তুমি অামাকে কতটুকু ভালবাসো?’ রোদেলার প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অাফনান। মেয়েটা হঠাৎ হুটহাট এভাবে যখন যা ইচ্ছে হয় প্রশ্ন করে বসে নিজেও বুঝেনা। পরে লজ্জায় নিজেই জিভে কামড় দিয়ে অাফনানের কাধেঁ মুখ লুকায়। যদিও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে সে কিন্তু বাচ্চামী স্বভাবটা রয়েই গেছে। অাফনান কিছুই মনে করে নাহ। একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করতে হলে অনেক কিছু মানিয়ে নিতে হয়। অাফনানের পুরো পৃথিবীটাই বলতে গেলে রোদেলা। অনার্স শেষ করে বসে বসে খাওয়ার সময়টাকে যা বলে অারকি। বাসায় জানিয়ে দিয়েছে ৯টা থেকে ৫টার চাকরী তার দ্বারা হবেনা। পারিবারিক ব্যবসায়ও বসবে নাহ। তার নাকি বিরক্ত লাগে, প্রেস্টিজে লাগে। পরিবারের সবার ছোট হওয়ায় কেউ কিছু বলে ও নাহ। তবে রোদেলা তাকে অনেক শাসন করে। সম্পর্কটা ৩ বছরে পড়লো। সময়টা খুব তাড়াতাড়ি গড়িয়ে যায় চোখের পলকে। ওদের প্রথম দেখাটা ছিল অাফনানের কলেজে। অাফনান তখন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে অার রোদেলা ক্লাস টেনে। রোদেলা তার এক বড় অাপুর সাথে ঘুরতে এসেছিল কলেজের একটা অনুষ্ঠানে।
অাফনান তখন কলেজের শহীদ মিনারে বসে অাড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ দেখে স্কুল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে এসে পড়ছিলো। অার সে বারবার তার অবাধ্য চুলগুলোকে বশে অানার চেষ্টা করছিলো। অাফনান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে অাছে। কোন এক মহাকর্ষ বলের ফলে যেন দৃষ্টি সরাতেই পারছে নাহ। এবার রোদেলারও চোখ পড়ে অাফনানের উপর। অাফনান সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত অন্য দিকে মুখ ফেরায়। প্রথম দেখার দৃষ্টিভ্রম হয়। মেয়েটি অনুষ্ঠানের মঞ্চের কাছে চলে যায় তাও অাড়চোখে তাকিয়ে থাকে অাফনান। কি অাছে মেয়েটির মাঝে যা এত অাকৃষ্ট করছে অামাকে? অাফনানও বন্ধুদের নিয়ে চলে যায় অনুষ্ঠান দেখতে। মূলত রোদেলাকে দেখতেই যায় কারন লোকসঙ্গীত মোটেও পছন্দ করেনা সে। রোদেলা গভীর মনোযোগ নিয়ে গান শুনছে অার অাফনান তার দিকে তাকিয়ে অাছে। এই দেখার কি শেষ নেই ঈশ্বর। একটা সময় অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে রোদেলা চলে যায়।
সে তার পিছুপিছু গেট পর্যন্ত যায়। তারপর রোদেলা দৃষ্টির অাড়ালে চলে যায়। যুবকের বুকেঁর বাঁ পাশটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হয়। এরপর টানা তিনদিন অাফনানের চোখে ঘুম নেই। বারবার শুধু সেই মেয়েটিকেই দেখতে ইচ্ছে করে। অাফনান কলেজে গিয়ে সেই মেয়েটিকে খুঁজে যার সাথে রোদেলা কলেজে গিয়েছিলো। সামিয়া মেয়েটির নাম, সম্পর্কে রোদেলার কাজিন। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। তার কাছ থেকে রোদেলার সকল খোঁজখবর নিতে লাগলো। সামিয়াকে বলে দিল যে সে রোদেলাকে পছন্দ করে। সামিয়া সেটা রোদেলাকে জানাবে বলে চলে যায়। এবার অারেক মুশকিল এবার সামিয়া ও হাওয়া। অাফনানের তো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে অবস্থা কাহিল। ১৫ দিন পর সামিয়া কলেজে এসে জানায় তার নানি অসুস্থ ছিলেন তাই এতদিন কলেজ অাসা হয়নি। রোদেলাকে বলেছিলো অাফনানের কথা কিন্তু সে নাকি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না। অাফনান হতাশ হয়ে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে থাকে। অানমনে দুখানা ঘাস ছিড়ে চিবুতে থাকে অশ্বের মত। তখন তার বন্ধু জারিফের প্রবেশ,
: কি বন্ধু কি হইছে?
– রোদেলা মানা করে দিয়েছে।
: কবি কি বলেছেন পড়নাই?
– কি বলেছেন?
: একবার না পাড়িলে দেখো শতবার।
অাফনান ১০০ ওয়াটের বাল্বের মত একখানা হাসি দিয়ে উঠে চলে যায়। প্রায় এক সপ্তাহ পর অাবার সামিয়াকে বলে রোদেলাকে তার পছন্দের কথা বলতে। সামিয়া বলবে বলে চলো যায়। কিন্তু বিধিবাম এবারও তার উত্তর নাহ। এভাবে চলতে চলতে চতুর্থবার রোদেলা সাড়া দেয়। পরদিন বিকেলে একটি জায়গায় দেখা করার জন্য বলে। সামিয়া রোদেলাকে নিয়ে হাজির হয় সময়মত। অাফনান রোদেলার জন্য কয়েকটা কিটক্যাট অার ক্যাডবেরি নেয়। ওদিকে সামিয়া তাদেরকে একসাথে রেখে একটু দূরে গিয়ে হাটাহাটি করতে থাকে।
: রোদেলা।
– হু।
: তোমার জন্য চকলেট।
– ঠ্যাংক ইউ ভাইয়া. . . কথাটা বলেই জিভে কামড় দিলো।
অাফনান হাসতে থাকে মনে মনে। তারপর কোন কথা নেই। সেদিনের ২ ঘন্টা যেন পৃথিবীর কিছু বিরতি নিচ্ছিলো। কিভাবে পার হয়ে গেল বুঝা হলনা। সন্ধ্যার অাজান দিয়ে দিবে এমন সময় সামিয়া এসে বাসায় ফেরার তাগিদ দেয়। অাফনান ওদের দুজনকে রিক্সায় তুলে দিয়ে নিজেও বাসায় চলে যায়।
অাফনান অাজ অনেক খুশি কারণ সে রোদেলাকে পেয়েছে। তারপর দিনগুলি খুব সুন্দর যেতে থাকে। বেশিরভাগ কথা হতো ফেসবুকে। তবে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। তবে সমস্যাটা ছিল দেখা করায়।
শহরের নব্বই ভাগ মানুষই অাফনানের বাবাকে চেনে। চক্ষুলজ্জার ভয়ে মন খুলে কোথাও বের হতে পারেনি ওরা। বৃষ্টির দিনে হাত ধরে হাটা হয়নি। অভিমানে একজন অারেকজনের কাধেঁ ধাক্কা দেয়া হয়নি। তবে সময়ের সাথে সাথে তাদের দেখা করার পরিমাণ বাড়তে লাগলো। পরস্পরের সব কথা একজন অারেকজনকে জানাতো। পরিবারের ছোটখাট সমস্যাগুলোও। একজনের সমস্যায় অারেকজনের ঘুম হারাম হয়ে যেত। তবে রোদেলা একদম তার নামের মতই। সারাদিন ছোটাছুটি করবে অার রাতের বেলা টুপ করে ডুব দিবে। অার অাফনান রাত জাগে দিনে ঘুমায়। এই মিস্টি সম্পর্কটির বয়স তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তারা অাজ দেখা করতে এসেছে,
: বললে না অামাকে কতটুকু ভালবাসো?
– এতটুকু যা দুহাতে নাগাল পাওয়া যাওনা।
: এটা কেমন কথা?
– যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর।
: হাহা অামি অাজ তোমার জন্য কিছু এনেছি।
– নুডুলস। কই দাও?
: কিভাবে জানলে?
– অামার শ্বাশুড়ি মা ওই একটা জিনিসই তোমাকে শিখিয়েছে।
: শিখবোও না, তুমি রানবা বিয়ের পর।
– হাহা অার তুমি বাজার করবে রোদেলা।
: সেটা পরে দেখা যাবে, খাও।
এই কয়েক বছরে ওদের মধ্যে বড় তেমন ঝগড়া হয়নি। ছোটখাট যা ঝগড়া হয়েছে তা নিজেরাই মিটিয়ে নিয়েছে। সম্পর্কে কখনো তৃতীয় ব্যাক্তি ছিলনা সাহায্যের জন্য। সামিয়া অাগেই রোদেলাকে অাফনানের গলায় ঝুলিয়ে কেটে পড়েছে। তবে রোদেলা অাফনান দুজনেই প্রায় উদাস থাকতো। কারণ তাদের পরিবার। তাদের পরিবার তাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু কখনো বুঝার চেষ্টা করেনি। তাই দুই ডাল যেন একে অপরকে অাকঁড়ে ধরে বেচেঁ অাছে।
ইদানিং রোদেলা তার কলেজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকে। প্রায়ই তার ক্লাসের সহপাঠি বা সিনিয়রদের সাথে ঘুরতে দেখা যায়। অাফনানও তার হয়তো পড়ালেখার চাপ অাছে ভেবে নিজ থেকেও কিছু বলেনা। ইদানিং দুজনের কথাও হয়না। কেও কারো খোঁজখবরও নেয়না। দুজনেই অনলাইনে অাসে কিন্তু কেও কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেনা।
অাফনান ও তার বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মেতে থাকে। ঘুমের ওষুধ খেয়ে অার কত ঘুমানো যায়। তার বন্ধু জারিফ ততদিনে কানাডা চলে গিয়েছিলো। জারিফ প্রায়ই অাফনানকে সেখানে যাওয়ার জন্যে চাপ দিতে থাকে। অাফনান অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় এবার অাসলে কিছু করা উচিৎ। অার কত এভাবে বাউন্ডুলেপানা করে জীবন চলবে। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে জমা দেয়। দেখতে দেখতে যাওয়ার দিনক্ষণ ঘনিয়ে অাসে। শপিং প্রায় শেষ করে ফেলেছে। মা তিন বোয়াম জলপাই অাচার দিয়ে দিয়েছেন জোর করেই। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমায় নতুন ঠিকানায়। ১১ ঘন্টা পর কানাডায় বিমান ল্যান্ড করে। জারিফ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে অাফনানকে,
: চোখের নিচে কালো দাগ।
– ঘুম হয়না তাই।
: কেমন অাছিস ভাই?
– ভাল, তুই?
: অামিও ভাল।
দুজনে একটা গাড়ি নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট। জারিফ অাফনানকে রুমে গিয়ে রেস্ট নেয়ার জন্য বলে। অাফনান প্রথম এসেছে তাই তাকে নিয়ে ঘুরার জন্য এক সপ্তাহ ডে অফ নিয়েছে জারিফ। তারপর অার কি দুই বন্ধু মিলে সেই স্কুল জীবনের মত অামোদ ফূর্তি। অাফনান অনেক ভাষায় কথা বলতে পারতো অার কম্পিউটার চালনায় দক্ষ ছিলো। যাকে বলে ফ্রিল্যান্সার। জারিফ তাই অাফনানকে একটি ফাইভ স্টার রিসোর্টে ট্রান্সলেটার হিসেবে একটি জব নিয়ে দেয়। বিভিন্ন দেশের মানুষজন অাসে, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। দিনটা ভালই কেটে যায়। অার রাতে দুই বন্ধুর পাগলামির কোন সিমা নেই। অাফনান নিজেকে একটি রুটিনের ভিতর গুছাতে শুরু করে। সকালে মর্ণিং ওয়াক, নাস্তা তারপর অফিস, বিকালে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা রেস্ট। বিকালে ভলিবল খেলা, অাবার সন্ধ্যায় জিম। ইদানিং তার নাচে শেখারও শখ হয়েছে। ভ্যানকুভার ড্যান্স একাডেমিতে ভর্তি হয়েছে । সেখানে অন্যদের সাথে কন্টেম্পরারি অার লিরিকাল ফর্ম প্র্যাকটিস করে।
সানডে মানেই ছুটির দিন। দুই বন্ধু একটা লিমোজিন ভাড়া করে পিকনিকের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। রাত করে বাড়ি ফিরে। দেশ থেকে অনেক কল অাসে কিন্তু অাফনান তার মায়ের নম্বর ছাড়া কল রিসিভ করেনা। করতে ইচ্ছে করে নাহ। ইদানিং প্রায়ই একটা নাম্বার থেকে কল অাসে। অাফনান রিসিভ করে কিন্তু ওপাশ থেকে কোন অাওয়াজ অাসেনা। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট তারপর ফোনটা কেটে যায়। ভাবে ব্লক করে দেবে কিনা। ভাবতে ভাবতেই কল অাসে। মা কল দিয়েছেন,
: অাফনান।
– হুম অাম্মু।
: খেয়েছিস বাবা?
– অাম্মু এখন সন্ধ্যা।
: বাবা ৪ বছর ধরে দেখিনা, একটিবার দেশে অায়।
– অাসবো মা।
: অামি মারা যাওয়ার পর অাসবি?
– ফালতো কথা বলনা তো।
: কবে অাসবি?
– ডিসেম্বরে, এখন রাখি।
: অাচ্ছা বাবা ভাল থাকিস।
জারিফ বলছিলো ডিসেম্বরে দেশে যাবে তাই অাফনানও ভাবছে ওর সাথে দেশে গিয়ে ছুটিটা কাটিয়ে অাসবে। দেশে যাবার অাগে অনেক শপিং করতে হবে। অাম্মুর জন্য লিনেনের সুয়েটার, একটা নেকলেস। ভাইয়া, খালাতো ভাইবোনদের জন্য ফোন, চকলেট, পারফিউম, মেক অাপ কিট এসব নিতেই হবে। জারিফ অার অাফনান দুজনে মিলে শপিং করতে থাকে টুকটাক। তবে কিছু শপিং দুবাই নেমে করবে বলে ছেড়ে দেয়। অবশেষে দীর্ঘ চার বছর পর দেশে ফিরলো অাফনান। অাম্মু, ভাইয়া অার জেনিয়া এসেছে ওকে নিতে। ওর অাম্মু তো ওকে দেখেই গলায় ধরে কান্না জুড়ে দিলেন। জেনিয়ার দিকে তাকালে সে অভিবাদন সূচক মাথা নাড়ায়। জেনিয়া অাফনানের খালাতো বোন। ওদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। ভাইয়া বরাবরের মতই চুপচাপ লাগেজগুলো নিয়ে গাড়িতে রাখলেন। অাফনান জারিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অাফনানের অাম্মু অার ভাইয়া মধ্যের সিটে বসেছে। অগত্যা সে জেনিয়াকে নিয়ে পিছনের সিটে বসলো,
: ভাইয়া কেমন অাছো?
– ভাল রে, তুই তো মুটিয়ে গিয়েছিস।
: সবই ফরমালিনের দান। তুমি কিন্তু গোছালো হয়ে গিয়েছো।
– তাই?
: তা বিদেশ গিয়ে কয়টা প্রেম করলে?
– মানুষ কি প্রেম করার জন্য বিদেশ যায়? নাকি প্রেম থেকে পালানোর জন্য?
: কি কিসমত অামার, ভাবছিলাম জন্য বিদেশি ভাবি নিয়ে অাসবা।
– তানিয়া কেমন অাছে?
: চিঠি দিয়েছে তোমাকে, নাও।
– বলিস কিহ??
অাফনান কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করে, অাফনান ভাইয়া, অামি এখন ছোট নাই, ক্লাস সিক্সে উঠে গেছি। অামার বান্ধবি বৃষ্টিও সিক্সে উঠে গেছে। অামার জন্য চকলেট অানবা, মোবাইল অানবা না কিন্তু অামি এসএসসি দিয়ে তারপর মোবাইল নিব। অার তাড়াতাড়ি অামাদের বাসায় অাইসো। ইতি তানিয়া।
চিঠি শেষ পড়া হলে গাড়ির সবাই একনাগাড়ে হাসতে শুরু করে। তারপর অাফনান সবার খবরা খবর নিতে থাকে গাড়িতে। বাড়িতে এসেই একটা লম্বা ঘুম দেয়। তারপর সন্ধ্যায় পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বেরিয়ে যায়। সব বন্ধুরা বিয়ে শাদি করে ফেলেছো। তাই অাফনানের পুরুষত্ব নিয়ে ঘন্টাখানেক খুচাখুচিও করা হলো। অাড্ডা দিয়ে রাত ১২টা বাজে বাসায় ফিরে। সবাই খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে। অাজ অাফনানের পছন্দের খাবার রান্না করা হয়েছে। শর্ষে ইলিশ, সিমের শুটকি তরকারি, ফুলকপি টমেটোর সবজি। অাহান কতদিন পর মায়ের হাতের রান্না। চারজন দিলে সারারাত লুডো খেলা চললো। কিন্ত ফলাফল বরাবরের মতই জেনিয়া রাজা হয়, অাফনান রাণী, বাকিরা পরাজিত। মাঝে দুয়েকবার চা বানিয়ে নিয়ে অাসে জেনিয়া। ভোরে খেলা শেষ করে যার যার বিছানায় চলে যায়। অাম্মু শুধু বসে থাকেন,
: কিছু বলবা?
– কদিনের ছুটি?
: ১ মাস।
– ৪ বছর পর অাসলি তাও এক মাসের জন্য?
: হ্যা মা।
– বিয়ে শাদি করবি নাহ।
: নাহ।
– জাকির ভাইর মেয়েটা অনেক লক্ষী।
: কিহ? ওই স্কুলের পিচ্চি মেয়েটা?
– যা তা বলিস নাতো, সে এখনো পিচ্চি অাছে নাকি? অনার্স পড়তেছে।
: মা ঘুমাও।
– বিয়ে করবিনা?
অাফনান অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়। মাও অার কিছু না বলে চলে যান। সন্তানের মুখের দিকে তাকালেই মায়েরা সব বুঝতে পারে। মুখে বলার প্রয়োজন হয়না। টানা এক সপ্তাহ চৌদ্দ গুষ্ঠির বাড়িতে ভূড়িভোজ চলতে লাগলো। তারপর খালাদের বাড়িতে ঘুরার পালা। লাগেজ খুলে যার যার জিনিস অালাদা করে পৌছে দিল। জেনিয়াদের বাসায় প্রায় এক সপ্তাহ থাকলো। তানিয়া একদম চোখের অাড়াল হতে দেয়নি অাফনানকে। নিজের কোন ভাই নেই বলে অাফনানের প্রতি টানটা অনেক বেশি। অাফনানের অাম্মু অার জেনিয়ার অাম্মু দুই বোনের অনেক শখ ছিলো কক্সবাজার যাওয়ার। কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠেনি। এবার অাফনানের উপস্থিতিতে দুই পরিবারের ইচ্ছেটা পুরন হয়ে গেল। পাচঁদিনের ট্যুরে কক্সবাজারের অলিগলি সব ঘুরা হয়ে গিয়েছে। অাফনানের যাওয়ার দিনও ঘনিয়ে এসেছে। একটা মাসে একবারও জানার চেষ্টা করেনি রোদেলা কেমন অাছে। মন বড় জালিম হয়ে গিয়েছে অাজকাল। অাগামীকাল কানাডা চলে যাচ্ছে সে। সকালে নাস্তা শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফ্লাইটে উঠে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ভাবছে, “অার কি ফেরা হবে?”