হাই জানু তুমি কী করছ ?? (আমি)
–অই তরে না না করছি আমারে জানু ডাকবি না হ্যাঁ ?? (নিশি)
–তাহলে কী বলে ডাকব ?? বউ ?? (আমি)
–ফাজিল,শয়তান,বদের হাড্ডি আমাকে আর ম্যাসেজ দিবি না | দিবি তো ব্লক খাবি (নিশি)
–এই দোস্ত শোন না প্লিজ | আর কখনও তোকে এসব বলব না | এবারের মত মাফ করে দে আমাকে প্লিজ দোস্ত প্লিজ (আমি)
–নাহ | তোকে অনেকবার মাফ করেছি | কিন্তু এবার আর মাফ করা হবে না (নিশি)
–দোস্ত প্লিজ লাষ্ট একটা চান্স দে আমাকে প্লিজ | আর
এমন হবে না কখনও সত্যি বলছি (আমি)
–সত্যি তো ?? (নিশি)
–হ্যাঁ সত্যি সত্যি সত্যি | এই তোর কসম (আমি)
–চুপ শয়তান | আমার কসম কাটবি না (নিশি)
–কেন ?? (আমি)
–এতকিছু জানতে হবে না তোর (নিশি)
–আচ্ছা ঠিকাছে | তা কী করছিস এখন ?? (আমি)
–বিছানা ঠিক করলাম মাত্র | অনেক রাত হয়েছে | এখন ঘুমাবো | কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে | ওকে | এখন বাই এন্ড গুড নাইট | (নিশি)
–এই নিশি (আমি)
–আবার কী হল ?? (নিশি)
–উমমমম্মাহহহ (আমি)
–কুত্তা তরে কালকা ভার্সিটিতে পাইয়া লই | তরে জন্মের উম্মাহ দেওয়াইয়া দিমু | বাই (তীব্র মাত্রায় রাগ করে) (নিশি)
–ওকে জানু বাই (আমি)
–খুব রাগের ইমো দিয়ে (নিশি)
অতঃপর মিস রাগকুমারী আমার সাথে রাগ করে চলে গেলেন ফেইসবুক নামক ভার্চুয়াল জগত থেকে | আজ মনে হয় একটু বেশী ই রাগিয়ে ফেলেছি | উফ কাল ভার্সিটিতে গেলে কী যে হবে একমাত্র আল্লাহ ই জানে | আর কিছু ভাবতে পারছি না | খুব ঘুম পেয়েছে | চোখ খুলে রাখতে পারছি না | এখনই ঘুমের রাজ্যে ডুব দিতে হবে | অতঃপর সোজা ডুব দিলাম ঘুমের রাজ্যে |
You Know You Love Me
I Know Your Care
Just Shout Whenever
And I’ll Be There
You Want My Love
You Want My Heart
And We Would Never
Ever Ever Be Apart
Are We An Item
Girl Quit Playin…..
ফুল সাউন্ডে গানটা বাজছে | উফ একদম মাথার কাছে | অতঃপর দেখতে পেলাম মোবাইলে এলার্ম বাজছে | মোবাইলের এলার্ম হিসেবে জাস্টিন বেইবারের এই বেবী গানটা সেট করা ছিল | আমার অনেক পছন্দের একটা গান | এলার্মটা বন্ধ করে মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে দেখলাম ৯ টা বেজে গেছে | ঝড়ের গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লাম | ফোনের কললিষ্টটা একবার চেক করে দেখলাম নিশি ফোন দিয়েছে কিনা | কী ব্যাপার আজ নিশি ফোন দিল না কেন ??প্রতিদিন সকালেই তো নিশি আমাকে ফোন দেয় | ফোন দিয়ে আমাকে জাগায়,ভার্সিটিতে আসতে বলে কারন আমি খুব ঘুম কাতুরে | সকালে ঠিকমত ঘুম থেকে উঠতে পারি না | কিন্তু আজ কেন ফোন দিল না ?? ঘটনা কী ?? পরক্ষনেই মনে পড়ে গেল গতকাল রাতের কথা | আমার উপর তো খুব রাগ করেছে | ফোন দিবে কীভাবে তাহলে ??
যতক্ষন পর্যন্ত রাগ না ভাঙাবো ততক্ষন পর্যন্ত আমার সাথে একটি টু শব্দও করবে না সেটা আমি খুব ভালভাবেই জানি | জলদি ভার্সিটিতে যেতে হবে এবং গিয়ে রাগ ভাঙাতে হবে | না হলে আমার সাথে আর কথা না ও বলতে পারে | দ্রুত বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম | একটা চেক শার্ট,একটা গ্যাবাডিং প্যান্ট আর আমার চশমাটা পড়ে খাবার টেবিলে চলে আসলাম ব্রেকফাষ্ট করতে | ব্রেকফাষ্ট করার পর রুম থেকে ভার্সিটির ব্যাগ আর মানিব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে | ততক্ষনে প্রায়ই ১০ টা বেজে গেছে |ঘড়ির কাটায় ঠিক ১০:২০ মিনিটে ভার্সিটির গেটেরসামনে এলাম | তারপর সোজা চলে গেলাম আমার ক্লাসে | সারা ক্লাসরুম তন্যতন্য করে খুঁজলাম কিন্তু কোথাও নিশিকে খুজে পেলাম না | ফোন দিচ্ছি কিন্তু ফোনও রিসিভ করছে না | বারবার ফোনটা কেটে দিচ্ছে | এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত বা কী করা দরকার সেটা মাথায় আসছে না | বিষন্ন মনে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি তখনই
–কিরে কাওকে খুঁজছিস আসিফ ?? (আদিবা)
–হ্যাঁ রে দোস্ত | নিশিকে দেখেছিস ?? ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না (বিষন্ন মন নিয়ে) (আমি)
–ফোন দে তাহলে (আদিবা)
–ফোন দিচ্ছি তো কিন্তু প্রত্যেক বারই ফোন কেটে দিচ্ছে (আমি)
–কেন কিছু হয়েছে তোদের মধ্যে ?? (আদিবা)
–ওই আর কী একটু ঝগড়া | জানলে বল না প্লিজ নিশি কোথায় আছে প্লিজ (আমি)
–ভার্সিটির পিছনের বাগানে একা বসে আছে | ওখানে যা (আদিবা)
–তোকে অসংখ্যা ধন্যবাদ আদিবা | আমি যাচ্ছি (অনেক খুশি হয়ে) (আমি)
অতঃপর আদিবার প্রতিউওর না শুনেই বাগানের দিকে দিলাম দৌড় | যেভাবেই হউক নিশির রাগ ভাঙাতেই হবে | বাগানের ভিতর ঢুকে দেখলাম নিশি বাগানের একপাশে জড়সড় হয়ে বসে আছে আর মোবাইল টিপছে। আমার পায়ের আওয়াজ শুনে নিশি উপরের দিকে তাকালো | আমার দিকে একবার ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আবার মোবাইল টিপায় মনোযোগ দিল | আমি আস্তে আস্তে গিয়ে তার পাশে বসে পড়লাম | বসতে দেরি কিন্তু উঠে যেতে আর দেরি নেই | আমি বসামাত্রই নিশি ওর মোবাইলটা ব্যাগে ভরে উঠে দাঁড়ালো আর যাওয়ার জন্য ডান পা টা বাড়ালো | আমি খপ করে নিশির বাম হাতটা ধরে ফেললাম
–হাত ছাড় বলছি (আমার দিকে তাকিয়ে) (নিশি)
–না ছাড়ব না | যতক্ষন রাগ না কমবে ততক্ষন তোর হাত ধরে বসে থাকব এখানে (আমি)
–আসিফ হাত ছাড় বলছি | আমি খুব ব্যাথা পাচ্ছি (নিশি) ব্যাথা পাচ্ছে শুনেই আমি নিশির হাতটা ছেড়ে দিলাম | কারন আমি নিশির কষ্ট মোটেই সহ্য করতে পারি না কারন আমি নিশিকে অনেক ভালোবাসি | কিন্তু বলার সাহস পাই না | বললে যদি কথা না বলে ! কথা না বললে আমি একদম শেষ | কারন নিশি বিহীন আসিফ কখনও বেঁচে থাকতে পারবে না
–এই তোর কোথায় লেগেছে হুমম বল ?? বল কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস বল (উত্তেজিত হয়ে নিশির হাতটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে) (আমি)
–আরে বোকা লাগে নি কোথাও | এত উত্তেজিত হোস না| এখন হাতটা ছাড় | কেউ দেখলে সমস্যা হবে (নিশি)অতঃপর আমি নিশির হাতটা ছেড়ে দিলাম | আর নিশিকে বললাম আমার পাশে বসতে | নিশি কোনো কথা না বলে চুপ করে আমার পাশে বসে পড়ল
–নিশি (আমি)
–কী ?? (নিশি)
–রাগ কমেছে ?? (আমি)
–নাহ (নিশি)
–কী করলে তোর রাগ কমবে বল প্লিজ (আমি)
–জানি না (নিশি)
–প্লিজ নিশি বল প্লিজ (আমি)
–একটা গান শোনা তাহলে (নিশি)
–গান তো পারি না দোস্ত (আমি)
–তাহলে আমি যাই (নিশি)
–এই দাড়া দাড়া গাচ্ছি (আমি)
–হুমম গা (নিশি) মাথায় দুষ্টামী বুদ্ধি আঁটিয়া গেল | গান তো পারি ই না তবে একটু দুষ্টামী করলে মন্দ হয় না
–কিরে গা (নিশি)
–হ্যাঁ গাচ্ছি || “”অই তোর গোলাপী ঠোঁট লিপিস্টিক হয়েযাব”” (আমি)
–কুত্তা তুই কী বললি ?? আমার গোলাপী ঠোঁট ?? লিপিস্টিক হবি ?? আয় তোকে হওয়াচ্ছি (নিশি) বলেই নিশি আমাকে মারতে লাগল | উফ খুব ব্যাথা লাগছে
–এই আর মারিস না | ব্যাথা লাগছে খুব (আমি)
–ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো দিচ্ছি | বল আর এমন করবি কিনা বল ?? (নিশি)
–এই কান ধরছি আর কখনও এমন করব না | সত্যি বলছি (আমি)
–সত্যি তো ?? (নিশি)
–হ্যাঁ সত্য রে নিশি (আমি)
তারপর নিশি আমাকে ছেড়ে দিল | উফ কী মারটাই না দিল | পিঠ খুব ব্যাথা করছে
–নিশি রাগ কমেছে ?? (আমি)
–হুমমমমমমম (নিশি)
–তাহলে চল ফুচকা খেয়ে আসি (আমি)
–ফুচকা ?? দোস্ত চল জলদি | অনেকদিন যাবৎ খাই না | প্লিজ চল জলদি (নিশি)
–হা হা হা চল (আমি)
অতঃপর চলে আসলাম ভার্সিটির ক্যান্টিনে | দুজন ফুচকা খেলাম মন মত | খাওয়া শেষে আমি বিল দিয়ে দিলাম | তারপর একটা রিকশা নিলাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য | যেহেতু আমার বাড়ি ফেলে রেখে নিশির বাড়িতে যেতে হয় সেহেতু একটা রিকশাই নিলাম | আমি আগে নেমে পড়ব আর নিশি রিকশাতে করে চলে যাবে তার বাড়িতে | আমি আর নিশি এক রিকশাতে পাশাপাশি বসে আছি | বারবার নিশির শরীরের সাথে আমার শরীর লাগছে | অনুভূতিটা যে কী সেটা বোঝাতে পারব না |
–এই নিশি (আমি)
–কী বল (নিশি)
–তোর হাতটা একটু ধরি ?? (আমি)
–কী বললি ?? (নিশি)
–বললাম একটু তোর হাতটা ধরি ?? (আমি)
–চুপ শয়তান (নিশি)
–ধরি ?? (আমি)
–জানি না (নিশি)
আমি নিশির বাম হাতটা ধরলাম | ও আমার দিকে একবার তাকালো কিন্তু পরে আর কিছুই বলে নি |
–এই আসিফ তোর বাড়ির সামনে চলে এসেছি |
নেমে পড় (নিশি)শালার রিকশা এত ফইন্নি ক্যারে ?? এত তাড়াতাড়ি চলে এলাম ?? আর কিছুটা সময় দেরি হলে কী হত ?? তবে একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি | সেটা হচ্ছে আমি যখন চাই সময় দ্রুত চলে যাক তখন যেন সময় যেতেই চায় না | আর যখন চাই না তখন সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যায় | আজকেও ঠিক এমনটাই হলো | চাচ্ছিলাম সময় যাতে না যায় কিন্তু ভাগ্য খারাপ | সময় খুব দ্রুত চলে গেল | রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে দিলাম | তারপর নিশিকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম আজকে দিনটা বেশ ভালই কেটেছে | ইস যদি প্রতিদিন নিশিকে নিয়ে রিকশাতে ঘুরতে পারতাম ! ভাবতেই নিশির ফোন
–কিরে কী করছিস ?? (নিশি)
–এইতো শুয়ে শুয়ে তোর কথা ভাবছিলাম আর ঠিক তখনই তুই ফোন দিলি (আমি)
–তুই আবার আমার কথাও ভাবিস হুহহ (তাচ্ছিল্য করে) (নিশি)
–কেন ভাবতে পারি না বুঝি ?? (আমি)
–অতকিছু জানি না | যেজন্য ফোন দিয়েছিলাম সেটা বলি (নিশি)
–হুমমম বল (আমি)
–কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে | কালকে কোথাও ঘুরতে যাব বুঝেছিস (নিশি)
–কিহ ?? (আমি)
–অবাক হচ্ছিস কেন ?? (নিশি)
–নাহ এমনি | বল কোথায় যাবি ?? (আমি)
–তুই যেখানে নিয়ে যাস (নিশি)
–আচ্ছা বিকালে আমার বাড়ির সামনে এসে ফোন দিস (আমি)
–আচ্ছা এখন বাই (নিশি)
–ওকে বাই | গুড নাইট (আমি)
–গুড নাইট (নিশি)
এ তো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি | কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে তারপর আবার আমার সাথে ঘুরবে ! নিশ্চয়ই কিছু একটা কাহিনী আছে | আর কাল যেভাবেই হোক নিশিকে আমার মনের কথা বলবই | বেশী দেরি করলে যদি হারিয়ে যায় আবার ! তাহলে সবই শেষ কিন্তু কাল আমি এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব হুমম | পরে যেটা হওয়ার হবে | অতঃপর আমি বিছানা ঠিক করে ঘুমিয়ে পড়লাম |
সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম | ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম | রাতে আর নিশিকে উইশ করি নি কারন যদি রাগ করে তাহলে আজকের দিনটাই মাটি | ঘুরা তো দূরের কথা আমার সাথে একটি কথাও বলবে না | সেজন্য আর রাতে উইশ করি নি | দুপুর ২ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম | তারপর বাথরুম থেকে হাত,মুখ ধুয়ে আসলাম | একটা পিংক কালারের পাঞ্জাবী,আমার -3.5 পাওয়ারের চশমা যেটা ছাড়া আমি কিছুই দেখতে পাই না আর একটা জিন্স প্যান্ট পড়ে চেয়ারে বসে রইলাম | খাবার খাই নি | খেতে ভাল লাগছে তাই | অলরেডি সাড়ে তিনটা বেজে গেছে | হঠাৎ ফোনটা কেঁপে উঠল | দেখলাম নিশি ফোন দিয়েছে | হয়তো বা বাড়ির কাছাকাছি চলে এসছে |
–অই আসিপ্পা তুই কই রে ?? (নিশি)
–এই তো এখন বের হব | তুই চলে এসছিস ?? (আমি)
–হ্যাঁ | জলদি আয় | রিকশা দার করিয়ে রেখেছি (নিশি)
–আচ্ছা আসছি (আমি)
ফোনের লাইনটা কেটে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম | গেটের সামনে এসে আমি তো অবাক | এ আমি কাকে দেখছি ?? এটা নিশি তো ?? ওকে আজকে এত সুন্দর লাগছে কেন ?? একটা কালো কালারের শাড়ি,হাতে কিছু কাচের চুঁড়ি,চোখে কাজল,ঠোঁটে সামান্য লিপিস্টিক ! সব মিলিয়ে নিশিকে অপরূপ মায়াবী লাগছে | আমি ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম
–অই এভাবে ব্যাবলার মত তাকিয়ে থাকবি নাকি রিকশাতে উঠবি ??
(ধমক দিয়ে) (নিশি) নিশির কথা শুনে বাস্তবে ফিরলাম | নিশির কথা শুনে রিকশাওয়ালা মামা মিটিমিটি হাঁসছে | লজ্জাতে পড়ে গেলাম | আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রিকশাতে উঠে গেলাম |
–কোথায় যাবি ?? (নিশি)
–কী জানি জানি না (আমি)
–কোথায় যাবি বলতে বলছি কিন্তু (উচ্চস্বরে) (নিশি)
–এই আস্তে কথা বল | সবাই শুনতে পাবে তো (আমি)
–কতক্ষন ধরে বলছি কোথায় যাবি কোথায় যাবি ?? কথা কান দিয়ে যায় না হ্যাঁ ?? (চোখ রাঙিয়ে) (নিশি)
–নিশি প্লিজ আস্তে কথা বল |
মামা রমনা পার্কে নিয়ে চলেন তো (আমি) প্রায় আধঘন্টা পর রিকশা রমনা পার্কের সামনে থামল | রিকশাওয়ালা মামার ভাড়া চুকিয়ে পার্কের ভিতরে প্রবেশ করলাম | পার্কের কোনার একটা বেঞ্চে গিয়ে আমি আর নিশি বসে পড়লাম | আশেপাশে অনেক কপোত কপোতী | কারন আজকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস | সবাই তাদের জি.এফ নিয়ে ব্যস্ত আর আমি চুপটি করে নিশির পাশে বসে আছি |
–একটা কোণ আইসক্রিম নিয়ে আয় যা (নিশি)
–একটাই নিয়ে আসব ?? (আমি)
–হুমমম একটাই (নিশি)
আর কথা না বাড়িয়ে জলদি দোকান থেকে একটা কোণ আইসক্রিম নিয়ে আসলাম | আইসক্রিমটা ওর হাতে দিলাম| নিশি কোন কথা না বলে চুপ করে আইসক্রিমটা নিয়ে খেতে শুরু করল | আমি ওর খাওয়া দেখছি
–কিরে খাবি ?? (নিশি)
–নাহ | তুই খা (আমি)
–যেভাবে তাকিয়ে আছিস আমার তো পেট ব্যাথা করবে (নিশি)
–আচ্ছা আর তাকাবো না (অন্যদিকে তাকিয়ে) (আমি)
–রাগ করে না ছোট বাবু | এই নাও এক কামড় খাও (নিশি)
–নাহ খাব না (আমি)
–না খেলে কথা বলব না আর (রাগ করে) (নিশি)
–থাক থাক রাগ করতে হবে না আর | দে খাচ্ছি (আমি) নিশি আমাকে আইসক্রিমটা দিল আর আমি একটা কামড় খেয়ে আইসক্রিমটা আবার নিশির হাতে দিয়ে দিলাম |
–কিরে আইসক্রিমের যেই জায়গাটাতে আমার লিপিস্টিক ভরে ছিল তুই ওই জায়গাটাই খেলি ?? (নিশি)
–ইয়ে না মানে(আমি) নিশি আর কোনো কথা না বলে আবার আইসক্রিম খাওয়াতে মনোযোগ দিল | আসলে কাজকা আমি ইচ্ছে করেই করেছি
–নিশি তোকে কিছু বলার ছিল আমার (আমি)
–আমি বয়রা না বুঝেছিস | কান খোলা আছে বলতে থাক (নিশি)
–মজা করিস না | আমি কথাগুলো সিরিয়াসলি বলব তোকে (আমি)
–(চশমাটা নাকের ডগা থেকে উপরে নিয়ে) হুম বল সিরিয়াসলি নেব (নিশি)
–এই ৫ বছর যাবত আমি তোকে শুধু একটা কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম | আজকে সুযোগটা পেয়েছি তাই আজকে কথাটা বলতে চাই (আমি)
–৫ বছর যাবত অপেক্ষা করছিস ?? কী কথা জলদি বল | খুব জানতে ইচ্ছে করছে (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে) (নিশি)
–সেই ক্লাস এইট থেকে আমি তোকে পছন্দ করি | তোকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ন | আমি তোকে ভালোবাসি নিশি(আমি) কথাটা শোনার পর নিশি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে | আমি খুব ভয় পাচ্ছি নিশির তাকানো দেখে
–কী বললি তুই ?? (নিশি)
–না আজকে আমি আর ভয় পাই না তোকে | আমি যা বলেছি সত্যিই বলেছি (আমি)
–কী বলেছিস আবার বল তো ?? (নিশি)
–আমি তোকে ভালোবাসি নিশি | প্লিজ নিশি আমাকে ফিরিয়ে দিস না প্লিজ (আমি)
–আচ্ছা কবের থেকে আমাকে ভালোবাসিস ?? (নিশি)
–সেই ক্লাস এইট থেকে (আমি)
–তাহলে এতদিন বলিস নি কেন ?? (নিশি)
–খুব ভয় পেতাম তোকে | তাই কখনও বলার সাহস হয়ে উঠে নি | আচ্ছা নিশি আমরা সেই ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে পড়ছি | এতবছরে আমার প্রতি তোর একটুও অনুভূতি জাগে নি ?? (আমি)
–আচ্ছা আসিফ একটা কথা বল তো তোকে ছাড়া আমি কখনও কোনো ছেলের সাথে কথা বলেছি ?? (নিশি)
–না বলিস নি (আমি)
–তোকে ছাড়া আর কোনো ছেলের সাথে মিশেছি কখনও ?? (নিশি)
–নাহ (আমি)
–আচ্ছা ওইদিন রিকশাতে যে তুই আমার হাত ধরেছিলিস তখন কী আমি তোকে বলেছিলাম যে কেন আমার হাত ধরলি ?? (নিশি)
–না বলিস নি (আমি)
–এতকিছু ঘটে গেল আমাদের মধ্যে তবুও কী তুই কিছু আন্দাজ করতে পারছিস না ?? তুই শুধু আমার উপরের রাগটাই দেখলি আমার ভিতর কী বলে তুই সেটা বুঝলি না কখনও (অভিমানী সুরে) (নিশি)
–মানে তুই ও কী আমাকে ভালোবাসিস ?? (আমি)
–জানি না (নিশি)
নিশির এমন উওরে আমি যেন বোকাবনে চলে গেলাম | বুঝেছি ওকে এখনই প্রোপোজ করতে হবে না হলে পরে সমস্যায় পরতে হবে | সাথে সাথে এক দৌড় | একেবারেগেটের সামনে চলে আসলাম এক দৌড়ে | ১৫০ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ ফুল কিনলাম | গোলাপটা কিনে আবার একদৌড়ে নিশির কাছে চলে আসলাম | নিশি এতক্ষন আমার কার্যকলাপ দেখছিল আর মুখে হাত চেপে হাঁসছিল| নিশির সামনে এসেই হাটুগেরে বসে বলে উঠলাম
–নিশি,তুমি কী আমার রাত্রির আম্মু হবে ?? (তুই থেকে তুমি করে বলে) (আমি) নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো | হঠাৎ আমার কলারটা চেপে বলল
–রাত্রি কে বল বলতেছি ?? না হলে এখন তোকে মেরেই ফেলব | বল ভাল থাকতে (অগ্নি চোখে) (নিশি)
–আরে আমাদের ভবিষ্যত মেয়ের নাম রাখব রাত্রি | কলারটা ছাড় নিশি (আমি)
–হুমমম (কলারটা ছেড়ে) (নিশি)
–এখন তুমি কী আমার রাত্রির আম্মু হতে চাও ?? (আমি)
–তুমি যদি বানাতে চাও তাহলে আমি হতে চাই | আমার আপত্তি নেই (নিশি)
— I Love You Nishii (আমি)
–হুমম আমিও (নিশি)
–আমিও মানে ?? আমি যেটা বললাম তুমি সেটা বল ?? (আমি)
–না আমি বলতে পারব না | আমার লজ্জা লাগে (লজ্জা পেয়ে) (নিশি)
–নাহ তোমাকে বলতে হবেই | চোখটা বন্ধ করে বলে ফেল (আমি) অতঃপর নিশি চোখ বন্ধ করে ফেলল
— I Love You Too Asif (চোখ বন্ধ রেখেই) (নিশি)
–এই এবার চোখটা খোল (আমি)
–হুমমম খুলেছি (নিশি)
–এই নিশি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরি ?? (আমি)
–এখানে ?? তাও আবার এই পাবলিক প্লেসে ?? (নিশি)
–হুমম আমার বউ | আমার বউকে আমি জড়িয়ে ধরব না তো আর কে ধরবে ?? (আমি)
–বউ ?? (নিশি)
–হুমমম বউ (আমি)
–ইস সে রে শখ কত ! এই যে স্যার এখনও আপনার বউ হয়নি বুঝলেন | যখন হব তখন জড়িয়ে ধরবেন কেমন ?? (নিশি)
–অহহ নু | এতবছর অপেক্ষা করতে হবে উফফ (আমি)
–জ্বি স্যার | অইইই চল চল ফুচকা খাব | প্লিজ চল (নিশি)
–ওকে আচ্ছা চল (আমি)
তারপর দুজন উঠে দাঁড়ালাম ফুচকা খাওয়ার জন্য পড়ন্ত বিকেলে আমরা দুজন পাশাপাশি হাঁটছি | নিশির হাতটা আমার হাতে | সারাজীবন ঠিক এভাবেই নিশির হাতটা ধরে রাখতে চাই | নিশির হাতটা আর কখনও ছাড়তে চাই না কখনও না|