– এই শুনছো? (নিহীন)
– মনে হয় শুনতে পাচ্ছি না। (আমি)
– ধ্যাত, তাহলে উত্তর দিচ্ছো কি করে?
– ওহ হা তাই তো। তাহলে মনে হয় শুনতে পাচ্ছি।
– এই ফাজলামো রাখো। আর তাড়াতাড়ি ওঠো।
– কেনো গো, এখন কি তোমার বাপের বাড়িতে মারামারি বাধছে?
– বান্দর কোথাকার, উঠতে বলছি নামাজ পড়ার জন্য। আর কত শুয়ে থাকবে? তাড়াতাড়ি ওঠো,আমি ওযু করতে গেলাম।
নিহীন কথাটি বলে সোজা চলে গেল। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে ওঠে বসে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা প্রতিদিনই ফজরের আযানের সময় ডেকে দেবে নামাজ পড়ার জন্য। অবশ্য আমিই তার আগে জেগে যায় কিন্তু তার ডাকাডাকিটা আমার বেশ ভালো লাগে। তাই ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকি।
– এই উঠছো? (জোরে ডেকে)
– হুমম উঠছি তো।
– তো আসো ওযু করে নাও তাড়াতাড়ি।
আমি আর কিছু বললাম না। সোজা কলপাড়ে চলে গেলাম ওযু করতে। ওযু শেষে নামাজ পড়ে নিলাম। মসজিদ অনেকখানি দুরে তাই বাড়িতেই ফজরের নামাজ পড়ে নিই। নিহীনের আগে আমার নামাজ শেষ হয়। কারন ও আব্বু আম্মুসহ বাড়ির সবাইকে ডেকে তোলে। আমার নামাজ শেষ করে যখন ওর নামাজ পড়া দেখি তখন যেন বিমহিত হয়ে পড়ি। নিহীন দেখতে ফর্সা না হলেও শ্যামলা বর্নের কারনে আরো সুন্দর দেখায়। যখন ওকে আমি নামাজরত অবস্থায় দেখি তখন আরো সৌন্দর্য বিকশিত হয় ওর শ্যামল চেহারাতে। একধরনের উজ্জ্বলতা আসে যা মনে হয় সারাটা সময় ধরে তাকিয়ে দেখি।
– এই কি দেখছো? (নিহীন)
– কই কিছু না তো।
– এই তুমি প্রতিদিন আমার দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো। নামাজ শেষ করেই আমি রোজ তা দেখতে পায়। আমার লজ্জ্বা করে তো।
– আহারে লজ্জাবতী।
– ভেংচি দিবা না বান্দর কোথাকার। এখন একটু শুয়ে থাকো একটু পর অফিসে যাবে। আমি কোরআন পড়ি কেমন?
– আচ্ছা।
নিহীন কোরআন পড়া শুরু করে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে ওর কোরআন তিলাওয়াত শুনছি। কী মিষ্টি তার কন্ঠ। সত্যিই এমন মিষ্টি কন্ঠস্বর মানুষগুলো হিন্দি,বাংলা, ইংলিশ গান গীটার হাতে না গেয়ে যদি কোরআন তিলওয়াত করতো কতই না ভালো হতো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিহীনের সাথে পরিচয়ের মুহুর্তগুলো মনে পড়ে গেল। সেদিন..
– নিলয় আর কত এভাবে থাকবি? (আম্মু)
– এভাবেই বেশ আছি। (আমি)
– নাহ,এটাকে বেশ ভাবে বেঁচে থাকা বলে না।
– তো কীভাবে বলে?
– চুপ কর। মুখে মুখে খালি কথা বলাটায় শিখছিস। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যায়।
আমি কিছুই বললাম না। গোল্ডলিফ সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে আগুন জ্বালালাম। আম্মু তখনি কাশতে কাশতে আমার থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে বাইরে ফেলে দিল। রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে বললাম..
– আম্মু এটা কি করলে?
(ঠাসস..)- চুপ বেয়াদপ। পড়াশোনা শেষ প্রায় চাকরি করার নাম নেয়। আবার আমার সামনে তুই সিগারেট খাচ্ছিস। ঐ তুই বিয়ে করবি কবে?
– হিহিহি..আম্মু বিয়ে আমি করবো না।
– কেনো করবি না?
– তুমি তো জানোই সব।
– আমি এতকিছু বুঝিনা। আমার দেখা ভালো একটা মেয়ে আছে। আমরা কালকেই তোকে সাথে নিয়ে দেখতে যাবো। যদি না যাস তবে আমার ম
– থামো আম্মু, যাবো আমি।
– ভালো ছেলে।
আর কিছু না বলে আম্মু হনহন করে চলে গেলেন। আমি বিয়ে করবো না বিষয়টা এড়িয়ে এসেছি বেশ কয়েকদিন ধরে। কিন্তু এখন মনে হয় আর সেটা সম্ভব না। অবশ্য বিয়ে বিষয়টা এড়িয়ে চলার পিছনে একটা বড় কারন আছে। আর সেই কারনটার নাম হলো নেহা। যখন ভার্সিটিতে পড়ি তখন মেয়েটার সাথে আমার পরিচয় হয়। একসময় তাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলি। খুব ভালোই চলছিল দিনগুলো। রিলেশনের মাস ছয়েক পর দিনগুলো বড্ড খারাপ যাচ্ছিল। কারন যখন কল দিতাম তখন হয় ব্যস্ত না হয় ওয়েটিং দেখাত। দেখা করতে চাইলে কৌশলে তা এড়িয়ে যেতো। একদিন ক্যামপাসে যেয়ে দেখি নেহা অন্যএকটি ছেলের বাইকের পিছনে বসে আছে। আমি দৌড়ে কাছে যায়।
– নেহা কি হয়েছে তোমার? (আমি)
– কে আপনি? আর আমার নাম ধরে তুমি করে কেনো ডাকছেন?
নেহার এমন উত্তর শুনে হা হয়ে গেলাম। কারন নেহা আমাকে চিনতেই পারছে না। মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবী ঘুরছে। পাগলের মত বলতে থাকি…
– নেহা,আমাকে চিনতে পারছো না। আমি নিলয় তুমি যাকে ভালোবাসো।
– ধ্যাত কাওয়ার্ড। তোকে ভালোবাসা মাই ফুট। তোকে তো একটু ব্যবহার করেছিলাম মাত্র। এই যে দেখ আমার রিয়েল বয়ফ্রেন্ড। আসলে ওর সাথে কদিন ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছিল তাই সময়টা বেশ খারাপ যাচ্ছিল। সময়টাকে ইনজয় করার জন্য তোর মত গর্দভের সাথে ভালোবাসা খেলি বুঝেছিস?
নেহা চলে গেল। আমি কান্নাভরা চোখে কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে আসি। তারপর থেকেই আমি নেশাখোর,এলোমেলো আর অগোছালো। এরপর সব মেয়েদের দেখলে আমার কেবল খারাপই মনে হতো। সব মেয়েই খারাপ। তাই বিয়ে বিষয়টা গায়ে মাখতাম না। কিন্তু আম্মু যা বলে গেল তাতে আর আটকানো সম্ভব না।
পরেরদিন সন্ধ্যা বেলা নিহীনদের বাড়িতে যায়। যখন পৌছালাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দরজার কাছে আসতেই কানে এলো কেউ একজন গভীর মনোযোগ দিয়ে মিষ্টিসুরে কোরআন পড়ছে তার শব্দ। আমার শরীরে এক ধরনের কাঁপুনি শুরু হয়ে গেলো। মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই পাঠ আমি শুনতে লাগলাম। আমার মনে যত খারাপ লাগা, দুঃচিন্তা ছিল সব যেন এক মুহুর্তের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
“এই নিলয় ভিতরে আয়” আমি কেবল চেয়ে আছি। আব্বু আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। ততক্ষনে পাঠ করা কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ির মধ্যে এসে চারিদিক চোথ বুলিয়ে নিচ্ছি। তখনি দেখলাম সাদা ড্রেস পরে বড় একটি ওড়না (ঘোমটা) দিয়ে একটি মেয়ে আসছে। হাবহাব দেখে মনে হচ্ছে এটাই পাত্রী।
– ভাইজান এই যে আমার মেয়ে নিহীন। (আংকেল)
– নিলয় দেখ নিহীন এসেছে। (আব্বু)
আমি নিহীনের দিকেই তাকিয়েই আছি। কেমন যেন তাকিয়ে থাকতে বেশ লাগছে। যদিও তাকে এখনো আমি দেখিনি মাথার কাপড়ের জন্য।
– বৌমার মাথার ঘোমটা টা একটু সরিয়ে দিন তবেই তো দেখব। (আম্মু হেসে হেসে বললো)
– ওহ ঠিকই বলেছেন আপা।
মাথার কাপড় যখন সরালো তখন আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকালাম। আমি ভাবছিলাম মেয়েটা বাকি সব ফর্সা মেয়েদের মত দেখতে হবে। কিন্তু না, নিহীন শ্যামলা বর্ণের। চোখ দুইটা নিচের দিকে করা। চোখের ভ্রুদুটো এতটাই মোহনীয় মনে হচ্ছে যেন কত মায়াবী। হালকা রেশমী চুল মুখের ডান পাশ বেয়ে নিচে নেমেছে যা এতটাই আকর্ষনীয় লাগছে যেন কতটা সুন্দরীর সংমিশ্রনে সে গঠিত। নাকটা এমনভাবে মুখের সাথে সংবরন করেছে যেন কতটা পুষ্পলতা লাগছে। আমাকে আম্মু আস্তে করে বললো.. “মেয়ে পছন্দ হয়েছে? কিছুই বলতে পারলাম না। কেবল নির্বাক তাকিয়ে আছি। তখনি শুনলাম নিহীনকে ভিতরে নিয়ে যেতে কেউ বলছে। সে চলে গেল। সে মুহুর্তে যেন মনে হতে লাগলো আমার হার্টবিট মিস হয়ে যাচ্ছে বারবার। আংকেল মানে নিহীনের আব্বু বললো..
– যাও নিলয় নিহীনের সাথে একটু একা কথা বলে আসো। তাহলে পরে এডযাস্ট করে নিতে সুবিধা হবে।
জানিনা আমার কি হল। আমি ওঠে দাঁড়িয়ে বলে দিলাম “আংকেল এসবের দরকার নেই। আমি আজই এই মুহূর্তে আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনারা রাজি থাকেন।” আমার উত্তর শুনে আম্মু আব্বু হা হয়ে রইলেন। যেন মনে হয় আমি এরাকম কথা বলবো তারা কল্পনাতেও ভাবিনি। তখনি হাসির শব্দ হলো। মানে আংকেলসহ আব্বু আম্মু সবাই হাসছেন। আংকেল বললো..
– দেখো বাবা একটা মাত্র মেয়ে আমার। সুখবরটা যখন পেয়েছি তখন তো একটু আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করি।”
কিছুই বললাম না। বাইরে চলে আসলাম আমি। কী মনে করে উপরের ঘরের দিকে তাকালাম। দেখি কেউ একজন পর্দার আড়ালে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই সরে গেল। বুঝলাম এটা নিহীন।
এরপর নিহীনকে বিয়ে করে নিয়ে আসি। নেহার সাথে ঘটা সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করি। এর পর সেই আমাকে আগের মত গোছালো করে দিয়েছে।
– এই ওঠো, ৭ টা বাজে অফিসে যাবে না নাকি? (নিহীন)
– হুমম
– হুমম কি, ঘুমালে নাকি?
– হুমম।
– পানি আনবো কিন্তু?
নিহীন পানি আনতে যাবে তখনি ওর হাতটা ধরে টান দিলাম। সে ধপ করে এসে আমার বুকে পড়ল। আমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
– এই ছাড়ো ছাড়ো।
– কেনো?
– কেউ চলে আসবে। (নিহীন)
– কেউ আসবে না।
– তোমার কথায় নাকি?
– নাহ গো, আমার বউয়ের কথায়।
– অনেক কাজ আছে।
– কী কাজ?
– তোমাকে খাবার বেড়ে দিতে হবে। আর..
– লাগবে না।
– এমা কেনো?
– আমার ঠোটে ১০ মিনিট ধরে কিস দাও তাহলে এনার্জি লেভেল হাই হয়ে যাবে।
– এইই…দিন দিন তুমি বদমায়েশ হয়ে যাচ্ছো।
– বদমায়েশ না হলে ভালোবাসা মজা লাগে নাকি?
– সরো তো এখন।
জোরাজুরি করে সে ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল। আমি উঠে গুছিয়ে নিলাম। সকালের খাবার খেয়ে যখন অফিসে যাবো দরজার কাছে আসতেই নিহীন বললো..
– এই শোনো।
– হুমম।
– চোখ বন্ধ করো।
– কেনো?
– করো তো।
– ওকে।
যখন চোখ বন্ধ করলাম তখনি অনুভব করলাম আমার ঠোঁটে নিহীনের শীতল,নরম ঠোঁটের আস্তরন।শরীরে তখনি কাঁপুনি তৈরী হল। এক ঝটকায় কেমন যেন কাপতে লাগলাম। নিহীন ছেড়ে দিয়ে ভিতরে দৌড়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় আস্তে করে বললো “সাবধানে যাবে। এনার্জি লেভেল আপ করে দিলাম,বান্দর হাজবেন্ড একটা।” আমি মুচকি হেসে নিজেকে দেখতে লাগলাম যে আমি কোন দিক দিয়ে বান্দর। হুম লেজহীন ভদ্র মানুষ বান্দর।