অস্তিত্বে তুমি

অস্তিত্বে তুমি

বিকাল ৫টা এতোক্ষনে অফিস শেষ করে বাস স্ট্যান্ডে বাস ধরার কথা। হঠাত কিছুক্ষন আগে আমার বস ডেকে পাঠালেন তার রুমে। খুশি মনে রুমে গিয়েই স্যারের কথা শুনে মুখটা কালো হয়ে গেল আমার।আজকে কথা ছিল অফিস শেষ করে সিনহার সাথে বের হবো একটু আমার মেয়ে মুমুর কাপড় কেনার জন্য। বেশ শীত পড়েছে। এদিকে স্যার ডেকে বললেন শুভ নিলার সাথে আমাদের প্রজেক্ট সাইট টা একটু ঘুরে আসো তো। বসের কথার উপর কথা বলা মানে চাকুরীর বারোটা বাজানো।উপায় না দেখে রাজি হলাম যাওয়ার জন্য। আমার অফিস ধানমন্ডিতে আর প্রজেক্ট এড়িয়া আজিমপুরের দিকে।

রাস্তায় জ্যাম থাকায় বাস না নিয়ে একটা রিক্সা নিলাম আমি আর নিলা। ওদিকে আমার প্রান প্রিয় বউটা কল দেয়া শুরু করছে। আমি কল ধরে বললাম সোনা আমিতো একটু অফিসের কাজে আটকে গেছি তুমি একটু মুমুকে সাথে নিয়ে ওর সোয়েটার আর যা যা লাগে কিনে নিয়ে এসো।বউ আচ্ছা কাজ শেষ করে সাবধানে এসো বলে ফোন রেখে দিলো।কিন্তু রিক্সা নিউ মার্কেটের সামনে জ্যামে পড়লো হঠাত সিনহার ফোন এই বাবু কই তুমি? আমি একটু অবাক হলাম হঠাত এতো ভদ্র ব্যবহার ওতো এমন ভাবে বলেনা আমি বললাম আমিতো অফিসের নিচে চায়ের দোকানে চা খাচ্ছি, তুমি কোথায় জিজ্ঞাস করতেই বল্ল তুমি যেখানে চা খাচ্ছো তার ঠিক উপরে আমি আর মুমু চা খাচ্ছি ওভার ব্রিজের উপর। উপরে তাকাইয়া আমার কলিজা শুকাইয়া কাঠ মমু আর মুমুর আম্মু কোমরে হাত বেধে তাকিয়ে আছে আমার দিকে পাশে নিলা বসা রিক্সায়। ভয়ে আমার ঘাম ছুটা শুরু করলো। সিনহা কিছু না বলেই হন হন করে মুমুর হাত ধরে চলে গেল।বুঝলাম আজ আমার কপালে শনি আছে। কোনমতে প্রজেক্টের কাজ শেষ করে বাসার সামনে এসে দাড়িয়ে আছি। কি জবাব দিবো সিনহা কে তাই ভাবছি । ঠিক করলাম যা হবার হবে সত্যিটাই হবে। কলিং বেল একবার বাজাতেই দরজা খুলে দিলো আমার ৫বছর বয়সী মেয়ে। সেও গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মা মনি কই জিজ্ঞাস করতেই বলল বাবাই খুব খারাপ তুমি। আমাদের রেখে নিলা আন্টির সাথে ঘুরছো? আম্মু খুব রাগ করছে।আমি মেয়েটার হাতে চকলেট আর চিপস দিয়ে বললাম মা মনি তুমি কিছুক্ষন কানে হেডফোন দিয়ে কার্টুন দেখো এই নাও ফোন।

মেয়ে খুশি মনে চলে গেল।যাক যতই ঝগড়া হোক মেয়ে শুনতে পাবেনা।রান্নাঘর থেকে শব্দ আসছে আমি চুপিচুপি রান্নাঘরে গিয়ে সিনহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম, এটা আমার বউ খুব পছন্দ করে কিন্তু আজ কোন রেসপন্স করলোনা। বুঝলাম ম্যাডাম ভয়ানক ক্ষেপেছেন।উনি আপন মনে মাছ ভাজি করছেন কিন্তু চোখ টকটকে লাল বুঝলাম খুব কেদেছে মেয়েটা। এবার সিনহাকে সামনে ঘুরিয়ে আমি কান ধরে বললাম বিশ্বাস করো সোনাপাখি আমি অফিসের কাজেই যাচ্ছিলাম তোমায় যদি বলতাম নিলা আমার সাথে আছে, খুব রাগ করতে তুমি তাই বলিনি ভয়েতে।এইই বাবুই পাখি মাফ করে দাও প্লিজ। ও খুব শান্ত ভাবে বল্ল খাবার রেডি আছে টেবিলে খেতে এসো ফ্রেশ হয়ে। বুঝলাম শুভ তুমি আজকে বড় মাইনকা চিপায় পড়ছো। সামনে কঠিন বিপদ তোমার।বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম। বউ আমার প্রিয় রুই মাছ ভাজি করছে।কিন্তু আমি আবার মাছের কাটা বেছে খেতে পারিনা। বিয়ের আগে কাটা বেছে দিতো মা। আর এখন দেয় সিনহা।

কিন্তু আজকে যা রাগ করছে কাটা বাছার জন্য ডাক না দেয়াই শ্রেয়। আমি কেবল মাছ দিয়ে ভাতের প্রথম লোকমা মুখে নিছি অমনি কাটা বাধলো গলায় আমিতো চিল্লাপাল্লা লাগাই দিছি।সিনহা তাৎক্ষণিক দৌড়ে আসলো চোখে মুখে আতংক ওর। তারপর, হা করো তারাতারি প্লিজ, কে তোকে আলগা মাতব্বরি করে কাটা বাছতে বলেছে আমিকি মরে গেছি নাকি?কথাটা বলতেই ওর মুখ চেপে ধরলাম প্লিজ এমন আর কক্ষনো বলবা না সিনহা।ও জলে ভেজা করুন চোখে একবার তাকালো, তারপর হা করতে বলে গলা থেকে অভিনব কায়দায় কাটাটা উঠিয়ে দিলো।তারপর নিজ দায়িত্বে কাটা বেছে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। আমি মনে মনে বলতেছি, যাক বাবা বরফ গলছে তাহলে,কিচ্ছু বললনা এতো কিছুর পরও। মনে হয় এবারের মতো মাফ করে দিছে। কিন্তু আমার ধারনা ভুল হলো শোবার ঘরে গিয়ে।মুমু আগেই ঘুমিয়ে গেছে পাশের ঘরে।ঘরে ঢুকেই দেখি ইয়া বড় একটা কোলবালিশ বেডের মাঝখানে। এটা দেইখা আমার প্রান যায় যায় অবস্থা।

সিনহা কি তাহলে আজকে আমার বুকে ঘুমাবে না?? এই মেয়ে বিয়ের পর একদিনো ঘুমাইনি আমার বুকে ছাড়া আর আজ…।সিনহাকে বললাম সোনাপাখি মাফ করে দাও প্লিজ। এমন আর ভুলেও হবেনা। সত্যি অফিসের কাজে গিয়েছিলাম। সিনহা বল্ল আমি জানি সেটা, কিন্তু মিথ্যা বলছো এর শাস্তি পেতেই হবে। চুপচাপ শুয়ে পড়ো কোলবালিশের ওপাশে।ভুলেও আসার চেস্টা করবানা এপাশে, তাহলে কিন্তু কাল সোজা বাপের বাড়ি চলে যাবো।ভাবলাম থাক একটা রাতই তো। পাপ যখন করছি, শাস্তি তো পেতেই হবে। একাই শুয়ে পড়লাম আর মনেমনে বসের গোষ্ঠী উদ্ধার করছি।রাত দুটা পাজি বউটা ঘুমাইছে হয়তো কিন্তু বাজে, আমার ঘুম উধাও বুকটা ফাকা ফাকা লাগতেছে তবুও ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি।

হঠাত অনুভব করলাম কোলবালিশটা সরে গেল কেউ একজন আমার দুইহাত সরিয়ে টুক করে আমার বুকের মধ্যে ঢুকে গেল তারপর আস্তে আস্তে বকা দিচ্ছে পাজি ছেলে একটা, ঘুমাইতেছে দেখো কত্ত আরামে, স্বার্থপর একটা। বলতেই আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বল্লাম নাগো বাবুইপাখি ঘুমাইনি তোমায় ছাড়া।তারপর পাগলীটার কপালে আর চোখে পাপ্পি দিলাম এরপর বউ লজ্জিত মুখে বল্ল এহহ ঢং বুড়ো বয়সে ভীমরতি মেয়ের বাপ হইছো তবুও আহ্লাদ গেল না। আমি বেজায় খুশি, অল্পতেই রাগ ভাংলো তাহলে। হঠাত সে আমার শার্টের কলার চিপে বল্ল কি ভাবছিস ভুলে গেছি আমি? তুই যদি ফের নিলার সাথে যদি রিক্সায় উঠিস, তাহলে দেখিস কি হাল করি তোর।তারপর আমার কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে আবার বাচ্চা মেয়ের মতো আমার বুকে শুয়ে পড়লো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এমনি পাগলী মেয়েটা।বড্ড অভিমানি। তবুও তাতে নিজের ভালবাসার পরিমানটা কমবে না।ঘুমিয়ে গেছে আমার পাগলীটা, তাকিয়ে আছি নিস্পাপ মুখটার দিকে।এই মুখটার দিকে তাকিয়ে হাজার বছর পার করতে পারি আমি। কারন আমার অস্তিত্বে যে মিশে গেছে পাগলীটা। একে ছাড়া নিজেকে কল্পনাই করতে পারিনা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত