বফ আমার অসম্ভব আনরোমান্টিক ! মানে আনরোমান্টিকতার একটা লেভেল থাকে, সে ঐ লেভেলকেও অতিক্রম করে ফেলেছে অনেক আগেই ! কয়েকটা উদাহরণ দেই, সেদিন আমি আর আমার বফ পার্কের কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় বসে আছি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে খুবই রোমান্টিক মুডে বললাম “এই শোন, আজকের এই দিনটা তোমার নামে উৎসর্গ করে দিলাম। আজকের দিনের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা স্মৃতিতে আমি শুধু তোমাকে চাই ! শুধু তোমাকেই…আমাদের ভালবাসা অমর ! শ্বাসত ! চিরঞ্জীবী ! মৃত্যুঞ্জয়ী ! কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা !
কেউ না !” বফের চোখদুটো চকচক করে উঠল। আহ্লাদী স্বরে বলে উঠল “এই চলো না পাশের হোটেলটাতে গিয়ে কাচ্চি খেয়ে আসি ! অসম্ভব খিদে পেয়েছে ! আমাদের অমর ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে তো আমাদেরও বাঁচতে হবে আর বাঁচতে হলে খেতে হবে…তাছাড়া সময় কাটানোও হয়ে যাবে আবার পেটপুজাও , কি বলো?” আমি নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইচ্ছে করছিলো কষিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দেই ! রাগী রাগী কণ্ঠে কয়েকটা গালি দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।
তারপর সেদিন যখন আকাশ খারাপ করছিল আর আমরা রাস্তার ধারে হাঁটছিলাম, আমি মিষ্টি সুরে গান ধরলাম “এই মেঘলা দিনে একলা, ঘরে থাকে না তো মন…” বফ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল “এসব কি বলছ? সবাই শুনছে তো ! দেখ কেমন করে তাকাচ্ছে! ” আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম “তুমি চুপ করো তো !” সিনেমা, সিরিয়ালের মত সাথে সাথে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো… সে একদৌড়ে রাস্তার ধারের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আমি তাকে টানতে টানতে অস্থির ! হাজার চেষ্টা করেও তাকে বৃষ্টিতে ভেজাতে পারিনি !
জ্বরের ভয়ে সে কুপোকাত ! দিন দিন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ! একটা মানুষ এতটা আনরোমান্টিক কি করে হয় ! অন্য বফরা যেমন চাঁদের মধ্যে গফদের চেহারা দেখতে পায়, সেখানে আমার বফ চাঁদকে সুকান্তের মত ঝলসানো রুটি দেখে ! কি আশ্চর্য ! এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না! খুব প্ল্যান করলাম তাকে শায়েস্তা করার ! কাঁটায় কাঁটায় চব্বিশ ঘন্টা তাকে ব্লক করে রাখব ! সব ব্লকড থাকবে… ফোন নাম্বার, ফেসবুক আইডি…দেখি দিনে আমার কথা মনে করে তার অস্থির লাগে কি না ! ভাবতে ভাবতে খুশির ঠেলায় সামনের পাটির বাঁকা দাঁতগুলো বের করে শব্দ করে হাসতে লাগলাম ! এ ও এক ভীলেনি হাসি !
নির্ধারিত দিনে প্ল্যান মোতাবেক বফকে ব্লক করলাম। তার ফোন নাম্বার, আইডি সব ! অপেক্ষা করতে লাগলাম… এই বুঝি ছুটে আমার কাছে চলে আসে… চলে এসে যখন হাতে পায়ে ধরে মাফ চাইবে তখন আমি কি কি বলব সব ঠিক করে রেখেছি… কৌতুহলে আমি একেবারে মরেই যাচ্ছি ! কখন আসবে ! কখন এসে আমার রাগ ভাঙাবে কে জানে…
দেখতে দেখতে চব্বিশ ঘণ্টা ফুরিয়ে এলো… ক্রোধে অভিমানে আগুন হয়ে বফকে আনব্লক করে কল দিলাম। দাঁত বের করে ডায়নির মত একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি? কেমন লাগে ব্লকলিস্টে থাকতে? হুম?” ওপাশ থেকে বফ বলল “কি বলছ এসব? ফণীর জন্য সারাদিন কারেন্ট ছিল না, ফোনে চার্জ ছিল না তাই অফ হয়ে গেছিলো। কেবল অন করলাম আর সঙ্গে সঙ্গে তোমার কল !” বুকের বামদিকে ছ্যাত করে তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করলাম, যেন কেউ আমার হৃদয়ে এক মগ হারপিক ঢেলে দিলো ! দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আল্লাহকে বিচার দিলাম, ফণীকে আজই আসতে হলো?