তুমি বলতে পারবা? শেষ কবে তুমি ভালো কাজ করেছো? “রাকিব কে কেঁদে কেঁদেই কথাটা বলল মায়া। রাকিব ও আহত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে! কি বলবে সে? কি ই বা বলার আছে তার? আসলেই তো মায়ার সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত ও বলে না রাকিব।রাকিবের চুপ করে থাকা দেখে মায়া বলল,
– তুমি এমন কেনো? তুমি একটুও বুঝো না? একটা সম্পর্কে কেয়ারিং, শেয়ারিং একটা বিষয় আছে? আর তুমি এইগুলা কি কর? বখাটে দের মত ঘুড় কেনো? (মায়া)
– তুমি তো জানোই আমি এরকম! (উদাস হয়ে উত্তর টা দিলো)
– প্লিজ! রাকিব। আমি আর পারতেসি না তোমায় নিয়ে থাকতে!
– কি করবে? ছেড়ে দেবে?
– হুম দেবো। তোমার মত ছেলের সাথে আমি আর থাকতে পারবো না। এত অগুছালো কেনো তুমি? একটু গুছিয়ে চলতে পারো না?
-…….. ( চুপ করে আছে রাকিব)……..
– ধুর… আমি চললাম!মায়া উঠে চলে গেলো। রাকিব আরও কিছুক্ষন বসে উঠে চলে গেলো তার বাসায়। মায়াকে এগিয়ে দিতেও গেলো না!মায়া আর রাকিব! দু’জন দু’জনাকে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসে বললে ভুল হবে অনেক ভালোবাসে। প্রায় ৫ বছর হয়ে গেলো তাদের সম্পর্কের। কিভাবে যে এতগুলা দিন হয়ে গেলো সম্পর্কের সেটা মায়া বা রাকিব দু’জনার কেউ ই বুঝতে পারে নি।রাকিব বরাবরই উদাস প্রকৃতির ছেলে। নিজের যত্ন নিতে খুব একটা শিখেনি। ওর বাবা একজন বিসনেস ম্যান। তাই ওর টাকা – পয়সা নিয়ে কোন চিন্তা হয় না। যখন যা লাগে চায় আর পেয়ে যায়। তবে কোন কাজ না করলেও পড়াশোনাটা শেষ করেছিলো সময় মত! গ্রেজুয়েশন করার পর আর পড়েনি রাকিব!আর মায়া হলো খুব স্ট্রিক একটা মেয়ে। যে সাজানো জিনিস খুব পছন্দ করে। এলোমেলো সব জিনিস ওর কাছে অসহ্য। শুধু রাকিব কে ছাড়া। ছোট থেকে রাকিব কে দেখছে। কেমন জানি মায়া পড়ে গেছে মায়া! রাকিব এর সাথে ঝগড়া না করলে মায়ার একটা দিন ও ভালো যায় না। এই ঝগড়াই তাদের সম্পর্কের কারণ।রাকিবের একটা জিনিস মায়ার কাছে বেশ লাগে। সেটা হলো, ‘ মায়ার কোন বিষয় হলে সেটা ভালো হোক বা কোন সমস্যা। রাকিবের কাছে সেটা সবসময় সিরিয়েস ভাবে নেয় রাকিব। ‘মায়া নিজেও অনেক পাগলামি করে। রাকিব আর মায়াদের বাড়ি পাশাপাশি! ছাদের উঠলেই দেখতে পারে দু’জন দু’জনাকে। মায়া মাঝে মাঝে রাত ৩ টায় ফোন দিয়ে বলে, আইস্ক্রিম খাবে,ফুসকা খাবে, বিরিয়ানি খাবে.. ইত্যাদি ইত্যাদি! ব্যাস।
রাকিব ঘুম ফেলে রেখে উঠে চলে যায়, মায়ার আবদার গুলো পূরন করার জন্য।মায়া আর রাকিব এর জন্য তাদের এলাকার চোর আর রাকিবদের বিল্ডিং এর দারোয়ান একটু ঘুমাতেও পারে না।মায়ার খুশির জন্য রাকিব সব কিছু করতে পারে। কিন্তু রাকিব কেন জানে না। নিজেকে গুছাতে পারে না। মায়ার চোখের পানি ওর সহ্য হয় না। কিন্তু কেনো জানি না ও পারে না নিজেকে গুছাতে। তাই নিয়ে আজ কথা বলতে চেয়েছিলো মায়া! আর তারপর কি হল শুনলেন ই তো।রাকিব বাসায় এসে পড়লো। রাত হয়ে গেলো। রাকিবের আজ খুব কান্না পাচ্ছে। মায়া ওকে ছেড়ে দিবে। ও অন্যকারো সাথে প্রেম করবে! রাকিব কে আর ভালোবাসবে না। এগুলো ভাবতেই রাকিব এর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে।রাকিব পকেট থেকে ফোন বেড় করলো। মায়ার নম্বর টা ডায়াল করেও কল দিতে কোথায় যেনো জড়তা পাচ্ছে রাকিব। জড়তা টা কিসের বুঝতে পারছে না রাকিব।
এরকম করতে করতে রাত ৪ টা ২২ বেজে গেলো। রাকিবের একটুও ঘুম পাচ্ছে না। আবশেষে ফোন টা দিয়েই ফেলল রাকিব। ফোনটা দেওয়ার সাথে সাথেই ধরে ফেলল ওপাশ থেকে ধরে ফেলল ফোন টা! হয়তো এই অপেক্ষাতেই ছিলো।দু’জন ই চুপ হয়ে আছে। কোন কথা বের হচ্ছে না। এ যেনো এক অদৃশ্য জড়তায় আটকা পড়ে আছে। দু’জন। দু’জন এর চোখেই পানি আজ। নিরবতা ভাঙ্গার জন্য দরকার একটু শব্দ। কিন্তু সেটা আজ হচ্ছে না। রাস্তায় কুকুরের চিৎকার এর শব্দ ও আসছে না। হয়তো তারাও ঘুমিয়ে গিয়েছে।এমন করে অনেক টা সময় কেটে গেলো। হুট করে রাকিব শব্দ করে কেঁদে উঠলো। অনেক আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলো কান্না টা। কিন্তু পারলো না….রাকিবের কান্নার শব্দ শুনে মায়া নিজেও অনেক অবাক হয়ে গিয়েছে।
শুধু ভাবছে ‘ এই শয়তান টা আবার কাঁদতেও পারে..?? ‘মায়া তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো,
– এই তুমি এভাবে কাঁদতেছো কেনো..??
– তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবি? হুম? তুই জানিস না ছোট থেকেই আমি এরকম? আমি একটু পঁচা পঁচা টাইপ? তুই জানিস না, তোকে নিয়ে যদি কেউ উল্টা পাল্টা কথা বলে তখন আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আর মায়া গরম হলে আমি কি যে করি সেটা আমি নিজেও জানি না। সেটা তুই জানিস না?? কেনো ছেড়ে যাবি আমায় হুম? বল আমাকে কেনো ছেড়ে যাবি তুই?
– এটা তো ভালো না রাকিব। সবাই তোমার নামে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলে। আমার সহ্য হয় না। কষ্ট হয় আমার! তুমি সেটা বুঝো না? তুমি পাল্টে যাও প্লিজ???
– তুমি যা চাবা তাই করবো। উল্টা পাল্টা কিছু করবো না। প্রমিস। প্লিজ? আমাকে ছেড়ে চলে যেয়ো না। আমি মরে যাবো তো…..
– এই চুপ.. এই কথা বলবা না। আমাদের বাসার নিচে আসো।
– কখন?
– এখনি। কি খাবি বল। আমি নিয়ে আসছি।
– উফফ.. এতো কথা বলতেসো কেনো? তোমায় নামতে বলছি ; তুমি নামো।আচ্ছা নামতেসি। তারপর রাকিব চুপিচুপি নেমে গেলো। রাকিব নামতেই দেখে মায়া দাঁড়িয়ে আছে। রাকিব সোজা মায়ার সামনে গিয়ে বলল,
– তুই নামছিস কেনো?
– চুপ.. এখন থেকে তুমি করে বলবা।
– কেনো? তোকে তো তুই করে বলতে আমার ভালোই লাগে।
– তোমাকে বদলাতে হবে। ‘ বদলের হাওয়া ‘ হয়ে আমি তোমার সব পাল্টে দিবো তোমার। পাল্টে দিবো তোমার খারাপ স্বভাব গুলো। ( একটু আল্প স্বরে বলল)
– Ar you sure…?? (মায়াকে কাছে টেনে নিয়ে)- Yeah! Sure & I love you…
– I also love you…….মায়াকে জড়িয়ে ধরলো রাকিব। একটু শক্ত করে। তাদের এই ঘনিষ্ট সময় এর সাক্ষী ছিলো রাস্তার পাশের জলন্ত ল্যামপোস্ট গুলো, গাছ, বাতাস আর ভোরের নিস্তব্ধতা।
এরকম হাজারো রাকিবের জীবনে, মায়া আসুক ‘বদলের হাওয়া ‘ হয়ে। যারা রাকিবদের অগুছালো জীবন টাকে গুছিয়ে দিবে ভালোবাসা দিয়ে।
(সমাপ্ত)