ভালো বাসাবাসি

ভালো বাসাবাসি

আমার বউটা প্রতিদিন মেয়ে নিয়ে মেইন গেইট ধরে দাঁড়িয়ে থাকে । আমাকে আসতে দেখলেই লাজুক হেসে বলে উঠে, “মেয়ে খুব ডিস্টার্ব করছিলো, তাই তার পাপা আসবে দেখাতে নিয়ে এসেছি।” “হুম, ভালো করেছো,” বলি। আর মেয়েকে কোলে তুলে নিই। জানি যে, মেয়ে নয়, মেয়ের মায়েরই তর সইছিলো না। নইলে প্রতিদিনই মেয়ের বাহানা! কখনো মেয়ে তার কোলে ঘুমানোও তো থাকে। তখনো বাহানা রেডি, “এইমাত্র ঘুমুলো!” মেয়ে হবার আগেও সে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর বলতো, “ঘরে একা একা হাসফাস লাগছিলো। তাই গাড়ি, মানুষ এসব দেখতে দাঁড়িয়ে আছি।” তখনো বলতাম,

“হুম।”

সে লজ্জায় স্বীকার করতে চায়তো না যে, সে আমার অপেক্ষায় আছে। আমিও লজ্জা দিই কিভাবে! যদিও লজ্জা পাওয়া তাকে দেখতে যেন ঠিক বিদেশি পুতুলের মুখের মতোই মনে হয়। লজ্জারাংগা টুকটুকে লাল দুইটি গাল! তাই মাঝেমাঝে লজ্জা দিতে মন চায়। তাদের দেখে মনে মনে আমিও কম খুশি নই। গাড়ি থেকে নামতেই বউ মেয়ে অপেক্ষারত, কার না ভালো লাগে! তবে, আমিও বলিনা তা। সে বলেনা কেনো? অভিমান হয় আমার। সেতো বলতে পারে, “তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।” আমিও বলতাম, “প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকবে কিন্তু। এসেই তোমাদের মা মেয়ের মুখ দেখলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”

ঘরে ঢুকে যখন গরম গরম চা এর সাথে পাকুড়া করে দেয়, কখনোবা ডিম পরোটা, আর কি লাগে। মন পেট দু’টোয় ভরে যায়। বউ দশদিনের জন্য নাইওর গেছে। এতোদিন বউ মেয়ে ছেড়ে কি থাকা যায়! কিন্তু এতো দূরের পথ, প্রায় একবছর পর গেলো। যাবার আগে দুনিয়ার সব খাবার রেডি করে ফ্রিজে রেখে গেছে। এমনভাবে আলাদা আলাদা বাটি করে রেখেছে, যাতে একবার নামালে একটা বাটি শেষ হয়! সে চলে যাবার পর ফ্রিজ খুলে আমার চক্ষু চড়কগাছ, পুরো ফ্রিজ বাটিময়! আমি কি এতোই রাক্ষস! ফোন করে বলাতে, জানায়,

“দশদিন অনেকসময়, বাটি মাত্র বিশটা!” বউ দুইবেলা ঠিক খাবার সময়ই ফোন করে,
“কি করছো?”
“খাচ্ছি।”
“ঠিক আছে, পরে কথা বলবো।”
“এখন বললে, কি অসুবিধে?”

“আরাম করে খেতে পারবেনা, কথায় মনোযোগ থাকবে।” কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছে করে, “কথা বলতেই থাকো, মনে হবে পাশে বসে আছো।” সংসার আড়াই বছরের হয়ে গেলো, কতো কিছুই তো শেয়ার করি, কিন্তু মনের ভেতর দু’জনেরই এতো এতো গোপন প্রেম! তা জানাতেই যেন লজ্জা, তা গোপন করতেই যতো বাহানা! না বলাতে কি ভালোবাসা কমছে? না, বাড়ছে। আমরা লুকোচুরি ভালো বাসাবাসি করছি। বাপের বাড়ি থেকে এসে, ফ্রিজ খুলেই সে চিল্লিয়ে উঠে,

“এতো বাজার! কয়মাস খাবো? সব তো বাসি হয়ে যাবে!”
“এতো কই দেখলে?”
“এতো নয়!”
“তোমার পছন্দের তরকারি আর ফ্রুটসই তো আনলাম শুধু!”
“তাই?”

আসলে ঘরে সময় কাটতো না। বউ বাজার করতে চাইতাম না বলে খুব রাগ করতো। তার পছন্দের সবজি মিস করতো। তাই সুযোগ পেলেই বাজার করেছি শুধু। বউকে কি আর বলা যায়, তোমাকে মিস করেছি, তোমার কথা ভেবেই যে সব কেনা ।

বউ নিশ্চয়ই ঝকঝকে বাথরুম, রান্নাঘর, আলনায় সাজানো তার রেখে যাওয়া বাসী জামা ধুয়ে সাজিয়ে রেখেছি, তা দেখে আন্দাজ করতে পারবে তাকে কতোটা ভালোবাসি, কতোখানি মিস করেছি। সেও কি কম! আমার প্রিয় সব শুকনো খাবার বাড়ি থেকে তৈরি করে এনেছে নারকেলের বরফি, ছাঁচের পিঠা। আমের শুকনো আচারও, যা ভিজিয়ে লবণ, রসুন আর শুকনো মরিচ দিয়ে একটা আইটেম করে ভাত দিয়ে খুব খেতে পছন্দ করি আমি, সব নিয়ে এসেছে বেশি করে। মনে হচ্ছে, আমরা একে অপরের পছন্দের খাবার দিয়েই যেন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করছি। অনেকদিন পর রাতে বউকে পাশে পেলাম। মনে হচ্ছে, দশদিন নয় একবছর পর দেখছি তাকে, আমার মেয়েকেও।
বউ বলে,

“আজ বাইরে হালকা জোছনা আছে, যাবে ছাদে?” মনে মনে বলি,
“যাবো মানে, দৌড়াবো। কতোদিন পর দেখা!”
মুখে বলি,
“এখন!”
“হুম, গ্রামে তো ফকফকে জোছনায় চারিদিক আলোকিত দেখে এসেছি।”
“মিস করোনি আমাকে?” (রোমান্টিক হতে মন চায়..)
“হুম, তাইতো ছাদে আসতে বলছি।” ( অমা, সেও দেখি আজ নির্লজ্জ রোমান্টিক মুডে! )

“চলো” আমি তার হাত ধরে নিয়ে যাই। আজ লুকোচুরি ভালো বাসাবাসি নয়, দুইজন দুইজনকে চাঁদের আলোয় প্রকাশ্যেই ভালোবাসবো।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত