ভালবাসার অনুভূতি

ভালবাসার অনুভূতি

নিধী আর শুভ একই ভার্সিটিতে পড়ে। শুধু তাই নয় ছোটববেলা থেকেই ওরা দুজন একসাথে বড় হয়েছে। শুভ যখন যথেষ্ট ম্যাচিউর হয়, তখন থেকেই নিধীর প্রতি ওর আলাদা একটা অনুভূতি জন্ম নেয়। যখন নিধী শুভর পাশে এসে বসে। শুভর কাধে মাথা রেখে প্রকৃতি দেখে। পাশাপাশি হয়ে হাটে। এসব অনুভূতি শুধুমাএ বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বন্ধুত্বের চেয়ে আরেকটু বেশী কিছু।

তবে সেটাই কি তাহলে ভালবাসা…?
এটাকেই ভালবাসা বলে কিনা জানা নেই শুভর। সে শুধু এতটুকুই জানে যে নিধীকে ছারা তার চলবে না। সে নিধীকে ছারা থাকতে পারবে না। মনের কথা বলার অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ও সে অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হয়েছে ভয়ে। হারনোর ভয়ে। যদি নিধী ওর ভালবাসা গ্রহন না করে ওর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও ছিন্ন করে চলে যায়। তখন কি হবে।

এসব ভেবে নিধীকে আর মনের কথা গুলা বলা হয় না শুভর। মনের কথা গুলান অব্যক্তই থেকে যায়।

অন্যদিকে নিধীর এরকম কোনো অনুভূতিই নেই শুভর প্রতি। নিধী শুভকে জাস্ট ফ্রেন্ড ই ভাবে।
ভার্সিটির ক্যাম্পাসের মাটে বসে আছে দুজন।

নিধী- ওই চল ফুসকা খেয়ে আসি।
শুভ- খেতে পারি, যদি বিলটা তুই পেইড করিস (হিহিহি)
নিধী- এটা আর নতুন কি, আমিই তো প্রতিদিন তকে ট্রিট্র দেই। তুই কি কোনোদিন আমায় কিছু খাইয়েছিস বল? কিপ্টুস একটা।
শুভ- ওই বাজে বকিস না। যাবি তো চল।
নিধী- ওকে চল।

এর কিছুদিন পর…
নিধী- পরশু দিন তো ভালোবাসা দিবস। এবার তো নিজের জন্য একটা গার্লফ্রেন্ড খুজে নে।
শুভ- খুজবো আবার কি, যাকে ভালবাসি সে তো এতো কাছে থেকেও আমার ভালবাসা বুজে না।( ফিসফিসিয়ে বলল শুভ)
নিধী- কি বললি? জোরে বল তো।
শুভ- কই? কিছু না তো।
নিধী- কিছু তো একটা বলছিস। আচ্ছা থাক বলা লাগবে না।
শুভ- রাগ করলি বুঝি?
নিধী- আরে দূর রাগ করবো ক্যান?
শুভ- নিধী একটা কথা বলবো?
নিধী- হুম বল।
শুভ- আমি জানি না তুই ব্যাপারটাকে কিভাবে নিবি।
নিধী- এতো ইজিটেড ফিল করার কি আছে। যা বলার তা বলে ফেল।
শুভ- ভালবাসা দিবসে সারাদিন তুই আমায় সময় দিতে পারবি?
নিধী-…… নিধি একটু মুচকি হাসলো। অনেকদিন পর কিপ্টুসটাকে বাগে পাওয়া গেছে, এবার আর ছারছি না ( মনে মনে ভাবলো নিধী)
শুভ- কি রে চুপ কেনো।
নিধী- সময় দিতে পারি। তবে একটা শর্তে?
শুভ- শর্ত? আচ্ছা বল কি শর্ত?
নিধী- ওইদিন আমায় সারাদিন রিকসা করে নিয়ে ঘুরতে হবে। আমি যা খেতে চাইবো, তা খাওয়াতে হবে, যা কিনতে চাইবো, তা কিনে দিতে হবে। রাজি?
শুভ- ওকে রাজি। চলো বাবু তোমায় বাইকে করে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসি।
নিধী- ওই ছ্যাচরা তুই আমায় বাবু বললি ক্যান? (রাগী চেহারা নিয়ে)
শুভ- আরে এমনিই বলছি, রাগিস ক্যান?
আর তাছাড়া ভালবাসা দিবসে এমন করেই ডাকতে হবে, তাই একটু আগে থেকেই প্রাকটিস করে নিচ্ছিলাম আরকি।(দাত কেলিয়ে)
নিধী- হইছে আর ন্যাকামো করা লাগবে না। ওসব ভালবাসা দিবসেই বলবি।

এতোক্ষনে শুভ তার কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছে। সে ভাবতেই পারছে না যে নিধী ভালবাসার দিবসের সারাটাদিন ওর সাথেই থাকবে। ওর খুশি আর দেখে কে।
শুভ ভাবতেছে যে ভালবাসা দিবসেই নিধীকে তার মনের কথাগুলা বলবে। যা আছে কপালে।

ভালবাসা দিবস…..

ক্রিং ক্রিং ক্রিং
– হ্যালো কে বলছেন? ঘুমের ঘোরে নাম্বার না দেখেই।(শুভ)
– আমাকে তৈরি করে মহারাজ এখনো ঘুমাচ্ছেন। দাড়া তর ঘুম বের করছি। তুই যদি ১০ মিনিটের মধ্যে আমার বাসার সামনে না আসিস তাহলে আজ আর আমি বেরোবো না এই বলে দিলাম।
টুট টুট টুট
লাইন টা কেটে গেলো।

নিধীর কথায় শুভ লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। একি বেলা ১০:৩০ টা বেজে গেছে। তারাতারি করে ওয়াসরুমে ঢুকে ব্রাশআপ করে ফ্রেস হয়ে আসলো। তারপর কাঠের আলমিরা থেকে হলুদ পান্জাবিটা বের করে পড়ল শুভ। খুব হ্যান্ডসাম লাগছে আজ শুভকে।

শুভ নিধীর বাসার সামনেই আসতেই দেখলো যে নিধী গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।
কি অপরূপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে আজ।
নীল শাড়ি সাথে মেচিং ব্লাউস, কিছু নীল কাচের চুরী।কাজল কালো চোখ, এবং কপালের ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা কালো টিপ। এক কথায় অপূর্ব দেখাচ্ছে মেয়েটাকে।
শুভ নিধীর সৌন্দর্যের পানে এক দৃষ্টিতে পলকহীন ভাবে থাকিয়ে আছে।
থাকিয়ে থাকতে থাকতে শুভ তার কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলো।
নিধীর আলতো হাতের ধাক্কায় শুভ কল্পনাতীত থেকে বাস্তবে ফিরে এল।

নিধী মুচকি হাসতেছে,,,,
– কি রে ওমন করে কি দেখছিস? (নিধী)
– তকে দেখছি, কি অপরূপ দেখাচ্ছে তকে।
– নিধী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। যাহ্ তুই বানিয়ে বলছিস।

শুভ আর কিছু বললনা,,, নিধীর বাঁ হাত শুভর ডান হাতের ভেতরে নিয়ে ওরা হাটতেছে। শুভ আড়চোখে শুধু নিধীকেই দেখছে।
তারপর ওরা একটা রিকসাতে উঠল। দুজনের বাহুডুরের স্পর্শে শুভর সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো। এমন না যে ওরা প্রথমবার একসাথে রিকসা ভ্রমণ করতেছে। তবুও আজকের অনুভূতিটা ওর কাছে ভিন্ন।

তারপর ওরা শহরের একটা দামী থাই রেষ্টুরেন্টে ঢুকলো। ওখানে তারা খেলো।
আজকে কিন্তু সম্পূর্ণ বিলটা শুভই পেইড করলো। তারপর ওরা শাইনিং পয়েন্টে এসে খুবই জনপ্রিয় একটি শপিং সেন্টার রিলোডে ঢুকলো। সেখানে গিয়ে শুভ নিধীকে দুটো দামী দামী শাড়ী কিনে দিলো। আজ নিধীর শুভকে খুব অচেনা লাগছে। নিধী অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে শুভর দিকে।

শপিংমল থেকে বেরিয়ে শুভ নিধীকে একটা হাই প্রফাইল গয়নার শপে নিয়ে গেলো।
সেখান থেকে দামী একটা গোল্ডেন রিং কিনে নিধীকে শুভ বললো,,,
-আমি কি রিংটা তর বাঁ হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে দিতে পারি…?
নিধী বাকররুদ্ধ হয়ে গেছে। নিধীর আজ শুভকে বড্ড অচেনা লাগছে। অনুভূতির চরম শিখরে পৌছে গেছে নিধী।
মনে হচ্ছে এখনি কেদে দিবে।
তবে কি এই অনুভূতির নাম ভালবাসা?

– আমি কি আংটিটা তকে পড়িয়ে দিবো।(শুভ)।

নিধী তখন শুভর চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে, নিজের মনের অজান্তেই ওর বাঁ হাতটা বাড়িয়ে দিলো শুভর কাছে। তারপর শুভ নিধীর অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।

সন্ধা ৬ টা বেজে ৩০ মিনিট
রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে শুভ আর নিধী। প্রকৃতির চারিদিক নিস্তব্ধ , তার সাথে নিধী এবং শুভও নিশ্চুপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই। আজও শুভ তার মনের কথা নিধীকে বলতে পারলো না।
এক সময় নিধীর বাসার গেইটের সামনে এসে রিকসা থামলো। নিধী আর শুভ একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। একসময় নিধী চলে যেতে লাগলো,,,,,
– নিধী….?(শুভ)
পিছন ফিরে থাকায় নিধী।
– হুম। কিছু বলবি।
– একটা কথা বলার ছিল।
– হ্যা বল।
– নিধী আমি হয়তো কবিদের মতো নিজের ভালবাসা গুছিয়ে ব্যক্ত করতে পারবো না। তবে আমি তকে খুব ভালবাসি রে ।
খুব যত্নে রাখব তকে। সবসময় আমার বুকের পাজরে আগলে রাখবো। ভালবাসবি আমায়।

এতক্ষনে নিধীর চোখে জল টলমল করতেছে। দৌড়ে শুভর বুকে এসে ঢুকরে ঢুকরে কাদতে লাগলো।
– শয়তান একটা, ভালবাসে অথচ বলতে পারে না। আমায় কষ্ট দিতে খুব ভাল লাগে তাই না।(নিধী)
– বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনী। কেনো জানিস? ভয়ে।
যদি তুই আমায় ছেড়ে চলে যাস।
– চুপ একদম চুপ। আর একটা ও কথা বলবিনা। এখন থেকে আমায় খুব খুব ভালবাসবি বুজলি?
– শুভ তার বুকের মধ্যে নিধীকে একটু বেশীই শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। এতোটাই শক্ত করে যে, নিধীর হৃদয়কম্পনও সে অনুভব করতে পারতেছে।

অতঃপর শুরু হলো ওদের নতুন পথ চলা।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত