—- এই এই , কি করছিস তুই? (স্মৃতি)
—- কেনো? কি করছি আবার? আমি কি রাত জেগে থাকবো নাকি? ঘুমোতে হবেনাআমার? (আমি)
—- ঘুমাতে হবে তো ঘুমা। তুই খাটে উঠছিস কেনো?
—- আশ্চর্য! খাটে উঠবোনা তো কোথায় উঠবো? আমি কি ফ্লোরে ঘুমাবো নাকি?
—- দরকার হলে তাই কর। তাও খাটে শুয়া যাবেনা। বলে দিলাম।
—- তুই বললেই হলো? তুই নেমে যা এই খাট থেকে । এইটা আমার খাট আমি থাকবো এখানে। তুই মেঝে তে গিয়ে শুয়ে পর।
—- ও তাহলে তোর বিছানা বলে আমার জায়গা নেই এখানে?
—- না । একটুও নেই, তুই তোর বাপের বাড়ি থেকে খাট এনে তারপর ঘুমাবি। বুজছোস?
—- আচ্ছা। আমি কালকেই চলে যাবি আমার বাপের বাড়ি। সকাল টা হউক আগে। তোর বারটা বাজিয়ে তারপর বাপের বাড়ি যাবো।
—- যা যা, সরে যা এখান থেকে। ঘুমাতে দে আমায়। কথাটা বলেই আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমার বিছানা, আর আমাকেই বলে নিচে থাকতে, এখন বুজো মাসে কয়দিন যায়। স্মৃতি আমার বান্ধবি। মানে বেস্ট ফ্রেন্ড। ও থাকায় লাইফে আমার কোনো প্রেম করতে হয়নি। জিএফ এর মতো সবসময় আগলে রাখতো আমায়। কিন্তু আমার বাবা-মা আর ওর বাবা-মা মিলে কখন কবে যে বিয়ে ঠিক করেছে তা জানিই না।
আমার আর স্মৃতির দুজনের কারোরই মত ছিলোনা বিয়ের । আমরা কল্পনাও করিনি কখনো যে এই দিনটা আসবে। যাইহোক, স্মৃতি মন খারাপ করে একটা বালিশ আর কম্বল নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো। আমি বিছানা থেকে ওকে দেখছিলাম। মুখটা অনেক মায়াবি লাগছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম স্মৃতি ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর গালে ছোট্ট একটা মশা বসে আছে। লাল টকটকে গালের উপর কালো একটা মশা বসে কি যেনো করছিলো। যাইহোক স্মৃতি তো আমার বউ। আমি কোনদিন একটা কিস করিনি আর মশায় গিয়ে গালের উপর বসে আছে এটা মানা যায়না। মশাটাকে আমার এখন সবচাইতে বড় শত্রু মনে হচ্ছে। আমি চুপটি করে উঠে গেলাম মশাটাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য। মশাটা কে ধরতে যাবো আর তখনই ঘটলো এক অবাক কান্ড। গালের কাছে হাত নিতেই একলাফে উঠে বসলো স্মৃতি।
—- এই যে , মতলব কি আপনার? হ্যা? তুই আমার গায়ে হাত দিচ্ছিলি কেনো?
—- আরে না , তোর গালে একটা মশা বসেছিলো। সেটাকে তাড়ানোর জন্যই আমি এখানে এসেছি।
—- এখন তো কত কিছুর বাহানা করবে। মশা বসেছিলো , মাছি বসেছিলো , ওইটা সেইটা আর কত কি?
—- এই দেখ , আমি একদম মিথ্যা বলছিনা। আসলে তোর উপকার করতে যাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।
—- হ, তাতো জানিই আমি, মাঝরাতে একটা মেয়ের কাছে এসে গায়ে হাত দেয়া মশা মারা নাকি অন্যকিছুর মতলব ? তা আমার ভালো করেই জানা আছে।
—- হয়েছে হয়েছে।
তোরে মশায় কামড়ালে তাই আমার কি? চলে গেলাম। বলেই এসে আবার শুয়ে পড়লাম। আসলেই কি মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়া ঠিক হচ্ছে? কিন্তু স্মৃতি তো আমার সাথে থাকবেনা। এইসব ভাবতে ভাবতে মনে হলো ওকে একটু ভয় দেখানো উচিত। আমি ওকে ভুতের ভয় দেখালাম। হাউ করে শব্দ করলাম আর বললাম যে ওই ভুত আসছে। ওর দৌড়ে আমার কাছে এসে পড়লো। এসেই একলাফে খাটের কাছে এসে দাড়াল আর আমার হাত ধরলো। ওর মুখে আমি ভয়ের আবছা একটা ভাব দেখতে পেলাম। মনে হচ্ছে ও খুব ভয় পেয়েছে। আমি আর দেরি না করে স্মৃতি কে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর আমার বুকে মুখ লুকালো।
—- তুই আমাকে ভয় দেখালি কেনো? তুই জানিস না আমি ভুতে অনেক ভয় পাই? আমাকে ভয় দেখালি কেনো তুইইই?(স্মৃতি)
—- আরে পাগলি আমি মজা করছিলাম আর তুই যে এতটা ভয় পেয়ে যাবি আমি ভাবতেও পারিনি।(আমি)
—- আমাকে তোর বুকে নিয়ে ঘুমাবি?
—- হুম। হাজার হলেও তুই আমার বউ। তোকে নিবোনা তো কাকে নিবো?
—- হাজার হলে মানে? আগে আরো কয়টা বিয়ে করছিস?
—- এই রে, আবার শুরু হলো ঝগড়া। আচ্ছা বাবা, তুই আমার একমাত্র বউ।
—- হুম তাই বল।
—- এই আমি হচ্ছি তোর স্বামি আর তুই আমাকে তুইতুকারি করছিস কেনো? এখন আর বন্ধুর খাতির চলবেনা। তুমি করে বলতে হবে।
—- আইচ্ছা। তাইলে তুমি আমারে এহন বুকে নিয়া ঘুমাও আমি স্মৃতি কে বুকে নিয়ে ওর কপালে ছোট্ট করে উম্মাহ দিলাম। স্মৃতি আমাকে শক্ত করে ধরে আছে। ভয়টা একটু বেশিই পেয়েছে।