বিরাট কান্ড

বিরাট কান্ড

বিয়ে করেছি সাত মাস হলো। গত দু মাস আগে ফ্লাট নিয়ে বউকে ঢাকা নিয়ে আসি। আগে আমি মেসে থাকতাম। বউ আমার বড়ই সুন্দরী। যেমন রুপ তার তেমন গুণ। হাতের রান্না তো নয় যেন অমৃত। বিয়ের পর এমন গুণবতী রাঁধুনি বউ থাকতে মেসের জঘন্য খাবার কি আর মুখে তোলা যায়?? তাই বউকে নিয়ে আসা।কিন্তু সমস্যা হচ্চে বউ আমার ভিতু। প্রচন্ড ভয় পায়। অবশ্য এ নিয়ে ওকে কম লজ্জাও দেইনি। যাই হোক কোন সমস্যা ছিল না। নতুন বাসা। নতুন সংসার পেয়ে বউ আমার খুবি খুশি। অফিস থেকে দিন তিনেক ছুটি নিয়ে সব সাজানো গোছানো হলো।

তারপর যথারীতি আবার অফিস। বউয়ের আমার তেমন আবদার ছিল না। শুধু যাবার সময় একটাই কথা সন্ধ্যা সন্ধ্যায় যেন বাড়ি ফিরি। সারাদিন তার যেমন তেমন সন্ধ্যার পরে চারপাশের অন্ধকারের সাথে তার ভয় বাড়তে থাকে। আমিও চেস্টা করি যত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যায়। একটা মানুষ সারাদিন একা থাকে তাকেও তো কিছুটা সময় দেয়া উচিত। কিন্তু একদিন হঠাত অফিসে কাজের চাপ থাকায় বাসায় ফিরতে বেশ রাত হয়। বউ আমার বেশ কয়েকবার ফোনও করেছে। মিটিং এ থাকায় ধরতে পারিনি। বেড়িয়ে ফোন দিলাম ফোন বন্ধ। যাই হোক এক গাদা। টেনশন নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ফিরে দেখি বাইরে থেকে তালা দেয়া।চিন্তা আরও বেড়ে গেলো। অনেক্ষন ফোনে না পেয়ে পাশের ফ্লাটে নক করতেই দরজা খুলে গেল। দেখি বউ আমার দাঁড়িয়ে আছে। ফোন অফ কেন জিজ্ঞেস করতেই উলটা প্রশ্ন ফোন ধরিনি কেন? মিটিংয়ে ছিলাম বলতেই পাল্টা উত্তর

* দুপুর থেকে কারেন্ট নেই। একটা চার্জার লাইট নেই বাসায় অন্ধকারে বসে থাকবো নাকি তাই এখানে চলে আসছি।আর হুম লাইট নাই তাই রান্নাও করিনি।
= আচ্ছা প্রবলেম নাই কিন্তু ফোন বন্ধ কেন?
* একা একা ভাল লাগছিল না আজ। গেমস খেলতে খেলতে চার্জ শেষ। কারেন্ট যে এখনো আসবেনা বুঝিনি।
= হুম বুঝলাম।

তুমি আরেকটু বসো আমি নিচ থেকে মোম নিয়ে আসি। মোম নিয়ে আসতেই বউ বলল যে ভাবি নাকি আজ রাতের খাবার খেয়ে যেতে বলেছে। না করতেই ভাবি এলো। বউয়ের কথা ফেলা গেলেও ভাবির কথা ফেলা গেল না। অগত্যা রাতের খাবার খেয়ে বাসায় আসলাম। রাতে শুয়ে বউ আমাকে প্রশ্ন করলো আমি বলাতে না করলা ভাবি বলাতে তো ঠিক রাজি হয়ে গেলা। বউ আমার নিছক মজা করে কথাটা বললেও আমার কাছে কেমন লাগে।

=কি বলতে চাও?? আমার সিরিয়াস্নেস দেখে বউও মজা করে বলে যে যা বুঝতে পারছো তাই।
= মানে।
*হুম।
=দেখো এটা ঠিক না। তুমি অই বাসায় না গেলে এমন এসব কথা আসতো না।
*তো একা একা কি করবো। ভয় লাগেনা বুঝি। একটা লাইট বা মোম ও নাই যে জালিয়ে থাকবো।
=তুমিও তো আগে একবার মনে করতে পারতে যে এটা দরকার।

সারাদিন অফিসে ঝামেলা সেরে বাড়ি ফিরে এই অহেতুক ভয় আমার পছন্দ হচ্ছিল না। এক কথায় দুই কথায় বেশ ঝগড়া হয়ে গেল। অহেতুক ভয় নিয়ে অনেক বকা ঝকা করলাম। বউ আমার পাশ ফিরে শুয়ে কাঁদছে। ঘুমিয়ে গেলাম এক সময়। পরদিন সকালে বউ যথারীতি নাস্তা লাঞ্চ সব রেডি করে দিলেও মুখে কোন কথা নাই। আছড়ে আছড়ে সব কাজ করছে। বিরক্ত লাগছে। আমিও কিছু না বলে নাস্তা করে বেড়িয়ে গেলাম। সন্ধায় বাসায় এসে দেখি বউ নাস্তা রেডি করে রাখছে। কোন কথা নাই। রাতেও একি অবস্থা। এভাবেই কাটলো দিন চারেক।

পাঁচ দিনের দিন বাসায় ফিরতেই বউ এসে বলল কে যেন ঘরে হাটে। আবার এসব শুনে এইবার আমি কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে গেলাম। দুই দিন এইভাবেই কাটলো। তৃতীয় দিন রাতে হঠাৎ কাচের কিছু পরে ভেঙে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম। মনে হলো ড্রইং রুমে। ঘুম ভেঙে গেলো। ভাবলাম অন্য কোথাও হয়তো শব্দ হয়েছে। ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষন পরে আবারো সেই একি শব্দ। এইবার শিউর হলাম যে না শব্দ টা আমার ফ্লাটেই হচ্ছে। বিড়াল হয়তো কিছু ফেলে দিচ্ছে। উঠে গিয়ে লাইট জালালাম। কিন্তু কোথাও কোন ভাঙা কিছু বা বিড়াল ও দেখলাম না। ফিরে এসে বউ কে জাগাতেই সে বলল”কিসের যতসব অহেতুক কথাবার্তা এই রাতে ঘুমাও”।

= আরে না সত্যি।
*কই চলো দেখি।

এবার আমার বউয়ের সাহস আমাকে হতভম্ব করে দিল। সে গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে এসে বলল কই কোথাও কিছু নাই। ঘুমাও। দু জনেই ঘুমানোর চেস্টা করলাম। আশ্চর্য সারা রাতে আর শব্দ হলো না। পরদিন সকালে বউ জিজ্ঞেস করলো যে ভূতের ভয় পাইসো রাতে।

আমি ইজ্জত বাচাতে বললাম আরে না জাস্ট কৌতুহল। হুম ভালো। বলেই একটা হাসি দিল। যাক ভুতের উসিলায় কথা হল। আমি সেদিন অফিসে গেলাম। রাতে বাসায় ফিরে যথারীতি খেয়ে দেয়ে ঘুমালাম। মাঝরাতে প্রচন্ড একটা শব্দ হল কাচ ভাঙারর। আমি আর বউ দুজনেই উঠে বসলাম। বেড সুইচ অন করতেই বউ চিৎকার দিলো। তাকিয়ে দেখি মেঝেতে গ্লাস পরে ভেঙে রয়েছে। দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। বউকে সাহস দিতে বললাম বিড়াল লাফিয়েছে হয়তো। দাড়াও আমি দেখছি। বলে সারা বাসা খুজেও বিড়াল পেলাম না। বলা বাহুল্য এত দিনেও কোন বিড়াল বা কিছু চোখে পরেনি। ফিরে এসে দেখি বউ মেঝে পরিস্কার করে ফেলছে। আমি শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষন পরে সে এসে শুয়ে পড়লো।

চোখ লেগে আসছে। কিন্তু আবার সেই একি শব্দ। উঠে দেখি একি অবস্থা আবারো। এবার লাইট জালিয়ে দু জন দু জনের হাত ধরে আল্লাহ আল্লাহ করে রাত পার করলাম। দিনে বউ আমার আমাকে অফিসেই যেতে দিবেনা। কিন্ত না গেলে তো চলবেনা।বললাম দিনের আলো থাকতেই ফিরে আসবো। তারপর বেরুলাম। অফিসে কিছুই ভালো লাগছে না। রাতে ঘুম হয়নি। লাঞ্চে বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি বউ আমার ঘুমাচ্ছিল। দুজনে একসাথে খেয়ে ঘুমালাম একটু। ভিতরে ভিতরে আবার সেই রাতের ঘটনা উকি দিচ্ছে। সন্ধ্যা নামার আগেই বাইরে গিয়ে মোম, চার্জার লাইট। টর্চ লাইট নিয়া আসলাম। বউ এসব দেখেই বলল জনাব নাকি ভয় পান না??

= ভয়ের কি আছে। কিসে ভাংতেছে দেখার জন্যই আর এগুলো তো লাগেই।
* হুম তা ঠিক।

তো সেদিন রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমালাম। সে দিন রাতে আর কিছু হলো না। এভাবে দু দিন কাটলো ভালই। নামাজ পরছি সময় মত। ভয় টাও কেটে গেছে। তো একদিন রাত তিনটার দিকে বাথরুমে চাপ দেয়ায় উঠলাম। লাইট জালিয়ে ভিতরে পা দিতেই দেখি সারা ফ্লোর লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এটা দেখেই আমি চিৎকার দিয়ে ঘরে সেন্স লেস হয়ে গেলাম। হুশ ফিরতেই দেখি মাথার উপর পাখা ঘুরছে। বউ পাশে নেই। আস্তে আস্তে উঠে বাথরুমে তাকালাম ফ্লোর একদম চকচকে। তাহলে ও কি পরিস্কার করে ফেলছে। বউ বলে ডাক দিতেও ডৌড়ে ছুটে এল। এসেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। ভাবলাম ভয়ে কাদছে। জিজ্ঞেস করলাম বাথরুম কি তুমি পরিস্কার করছো?? মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো।

=কিছু দেখছিলা??
* উহু।

আমি অবাক হয়ে যাই। হঠাত বউ সরি বলে। কেন সরি জিজ্ঞেস করতেই বলল সব কিছুর জন্যই।

= মানে?

এরপর বউ যা বলল তা শুনার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। এ সব কিছুই তার সাজানো নাটক। প্রথম দিন ড্রইং রুমে সে তার চায়না ফোনে একটা গ্লাস ভাঙার টোন দিনে এলার্্ম সেট করে রিপিট দিয়ে রাখে যার জন্য কিছু সময় পর পর তা বিকট শব্দে বাজছিল। শুরুতেই বলেছি আমার বউ বিরাট গুণবতী ও বুদ্ধিমতি।

সেই বুদ্ধির এক ফোটা কাজে লাগায় সে দ্বিতীয় রাতে। দুইটা সুতা সে তার ড্রেসিংটেবিল এর এক পাশে বেধে দুইটা গ্লাসে পেঁচিয়ে কিছুটা দূরে রাখে। আমি ঘুমিয়ে গেলে সে প্রথমে একটা সুতা সজোরে টান মারে ফলে গ্লাসে সুতা পেচিয়ে থাকায় সেটা পরে ভেঙে যায়। সেই ভাঙা গ্লাস পরিষ্কার এর নামে সে আরেকটা গ্লাসেও একি কায়দা খাটায় আমাকে জব্দ করতে। আমি কিছু বলছি না শুধু শুনছি। তারপরে বাথরুমের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলে আমি ভোর রাতে ওজু করতে যাব সে এটা জানে। তাই গভীর রাতে আমি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সে তার আলতা নিয়ে এই কাজ করেছে। কারন সে জানতো আমি ঘুমের ঘরে এত কিছু আচ করতে পারবো না।

এগুলো কেন করেছে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে। তার ভয় পাওয়া কে আমি মজা হিসেবে নেই মজা করি। এতে সে কস্ট পায়। আর সে দিন রাতে বকাতে সে চুড়ান্ত কস্ট পেয়েছে। তাই ভয় কি জিনিস বুঝাতেই এত কিছু। তাহলে যে তুমি বললা ঘরে কে হাটে। ওইতা ছিল প্রাইমারি স্টেজ। তখন কিছুটা ভয় পেয়ে আমার সাথে কথা বললে এতদূর আসা লাগতো না। সব শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। সব স্বীকার করে সে মাফ চেয়ে আমার বুকে পড়ে রইলো। আমিও সাত পাচ না ভেবে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আর যাই হোক এই মেয়েকে আর ভূলেও বকা যাবেনা। শেসে আবার কোন কান্ড বাধায়।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত