তাড়াতাড়ি করে গাছ থেকে গোলাপটা ছিঁড়তে গিয়ে আঙ্গুলে কাটা বিঁধল।সরু নলের মত আচমকা রক্ত বেরিয়ে লাল গোলাপটাকে আরো রাঙ্গিয়ে লাল করে দিল।অর্পার প্রতি যে ভালোবাসাটা জন্মিয়েছে তা অনেকদিন ধরেই পুষে আসছি।ভালোবাসাটা ছোট্ট বিন্দু থেকে বিশাল আকাশের চেয়েও আরো বড় বৃত্ত হয়েছে।এখনি সময় অর্পাকে তা বলার।নাহয় সে হারিয়ে যেতে পারে দূর থেকে আরো বহু দূরে।গোলাপটা নিয়ে মোড়ের টং দোকানটায় বসলাম।এককাপ গরম চা খাওয়া দরকার।
৪টা বাজে।একটু পরই অর্পা এই পথ দিয়ে কোচিং থেকে আসবে।হেঁটেই বাড়িতে যায় সে।এখান থেকে কম করে হলেও দশ মিনিটের পথ।যাক একসাথে হাটতে হাটতে অনেকক্ষন ই কথা বলা যাবে।কিভাবে তাকে প্রেম নিবেদন করব! একটু প্রেকটিস করা দরকার।কিন্তু অর্পা তো আমার দিকে তাকায় ই না।আর তাকালেও এমন ভাবে তাকায় যেন কোন বড় ধরনের ভুল করেছি।সে কি আমার ভালোবাসাটা গ্রহন করবে?
“মামা চা লন”
দোকানের ছোট্ট ছেলেটার কথায় ভাবনায় ছেদ পরল।চা হাতে নিয়ে চুমুক দিতে গিয়ে দেখলাম একটা পিঁপড়া গরম চায়ে সাঁতার কাটছে।খুব আর্তিন্ন আর্তনাদ করছে হয়ত।আচ্ছা পিঁপড়া কি কাঁদতে পারে! কথা বলতে পারে! কষ্ট পেলে কি আর্তনাদ করতে পারে! পিঁপড়াটাকে বাঁচানো ধরকার।ডান হাতের তর্জনি আঙ্গুলের ঢগা দিয়ে পিঁপড়াটাকে তুললাম।ব্যাঞ্চিটার উপর পিঁপড়াটা রাখতেই নেতিয়ে গেল।পিঁপড়াটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল! পিঁপড়া কি নিঃশ্বাস নিতে পারে! এসব ভাবার দরকার নেই। অর্পাকে বলার ভেবে রাখা সব গুছানো কথা গুলো এলোমেলো হয়ে যাবে।মনের কথাগুলো এসে ঠোঁটে ভিড় জমিয়েছে।ঐতো অর্পা আসছে।
বসার জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম।কাপ ভর্তি চা রেখে দিয়ে চায়ের দামটা মিটিয়ে টং থেকে বেড়িয়ে রাস্তার বট গাছটার নিচে সৌনালি রোদের ছায়ায় দাঁড়ালাম।বসন্তের বিকেলে পরন্ত রোদ।তবুও যেনো তেজ গায়ে ভুবনে নেমেছে।সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে অর্পা।অর্পাকে থামানো দরকার।
“এই……” ডেকে উঠলাম অর্পাকে
থমকে দাঁড়ালো সে।লালচে একজোড়া অগ্নিচোখে তাকাল অর্পা।আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম।আশে পাশে মানুষ আছে নাকি! চারদিকে একদৃষ্টিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম।নাহ চারদিক জনশূন্য।তাহলে লালচে চোখে তাকানোর মানে কি! অর্পা আমাকে দেখলে এভাবে বড় বড় চোখে তাকায় কেন! তাহলে কি অর্পা আমাকে পছন্দ করে না! অর্পা সামনের দিকে পা বাড়িয়ে চলে যাচ্ছে।এভাবে তাকালে কিভাবে ভালোবাসার কথাটুকু বলব তাকে! যা কিছুই হোক হবে।সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম।গত একবছর ধরেই শুধু ভালোবাসাকে পুষেই আসছি।আজ বলতেই হবে না বলা কথাগুলো।অর্পার সামনে দাঁড়ালাম।
কিভাবে কথা বলা শুরু করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।অর্পার মেজাজটা তীঘ্ন মনে হচ্ছে।
বড় একটা নিঃশ্বাস নিলাম।বুকে কিছু সাহস মনে হচ্ছে জন্মেছে।এখনি উপযোক্ত সময় অর্পাকে ভালাবাসার কথাটুকু বলার।অর্পার অগ্নিকুন্ড চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে গুছানো সব কথাগুলো এলোমেলো হয়ে গেল।
-কি হয়েছে! পথ আগলে দাঁড়ালেন কেন?
তার কন্ঠে বিরক্তির আভাস।
-বিরক্ত করলাম আপনাকে
-বিরক্ত করার আর বাকি রইল কই! কবে থেকেই দেখছি আমার পিছু নিয়েছেন সমস্যা কি আপনার! উত্তম মধ্যম খাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি! আর হাতে এটা কি নিয়ে ঘুরছেন বকাটে ছেলেদের মত! ওহ,আপনিও তো বকাটেদের মধ্যে একজন। শুনুন আর যেন আপনাকে আমার চারপাশে ঘুরঘুর করতে না দেখি।মাথায় রাখবেন কথাটা।যত্ত সব আজাইরা মানুষ
ঝাঁঝালো কথাগুলো চেঁচিয়ে বলে হন হন করে হাটা ধরল অর্পা।কিছু বলার সুযোগও দিল না।পা দুটো কাঁপছে আমার।ভয় পেলে আমার পা কেন জানি কাঁপে।ভয় পেলাম নাকি! ধুর ছাই সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হলাম।অর্পা এমন ব্যবহার করল কেন! আসলেই কি অর্পা আমাকে পছন্দ করে না! আমি কি সত্যিই বকাটে ছেলে! বকাটে কাকে বলে সেটার সজ্ঞা জানা নেই।কাউকে খুব ভালোবেসে তার আশেপাশে থেকে তাকে চুপিচুপি কিংবা প্রকাশ্যে সারাক্ষন দেখলে কি তাকে সেটা বকাটের সজ্ঞার মধ্যে পড়ে? হয়ত বা এটাই হবে।
পরন্ত বিকেলে সাদা বকেরা ঝাঁক বেঁধে পা দুটো পেছনের দিকে তাক করে উড়ে যাচ্ছে তাদের নীড়ে।অর্পার বাসার নিচের ফ্লেক্সিলোড দোকানটায় বসে আছি।দোকান্দার লোকটা বুড়ো বয়সের।আঙ্কেল ডাকা যায়।নাকি দাদু ডাকব! দাদুই ডাকি,তাহলে বেশ খানিকটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক হবে।অর্পা নিশ্চয় এখানেই রিচার্জ করে।যেভাবেই হোক নাম্বারটা সংগ্রহ করতেই হবে।
অর্পার বাসা থেকে ছোট্ট একটা মেয়ে দোকানের দিকে আসছে।কে হতে পারে! তার কি ছোট বোন আছে! থাকতে পারে।হাতে এক টুকরো কাগজ।
-এ..এই নাম্বারে এ…একশ টাকা দেন।
আধো আধো কন্ঠে ছোট্ট মেয়েটি বলল।দেখতে খুবই মিষ্টি।চেহারাটাঅবিকল অর্পার মত।অর্পার বোন এটা নিশ্চিত হলাম। হাতে ইশারা দিলাম।মেয়েটা কাছে এলো।
তুলতুলে গাল দুটো টেনে কপালে একটা চুমু খেলাম।ফুকলা দাঁতে মেয়েটা ছোট একটা হাসি দিল।
-তোমার নাম কি ছোট্ট পাখি।
-আপনাকে কেন বলব? আপনি ভালো না।
-কেন ছোট্ট পাখি!
-আমাকে ছোট্ট পাখি বলেন কেন?
-সেটা পরে বলব।আগে বলো তোমার নাম কি?
-বলব,চকলেট কিনে দিবেন?
-আচ্ছা ছোট্ট পাখি,দিব
-আমার নাম অবন্তি
-তোমার আপু কোথায় এখন?
-আপনি কি আমার আপুকে চিনেন?
-হুম।তোমার আপু আমার খুব ভালো বন্ধু
-মেয়েরা কি ছেলেদের বন্ধু হয়!!
প্রবল কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করল সে।
-হুম হয়।তোমার আপু হলো বড় পাখি,আর তুমি ছোট্ট পাখি।এবার বুঝেছো তো কেন তোমাকে ছোট্ট পাখি বলেছি।
-আপনি অনেক ভালো।চকলেট দেন।বেশি দেরি করলে আপু আমাকে বকা দিবে
-এটা কার নাম্বার ছোট্ট পাখি?
-কেন! আপুর নাম্বার দেখেও চিনেন না নাকি!
ফিকে একটা হাসি দিয়ে গোটা কয়েকটা কিটকেট চকলেট কিনে অবন্তিকে দিয়ে দিলাম।ফুকরা দাঁতে আবারো হেসে দৌড়ে বাসায় চলে গেল।
বেলকুনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে অর্পা।অবন্তি নিশ্চয় সব কথা গুলো তার কাছে বলেছে।অর্পা এক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে বিভর বিরক্তির ছাপ।অর্পা আমার দিকে এভাবে ঘৃনিত চোখে তাকায় কেন! কোন কারনে কি আমার প্রতি অর্পার ঘৃনা জন্মেছে!!ঘৃনা করতে হলেও তো আমাকে খানিকটুকু ভাবতে হবে তার।নিশ্চয় আমাকে আর আমার পাগলামি গুলোকে ভাবে সে।যখনি আমাকে মনে পরে তখনি হয়ত ঘৃনার আভির্ভাব দেখা দেয়।তাহলে কি আমাকে সে ভাবে! তার মনের ঘৃনাটাকে ভালোবাসায় রূপান্তর করতে হবে।ছোট্ট কাগজের টুকরো থেকে অর্পার নাম্বারটা নিলাম।অর্পার দিকে আরেক পলক তাকিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে।
রাতে লেপটপে দহন মুভিটা দেখতেছিলাম।হঠাৎ মনে পরল অর্পাকে একটা ফোন দেই।কল ঢুকার সাথে সাথে চেনা কন্ঠটি কানে এসে বাজল।অর্পাই ফোন ধরেছে।কি বলব! আচ্ছা একটা আইডিয়া কাজে লাগিয়ে দেখি।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।কে বলছেন?
-আপু ৫০৩ কোড নাম্বারের টি-শার্ট একটা লাগত আমার।আছে নাকি ষ্টক শেষ?
-কি বললেন!!
-৫০৩ কোড নাম্বারের টি-শার্ট একটা লাগত আমার।আছে নাকি ষ্টক শেষ?
-আমি কি টি-শার্টের মার্কেট খুলে বসেছি!!
-এটা কি অনলাইন বাঙালি বাবু শপের নাম্বার না?
-না
-বাঙালি বাবু অনলাইন শপ পেজের পোষ্টে নাম্বারটা পেলাম যে!! একটা টি-শার্ট পছন্দ হয়েছিল,ওটার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম।মনে হয় নাম্বার মিস্টেক হয়েছে।সরি
কন্ঠে ভিষণ আকুলতা নিয়ে বললাম।অর্পা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-মিস্টেক হতেই পারে।সরি বলেছেন তাতেই ধন্য
-আচ্ছা আপনার নামটা জানতে চাইলে কি বেশি কিছু চাওয়া হয়ে যাবে
-না না।তা কেন হবে।আমি অর্পা
অর্পার নৈশাচারি কথাগুলো শুনে অমৃত মুগ্ধ হচ্ছি।তাকে কেউ না দেখেও তার কথায় তার প্রেমে পরবে।এটা নিশ্চিত বলা যায়।
-আচ্ছা তাহলে এখন ফোনটা রাখি।পরে সময় করে ফোন দিব
-আবার ফোন দিবেন!!
-খুব ডিষ্ট্রাব হবেন বুঝি!
-ঠিক তা না
-তাহলে পরে ফোন দিব?`্
-সেটা পরে দেখা যাবে।এখন রাখলাম।আল্লাহ হাফেজ
শেষ কথাটুকু বলার সুযোগ না দিয়েই টুট টুট করে ফোনের লাইনটা কেটে গেল।অর্পাকে কি ভালোবাসার ডোরে বাঁধতে পারব?
আচ্ছা অর্পাকে এখন আরেককবার ফোন দিব কি! নাহ আজ আর না।কাল ফোনের বদলে একটা মেসেজ দিব।অর্পাকে ভাবতে ভাবতেই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে গেলাম।
গৌধুলির আবীরে ঢাকা সারা শহর জুড়ে,
দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে গাঙচিলেরা তাদের নীড়ে ফিরে।
মোমের লালচে আলোয় প্রিয়তমাদের চেহারাটা লাগে অযুত মায়াবী,
সেই মায়াবী মুখটি দেখতে প্রতিক্ষা করতে চাই রাত অবধি অজস্র রাত্রি।“
পরদিন রাতে মেসেজটা লিখে অর্পাকে সেন্ড করে দিলাম।মেসেজটা পড়ে অর্পা খানিকক্ষন মনে মনে হাসল।নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে মোম জ্বালিয়ে নিজের চেহারাটা আয়নায় বারবার দেখতে লাগল।সুন্দর চেহারায় মোমের আলো পরতেই লালচে বর্ন ধারন করেছে চেহারাটা।আসলেই তো লালচে লাগছে।ছেলেটার কি এটা কল্পনার কথা নাকি ভাবনা? ছেলেটার মেসেজের রিপ্লে দিব? ভাবছে অর্পা।না ফোন দিলে ছেলেটা কি ভাববে! সেটা ভেবে আর ফোন দেয় নি অর্পা।কেটে গেল ঐদিন।
প্রতিদিন অর্পাকে একটা করে মেসেজ পাঠাই।সেটা অর্পা পড়ে আর ঠোঁট জোড়া বাঁকিয়ে হাসে।ছেলেটার কল্পনা কতটা বাস্তবময় ভালোবাসায় আবদ্ধ তা ভাবে অর্পা।টানা চার মাস ধরে মেসেজ করেই আসছি।একবারও ফোন দেই নি।অবশ্য অর্পা কয়েকদিন ফোন দিয়েছিল।ব্যস্ততার কারনে ফোন ধরতে পারি নি।একদিন বিকেলে ফোন দিলাম অর্পাকে।ফোন ধরেই অর্পা বলল,
-কেমন আছেন?
-জ্বি ভালো।তুমি? সরি, আপনি?
-ইটস অকে।তুমি করেই বলতে পারেন। আমিও ভালো আছি।আর এতদিন পর ফোন দিলেন যে!
-আপনি ই তো নিষেধ করেছিলেন! মনে নেই আমি পরে ফোন দিব কিনা বলাতে কি বলেছিলেন!!
-আমি তো ফোন দিতে নিষেধ করিনি! বলেছি পরে সেটা দেখা যাবে।যাই হোক মেসেজ তো করেছেন।
-মেসেজ করাতেও বিরক্তি বোধ করেছেন!! আচ্ছা আজ থেকে আর মেসেজও করব না!
-আরে! আমি কি সেটা বলেছি!! দেখুন মেসেজ না করলে খুব খারাপ হবে কিন্তু।প্রতিটা দিন অপেক্ষা করতাম কখন আপনার মেসেজ পাব।কখন একটু হাসব। জানিনা কেন অপেক্ষা করতাম। তবুও অপেক্ষা করতে ভালোই লাগত কন্ঠে ভীষন আকুলতা,ভীষন টান।
-আমি হচ্ছি অচেনা পথের একজন পথিক।আনমনে হাটি পথটি ধরে তালপাতার ছায়ার নিচ তল দিয়ে। কখনো বা থমকে যাই কাউকে ভেবে। ধমকা বাতাসে হঠাৎ সরে যায় তালপাতার বুনোন। দূর গগনের রোদ্দুর এসে পরে আমার উপর। আবার আচমকা রোদ্দুর চলে যায় ভেংচি কেটে। মন খারাপ করে থির দাঁড়িযে থাকি।আবারো হাটি। এই পথের হয়ত শেষ নেই। কি হবে একটা মেসেজের জন্য অপেক্ষা করে।হতে পারেন আপনি সেই রোদ্দুর। আচমকা চলে যাবেন।
-আপনি এত আবেগ প্রবন কথা গুলো কিভাবে বলেন? মূহুর্তেই যেন হারিযে যাই অন্য জগতে। আপনার মেসেজ গুলো পড়লে আপনাকে দেখতে খুব বেশি ইচ্ছে করে। আর চলে যাব কেন! ধমকা বাতাসের সাথে অক্সিজেন হয়ে থাকব। যেখানেই যান,আমি থাকবই
-আমাকে দেখবেন! আমি তো দেখতে স্মার্ট না,সুন্দরও না।
-স্মার্ট,সুন্দর তাতেই কি সব কিছু হয়ে যায়! আপনার মধ্যে অস্বাভাবিক কল্পনার গুন রয়েছে।আর কি আপনি আপনি বলছেন! তুমি করে বলুন
আচ্ছা।
এভাবের অর্পার সাথে কথা বলা শুরু হতে থাকে।প্রতিদিনই দুজনের কথা হয়।অর্পা কখনোই বুঝতে পারেনি এই ছেলেটাই সেই আমি।ধীরে ধীরে অর্পার হৃদয়ের উঠোনে জায়গা নিয়েছি।কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্পা আমাকে দেখেও নি,চিনতেও পারেনি।ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে এক বছর পেরিয়ে গেছে।অবশেষে অর্পার সমস্ত ভালোবাসাটুকু ভালোবাসার বিনিময়ে কিনতে পেরেছি।ভালোবাসাময় কাটছে দুজনের দিনগুলি।অর্পার শুধু বার বার দেখা করার আবেদন করে।
ইচ্ছে করেই অর্পার সাথে দেখা করতে যাই না।সায় দেই না অর্পার কথায়।খুব মিনতি করে সে।মাঝে মাঝে তার জন্য খুব মন খারাপ হয়।আবার ভাবি যদি আমাকে দেখলে আবার সেই আগের ঘৃনাটুকু চলে আসে!!
একদিন বিকেলে ফোন দিলাম অর্পাকে।দেখা করার কথা বললাম।মূহুর্তেই খুশির জোয়ারে ফোনেই বেশ কয়েকটা পাপ্পি দিল।
ফ্লাইওভারের উপর দাঁড়িয়ে আছি।অর্পা এখানেই আসার কথা।গাড়িগুলো দ্রুত গতিতে চলছে।কোমল হাতের স্পর্শ পরল চোখের উপর।চোখ দুটো জাপটে ধরেছে কে যেন! কে হতে পারে? অর্পাই হবে।অর্পার দিকে মুখ ফিরাতেই অর্পা থ হয়ে গেল।চোখে মুখে বিষ্ময়ের আভাস।নিঃশ্বাস ফেলে বলল সে,
-তুমি??!!!
মাথাটা নুইয়ে রেখেছি।চোখ দুটো অজানা কারনে জলে ছলছল করছে।অর্পা নিশ্চয় আমাকে আবারো কড়া মেজাজে ঝাঁঝালো কিছু কথা বলে দিবে।কিন্তু ভালোবাসার জন্যও কি মানুষের পার্থক্য হয়! উত্তরটা জানা নেই।এবার খানিকটা ঝাড়ি দিয়েই অর্পা বলল,
-কি হলো!! চুপ করে আছো কেন? এতদিন যে আমাকে মেসেজ করত,যার সাথে কথা বলতাম,যাকে ভালোবাসলাম সেটা কি তুমি!!
হ্যাঁ সূচক মাথাটা নাড়ালাম।চোখের জলটুকু টুপ করে বেড়িয়ে গেল।আমার প্রতি অর্পার ঘৃনাটুকু তাহলে কি এখনো আছে!! বাকরূদ্ধ হয়ে আছি।অর্পা একটার পর একটা কথা বলছে।কোন কথা বলতে পারছিনা।অর্পার সেই ভয়ংকর অগ্নি চাহনি মনে পরছে।
-কি হলো! চুপ করে আছো কেন? আর আমাকে ভালোবাসো সেটা বুঝিয়ে বলতে।এত অপেক্ষা,এত প্রশ্রুতির কি দরকার ছিল?
-বলার সুযোগটুকু দিয়েছো আমাকে!! বলতে গেলেই কেমন করে যেন তাকাতে আর আমাকে বলতে আমি বকাটে!
-তখন আমার কাছে তোমাকে বকাটেই মনে হত।সারাক্ষন শুধু আশেপাশেই ঘুরঘুর করতে।
-উহ! এখন ভালোবাসলে কেন?
-উন্মাদন করা তোমার কথায় তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেছি।আর কিভাবে আমার নাম্বার পেলে! আর কি দরকার ছিল এতকিছু করার!
-ভালোবাসি বলেই তো এতকিছু করেছি।যে ছেলেটা তোমার সামনে দাঁড়িয়ে এটাই তো সেই আমি“
মূহুর্তেই কয়েকটা কিল পরল বুকের উপর।অর্পাই দিয়েছে।এখনো চোখের জল এক ফোটা এক ফোটা করে পরছে।অর্পা কি মুছে দিবে! নাহ মুছে দেওয়ার দরকার নেই।জড়ুক নাহয় কয়েক বিন্দু জল।অনেক প্রতিশ্রুতির পর অর্পাকে পেলাম এই তো সেই আমি।