এঞ্জেল ফারিয়া, অপ্সরী জুই, প্রিন্সেস নীলা, নামগুলো দেখলে রিপনের কেমন যেনো হাসি পায়। এতটা মজা পায় যে হাসতে থাকে। আর হাসার এক পর্যায়ে বেড থেকে মাটিতে গড়ান খায়।
–কি হয়েছে?? এত হাসিস কেনো??(মা)
–হাসিমুখ টা হাত দিয়ে চেপে, না মা কিছু না।(রিপন)
—তাইলে কি পাগল হইলি?? পাবনার কি সিট দেখবো??(মা)
–মা, চুপ করো ত(রিপন)
–হ, চুপ করলা….(মা)
আর কিছু শোনার আগেই রিপন রুম টা লক করে দেয়। বেডের উপর শুয়ে, ফোন টা আবার দেখতে থাকে, সাথে মেয়েটার আইডিতে গিয়েও উকি দেয়। রিপন অবাক হয়ে যায়,ওর প্রতিটা গল্পই মেয়েটার টাইমলাইনে। R H Khan, আইডি টা রিপন শুধু গল্প লেখার জন্যই ওপেন করেছিলো। তাই ওর ফ্রেন্ডসার্কেলের কেউ জানে না এটা ওর আইডই।
রিপনের অবাক হউয়াটা শুধু বাড়তেই থাকে, আরো বেশি অবাক হই তখন যখন গল্পের শেষে কমেন্টস গুলো তে মেয়েটার ফেবু ফ্রেন্ডস দের কমেন্টস দেখে, তোর লেখক দেখি প্রেমিক পুরুষ রে প্রতিউত্তরে মেয়েটা বলে,দেখতে হবে না লেখক টা যে আমার মেয়েটার এবাউটে গিয়ে দেখতে পায় ওখানে অনেকগুলো নিকনাম, যেগুলোর মধ্যে আছে, লেখকের লেখিকা, আর এইচের অনু, আরো অনেক নাম যেগুলো রিপনের প্রতিটা গল্পের নায়িকাদের নাম। রিপন কিছুটা মুচকি হেসে ফেলে, এতটা পাগলি কেউ আছে?? এতটা?? রিপন দেখে মেয়েটাকে প্রায় ৩ মাস ঝুলিয়ে রেখেছে, কেনো জানিনা আর ঝুলিয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে না ওর। অনেকটা তাড়াতাড়িই রিকুয়েস্ট টা এক্সচেপ্ট করে নিলো। সাথে সাথে মেসেজ এলো, হাই, কেমন আছেন?? কি করছেন?? অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, রিকুয়েষ্ট এক্সচেপ্ট করার জন্য,আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি?? মন খারাপের ইমু রিপন এবার জোরেই হেসে দিলো, এটা কি হচ্ছে?? মাত্র এচেপ্ট না করতেই এতগুলো মেসেজ… রিপন রিপ্লাই দিলো, নাতো। বিরক্ত হবো কেনো??
—ধন্যবাদ ধন্যবাদ, হাসির ইমু
–আপনার নাম কি??(রিপন)
—ফারিয়া, আপনার??(ফারিয়া)
–জানেন না??(রিপন)
–না মানে R H জানি কিন্তু এর পুরো মিনিংস ত জানি না। (ফারিয়া)
—নাম দিয়ে মানুষ কে বিচার করবেন নাকি?? সে ভালো নাকি মন্দ??(রিপন)
–এ মা, তা নয়। আসলে, নাহ। কিছু না(ফারিয়া)
—রাশেদ হাসান…(রিপন নিজের নাম গোপন করে)
–লাভ ইমু এলো…(ফারিয়া)
–রিপন বড় করে লাইক বাটন ক্লিক করে অনলাইন থেকে বেরোয়ে এলো।
রিপনের মনে মনে হাসি পাচ্ছে খুব। বাহিরে বেরোতেই তোয়ার সাথে ধাক্কা। কিরে?? চোখে দেখিস না??(রিপন)
–ভাইয়া, তোর চোখ কোথায় গিছে রে??(তোয়া)
–এই দেখ,এখানেই আছে..(রিপন)
—তাইলে চশমা নিয়ে নে। বলেই মুচকি হেসে চলে গেলো।
রিপন অবাক হয়ে চেয়ে রইলো তোয়ার যাওয়ার দিকে। মেয়েটাকে আজ এতটা খুশি লাগছে কেনো?? রাত্রে রিপন অনলাইন অন করতেই ১মে ফারিয়ার প্রায় ২৫ টা মেসেজ এলো। রিপনের চোখ ত চড়াক গাছে। এটা মানুষ নাকি পাগল?(রিপন) ফারিয়ার আবার মেসেজ…
–ওই, আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?? আচ্ছা সরি,প্লিজ কথা বলেন। আর কিছু বলবো না। শুধু একবার কথা বলেন।
—এই মেয়ে, পাগল তুমি??(রিপন)
–জি, পাগলী আমি। তবে কারন টা আ….(ফারিয়া)
–রিপন ত আগেই বুজেছে, তাই ও শুধু হাসছে, আর হাসছে।
এইভাবেই শুরু হই, রিপন আর ফারিয়ার প্রেম কাহিনী। প্রেম কাহিনী বলছি কারন, মাত্র ১ মাস লেগেছে রিপনের হ্যা সম্মতি দিতে। মেয়েটা রিপনকে এতটাই ভালোবাসে যে, রিপন চাইলেও নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি।
–অন্ধ প্রেম কাকে বলে জানো ফারিয়া??(রিপন)
–হ্যা, জানি ত…না দেখেও মনে মনে অন্নেক ভালোবাসাকে বোঝায়…(ফারিয়া)
–গাধী, ঠিক বলেছো। আমি তোমাকে ততটাই ভালোবাসি, কিন্তু,…(রিপন)
–কিন্তু কি?? রাশেদ??
—তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করে ফারিয়া…(রিপন)
—ফারিয়া কিছুটা মন খারাপ করে,আমিতো সুন্দরী না। তুমি দেখলে আমায় রিজেক্ট করবে রাশেদ…
–ভালোবেসেছি না দেখে,আর এখন বলছো, দেখলে ছেড়ে দিবো তোমায়??এমন ভাবো তুমি আমাকে??(রিপন)
–আমি এটা বলিনি রাশেদ। (ফারিয়া)
–ত, কি বোঝাতে চেয়েছো তুমি??
—ভয় করে, যদি তুমি হারিয়ে যাও??(ফারিয়া)
–কখনোও নারে পাগলি। (রিপন লাভ ইমু দিয়ে)
—ফারিয়াও লাভ ইমু দিয়ে কথা শেষ করলেও, ২ জনি ২ জনের ছবি কখনো দেখতে পারলো না। ফারিয়া বলতো রাশেদ যদি ওকে ছেড়ে দেয়?? আর রাশেদ বলতো ফারিয়া যদি ওকে ছেড়ে দেয়, ছবি দেখার পরে।
প্রায় ১১ মাস কেটে যায় এভাবে। এর মধ্যে, ফোনেতে, মেসেঞ্জারে বা ইমুতে, কোনভাবেই কথা হইনি ২ জনার। রিপন ফারিয়াকে কোন ব্যাপারে জোর করতোও না। কারন রিপন ফারিয়াকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো, আর ফারিয়ার মাঝে কিছুটা পরিবর্তন আসছিলো দেখে আরো ভয়ে থাকতো রাসেদ। যদি কথা বলতে চাইলে ফারিয়া রাগ করে, কথা না বলে ব্লক দিয়ে দেয়। কন্টেক্সট না থাকলে ত রিপন পাগল হয়ে যাবে।
–ফারিয়ার দিক দিয়েও এমন ভাবনাই ছিলো। কারন রিপন ওর লেখালেখির জন্য কিছুটা সময় কম দিতো ফারিয়াকে আর এইটাকে ফারিয়া ভাবতো রাশেদ ওকে হইতো আগের থেকে কম ভালোবাসে। ইগনোর করছে। ওদের রিলেশনশিপ, এক বছর হউয়ার আর মাত্র কয়েক টা দিন বাকি,
–ফারিয়া, যাই হয়ে যাকনা কেনো, সামনে ৪ তারিখে আমি তোমাকে দেখতে চাই(রিপন)
–কিন্তু, রাশ….(ফারিয়া)
—একদম চুপ…আর কোন কথা না(রিপন)
–ফারিয়া আর উপায় না পেয়ে হ্যা বলে দেয়।
আজ, ফারিয়া আর রাশেদ(রিপনের) দেখা করার সেই সময়, যেই দিন টার জন্য রিপন অধীর আগ্রহ মনে পুষে রেখেছে। বাসা থেকে বেরোনোর সময় তোয়ার সাথে দেখা,
–এই তোয়া শোন,(রিপন)
–হ্যা ভাইয়া, বল। কিরে কই যাস??(তোয়া)
–এইটা ত আমার কথা, এই অসময়ে তুই কই যাস??তোর ত কলেজ ও নাই…(রিপন)
–তোয়া কিছুটা আমতা আমতা করে, ওই এমনি একটু কাজ আছে,(তোয়া)
–আচ্ছা, ভালো। চল আমি তোকে ছেড়ে দিবো (রিপন)
–,আরে না ভাইয়া,কি বলো, আমি একাই যেতে পারবো(তোয়া)
–ঠিক ত??(রিপন)
— একদম, বলেই হালকা হেসে তোয়া চলে গেলো।
রিপন ও বেরোয়ে এলো অনেক্ষণ যাবত রিপন বসে আছে, গাছটার নিচে। কিন্তু ফারিয়াকে আসতে না দেখে ওর মন খারাপ হই, কিন্তু তারপরও আশা ছাড়েনি। অনেক্ষণ বসে থাকার পরে পাশেই শপিংমলে ঢুকে পড়ে রিপন, ফারিয়াকে কিছু গিফট দিবে জন্য। দোকানের ভেতরেই অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো, রিপনের নাম্বার টাও নতুন মানে আজ ই তুলেছে সিমটা।
–কই তুমি??(রিপন এই ১ম কন্ঠ শুনছে ফারিয়ার। কিন্তু মনে হচ্ছে হইতো অনেক বছর ধরে ও চেনে কন্ঠটাকে)
—কি হলো?? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি গাছটার নিচে(ফারিয়া)
–রিপন আর কিছু না ভেবে, তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে দিলো, এক্সাইটেড কাজ করছে খুব। ভালোবাসার মানুষ টাকে দেখবে, এতদিন পরে।
গাছটার আড়ালে দাড়াতেই, রিপনের পা থেমে গেলো, তোয়া গাছের নিচে বসে কেনো??(রিপন) রিপন আশেপাশে তাকায়ে, আর ত কোন গাছ ও নেই। ফারিয়া কোথায় তাইলে?? রিপন কল দিলো ওই নাম্বার টাতে, কল রিসিভ করেই তোয়া,
–কই তুমি??(তোয়া)
–রিপনের হাত থেকে ফোন পড়ে যায়।
ওদিকে তোয়া হ্যালো হ্যালো বলেই চলেছে, রিপনের চোখ থেকে পানি পড়ছে, ছিহ…ঘৃনা হচ্ছে ওর। তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে আসে রিপন। ফোন অফ করে দিয়েছে তখনি। সিএনজির মধ্যকার পাশের মানুষ টির বলার পরে রিপন বুঝতে পারলো ওর চোখ ফুলে গিছে+ লাল হয়ে গিছে।
–সিএনজির ভেতরে রিপন মনে করতে থাকে, কিছুদিন আগে,
–এই তোয়া, তুই কই থাকিস?? আর সারাদিন কি করিস?? দেখি না কেন??(রিপন খাবার টেবিলে)
–তোমার বোনের ত ফোন টিপন ছাড়া আর কিছুই নেই।(মা)
–ফোনে এত কি করিস তুই?(রিপন)
—তুমি কি করো??(তোয়া)
— তোয়া, আমার মুখের উপর কথা বলছিস…রিপন কিছুটা রেগে গিয়ে…
—তোয়া রিপনের দিকে তাকিয়ে, সরি ভাইয়া।
রিপন এরপরে তোয়ার বান্ধবী বিথিকে জিজ্ঞেস করলে বিথি বলে ভাইয়া ও ত আমায় কিছু বলে না।
–আচ্ছা ও কি ফেইসবুক ইউজ করে?? মানে ওর আইডির নাম জানো??
–ভাইয়া, ও ত শুধু পড়ার ব্যাপার ছাড়া আমায় আর কিছুই বলে না। আর আমিতো বাটন ফোন ইউজ করি তাই ফেইসবুকে কেমনে কি।(বিথি)
–রিপন ভাবতে থাকে, কথাটা বিথি ভুল বলেনি। তোয়ার তেমন কোন ফ্রেন্ড ত নেই ও। কিন্তু এতটা সময় ফোন নিয়ে কি করে তোয়া??(রিপন)
রিপনের এখন মনে হচ্ছে সিএনজি টা থেকে লাফ দিতে। ভেতর টা পুড়ে যাচ্ছে ওর। ও কিভাবে পারলো??ছিহ। এত নোংরা ও বাসায় গিয়েই, রিপন, তোয়া কই রে??(মা)
–রিপন মায়ের দিকে তাকিয়ে, জানি না…
আজ সারাদিন তোয়ার আর রিপনের রুম লোকড। মা অবাক হয়ে গিছে। ২ ভাই বোন কি আবার ঝগড়া করছে নাকি?? রাত্রে খাবারের সময়, রিপন খাবার খাচ্ছিলো এমন সময় তোয়া আসতেই রিপন খাবার ছেড়ে উঠে পড়ে। তোয়া রিপনের দিকে তাকিয়ে থাকে,
—-ভাইয়া, খাবি না?? (তোয়া)
রিপন তোয়ার দিকে তাকাতে পারলো না, চলে এলো। রুম আটকিয়ে, ফ্লোরে বসে পড়লো। হাত টা জোরে জোরে ফ্লোরে ছুড়তে লাগলো রিপন। আজ প্রায় ৪ দিন হচ্ছে, রাশেদের ফোন অফ। তোয়া, ফেসবুকের ডাটা টা সবসময় অন করে রাখে। শুধু মনে করে, একটাবার যদি রাশেদ অনলাইনে আসে। তোয়ার চোখ থেকে পানি পড়ে, খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তোয়া। রিপনের অনেক কষ্ট হই তোয়াকে এইভাবে দেখে, নিজের বোনটার এইভাবে শেষ হয়ে যাওয়া ও মেনে নিতে পারছিলো না, মাঝে মাঝে শেষ করে দিতে চাইতো ও নিজেকে, কিন্তু বাবা মায়ের কথা মনে পড়তেই থেমে যেতো। পরের দিন সকালে রিপনের ঘুম ভাংগে, মায়ের কান্নার শব্দে।
রিপন ছুটে বেরোয়ে, তোয়ার রুমে গিয়েই দেখে, পুরো রুম রক্তে ডুবে গিছে, আর সেই রক্তের উপর পড়ে আছে তোয়ার নিষ্প্রান দেহ রিপনের কোন জ্ঞান থাকে না চোখের সামনের সব কিছু ঝাপসা /অন্ধকার হয়ে আসে। আজ ৩ দিন হলো, তোয়াকে কবর দেয়া হয়েছে, এই ৩ দিনে রিপন বাহিরের আলো দেখেনি। সারাক্ষণ শুধু চুপ থাকে, আর মাঝে মাঝে, আস্ত্র আস্তে কিছু বলে যা সবার অলক্ষ্যে। প্রায় ১ মাস পরে,কাজিন তুষার এসেছে রিপনের মন টা আগের মতো করতে। রিপন আর তুষার সমবয়সি। রিপনের বাবা মা,তুষার কে হাত জড়িয়ে ধরেছে শুধু রিপনকে আগের মতো আগের রিপনে আনার জন্য।
তুষার অনেক কিছু বলেও রিপনকে ওর মনোযোগী করতে পারলো না। তুষারের ফোনে চার্জ শেষ হউয়ার জন্য ও রিপনের ফোন খুজতে থাকে। ড্রয়ারের মধ্যে পেয়ে যায় বন্ধ অবস্থায়, ফোন অন করে, ডাটা অন করতেই, মেসেজের টুংটাং শব্দে রিপনের নজর তুষারের দিকে ফিরে, তুষার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিপনের দিকে,
–এঞ্জেল ফারিয়া কে?? (তুষার)
—রিপন ফোন টা তুষারের থেকে কেড়ে নিয়ে, মেসেজগুলো দেখতে থাকে,
–রাশেদ, অনেক ভালোবাসি তোমায়, আমি জানি তুমি আমায় দেখেছো, আর আমাকে তোমার পছন্দ হইনি জন্য তুমি আমার সাথে আর কথা বলছো না।(ফারিয়া)
–এই জন্যই তোমায় বলেছিলাম, আমি দেখা করবো না।(ফারিয়া)
—রাশেদ, প্লিজ একবার অনলাইনে আসো। প্লিজ..(ফারিয়া)
লাষ্ট মেসেজ ছিলোঅনেক ভালোবাসি তোমায় রাশেদ। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার মুল্য দিলা না….(ফারিয়া) রিপন কান্নায় ভেংগে পড়ে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে রিপন। তুষার অবাক হয়ে যায়, রিপনের কি হলো?? এভাবে কাঁদছে কেন?? রিপনের ঘৃনা হচ্ছে, রাগ হচ্ছে নিজের উপর। ও খুনি, ওর নিজ বোনের খুনি। তুষার কিছু বুঝতে পারছে না। বুঝতে পারলে হইতো ওর চোখেতেও রিপন ততটাই খারাপ হয়ে যেতো, যতটা রিপন নিজেকে ভাবছে। রিপনের এই কান্না আর অনুতাপ ছাড়া আর কিছু করার নেই… আর শাস্তি হিসেবে সারাজীবন ধরে অনুতাপের আগুনে পোড়াই কি যথেষ্ট নয়?..