তুমি কোথায়?
 -চলে যাচ্ছি।
 -মানে?
 -মানে তোমার বাড়ি চলে যাচ্ছি।
 -মানে কি এসবের?
 -আমি বাবা মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি।
 -কেন?
 -এই বিষয় নিশ্চয় তোমার আজানা নেই।
 -প্লিজ যেও না তুমি, আমি সরি।
 -সরি বললেই কি সব ঠিক হয়ে যায়?
 -তাহলে কি বলবো?
 -বলার মত কোন সুযোগ তোমার নেই।
 -আমি যে কোন মুল্যে তোমাকে চাই।
 -আমাকে আর তোমার চাইতে হবে না। ফুলির কালকে থেকে রান্নাসহ কাজ করে দেবে।
 -সে তো করবে। কিন্তু আমার নিজস্ব কাজগুলো কে করে দেবে?
 -এত বড় ছেলে হয়েছ আর নিজের কাজ করতে জানো না?
 -তুমি তো জানোই আমার বাবা মা কেউ নেই। আর তোমাকে ছাড়া আমি নিঃসঙ্গ।
 -সেটা আগে মনে ছিল না? ফোন রাখো, গাড়ি চলে এসেছে।
ঠাস করে ইরা আবিরের ফোন কেটে দিল। আবির কিছু বলতে চাইলেও সুযোগ দিল না। আবির ফোনটা বিছানার উপরে ফেলে দিল। আর বিছানার উপরেশুয়ে পরলো। বিছানায় শুয়ে আবির ইরার সাথে তার ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবতে থাকলো। বেশ কয়েকদিন ইরারা সাথে আবিরের সম্পর্কের টানাপোড়ন শুরু হয়েছে।কয়েকদিন সামান্য ব্যাপার নিয়েওঝগড়া শুরু হচ্ছে। আবিরও মাঝেমাঝে রেগে যাচ্ছে। আজ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে আবির ইরাকে থাপ্পড় মারে। ইরা কিছু না বলে কাঁদতে থাকে। ইরা খুব জেদি মেয়ে। কিন্তু ছন্নছাড়াআবিরকে ঠিক গুছিয়ে দেয়। আবিরকে নিয়ে ভালই থাকে। কিন্তু আজ কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল।
সি এন জির এক পাশে আছে। পাশেদুইজন মেয়ে আছে। সি এন জি দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে। আর হালকা বাতাস এসে ইরার গায়ে লাগছে। গাড়ি চলতে চলতে চলতে ব্রিজে উঠলো। ব্রিজে ভালই গাড়ি দেখা যাচ্ছে। আর সি এন জিও ছুটে চলছে। ব্রিজের মাঝামাঝি আসাতেই হঠাৎকরে দ্রুত গতিতে একটা ট্রাক চলেআসলো। তাই দেখে সি এন জির ব্রেক কসলো। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেল। ট্রাক এসে সি এন জিকে দুমরে মুচরে দিল। আর ভিতরে থাকা যাত্রিরা পিষে গেছে ততক্ষণে। আবির ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরলো। শরির ঘেমে পানি ঝরছে। তারমানে এতক্ষণ সপ্ন দেখছিল। আবিরমোবাইল খুঁজতে থাকলো। মোবাইল হাতে নিয়ে ইরার নাম্বারেকল দিতে থাকলো। কিন্তু ইরা ফোন ধরছে না। আবির আরো অস্থির হয়েযেতে থাকলো। কয়েকবার চেষ্টা করার পরে ইরা ফোনধরলো। ইরা ফোন ধরতেই আবির বলল
-তুমি ঠিক আছো তো?
 -হ্যা। সব ঠিকঠাকই আছে তো।
 -আমি তোমাকে নিয়ে একটা সপ্নদেখেছি।
 -এইসময় ঘুমিয়েছিলে!! খেয়েছ তুমি?
 -নাহ। এখনও খাই নি।
 -তারাতারি খেয়ে নাও।
 -তুমি ফিরে আসো প্লিজ।
 -এখন আমাকে ছাড়া থাকতেই অভ্যাসকরো।
 -আমি পারবো না।
 -চেষ্টা করো। আমি ফোন রাখছি।
আবারও আবিরের ফোন কেটে দিল।আবির ফোন রেখে খাবার টেবিলেরদিকে যেতে থাকলো। ক্ষুধালেগেছে, তাই খেতেই হবে।আবির খাবার টেবিলে বসে ভাতখেতে পারছে না। কারন খাবারঠান্ডা হয়ে আছে। আবির আবারও ফোন আনতে চলে গেল। আবারও ইরাকে ফোন করলো। ইরা ফোন ধরে বলল
-বার বার ফোন দিচ্ছ কেন?
 -খাবার মনেহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে। তাই খেতে ইচ্ছা করছে না।
 -গরম করে খেয়ে নাও।
 -আমি পারবো না। তারচেয়ে হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসি।
 -এই হোটেলে যাবে না। আমি তোমাকে খাবার গরম করা শিখিয়ে দিচ্ছি।
 -লাগবে না।
 -না লাগবে। এখনই খাবার গরম করবে।
রান্না ঘরে গিয়ে আমাকে ফোন দাও। আবির রান্না ঘরে ঢুকে আবার ইরাকে ফোন দিয়ে বলল
-কি করবো?
 -শোনো। চুলা জালিয়ে খাবার চুলার উপরে রাখো। আর চামচ দিয়ে নাড়তে থাকো।
 -আচ্ছা।
 -আর এখন ফোন রাখো। খাবার খেয়ে গোসল করবে।
আবারও ইরা ফোন কেটে দিল। আবির চুলায় খাবার দিয়ে চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে হাত গরম পাত্রে লেগে গেল। আর আবির হাত সরিয়ে রুমে দৌড় দিল। রুমে গিয়ে দেখে আবিরের হাত পুরে গিয়েছে। তাই ক্লান্ত বিছানায় শুয়ে আবার ঘুম ঘুম ভাব আসতে থাকলো। ঘুম থেকে জেগে দেখে ইরা আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইরাকে দেখে আবির গায়ে চিমটি কাটতে থাকলো। কারন এটাও নতুন কোন সপ্ন হতে পারে। আবিরের চিমটি কাটা দেখে ইরা বলল
-সপ্ন না সত্যি আমি।
 -তুমি!! ভিতরে এলে কিভাবে?
 -আমার কাছে চাবি ছিল।
 -তো আবার ফিরে এলে যে?
 -কেন তুমি খুশি হও নি?
 -খুশি হয়েছি। অনেক খুশি। কিন্তু কেন ফিরে এলে?
 -আমার একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে গিয়েছি। তাই ফিরে এলাম। আগে বলো, খেয়েছ?
 -না। এটা তোমার না জানলেই চলবে।
 -রান্নাঘরে খাবার পোড়া গন্ধ পেলাম।
 -খাবার পুড়বার খবর পেলে, আর আমার হাত পুরে গিয়েছে।
 -কোন কাজই ঠিকমত পারো না।
 -যেটা পারতাম সেটাই তো হারিয়ে যাচ্ছে।
 -কি পারতে?
 -তোমাকে ভালবাসতে পারতাম। কিন্তু তুমই চলে যাচ্ছ।
 -তুমি জানতে চাইবে না কি প্রয়োজনীয় জিনিস?
 -কি?
 -তুমি। মানে?
 -আমাকে ছাড়া যেমন তোমার চলবে না। তোমাকে ছাড়াও আমার চলবে না। আমি পারলেও তুমি কোনভাবেই পারবে না। কারন তোমার জীবনকে আমিই গুছিয়ে নিতে পারি। তাই ফিরে এলাম।
-এতই যদি বোঝ, তাহলে ছেড়ে যেতে চাও কেন?
 -তখন আমার খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু আমি আর তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইবো না। কারন, আমরা দুজন দুজনার। একজন ছাড়া অন্যজনের চলে না।
 -আমিও তাই। এখন খেতে চলো।
 -চলো। আমারও খুব ক্ষুধা লেগেছে।
 -খাবার পরে তোমার প্রেমের ক্ষুধাও মিটাবো। যাতে আমাকে ছেড়ে যেতে না চাও।
 -এমনিই যাবো না। কারন আমরা দুজন দুজনার।
  









