-ওই চল।
-কোথায়?
-ঘুরতে।
-নাহ্, ক্লাস মিস দেওয়া যাবেনা।
-ক্লাস করে একদম আইনস্টাইন হয়ে যাবিনা।
-তাও, মিস দিবোনা।
-তুই যাবি কি না!
-না।
-ঠাসসসসসস।
-মাড়লি ক্যান!
-যাবি কি না!
-না।
-ঠাসসসসস।
-ওই মানে কি!
-ওয়েট আসছি…(বলেই দুই মিনিট পর কোথা থেকে এক লাঠি নিয়ে সামনে হাজির)
-হুম এবার বল যাবি কি না?
-না গেলে কি ওইটা দিয়ে পিটাবি?
-নাহ্, তোর মাথায় একটা বারি দিবো।
-হিহিহি, আগে বলবিতো।কোথায় যাবি শুধু বল।
-পার্কে।
-কত্ত রোদ, তুই যদি কালো হয়ে যাস!
-তবে নদীর পাড়ে চল।
-পার্কেই ভালো।
.
অতঃপর সাধের ক্লাস বাদ দিয়ে বালিকার সাথে রিক্সায় করে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
যখন পৌছালাম তখন পকেটে মানিব্যাগ উধাও।
নিরীহ দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে বললাম “মানিব্যাগ ভুলে বাসায় রেখে আসছি।”
-ওকে আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।
তারপর বালিকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে দুইটা কোণ আইসক্রিম কিনে দুইশত টাকার টিকিট কেটে পার্কে আমায় সহ প্রবেশ করলো।
আফসুস বসার সব ব্রেঞ্চগুলা কাপালদের দখলে।
মেয়েটাও অবশ্য কম যায়না,গাছের নিচে ঘাসের ওপরেই বসে পরলো।
আজব ব্যাপার, আমাদের ফলো করে যতগুলা কাপাল দাঁড়িয়ে ছিলো তারাও একটুপর এক এক করে বসে পরলো।
-রফি..চল একটা গেম খেলি।
-কি গেম।
-তুই আমায় আইসক্রিম খাইয়ে দে, আমি তোকে খাইয়ে দেই।
-এ কেমন গেম!
-বুঝবিনা, ভালবাসার গেম।
-মানে কি!
-মানে…আই লাভ্ ইউ।
(শুনে পুরাই অবাক হয়ে গেলাম।হঠাৎ করে মেয়েটার হলো কি।)
-তুই কি বলতে চাচ্ছিস!
-হিহিহি, আমি তোকে ভালবাসি।
-তুই জাস্ট আমার ফ্রেন্ড।
-একটা মেয়ে হয়েও নিজের মুখে কথাটা বলেছি, এটাই অনেক।so বেশী ভাব-নিবিনা।
(কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।তারপর উঠে চলে আসতে যাবো তখনি নিধি হাত টেনে বসিয়ে দিলো।)
-কোথায় যাস।
-বাসায়।
-আমায় কি তুই ভালবাসিস না!
-তোর আর আমার মাঝে ডিফারেন্সটা দেখ।
-ভালবাসা কোনো ধর্ম মানেনা।
-আমরা রিলেশন করে সেটা পরিপূর্ণতা দিতে হলে যেকোনো একজনের পরিবারকে সারাজীবনের জন্য ভুলে যেতে হবে।সেটা অবশ্যই বুঝতে পারছিস।
-আমি যদি আমার সব কিছু ছেড়ে তোর কাছে আসি তুই আমায় গ্রহণ করবি?
-এত সহজে সবকিছু ভেবে ডিসিশন নেওয়াটা ঠিক হবেনা।
-আমি তিন বছর ভেবেই আজ ডিসিশন নিয়েছি।
-মানে!
-তোর সাথে বন্ধুত্বের পর কেমন এক ভালোলাগা কাজ করতো।সেখান থেকে কখন ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে, নিজেরো অজানা।
-আমায় তবে একটা দিন ভাবতে দে।
-সারাজীবন ভাব, কিন্তু উত্তর “হ্যা” হওয়া চাই।
-এবার আইসক্রিমটা শেষ কর।
-হুম, তুই আমায় খাইয়ে দে, আমি তোকে খাইয়ে দিই।
(কি আর করার, বালিকার কাছে হার মেনে দুজন দুজনকে আইসক্রিম খাইয়ে দিতে লাগলাম।
আমাদের থেকে কিছু দূরে এক মেয়ে ওর বয়-ফ্রেন্ডকে বলতে লাগলো,”দেখছো ওদের মাঝে কত্ত ভালবাসা।”
কথাটা শুনে আমি আর নিধি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।)
-ওই চল,ফুচকা খাবো।
-মাত্রই তো আইসক্রিম খেলাম।
-হুম, এখন ফুচকা খেলে সমস্যা কি!
-না তোর বাবার ব্যাংক ব্যালেন্স কি রাতারাতি বেড়ে গেছে নাকি।
-ধ্যাত, চলতো।
.
অতঃপর পার্কের ভেতর বিশ টাকা প্লেট ফুচকা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে খেলাম।
হালার ফুচকাওয়ালারাও ফায়দা বুঝে।
তারপর পার্ক থেকে বেড়িয়ে বাড়ি যাবার পালা।
-নিধি…
-হুম।
-হেঁটে বাড়ি যাবো।
-নাহ্, এইনে তোর মানিব্যাগ।
-মানে কি, এতক্ষণ সব আমায় টাকায় খেলামনাতো?
-হুম, তো?
-এত্ত মহান কাজ করলি কখন?
-বুঝবিনা, রিক্সা থেকে টেকনিক করে সরিয়ে নিয়েছি।
.
বালিকার কথা শুনে অতি দুঃখের সাথে রিক্সায় করে বাড়ি রওনা দিলাম।
দিনটা যাই হোক, রাতে পরলাম মহা বিপদে “নিধিকে কি জবাব দিবো!”
তখনি মাথায় বুদ্ধি এলো,”যদি অন্য কোনো ধর্মের মেয়েকে বিবাহ করে মুসলিম বানানো যায়, তবে জান্নাত নিশ্চিত।”
লোভ হোক বা ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা, নিধির সাথে প্রেম করে বিয়ে করার কথাটা মনে গেঁথে গেলো।
মহা খুশিতে পরেরদিন ভার্সিটিতে গেলাম।
নিধিকে পেয়েই ডাক দিলাম, তবে দেখে মনে হলো মেয়েটাএ মন খারাপ।
-নিধি তোকে একটা কথা বলতে চাই।
-তার আগে আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই।
-হুম বল…
-কাল যা করেছি, সবকিছু একটা নাটক।আসলে তোর মনটা পরীক্ষা করে দেখলাম।I’m sorry…
-ওপ্স।
(মনটা নিজেরি খারাপ হয়ে গেলো।তবে সেটা কোনো ব্যাপার ছিলো না)
-হুম, তো তুই কি বলতে চাইলি।
-নাহ্, তেমন কিছুই না।আজ তুই ফুচকা খাওয়াবি সেটা।
-হিহিহি, ওকে চল।
.
ব্যস তারপর মেয়েটার সাথে শেষবারের মতন ফুচকা খেলাম।
পরবর্তীতে নিধিকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম।
কারণ ভালবাসা আমারো জন্মেছিলো, তবে সেটা আর গাঢ় করতে চাইছিলাম না।
এরি মাঝে অনন্যা নামে এক মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।
ভাগ্যক্রমে নতুন ম্যাডামো হিন্দু ধর্মের।
আস্তে আস্তে অনন্যার সাথে বন্ধ্যত্ব যতই ঘনিষ্ঠ হলো, নিধি ততোই দূরে সরে যেতে লাগলো।
(২)
রাত তখন বারোটা কি একটা।
জোৎসাহীন আকাশে, কালো অন্ধকারে আঁৎছন্ন চারিপাশ।
আমিও মহা ঘুমে ব্যস্ত, তখনি বালিশের পাশে মোবাইলটা বেজে উঠলো।
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম, এখন নিধি কোন দরকারে কল দিতে পারে! ব্যাপারটা জানতে কল রিসিভ করলাম।
-হ্যালো।
-তুই এখনি আমার বাড়ির সামনে আয়।
-এত্ত রাতে পাগল নাকি।
-বিশ মিনিটে আসবি, আমি বাড়ির নিচে অপেক্ষা করছি।
-ক্যানো! মোবাইলে বল।
-আসতে বলছি, আয়।
-ওকে দেখছি।
-তোর দেখার গুষ্টিমারি।তাড়াতাড়ি আয়।
.
টর্চ হাতে বেড়িয়ে পরলাম, নিঝুম এক গা ঝুম ঝুমে রাতে।
চারিপাশে একটা কুকুর পর্যন্ত নেই।
অদ্ভুত এই ভয়ংকর রাত থেকে সবাই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
এরি মাঝে সোজা পথ ধরে একলা পথিক নিধির বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছি আমি।
পৌছে নিধিকে কল দিতেই বালিকা নিচে নেমে এলো।
-অনন্যার সাথে তো ভালোই জমিয়েছিস।
-হুম, খুব ভালো বন্ধু।
-শুধু বন্ধু! পুরো ভার্সিটি তো জানে তোর গার্ল-ফ্রেন্ড।
-আই ডোন্ট কেয়ার।
-অনন্যার সাথে আর কথা বলবিনা।
-ক্যানো!
-এমনি।
-এই বলার জন্য ডেকেছিস?
-ভালবাসি।
-এবার কোন পরীক্ষা নিবি?
-সত্যি ভালবাসি।
-মজা সবকিছু নিয়ে করা যায়।তবে এভাবে রাতে ডেকে মজা করার কোনো মানেই হয়না।
-ওই কুত্তা, ভালবাসি..ভালবাসি..ভালবাসি।
(সবকিছু নিধির নাটক ভেবে চলে আসতে যাবো, তখনি বালিকা হাত টেনে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে ধরলো।
আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ।
তারপর ওর কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললাম “আমিও ভালবাসি”)
-রফি…
-হুম।
-আজ এই অন্ধকার রাতে চলনা ঘুরি।
-কোথায়?
-যেদিকে দুই মন চায়।
-ভূতে ভয় পাসনা?
-তুই পাশে থাকলে কিছুতেই ভয় পাইনা।
তারপর নিধির হাত ধরে অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকৃতির মাঝে দুজন হারিয়ে গেলাম।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক