মায়াবতী মেয়ে

মায়াবতী মেয়ে

-চাশমিস ,তুই কি কখনো আমায় বুঝবি না?
-না
-সারাক্ষন বই পড়তে তোর বোরিং লাগে না?
-উহু
-আচ্ছা তোর অভিধানে হ্যা,হু,না,উহু ছাড়া কোন শব্দ নেই? একটা মানুষ কিভাবে এত কম কথা বলতে পারে তা তাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
-ভাইয়া আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে।
ফাহিম কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন হয়ে ছাদ থেকে বলে গেল মিথি।
মেয়ে টা একদম চাপা স্বভাবের । প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে না।
.
মিথি দেখতে খুব বেশী সুন্দরী না। গায়ের রং শ্যামলা। ডাগর,ডাগর চোখ,বাকা দাত। এসব মেয়ে দের রুপবতী বলা যায় না,এরা হয় মায়াবতী।
.
চার বছর ধরে মিথির পিছে পরে আছে ফাহিম। ফাহিম অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। আর মিথি অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। প্রেম তো দুরের কথা এই মেয়ের মুখ থেকে কথা এ বের করতে পারে না ফাহিম।
ফাহিম নাছোড় বান্দা। ও ছ্যাচড়ার মতো মিথির পিছে পরে আছে।
এই মেয়ের মুখ থেকে হ্যা,হু,উহু,না,ভাইয়া ডিস্টার্ব হচ্ছে এই কথা গুলোর বাইরে কোন কথা শুনে নি।
এই বয়সে মেয়েরা ফ্রেন্ড দের সাথে ঘুরতে যায়,বয়ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম করে বেড়ায়। আর এই মেয়ে হলো বই পোকা।
এজন্য হয়তো ফাহিম ওকে এত বেশী ভালোবাসে।
ফাহিম ও বা কম কিসে,চার বছর ধরে এমন একটা মেয়ের পিছে পরে আছে।
.
মিথি প্রতিদিন বিকালে ছাদে আসে, এক কাপ কফি আর একটা বই নিয়ে। ওর আশেপাশে ঘুর্নিঝড় হয়ে গেলেও ওর মনোযোগ মনে হয় বইয়ের দিকে ই থাকে
-এই এলিয়েন
-জ্বী ভাইয়া
-তোকে এলিয়েন বল্লাম তাও কি সুন্দর জবাব দিলি। আসলে তোকে আমার অন্য গ্রহের প্রানী মনে হয় রাগ করিস না।
-উহু
ফাহিম জানে ওকে এখন আর কিছু জিঙ্গেস করলে ,”ভাই আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে ,বলে ছাদ থেকে চলে যাবে।
তাই আর কিছু জিঙ্গেস করে নি। দুর থেকে দাড়িয়ে মিথির দিকে চেয়ে আছে।
সারা দিন ফাহিম এর অপেক্ষা ই একটা কখন বিকেল হবে আর কখন মিথি ছাদে আসবে। একটা মেয়ে এত শক্ত মনের হয় কিভাবে?
-আচ্ছা চাশমিস বল তো তোর কেমন ছেলে পছন্দ? এই আমি কি দেখতে খারাপ?
-না
-তো কি আমার চরিত্র খারাপ?
-না
-তো আমায় পছন্দ হয় না কেন?
-এমনি
-ওই বোবার মত কথা বলবি না। মনে চায় মাথা ফাটাই দেই ।ঠিক ভাবে কথাও বলতে জানে না।
-হুম
এই দেখ আবার চলে গেল ছাদ থেকে। মেয়ে টা আসলেই একটা এলিয়েন।
মিথি একদিন ছাদে না আসলে নানা বাহানায় মিথি বাসায় যাবে ফাহিম। মিথির মা ফাহিম কে খুব ভালো জানে।
-আন্টি মিথি কোথায়?
-ওর শরীর খারাপ লাগে নাকি তাই শুয়ে আছে। কিছু বলবা বাবা?
-মিথির সাথে একটু কথা ছিলো
-মিথি ওই রুমে । যাও তুমি
ফাহিম মনে মনে ভাবে ওর আম্মু কি সুন্দর কথা বলে। আর মেয়ে টা একটা বোবা।
-চাশমিস
-ভাইয়া আপনি এর রুমে?
-সমস্যা নেই,আন্টির কাছে বলে আসছি। তোকে আজ ছাদে দেখলাম না যে তাই খোজ নিতে আসলাম। তুই তো আর আমার খোজ নিবি না!
-ওহ
-হুম। তোর নাকি শরীর খারাপ লাগে।
-একটু খারাপ লাগে
-আচ্ছা যাই। নিজের খেয়াল রাখিস
-হু
পরের দিন আবার এক কাপ কফি আর একটা বই নিয়ে ছাদে হাজির মহারানী।
-আচ্ছা তুই এমন কেন? ছাদে আসবি না সেটা তো আমায় একটু বললেও পারতি।
শরীর কেমন তোর এখন?
-এই তো ভালো
-প্রতিদিন একা একা কফি খাস। আমায় একটু দেওয়া যায় না?
-আচ্ছা আপনি বসুন। আমি নিয়ে আসছি
-না তোর খাওয়া টা ই দে।
মিথি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিথির হাত থেকে অর্ধেক কাপ কফি নিয়ে খাওয়া শুরু করল ফাহিম।
-ভাইয়া একটা কথা ছিল।
ফাহিমের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল। কি বলবে মিথি?
-বাব্বাহ বোবার মুখে কথা ফুটছে। কি বল?
-ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে ।
-মজা করিস না তো
-ভাইয়া আমি সিরিয়াস ।
ফাহিমের চোখে জল টলমল করছে। কি সব বলছে মিথি?মিথি তো জানে মিথি কে ও কত ভালোবাসে ,মিথি এমন টা করতে পারল?
-ও আচ্ছা
ফাহিম মিথির দিকে আর না তাকিয়ে চলে যাচ্ছে। হয়তো আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।
.
তিন দিন ধরে ফাহিম ছাদে আসে না। মিথি হয়তো ভাবে কেউ একজন পেছন থেকে চাশমিস বলে ডাক দিবে। কিন্তু না ,কেউ ডাক দেয় না। বই পড়ায় ডিস্টার্ব ও করে না।
ফাহিম কে খুব মিস করে মিথি। কত ভালো একটা ছেলে । কত টা বছর ‘ভালোবাসি’ কথা টা শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে। হয়তো খুব বেশী কষ্ট দিয়ে ফেলছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মিথি দেখে ফাহিমের ছোট বোন ছাদে আসছে।
-অর্পা ফাহিম ভাই কে দেখি না যে?
-তুমি হঠাৎ ভাইয়ার খবর জানতে চাচ্ছো? ভাইয়ার গায়ে তো খুব জ্বর।
মিথির বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠে। খুব ইচ্ছা করছে ফাহিম ভাই কে গিয়ে একবার দেখে আসি। মিথি আর কিছু না ভাবে ফাহিমের বাসায় যায়।
-আরে মিথি তুমি। সূর্য কোন দিক থেতে উঠছে আজ? আমাদের বাসায় আজ কে মহারানীর হঠাৎ আগমন? কাহিনী কি? (ফাহিমের ভাবি)
-না ভাবি তেমন তেমন কিছু না।
মিথি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
-ফাহিম কে দেখতে আসছো নাকি?
-জ্বী
-এহেম এহেম। আমার দেবর টার কোন মুল্য ই দিলা না কত বছর ধরে তোমার পিছে পরে আছে। এমন ছেলে এই যুগে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যাও যাও ফাহিম ওই রুমে।
মিথি রুমে গিয়ে দেখে,ফাহিম ঘুমিয়ে আছে। চেহেরার কি বাজে অবস্থা করে ফেলছে কয় দিনে।
ফাহিমের কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেক জ্বর। ফাহিম কপালে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতে পেরে চোখ মেলে তাকায় । ভুত দেখার মতো চমকে উঠে।
-এই তুমি এখানে?
-কেন অন্য কারো আসার কথা ছিল?
ফাহিম ভালো করে চোখ মেলে তাকায় স্বপ্ন দেখছে না তো।
-তিন দিনে চেহারার কি বাজে অবস্থা করছেন হুম?
তিন দিন ছাদে যান নি জানেন কত টেনশন হচ্ছে । একটু মজা করে বল্লাম বয়ফ্রেন্ড আছে তা বিশ্বাস করে ফেলছেন।
-তুমি মজাও করতে জানো?
ফাহিমের চোখ ছলছল করছে।
-না জানি না,আপনার কাছ থেকে শিখছি।
ফাহিমের কাছে মিথি কি আজ অষ্টম আশ্চর্যতম জিনিস মনে হচ্ছে।
-শোনেন প্রতিদিন ছাদে যাবেন। আপনাকে অর্ধেক কাপ কফি খেতে দিব। প্রতিদিন ছাদে গিয়ে চাশমিস বলে ডাক দিবেন। বুঝছেন?
-হুম বুঝছি। যাক শেষ পর্যন্ত বোবার মুখে কথা ফুটছে।
-আচ্ছা আমি যাই আম্মু টেনশন করবে। বিকালে ছাদে আসেন। ওষুধ খেয়ে য়েন।
মিথি কি তাহলে আমায় ভালোবাসে? ফাহিম এর খুশি আর দেখে কে।
.
বিকেলে মিথি অনেকক্ষন ধরে ছাদে এসে করতেছে।
কিন্তু ফাহিম আসছে না।
-মিথি
-মিথি না আপনার মুখ থেকে চাশমিস ডাক ই ভালো লাগে।
-চাশমিস বললে তুই রাগ করস যে।
-কখনো বলছি আমি রাগ করি? আপনার মুখে চাশমিস ডাক শোনার জন্য প্রতিদিন ছাদে আসতাম
-আল্লাহ এসব আমি কি শুনতেছি!!
-জ্বর কমছে?
-হু তোর হাতের ছোয়ায় জ্বর চলে গেছে।
-ধুর!
-হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না।
-এত লেট করলেন কেন?
-চার বছর ধরে যে নিজে লেট করে আসতেন
-তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?
-বল্লাম তো মজা করছি
আর কিছু বললে কেদে দিবে মেয়ে টা।
-আচ্ছা সরি সরি
-ছাদে আসতে বলছিস কেন?
-এমনি
-জানিস আমায় একটা মেয়ে প্রপোজ করছে ভাবছি হ্যা বলে দিব।
-ওহ
মিথি ছাদ থেকে চলে যাচ্ছে । ফাহিম আচমকা হাত ধরে ফেলছে।
-আজকে আর ছাদ থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই । ভালোবাসিস আমায়?
এই পাগলী কাদছিস কেন?
-ভালোবাসি সেটা আবার মুখে বলে বোঝাতে হবে কেন হুম?
আর কখনো যেন ছাদে যাওয়া মিস হয় না।
-মিথি সত্যি বল ভালোবাসিস তো?
-হুম
-এই কথা টা বলতে চার বছর লাগছে কেন হুম?
-এত সহজে এটা কাউকে বলতে নেই
-হাহাহা পাগলী একটা।
একটু বেশী বেশী কথা বলার চেষ্টা কর। আমাদের বাবু গুলো যেন তোর মত ঘোমড়া মুখো পেচি না হয়
-অসভ্য একটা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত