উড়াকান্দা চৌরাস্তা পার হবার সময় ইটের সাথে ধাক্কা লেগে সাইকেল নিয়ে হুমরি খেয়ে পরলাম।
পেটে ব্যাথা পাওয়ার কারনে সেখানেই কিছু ক্ষন শুয়ে থাকলাম।
হঠাৎ একটা মেয়ে আমাকে তুলে রাস্তার পাশে একটা দেয়ালে বসালো।মেয়েটার দিকে ঠিক মত তাকাতেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।
কারনটা হল এত সকালে এত সুন্দরি একটা মেয়ে রাস্তায় একা??
মনে মনে ভাবলাম এটা মেয়ে না হয়তো বা পরী।
কিন্তু ঠিক মতো পরখ করে দেখলাম পিঠে পাখা নেই। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই মেয়ে? ?? কি ভাবে সম্ভব??
একবার মনে মনে ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি হয়তো বা।কিন্তু আমার হাতে চিমটি কেটে শিওর হলাম এটা স্বপ্ন না।
মেয়েটা— ঠিক মতো দেখে সাইকেল চলাতে পারেন না??
আমি– ইয়ে মানে, চোখে একটু ঘুম ছিল তো তাই খেয়াল করতে পারি না।
মেয়েটা— ঠিক আছে এবার যান। এবার ঘুম কাটছে???
আমি– হুম। কে আপনি? কোথায় থাকেন?
মেয়েটা— কে আমি মানে? ?
আপনি পরে ছিলেন তাই সাহায্য করলাম। অন্য কিছু বলা যাবে না।
আমি– ও আছচা। এমনি জানতে চাইছিলাম।
মেয়েটা— প্রেম করার ধান্দা না কি???
আমি– (চুপ হয়ে মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে নিশ্চই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরষ্কার বিজয়ি)
মেয়েটা— সামনে দেখে চালাবেন।
আমি– জি আচ্ছা।
এত সকালে(সকাল ৬ টায়) প্রাইভেট দেওয়ার কারনে কল্লর স্যারকে বকা দেওয়া উচিত কিন্তু আজ স্যারকে ধন্যবাদ দিছছিলাম।
কারনটা হল এই সুন্দরি, পরোপকারি , ঝগরাটে মেয়েটাকে মনে ধরে গিছে।
তাই সময় টা দেখে রাখলাম।কারন আগামিকাল আবার দেখা হতে পারে।
তাই পরের দিন একই সময়ে রাস্তায় অপেক্ষা করছি।
আজ কপাল খারাপ তাই দেখা হল না।আমিও হাল ছারার পাত্র না।
পরের দিন আবার আসলাম। সাইকেল নিয়ে রাস্তায় ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েটা এসেই….
মেয়েটা— কি সমস্যা আপনার??
আমি— না।কোন সমস্যা নাই তো।
মেয়েটা— গতকাল এখানে দাড়িয়ে ছিলেন, আজ ও দাড়িয়ে আছেন? ?
আমি– আপনার নাম জানার জন্য ।
মেয়েটা— নাম বলতে পারি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
আমি– এত সকালে নদীতে লাফ দেওয়ার কথা তো বলবেন না???
মেয়েটা— হা হা হা। না তেমন কিছু বলবো না।আমাকে শুধু আপনার সাইকেলে করে রাজবাড়ি নামিয়ে দিতে হবে। কোন রিক্সা পাচ্ছি না তো।
আমি– এটা তো কোন ব্যাপার না।উঠুন।( বাচলাম এত শীতের মধ্যে নদীতে লাফ দেওয়ার কথা বলে নাই)
মেয়েটা— আপনি কিন্তু খুব মজার মানুষ।
আমি–হুম মজার মানুষ কিন্তু জোকার না।
মেয়েটা— হা হা হা।
আমি– নামটা এখন বলবেন না কি রাজবাড়ী নেমে বলবেন??
মেয়েটা— রুমানা।আপনার নাম???
আমি– ফরহাদ। কোথায় প্রাইভেট পরেন??
মেয়েটা— আশরাফ স্যারের কাছে।
কথায় কথায় রাজবাড়ী কলেজের সামনে চলে আসলাম। মন চাছছিলো আরো কিছুক্ষন কথা বলি কিন্তু কি আর করার???
বাড়ি এসে বন্ধুদের থেকে খবর নিলাম রুমানা না কি সিজ্ঞেল।
কথা টা জানা মাত্রই মনে ভালবাসার ঘন্টা বাজলো।
তাই প্রতিদিন সকালে রুমানার যাওয়ার সময় ওর রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি। প্রতিদিন কথা বলতে চাই সাহস হয় না।
রুমানাকে যে ভয় পাই তা না শুধু মাত্র নিজের কাছে শরম লাগে।
এভাবে টানা তিন মাস। কত বার বলতে চেয়েছি কিন্তু পারি নি।
এই কারনেই আমার বন্ধুরা বলে আমার কপালে বউ নেই।
একদিন সকালে প্রতিদিনের মতো দাড়িয়ে আছি রুমানাকে দেখার জন্য।রুমানা এসে দাড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য।
একটু অবাক হলাম কারনটা হল আজ রুমানার সামনে দিয়ে অনেক রিক্সা গেল কিন্তু ও উঠলো না।
আমারও পাকা নিয়ত রুমানা না যাওয়া পর্যন্ত আমিও যাবো না।
প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল দুইজন দাড়িয়ে আছি কোন উদ্দেশ্য ছাড়া। হঠাৎ আমার দিকে রুমানার আসতে দেখে কিছুটা ভয় পেলাম।
রুমানা– কি হলো যাচ্ছেন না কেন??
আমি– ইয়ে মানে……
রুমানা– এত ইয়ে মানে করতে হবে না সরাসরি বলুন।
আমি– না মানে একটা বন্ধু আসবে তাই দাড়িয়ে আছি ।
( এর থেকে মিথ্যা কথা কি আর হতে পারে আমার সব বন্ধুরা হয়তো প্রাইভেট পড়া শুরু করে দিয়েছে)
রুমানা– জি.এফ????
আমি– এত বড় কপাল আমার এখনো হয়নি।
রুমানা– এতে আবার কপাল লাগে না কি ??? মন লাগে।
আমি– মনতো আছে কিন্তু নেওয়ার মতো কেউ নেই।( এরই মধ্যে রুমানা আমার বই নিয়ে পড়তে শুরু করছে)
রুমানা– তা হলে প্রতিদিন দাড়িয়ে থাকেন কার জন্য???
আমি– মনে হয় আমার বন্ধু আজ আসবে না আমি তা হলে আজ যাই??( এই রে ধরা খেয়ে গেলাম মনে হয়)
রুমানা– চলে গেলে কিন্তু হারাবেন।
আমি– মানে বুজলাম না??
রুমানা– বই এর ১৫৬ নাম্বার পৃষ্ঠা খুললেই বুজবেন।
এই বলেই রুমানা চলে গেল।
বাড়ি এসেই ওর কথামতো ১৫৬ পৃষ্ঠা খুললাম দেখি একখানা পত্র…….,
তাতে লেখা ”আমি বাঘ,ভাল্লুক,ভুত,পেন্তি এই সব কিছুই না। যা বলতে চাও বলে দাও”
কথা গুলো পড় মনে যে কি খুশি লাগছিলো তা বলে বুঝানো যাবে না।
পরের দিন সকালে একটু ভাব নিয়ে চোখে সান গ্লাস দিয়ে যেখান থেকে আমাদের গল্প শুরু হয়েছিলো সেখানে দাড়িয়ে আছি।
রুমানা– কি ব্যাপার আজ কি চোখ দেখাতে শরম লাগছে???
এই বলেই রুমানা রিক্সায় উঠে চলে যাচ্ছিলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
তাই জোরে গলা ফাটিয়ে বলেই ফেললাম, রুমানা “I Love you”…