অনুভূতির ইশারায়

অনুভূতির ইশারায়

দুপুর বেলা অফিসে বসে কাজ করতেছি আর ওমনি প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইলে টুং করে মেসেজ রিংটোন বেজে উঠলো,

বুঝতেই পারলাম কেন আর কে মেসেজ দিয়েছে তাই মোবাইল টা বের করে হাতে নিলাম। মেসেজ টা ছিলো,
– এইযে ব্যস্ত বাবু দুপুরে খেয়েছেন?
আমিও একই ধরণের রিপ্লাই দিলাম,
– জ্বী ম্যাম খেয়েছি আপনি এবার খেয়ে নিন।
রিপ্লাই করার সাথে সাথে আবার মেসেজ দিল,
– আচ্ছা।
– একটু পর এসে পরবো ম্যাম রেডি থাকবেন আশা করি, আজকে আমরা ঘুরতে বেরুবো।
– রিয়েলি?
– হুম।
.
এরপর আর কিছু বললো না তাই আমিও আমার কাজে মনোযোগ দিলাম।

কিছুক্ষণ কাজ করার পর কাজের চাপ অনেকটা কমে গেল তারপর ধীরে ধীরে স্যারের ফাইল গুলো পূর্ণ করে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

নিজের বাইক নিয়েই অফিসে আসি, তাই বাইক নিয়ে খুব দ্রুত বাসায় পৌঁছে গেলাম।

বাসায় গিয়ে দেখি পাগলীটা সাজুগুজু করে আম্মুর পাশে বসে চুপটি করে টিভি দেখছে আর আমি সামনে যেতেই একটা ভেংচি কাটলো।

এরকম করার মানে টা আজ বুঝতে পারলাম না।
.
যাইহোক আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আর ফ্রেশ হয়ে এসে আম্মুকে বলে ওকে নিয়ে বের হলাম ঘুরতে,

রোদের তাপ টা কমে এসেছে তাই ঘুরতেও ভালো লাগছে। এখন আর বাইক নিয়ে আসিনি, দুজন রিক্সা করেই ঘুরতেছি।

রাইসা আমার সাথে বাইকে ঘুরতে পছন্দ করে না, ও চায় সবসময় আমি ওর পাশে বসে থাকি তাই দুজন রিক্সা করেই বের হই ঘুরতে আসলে।
.
– ফুচকা খাবে?
মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি জানালো তাই আমি রিক্সাওয়ালাকে বলে কোনো এক ফুচকার দোকানে যেতে বললাম।

দোকানের সামনে গিয়ে দুজন নেমে পরলাম আর রিক্সা মামার ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া মাত্রই ওনি চলে গেল।

ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর আমি ওর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।

কতগুলো ফুচকা খেয়েই হাতের ইশারায় দোকানিকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে,
– আফা হাত নাড়াচ্ছেন ক্যান? কিছু লাগবো?
– ভাই ও কথা বলতে পারে না। ঝাল লাগছে তাই পানি চাচ্ছে পানি দেন।
– মাফ করবেন ভাই বুঝি নাই।
– সমস্যা নাই।
তারপর ওকে পানি খাইয়ে আবার দুজন হাঁটা ধরলাম সামনের দিকে। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখটা ফ্যাকাসে করে রাখছে,

হয়তো ঐ দোকানির কথায় মন খারাপ করছে।
– এই মন খারাপ?
– উউ ( মাথা নেড়ে না জানালো)
– চলো ওই মাঠের পাশে গিয়ে বসি।
তারপর পাগলীটাকে নিয়ে রাস্তার পাশে এক বড় মাঠের অপর পাশে গিয়ে বসলাম।

ঘাসের উপর বসা মাত্রই আমার পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার ফোনটা বের করলো।

তারপর ফোনে ডাটা অন করে আবার আমার হাতে ফিরিয়ে দিল আর ওমনি ম্যাসেঞ্জারে পুকিং করে শব্দ হলো।

সিন করতেই দেখি ও মেসেজ দিছে ওর ফোন থেকে। অতঃপর দুজনে বসে বসে চাটিং করতে লাগলাম।
.
ও মুখ দিয়ে ওর অনুভূতিটা প্রকাশ করতে না পারলেও সবসময় ইশারা দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করে।

এতো বছর ওর সাথে থাকতে থাকতে ওর ইশারা গুলোর ভাষা বুঝে গেছি প্রায় তবুও যখন যেটা বুঝতে না

পারি তখন সেটা মেসেজে বলে বা সামনে খাতা কলম থাকলে লিখে প্রকাশ করে।
আমি যখন অফিসে থাকি তখন আম্মুর সাথে থাকে সবসময়, আম্মু ওকে খুব আদর করে তাই কখনো কখনো

একটু একটু ঝগড়া করলে আম্মুর কাছে গিয়ে বিচার দেয় আর আমাকে আম্মুর কাছে কানমলা খেতে হয়।
.
ভালবেসেই বিয়ে করেছিলাম ওকে, এক বছর হয়নি এখনো আমাদের বিয়েটা হয়েছে।

অন্য সবাই যেমন করে ভালবাসে আমিও তেমন করে ভালবেসে ছিলাম এই বোবা মেয়েটাকে।

যখন ওকে প্রপোজ করেছিলাম তখন সরাসরি না করে দিয়েছিল, খুব কাদতেঁ হয়েছিল আমাকে ওর ভালবাসার জন্য কিন্তু অবশেষে আমিই জিতে যাই।
.
কয়েক বছর আগে,
আজ কলেজের প্রথম দিন, অনার্স ফাস্ট ইয়ারে। অনেক আগেই ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারের রেসাল্ট দিয়েছিল তখন চিটাগাং

থাকতাম, ভেবে ছিলাম এখন অনার্সে ভর্তি হই। যেই ভেবে ছিলাম আর ওমনি আব্বুর বদলি হয়ে যায় ঢাকায় তাই

আমিও ভাবলাম ঢাকায় গিয়েই পড়বো। আর সেই ভাবে আজ ঢাকা কলেজে প্রথম দিন।
.
প্রথম দিন ক্লাস শেষ করে বাসায় যাই, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে বাসার ছাদে পা দেওয়া মাত্রই চোখ গেল ছাদের পশ্চিম পাশে।

দেখি সবুজ রংয়ের থ্রি পিচ পরে একটা মেয়ে বসে বসে বই পড়তেছে। কি সুন্দর চেহারা,

মায়া যেন মুখ থেকে উপচে পরছে, অনেক সময় পলকহীন ভাবে সেই মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল এই অচেনা অজানা মেয়েটাকে।
.
আজ কয়েক দিন ধরে থাকছি এখানে কিন্তু আগে তো দেখিনি একে হঠাৎ করে আজ আসলো কোথা থেকে।

কাছে গেলাম কিন্তু বই থেকে মুখ উঠালো না তাই ডাক দিলাম,
– এইযে কে আপনি?

– নাম কি আপনার?

– আগে তো দেখিনি হটাৎ করে কোথা থেকে আসলেন?

– বাব্বা, কিউট হয়েছেন বলে কি ভাব! অন্তত একটা প্রশ্নের উওর তো দিবেন।

– মুখে টেপ লাগাইছেন নাকি যত্তোসব।
.
এইটুকু বলতেই দাঁড়িয়ে পরলো তারপর আমার চোখে চোখ রেখে একটু তাকালো, দেখি চোখে পানি টলমল করছে এই বুঝি কেঁদে দিল।

অবশেষে সত্যি সত্যিই কেঁদে দিল,
– এই কাঁদছেন কেন?
আর কিছু না বলে দৌড়ে বই নিয়ে নিচে চলে গেল আর আমি তো মদনার মতো ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কি ব্যপার এমন হলো কেন?

কিছুক্ষণ পর নিচে চলে গেলাম, আমার রুমে গিয়ে বসা মাত্রই আম্মু আসলো।
– ছাদে গেছিলি একটু আগে?
– হ্যাঁ।
– একটা মেয়ে ছিলো ওখানে?
– হ্যাঁ। কেন?
– ওকে কি বলেছিস?
– কি বলবো? জাস্ট একটু রাগ দেখাইছি, ভাব নেয় তাই।
– ওরা আজকে সকালে এসেছে এখানে তুই কলেজ যাওয়ার পর আর ওরা আমাদের নিচের তলায় থাকে, স্যরি বলে আয় যা।
– কেন? স্যরি বলবো কেন?
– ও কথা বলতে পারে না।
.
আম্মুর মুখে কথাটা শুনেই মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠলো। বিশ্বাস হচ্ছে না আম্মুর কথা কিন্তু মেয়েটার আচরণ দেখে বিশ্বাস না করেও পারছি না।

আজ আর ওনাদের কাছে যাব না, কাউকে চিনি না, হুট করে গেলে কি ভাববে কে জানে। ওনারা আসা মাত্রই হয়তো আম্মু ওনাদের সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে কিন্তু আমি তো আর পারবো না এতো তাড়াতাড়ি ভাব জমাতে তবুও আবার ছেলে মানুষ বলতে কথা।
.
পরের দিন, কলেজ শেষ করে বাসায় আসতেছি সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই এক মহিলা ডেকে উঠলো। হয়তো ওনিই সেই মেয়েটার আম্মু,
– কলেজ ছুটি হয়ে গেছে তোমার?
– হ্যাঁ আন্টি।
– ওহ্ আচ্ছা।
– আন্টি আমার নাম জানেন কিভাবে?
– তোমার আম্মু তো সবসময় তোমার গল্পই করে আমার কাছে এসে। যাইহোক আসতে না আসতেই তোমার আম্মুর মতো একটা ভালো বান্ধবী পেয়েছি।
– আচ্ছা এখন আসি আন্টি, ফ্রেশ হবো।
.
এইটুকু বলেই চলে আসলাম। বিকেলে পড়ন্ত রোদ তাই আর রুমে বসে মোবাইল টিপতে ভালো লাগছিল না তাই আবার একটু ছাদে গেলাম।

আজকেও দেখি সেই মেয়েটা বসে আছে আর বসে বসে গান শুনতেছে ফোনে কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমাকে দেখা মাত্রই নিচে চলে

আসতে লাগলো আর আমি তখনই ধপাস করে ওনার সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম।
– স্যরি,
তবুও পাশ কাটিয়ে চলে আসতে লাগলো, মনে হয় মন খারাপ করছে আমার উপর, তাই আবার সামনে গিয়ে দুই কান ধরে বসে

পরলাম আর তখনই খিলখিল করে হেসে উঠলো।
– স্যরি,
তারপর আমার কাছে এসে ওর হাত দিয়ে আমার হাত দুটি কান থেকে সরিয়ে দিল। আর তারপর মুখটা বাঁকা করে হাসি দিল।
– আপনার নাম?
– ( চুপ)
– ও আপনি তো বলতে পারেন না, এখন কিভাবে কথা বলি আপনার সাথে?
এইটুকু বলা মাত্রই আমার হাত থেকে আমার ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিল তারপর কি কি যেন করলো কিছুক্ষণ পর আবার আমার

হাতে ফিরিয়ে দিল ফোন। দেখি ফোনের ডাটা অন করা আর ম্যাসেঞ্জারে রাইসা ইসলাম আইডি থেকে একটা মেসেজ এসেছে,
– আমার নাম রাইসা।
.
ওয়াও মেঘ না চাইতেই জল। আমি শুধু নাম জিজ্ঞেস করেছি আর ওনি ফেসবুক আইডিই দিয়ে দিল আর এটাই

এখন ওনার সাথে কথা বলার একটা উওম ব্যবস্থা।
তারপর দুজনে ছাদে বসে বসে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে নিলাম তারপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম।

দুজন একসাথে পাশাপাশি বসে আছি কিন্তু কেউ কারো মনের অনুভূতি গুলো কথায় প্রকাশ করতে পারছি না,

আমি পারলেও তা মূল্যহীন কারণ শ্রোতা তো আর বলতে পারছে না তাই এখন আমাদের একমাত্র কথা বলার মাধ্যম হলো ইশারা আর ফেসবুক।
.
এভাবেই ধীরে ধীরে ফ্রেন্ডশীপ গড়ে উঠে ছিল এই বাকহীন মেয়েটার সাথে। দুজন প্রতিদিন বিকেল বেলা ছাদে পাশাপাশি বসে ফেসবুকে গল্প করতাম,

ফেসবুকের মাধ্যমেই ঝগড়া করতাম কিন্তু যখন একটু বেশি রাগিয়ে দিতাম তখন ও ওর জায়গা থেকে এসে আমার পিঠে

কিল ঘুসি দিত আর আমি জোরে জোরে হাসতাম। খুব ভালো লাগতো যখন ও পাশে বসে থাকতো আর ওর চুল গুলো বাতাসে উড়তো।

যখন পাশে বসে ঝগড়া করতাম তখন এক রাগী লুক নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতো কেন জানি না তখন ওকে ভালবাসতে ইচ্ছে করতো আমার।
.
রাইসা এখন ডিগ্রিতে পড়ে আর আমি অনার্সে, ও কলেজে খুব কম যেতো কারণ ও কলেজে গেলে কেউ ওর সাথে কথা

বলতে পারতো না তাই তেমন বন্ধুও ছিলো না ওর।
ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করার দেড় বছর পর,
ছাদে দাঁড়িয়ে আছি রাইসার সামনে আর আমার হাতে একটা লাল গোলাপ আমার গালটাও লাল হয়ে গেছে কারণ

একটু আগে আমি রাইসাকে প্রপোজ করেছি আর ও একটা থাপ্পড় দিয়ে আমার গাল লাল করে দিয়েছে।
.
– মারলে কেন?
ও তো আর মুখে বলতে পারে না তাই হাত দিয়ে ইশারা করে কি যেন বুঝাতে চাইছে আর আমি সেগুলোর

আগা মাথা কিছুই বুঝছি না তাই পকেটে রাখা ছোট প্যাড আর কলম দিয়ে দিলাম ওর হাতে।
– ফাজলামো করো আমার সাথে? ( প্যাডে লিখছে)
– ফাজলামো করবো কেন? যা সত্যি তাই বলছি, আমি তোমাকে ভালবাসি।
– দেখো আমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানো বন্ধ করো প্লিজ, আমার আর সয্য হচ্ছে না।
– মিথ্যা না প্লিজ বিশ্বাস করো।
– আমার মতো একটা বোবা মেয়ের কাছে তোমার মতো একটা ছেলের ভালবাসা পাওয়া এটা মিথ্যা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না তাই দয়া করে এসব বন্ধ করো।
– আমি কি তোমাকে কখনো বলেছি তুমি বাকহীন মেয়ে?
– না।
– তাহলে আমার ক্ষেত্রে তুমি কেন নিজেকে এমন ভাবছো? নিজেকে এতো অবহেলা করছ কেন? তোমাকে ভালবাসা নিষেধ নাকি?
– আমি জানি না, বায়।
প্যাড টা আমার হাতে দিয়ে দৌড়ে কাদতেঁ কাদতেঁ নিচে চলে গেল। আমি এবার ঠিক বুঝতে পারছি ও আমার প্রতি কিছু টা হলেও দূর্বল,

তা না হলে চলে যাওয়ার সময় এভাবে কাঁদতো না। কিন্তু ও সেটা নিজে থেকে প্রকাশ করতে পারছে না।
.
এরপর প্রায় সপ্তাহ খানেক প্রতিদিন ওর জন্য ছাদে অপেক্ষা করেছি কিন্তু আসেনি, ফোনে শতশত মেসেজ করেছি কিন্তু রিপ্লাই দেয়নি,

ফোন দিলে কেটে দিয়েছে। যখন ওকে ডাকতে ওর রুমের কাছে যেতাম তখনই ও আমাকে দেখা মাত্র রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

ওকে কাছে না পাওয়া আর এমন অবহেলার জন্য প্রতিদিন চোখের জল ফেলতাম, খুব ভালবেসে ফেলেছি ওকে,

এতদিন ধরে একটা কথাও বলছে না খুব মিস করতেছি ওকে। আর বয়ে বেড়াতে পারছি না ওকে ছাড়া এই একাকিত্ব।
.
আরো কিছুদিন পর,
ছাদে বসে আছি, পাশে রাইসা নেই। যেদিন ওকে প্রপোজ করেছিলাম সেদিন থেকে ওকে ভালভাবে দেখিনি,

আমার সামনে আসতো না আর কথা তো একদমই হয়নি। ছাদে বসে ওকে একটা মেসেজ লিখলাম,
– আর পারছি না আমি, তোমার অবহেলা আর আমার একাকিত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমাকে,

সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাদে বসে থাকবো আজ যদি সামনে না আসো তাহলে আর কোনো দিন আমাকে দেখতে পাবে না, হারিয়ে যাব চিরদিনের জন্য।
মেসেজ টা লিখে পাঠানোর কতক্ষণ পরই দেখি একটা বড় প্যাড আর কলম হাতে ছাদে আসছে।
.
– মেসেজে কি বললে তুমি?
– আজ ভালবাসি বলো নয়তো চিরদিনের জন্য হারাবে।
– কি করবে তুমি?
রাইসা এ কথা বলার পর আমি ছাদের একেবারে কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
– ছাদটা খুব উচুঁ তাই না?
ওমনি দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে কিনারা থেকে সরিয়ে আনলো।
– আনলে কেন?
– পড়ে যাবে তো তুমি।
– পরলে মরে যাব আর মরে গেলে তোমার কি? তোমার তো কিছু যায় আসে না।
এ কথা বলার পর মাথাটা তুলে উচুঁ করতেই আবার একটা থাপ্পড় দিল এবার আর দৌড়ে চলে যায়নি, সরাসরি বুকে এসে কান্না করে দিছে।
.
ব্যস পেয়ে গেলাম আমি আমার বাকহীন পরীটাকে। দুজনে এক হওয়ার পর থেকে আমি আর ওকে

চোখে চোখে রাখবো কি ওই সবসময় আমার উপর নজরদারি করত আমি কখন কি করি!
অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে একটা চাকরির জন্য অপেক্ষা করতেছি আর এখনো কাউকে জানাইনি আমাদের

সম্পর্কের কথা আগে একটা চাকরি পাই তারপর সরাসরি আম্মুর কাছে রাইসাকে চাইবো। কথা বলতে না পারুক,

পরিবারকে গুছাতে আর ভালবাসতে তো পারবো, এতেই আমার অনেক।
.
মাঝেমধ্যে একটু ছোটখাটো ঝগড়া হতো, রাগ দেখিয়ে কথা বলতাম না আর ও তখন বসে বসে কাঁদতো আর বলতো,

আমি কথা বলতে পারি না বলে আমার সাথে রাগ দেখাও তাই না, নতুন কাউকে খুজেঁ নাও গিয়ে।
যখন ও এভাবে বলতো তখন আমার নিজেরই খুব কষ্ট হতো তাই আর রাগ করে থাকতে পারতাম না দুজনে আবার মিলে যেতাম।
.
চাকরি পাওয়ার কয়েক মাস পর রাইসাকে নিয়ে দুজনে একসাথে আম্মুর কাছে যাই আর তখন

রাইসার আম্মু আর আমার আম্মু দুজনে একসাথে বসে গল্প করছিল। আমি আর রাইসা গিয়ে দুজনে ওনাদের সামনে দাঁড়াই।
– এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন কিছু বলবি?
– হ্যাঁ আম্মু।
– বল,
– আম্মু আমি রাইসাকে বিয়ে করবো।
– কিইইই?
আন্টি আর আম্মু যেন আকাশ থেকে পড়লো, দুজনেই খুব অবাক। রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও খুব ভয়

পেয়েছে কারণ ও ভাবছে আমার আম্মু হয়তো ওকে মেনে নিবে না। ওর আম্মু তো চুপ করে বসে আছে হয়তো ওনি কোনো আপত্তি করবে না।
– কবে থেকে চলছে এসব হ্যাঁ? ( জোরে ধমক দিয়ে)
ধমক শুনে আমিও খুব ভয় পেয়ে গেলাম আর রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেঁদে দিছে। এই রে আম্মু রাইসার দিকে যাচ্ছে, কি যে বলবো ওকে!
– এই মেয়ে আমার ছেলেকে ভালোবাসিস?
– ( মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দিল)
– পাগলী মেয়ে, আমার সাথে না তোর খুব ভাব তাহলে আগে কখনো বলিসনি কেন?
.
আম্মুর এমন কথা শুনে তো আমি আবারও রিতিমত অবাক হলাম আর রাইসাকে দেখি ইতিমধ্যে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিছে।
অতঃপর দুই পরিবারের মতেই আমাদের বিয়েটা সুন্দর ভাবে হয়ে যায়। বাসর রাতে যখন বাসর ঘরে গেলাম তখন ও খুব কান্না করেছিল রাইসা,

ও হয়তো এতটা কল্পনা করেনি। সেদিন সারারাত ও আমার বুকে মাথা রেখে আমার সাথে ফেসবুকে চাটিং করেছে।

মুখে না বলতে পারুক লিখে ওর অনুভূতিটা তো আমার সাথে শেয়ার করতে পারে এতেই আমি অনেক সুখী।
.
অনেক ভেবে ফেললাম চলে যাওয়া দিন গুলো, সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখন বাসায় যাওয়া দরকার।

পাগলীটাকে নিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা হলাম। আমার ভালবাসা আর বিশ্বাসের কাছে ওর প্রতিবন্ধকতা মূল্যহীন।
ভালবাসি ঐ মায়া ভরা নিশ্চুপ মেয়েটাকে।
ভালবাসি মেয়েটার হাতের ইশারাকে। সারাজীবন আগলে রাখবো এই বুকের ভেতর কালো লম্বা চুলের ঐ কেশওয়ালীকে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত