচ্ছে।
আজমল সাহেব এসেছে। কাজও প্রায় শেষ। এবার বিদায়ের পালা। পনেরো দিনের কথা বলে মাস খানেক থাকা হয়ে গেল। আর আমার প্রেমের কলিটাও ফুলে পরিনত হয়েছে। আজমল সাহেবের কাছে যদি তার মেয়েটাকে চাই তবে না করবে বলে মনে হয় না। কিন্তু লতাকে শহরে নিয়ে গেলে পাখি পাবে কোথায়? গাছে উঠার নেশাটা যখন পেয়ে বসবে তখন? কিংবা যখন ফড়িং ধরার বায়না করবে? এই একটা মাসে ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, যা শহরের মাঝে লতা একটা বন্দি পাখি ছাড়া আর কিছুই নয়। পাখিদের বন্দি করে রাখতে হয় না, আকাশে উড়তে দিতে হয়। আর লতার আকাশ গ্রাম, শহর নামক খাঁচা তার জন্য নয়।
ছয়টা মাস কেটে গেল। কিন্তু লতার হাসির শব্দটা কান থেকে যায়নি। ওর পাগলামী গুলো চোখের সামনে ভাসে। শহরের এই শত কর্মব্যস্ততার মাঝেও লতাকেই খুজে পাই বারে বার। বুঝলাম মনের গভীরে রয়ে গেছে।
স্টেশনে বসে আছি। পনেরো মিনিট পরই ট্রেন। আবারও যাচ্ছি লতাদের গ্রামে। কারণ কালকে দুইটা টেলিফোন এসেছিলো একটা আজমল সাহেবের আরেকটা লতার।
-হ্যাঁলো, সেই যে গেলে আর তো খোজই নিলে না। বাড়ির সবাই তোমার কথা বলে। একটা খবর দিতে ফোন দিলাম, তোমার পরিচিত কোনো ছেলে আছে নাকি? বোঝেও তো মেয়েটা আমার বড্ড পাগলী। কার হাতে তুলে দিই না দিই সেই ভাবনায় অস্তির। এই দিকে মেয়ের ইচ্ছে শহরে বাবুকে বিয়ে করবে। তাই তোমাকে জানালাম। খোজ মিললে জানিও কেমন?
-বাবাকে বলে দিয়েছি শহরের বাবুকে বিয়ে করবো। চাইলে প্রস্তাব দিতে পারেন।
আজমল সাহেবের অনেক কথার চেয়ে লতার বলা দুইটা বাক্য আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো। তাই আর দেরি না করে রওনা দিলাম। বাবা-মা কেউ নেই সবই হারিয়েছি ছোট বেলা। এবার না হয় এই শহরটাকে হারাবো। কিন্তু তার বিনিময়ে যা পাবে তাতে সারাটাজীবন সুখে থাকবো।কারণ লতাই হলো আমার সুখের নীড়। হয়তো ভালোবাসি হয়তো না ভালোবাসি। আর বাসবো সারাজীবন।
সমাপ্ত










