ভালবাসি খুব বেশি

ভালবাসি খুব বেশি

কলিং বেলের আওয়াজ শোনার পরেও মনেরমধ্যে কোন উৎফুল্লতা প্রকাশ পাচ্ছেনা রিয়ারমনে।গতকাল সামান্য বিষয় নিয়ে একটু রেগে গিয়েছিলআবির।তাই ধীরপায়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে সোজারুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো আবার।দরজার ওপাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে আবির।কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে সবকিছু।”কেন যে হঠাৎ হঠাৎ এমন ভাবে রেগে যায়…মেয়েটার মুখ এখনো গম্ভীর হয়ে আছে..ধুর..”বিড়বিড় করে নিজের সাথে নিজেই কথা বলতেলাগলো আবির।এক হাতে একটি নীল শাড়ি এবং অন্য হাতে এক গুচ্ছগোলাপ।এক গুচ্ছ গোলাপ, কারণ রিয়া একসাথে অনেকগুলো ফুল কাছে পেলে অন্য মাত্রার খুশি হয়।

ফুল আর শাড়িটা টেবিলের ওপর রেখে,ড্রেস চেইঞ্জ করতে করতে রিয়ার দিকেকয়েকবার আড় চোখে তাকালো আবির।রিয়া মনযোগী হয়ে টিভির স্ক্রিনের দিকেতাকিয়ে আছে।যদিও আবিরের এইসব কার্যকলাপ সম্পর্কে রিয়া খুবভালোমতো অবগত।এই পরিবেশে,বেচারা ছেলেটার এমন উদ্ভট টাইপের চেহারাদেখে রিয়া পারছিলনা চিৎকার হাসতে।হাসলে রাগ কমে যায়, তাই হাসা যাবেন।কোন চ্যানেলেই মন বসছিল না তাই একটার পরএকটা চ্যানেল নাড়াতেই লাগলো..আবির ওয়াশ রুমে যাওয়ার পর, জমে থাকা হাসির কিছুআভা হালকা ছেড়ে দিল রিয়া।কেমন অদ্ভুত বাচ্চা বাচ্চা মনে হচ্ছিল আবিরকে।.ওয়াশ রুম থেকে এসেই নীরবতা ভেঙ্গে আবিরবলে উঠলো,- দুপুরে ফোন দিছিলাম।- হুম, জানি।

রিসিভ করোনি কেনো? ইচ্ছা করেনি তাই !!বেশ অভিমানী কন্ঠে জবাব দিল রিয়া।এবার আরেকটু কাছে এসে রিয়ার পাশে ঘেঁষেবসলো আবির, রিয়ার রিয়েক্ট দেখে ওয়ালেহাঁটতে থাকা একটি টিকটিকের দিকে তাকিয়ে থেকেকিছু না জানার ভান করে আছে আবির। ইয়ে মানে, টিকটিকিটা সুন্দর না??কোন আন্সার না দিয়ে অগ্নিচোখে একবারআবিরের দিকে তাকালো রিয়া। আ ম আ আচ্ছা এটা তো চাইলে ফ্রাই করা যায়?? তো করো, খাও না মানে তোমার হাতের রান্নার স্বাদটা তো অন্যমাত্রার.. তুমি যদি একটু রান্না ছিঃ ইয়াক!!!তোমাকে আ আহ.. লাগছে তো।বুকে কয়েকটা ধুমধাম খিলঘুষি দিয়ে চুপ করেআছে রিয়া। টায়ার্ড??? খুধা লাগছে??? জানিনা এখনো রেগে আছো???আচ্ছা বাবা বললাম তো স্যরি আসলে আমার মুড ঠিকছিলনা ঐ সময়।এই দেখো কানে ধরলাম আমার কান কেন ধরলা??? ওহ স্যরি, না মানে তোমার সবকিছুই তো আমার,তাই মাঝেমাঝে ভুল করে ফেলি বদের হাড্ডি, ফাজিল, তেলাপোকা কোথাকার ফুল গুলো বাড়িয়ে দিয়ে।

এগুলো তোমার জন্যে ওয়াআআআআও এত্ত গুলো গোলাপ হুম এঁহ এমনিতে তো বললে আনোনা আজকেকিসের প্রয়োজন মনে করলা হঠাৎ..প্রত্যেকদিনই তো আনার ইচ্ছা জাগে, ভুলে যায়খালি। হুহ এই নাও এটাও তোমার শাড়িইইইইইই!!!থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু… ওম্মম্মম্মাহ আও আস্তে !!!আর হ্যাঁ তুমি এখনো হাঁপাচ্ছো.. জানি রাগ করেকিছুই খাওনি, সো আজকে বাইরেই ডিনার করবো!শাড়িটা পড়ে নাও। আমি একটু ছাদে গেলাম।- ছাদে গেলাম মানে???তুমি জানোনা? এখনো একা একা শাড়ি পড়তে পারিনাআমি, কাছে এসে হেল্প করবানা???বলেই চোখ টিপ মারে রিয়া। এহেম এহেম..দুষ্টু, ফাজিল, টিকটিকি কোথাকার সবসময় আমার ইমোশন নিয়ে দুষ্টামি করো ক্যান??? আহারে চুক চুক চুক..ফাইজলামি কই করলাম??? একটু আগেই না বললা আমারসবকিছু তোমার? শাড়ি পড়িয়ে দিতে তাইলে সমস্যাকোথায়??- গেলাম আমি ছাদে. আর কিছুক্ষণ থাকলে আশাকরি হার্ট অ্যাটাক করবো মাস্ট এই বলেই দ্রুতগতিতে ছাদের দিকে এগিয়ে যায়আবির।

ওর ভচকে যাওয়া চেহারা দেখে রিয়া হাসতে হাসতেশেষপ্যান্টের বাম পাশের পকেট থেকে একটাসিগারেট বের করে ধরালো আবির।যাক টেনশন মুক্ত…হুহ..অবেশেষে পাগলিটার রাগ ভাঙ্গলো..!!!শুরু থেকেই চঞ্চল ছিল মেয়েটা, আবিরও কোনদিকে কম নয়।কিন্তু শুধু মাত্র এই একটা মেয়ের সামনে দাঁড়ালেইকেমন জানি সব গুলিয়ে যায়…এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ফোনের রিংটোনবেজে উঠে আবিরের..”রিয়াল কল”তড়িঘড়ি করে সিগারেটের বাকি অংশ ফেলে দিয়েরুমের দিকে ছুটে যায়.!রুমের সামনে যেতেই কিছুক্ষণের জন্যেচোখের পলক গুলো আর লাগাতে পারছিল নাআবির।ওপরে ছাদের দিকে তাকালো..নাহ.. কোথাও তো ফাটল নেই, তাইলে এই ডানাকাটাপরীটা কোথা থেকে আসলো??? কি???এদিক সেদিক কি দেখো??? মামায় নি আমাকে???

মন খারাপ করে ভারি কন্ঠে রিয়ে বলে উঠলো এই জিনিসটা মেয়েদের অন্যতম সৌন্দর্যের একটিঅংশ কেমন বাচ্চা বাচ্চা টাইপের লাগে তার এমন অদ্ভুত সৌন্দর্যের চেহারা দেখে আবিরআর হাসি আটকে রাখতে পারছিলনা হুহুহু করে হেসে উঠে রিয়া আরো ঘাবড়ে যায় শোনো মেয়ে এই মুহূর্তে তোমাকে কেমন লাগছে, এইরকমকঠিন প্রশ্নের আন্সারটা প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমারকাছে চেও না আপাতত তোমার প্রশংসা করারর মতো কোন শব্দহয়তো এখনো তৈরি হয়নি। চুপ !!!বিয়ের পর বৌয়ের সাথেও ফ্লার্ট করা হচ্ছে না??? ছিঃ ছিঃ কি দুষ্টু কথা!!!বলেই আবার হাসতে থাকে আবির।- থামবে????নাকি আবার আহ আ আচ্ছাহাহা আচ্ছা স্যরি।চলো এবার। এই নাও চেইন দিয়ে আমি কি করবো???  গাধা!!!মেরে মাথা ফাটাই দিবো.. তুমি কেনো পড়বা???আমাকে পড়িয়ে দাও আবারো কঠিন একটা মুহূর্তের সম্মুখীন হতেহচ্ছে আবিরকে..রিয়া ইচ্ছা করেই ফাইজলামি করছে জেনেও কিছুবলতে পারছেনা আবির।কারণ আবার রেগে গেলে শেষ।

কাছে আসো চুল ধরলা কেনো???অনেক কষ্টে সেটিং করছি সব, আর হ্যাঁ খবরদারভুলেও ঘাড়ে হাত দিবা না “যদিও সিল্কি চুলের ঘ্রাণে আবিরের যায় যায় অবস্থা তাও আপাতত কিছু করার নাই ” আহ আচ্ছাহা হা হা আবারো হাসছো?? ওহ.. ওব হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে আবির। স্যার কি অর্ডার করবো??? ভালবাসা।আবিরের এই আন্সার শোনে ওয়েটার চমকেউঠে..রিয়া তো পারছিলনা চোখ দিয়ে গিলে ফেলতে আবারো নড়েচড়ে বসে হুশে ফিরলো আবির- ওহ স্যরি..পরে রিয়া খাবারের অর্ডার করে।ডিনার শেষে দুজনেই ঠিক করলো রাতে ঘুরেবেড়াবে রাত প্রায় ১১ টা বাজতে চলেছে সোডিয়াম লাইটের আলো এবং চাঁদের বিকশিতসোনালি আলোই পুরো পরিবেশটাই কেমন অন্যমাত্রা ধারণ করেছে পাশে এমন সুন্দর কেউ থাকলে ভালো লাগাটাআরো হাজারগুণ বেড়ে দু জনেই চুপচাপ হেঁটে চলেছে নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে হঠাৎ রিয়া বলে উঠে আচ্ছা আবির জীবনটা এতো সুন্দর কেন??? এই প্রশ্নের আন্সার একেকজনের একেকরকম আসবে।

আমি কোন জরিপ চালাচ্ছিনা, তোমাকেই জিজ্ঞাসাকরলাম তোমার ক্ষেত্রে কেমন??? ওহ!!! আমার জীবন সুন্দর কারণ তুমি পাশেআছো। আবার ফ্লার্ট উহু মোটেও না, বুকে মাথা গুঁজলেই বুঝতেপারবে। চালাকি??? এখানে চালাকির কি পেলে আবার??? আমাকে জড়িয়ে ধরার!! ফাজিল হুম তোমারই তো!!! কি??? সবকিছু!!! ভালবাসি খুব বেশি!!!” মেঘের সাথে অদ্ভুত মিতালিতে আচ্ছন্ন চাঁদটারাতের আকাশে আরো ঝিকঝিক করতে লাগলো..ভাল লাগার মানুষের মাঝে হয়তো আরো ভালবাসাছড়িয়ে দিবে বলে..

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত