নতুন বউ বাসর ঘরে বসে আছে। আমি দরজা আটকে খাটে গিয়ে বসলাম। কি করবো বুঝতে পারছি না। অবশেষে খাট থেকে একটা চাদর নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লাম। এমন হুট করে বিয়ে মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমাকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেছে আমার পরিবার। বিয়ের ৩ দিন আগে আমায় দেখতে পাঠাতে চেয়েছিল মেয়ের বাড়ি। আমি কষ্টভরা কন্ঠে বলে দিয়েছিলাম বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার আগেই যখন “আমাকে মেয়ে দেখানোর প্রয়োজন মনে করোনি” এখন আর দেখে কি লাভ? অবশেষে বাধ্যতামুলক বিয়েটা করে ফেললাম।আমি অপরদিকে মাথাদিয়ে শুয়ে রয়েছিমেঝেতে। প্রায় ঘন্টাখানেক অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমি তিনটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা ধরিয়েছি। সাধারনত আমি সিগারেট খাইনা।
বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাঝে মধ্যে ২/১ টা খাই। কিন্তু আজ বাসর ঘরে ঢোকার আগেই নানান চিন্তা ভাবনা মাথার উপর এসে ভর করে। যার জন্য এক প্যাকেট কিনে নিয়ে ঢুকেছি। এই সিগারেটে কয়েকটা টান দিতেই মনে হলো আমার বিয়ে করা বউটা খাট থেকে নামছে! কারন পায়ের নুপুরের শব্দ পাচ্ছি। আমি আগের মতোই চুপ করে শুয়ে আছি। হঠাৎ সে এসে আমার পাশে বসলো মেঝেতে। আমার কপালে একটা হাত বুলিয়ে বলল কি হয়েছে তোমার? আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মাথাটাএকটু ঘুরিয়ে তাকালাম আমার বউয়ের দিকে। দেখে আমার চোখ দুটো কপালে উঠে গেল! মানুষ এতোটা সুন্দর হতে পারে?! আমি উঠে বসলাম। মেয়েটা আমার চেয়ে থাকা দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
-তুমি গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ো। আমি)
-তুমিও খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ো। (বউ)
-না’ আমি নিচেই শুয়ে থাকবো। তুমি খাটেগিয়ে শোও।
-তাহলে আমিও নিচে শোবো তোমার পাশে। কি আর করবো? বাধ্য হয়েই খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। চুপ করে শুয়ে আছি অপরদিকে মুখ করে। মেয়েটি এসেশুয়ে পড়লো। তার শরীরের অলংকার গুলো নড়ছে এবং শব্দ হচ্ছে।একটুপর শব্দ কমে গেল।
-আমি কি শরীরের গয়নাগাটি খুলতে পারি? (বউ)
-তুমি যা ইচ্ছাতাই করো সমস্যা নাই। (আমি)
-সত্যি তো? রাগ করবে না তো?
-আরে নাহ। এরপর আবার শব্দ শুরু হলো। বুঝলাম শরীরে ওতো গয়না নিয়ে শুয়ে থাকা ওর ঝামেলা হচ্ছিলো। একটুপর আবার শব্দ কমে গেল। আসলে গভীর রাতে একটু শব্দ হলেই কানে বেশি লাগে। হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা আমার ওপাশে হাত বাড়িয়ে রাখলো মেয়েটা। আমি যেহেতু ওপাশেই মুখ করে শুয়ে আছি তাই চোখ মেলে তাকালাম। আবছা আলোয় যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেল! মেয়েটা শাড়ি খুলে রেখেছে ওখানে।
-শাড়ি গয়না এগুলা এতোবিরক্তিকর আগেজানতাম না। এখনএসব খুলে কতো সুন্দর লাগছে। এই বলে মেয়েটি আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি পাথরের মূর্তির মতো চুপ করে আছি।জীবনের প্রথম কোন মেয়ে মানুষের জড়িয়ে ধরায় আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে। ভয়েই কি লজ্জায় আমার শরীর শীতল হয়ে কাঁপছে।
-এই কি করছো এসব?
-আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি। আর তুমিই তো বললে আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করতে পারি। তাই জড়িয়ে ধরেছি। এখন লক্ষি ছেলের মতো চুপটি করে ঘুমাও। এই বলে মেয়েটি আমায় জড়িয়ে ধরে রইলো। এরপর এটা ওটা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো কারো পানির ছিটায়। চেয়ে দেখি সেই মিষ্ট মেয়েটা (বউ) আমার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হাসছে। কি অদ্ভুত ধরনের হাসি! এই মেয়ের সামনে যদি কোন কবি থাকতো তবে সাথে সাথে একটা কবিতা লিখে ফেলতো।
-কি মশাই উঠবেন নাকি টেনে তুলতে হবে?
-হা উঠতেছি। বিছানা থেকে উঠে হাত, মুখ ধুয়ে বের হলাম রাস্তায়। রাস্তায় এসে মোবাইলটা বের করে রত্নার নাম্বারে ডায়াল করলাম। কিন্তু রত্নার নাম্বার বন্ধ। না জানি রত্না কতোটা কষ্ট পেয়েছে আমার বিয়ের কথা শুনে। পাগলের মতো রত্না আর আমি দুজন, দুজনকে ভালোবেসেছি। কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসার কথা মা, বাবাকে জানানোর পরেও তারা এই বিয়েটাই করালো আমায়। আরো কয়েকবার ট্রাই করার পরও রত্নার নাম্বারে সংযোগ পেলাম না। মনটা ভার করে পুকুর পাড়ের আম গাছটার নিচে বসে আছি। হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো মোবাইলে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল
-কোথায় এখন তুমি?
-পুকুর পাড়ে। আপনি কে?
– আমার নাম রিক্তা। তাড়াতাড়ি তোমাদের বাড়িতে আসো।পুকুর পাড় থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে অনেক মানুষ। অনেক আত্মীয় স্বজন। এদের মধ্যে থেকে কে ফোন করলো বুঝতে পারছি না। আমি সোজা আমার রুমে ঢুকলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে ঐ নাম্বারে কল দেবো ওমনি আমার বউ এসে আহ্লাদী ভঙ্গিমায় আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
-কি গো, কাকে ফোন করো। (বউ)
-আচ্ছা রিক্তা কার নাম? (আমি)
-তোমার দুষ্টু বউয়ের নাম তুমিই জানোনা মশাই? গতকাল কাজি সাহেব যখন বিয়ে পড়াইছে তখন কানটা বন্ধ ছিল নাকি? হা আমারি নাম রিক্তা। একটু আগে আমিই তোমায় ফোন করেছিলাম। নতুন বউকে ফেলে কোথায় গিয়ে থাকো হুমম? এই বলেই মেয়েটি আমার বুকের উপর ঝুকে পড়েছে। আমার গলাটা দুহাতে জড়িয়ে দেহটাকে আমার উপর নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দিচ্ছে আমাকে আমি মাথাটা খাটের উপর কোনরকম রেখে বোবার মতো তাকিয়ে দেখছি আমার বউকে। মেয়েটার চোখে দুষ্টু, মিষ্টি হাসি। ওর চোখের ভাষা বলছে ও স্বামীর একটু ভালোবাসা চায়। কিন্তু আমি কি করবো? আমি তো ভালোবাসি রত্নাকে। ওকে যে আমি কথা দিয়েছি ওকে ছাড়া কাউকে জীবনসঙ্গী করবো না।
-কি হলো? কি ভাবছো গো মশাই?
-প্লিজ ছাড়ো আমায়। বাইরে একটু কাজ আছে আমার।
এই বলে কোনরকম জোর করেই ওকে ছাড়িয়ে খাট থেকে নেমে ঘরের বাইরে এসেছি। এর মধ্যেই দেখি ভাবি, নানি, দাদিরা প্রস্তুত বাইরে আমাকে গোসল করানোর জন্য। আমাকে দেখেই তারা আমায় টেনে নিয়ে গেল। ভাবিরা গেল আমার বউকে ডেকে আনতে আমার ঘরে। এরপর কতো রকমের মজা, খেলা হলো এই গোসল করানোর আগে। পাশাও খেলতে হলো দুজনকে। কিন্তু এই আনন্দময় মুহুর্তে আমি খেয়াল করছি আমার বউ রিক্তার মনটা ভার। এটাই স্বাভাবিক। একটা মেয়ে বিয়ের পর চায় শুধু দু- বেলা দু-মুঠো খাওয়া আর স্বামীর একটু ভালোবাসা। কিন্তু আমি এখনো পর্যন্ত ওকে বউ হিসেবে মেনে নিতেই পারিনি। কি করে পারবো? আমার জন্য যে রত্না অপেক্ষায় আছে। ওকে যে আমি খুবই ভালোবাসি। ওকে যে আমি খুবই ভালোবাসি। গোসল শেষ করে প্যান্ট, শার্ট পড়ে একটু রাস্তায় বের হলাম। আবার রত্নার নাম্বারে কল দিলাম হা এবার কল ডুকেছে। একটু পরেই রিসিভ হলো।
-কি হয়েছে, কল দাও ক্যান? তোমার তোএখন বউ আছে। এটুকু বলেই ফোন রেখে দেয় রত্না। আমাকে কথা বলার সুযোগ ই দিলো না। আবার কল করতে যাবো তখনি বাবার নাম্বার থেকে কল আসলো।
-তোর কি মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই? বাড়িতে মেহমানে ভরা, একটুপর মেয়ে পক্ষের লোক আসবে আর তুই থাকিস দূরে গিয়ে এই বলেই রাগ করে ফোন কেটে দেয় বাবা। আবার বিষন্ন মনে বাড়ির দিকে রওনা দেই। বাড়িতে ঢুকেই মাথাটা খারাপ হয়ে গেল। কাজের লোকের কি অভাব আছে?! সবাই তো বিয়ে বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমার কাজটা কোথায়? মনে মনে বাবার উপর ভীষণ রাগ হলো। তাদের কথায় প্রিয় ভালোবাসার মানুষকে ফেলে আজ অন্য কাউকে বিয়ে করতে হলো। কিছুই ভালো লাগছে না এখন। ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। চোখটা একটু বুঝতেই মনে হলো কেউ এসে আমার বুকের উপর মাথা রেখেছে। তাকিয়ে দেখি রিক্তা (বউ) দুই হাত আমার বুকের দুপাশে ভর করে মাথাটা বুকে রেখেছে।
-আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি? (রিক্তা) এই বলে মাথাটা তুলে আমার মুখের সামনে মুখ এনে আমার জবাবের অপেক্ষা করছে মেয়েটা। আমি ওর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। গোসল করিয়ে ভাবিরা ওকে শাড়ি পড়িয়ে, গয়না পড়িয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। ওকে দেখে কল্পনার কোন পরীর মতো লাগছে। কি অপরুপ হাসি, অপরুপ মুখ এই মেয়েটার। হাল্কা লিপস্টিক করা মিষ্টি ঠোট দুটো ঠিক আমার মুখের সামনে নিয়ে আমার জবারের অপেক্ষায় আছে। কি বলবো ওকে? ওর মতো সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ হয়নি এটা বললে আমাকে পাগল বলবে লোকে।
তবে কি সত্যটা ওকে বলে দেব এখনি? নাহ, বিয়ের কটা দিন শেষ হোক তারপর না হয় বলবো। কি হলো বললে না? বলো তোমার কি সমস্যা? তুমি কি অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসো? ওর এই প্রশ্নে আবার আমি ওর মুখের পানে তাকালাম। হাসি মুখটা সামান্য ভার করে আমার দিকে চেয়ে আছে আমার মুখের উত্তর শোনার জন্য? তবুও আমি নিরব হয়ে আছি কি বলবো ওকে? রিক্তা এবার কপালে একটা চুমো দিয়ে বলল’ তোমার যে কোন সমস্য থাকলে আমায় বলো। বউ নয়, বন্ধু হয়ে তোমার উপকার করবো বলো প্লিজ। আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি বাইরে থেকে বলছে মেয়েপক্ষের লোক এসেছে। সাথে সাথে আমার দুই শালি ঢুকে পড়লো আমার রুমে। তখনো বউ আমার বুকের উপর ঝুকে আছে। ওরা ঢুকতেই রিক্তা উঠে স্বাভাবিক হলো।
বড় শালিটা লজ্জা পেলেও ছোটটা এসেই চোখটিপ মারলো আমায়। দুজনি এসে আমার পাশে বসলো।কি খবর দুলাভাই? (ছোট শালি) -খবর জানতে টিভিতে চোখ রাখো। (আমি) -হা হা হা… সে খবর না আপনাদের খবর বলেন (বড় শালি) -আমাদের খবর তোমাদের আপুর মুখ থেকে শুনতে পাবে বাড়িতে গিয়ে। তবে খবর শুইনা আবার তোমরা ২ বোন আম্রে মারতে আইসো না। আমার কথা শুনে হাসছে শালিরা, সাথে বউও। আমি চেয়ে দেখছি বউয়ের সেই হাসি। হাসিতে নেই কোন অভিমান, নেই কোন অভিযোগ। যেন আমি ওকে হাসিখুশিতেই রেখেছি। অথচ মেয়েটিকে স্বামীর অধিকারটাই দেইনি আমি। এইদিকে মেয়েপক্ষের লোক এক এক করে সবাই ঘরে আসছে তাদের মেয়ে ও জামাইকে দেখতে।
আমিও ভদ্র মানুষের মতো চুপ করে দুই শালির মাঝখানে বসে আছি। আর রিক্তা সবাইকে চেয়ার টেনে বসতে দিচ্ছে। ছোট শালিটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট ছোট শব্দে আমাদের রাতের ব্যপারে জানতে চাইতেছে। আর বড় শালিটা ওর মুখ বুঝে হাসছে আর ছোট বোনকে চিমটি কেটে বলতেছে চুপ করবি? আমিও এতো মানুষের সামনে ওদের এমন কানাকানিতে লজ্জা পাচ্ছি। হঠাৎ বাইরে থেকে শুনতে পেলাম খাবার টেবিলে বসতে বলছে সবাইকে। সবাই চলে গেল খাওয়ার জন্য। আমার শালি দুইটা হাত ধরে আমায় নিয়ে যেতে চাইলেও বল্লাম যাও তোমরা খাও। ওরা তখন ওর আপুকে নিয়ে গেল। আমিও উঠে গেলাম মেয়েপক্ষকে খাওয়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে। এভাবে দিনশেষে রাত হয়ে এলো। রেডি হয়ে ওদের নিয়ে আসা গাড়িতে উঠলাম। আমি আর রিক্তা একসাথে বসেছি।
দুই পাশে দুই শালি সারা রাস্তা আমায় হাসিয়ে মেরেছে। এতো দুষ্টু আর মিষ্টি শালি পেয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না। প্রায় ঘন্টাখানেক এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ কাঠের পুলের কাছে চলে এলাম। একটুপরই তেলকুপি গ্রাম। রাস্তার পাশেই আমার একমাত্র খালার বাড়ি। এই খালাই আমার এই বিয়েটা ঠিক করেছে। খালার পছন্দ আছে বলতেই হয়। কারন মেয়েটা সত্যিই ভালো সবদিক থেকে। যদিও আমি কখনোই রিক্তাকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবো না। গাড়িটা ব্রেক করলো আমার শ্বশুরবাড়ির সামনেই। রাস্তার পাশেই বাড়ি। আমার খালার বাড়ির দুই বাড়ি পরই। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি ভিড়। সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে। রাত দশটা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া এটা সেটায় কেটে গেল। আমি আমার বউ রিক্তার রুমে শুয়ে আছি। রিক্তা ও বাড়ির মহিলারা খেতে বসেছে। একটু পড়েই ও আসবে। আমি একটা সিগারেট ধরিয়েছি ওমনি দরজা ঠেলে কেউ ঢুকে পড়লো। তাকিয়ে দেখি দুই শালি। ওরা আমার সাথেই খেয়ে নিয়েছে আমাকে জ্বালানোর জন্য। ওদের দেখে সিগারেট টা আড়াল করেছি। -আরে লুকাতে হবেনা খেয়ে নেন, সমস্যা নাই। (বড় শালি)
-দুলাভাই আমরা কিন্তু আজ রাতে আপনার কাছে থাকবো। গল্প করবো সারারাত। (ছোট শালি) -তাহলে তোমাদের আপু কোথায় থাকবে? -আপু আমাদের রুমে থাকবে। এই বলে হাসছে দুই বোন। সিগারেটটা দুটো টান দিয়ে ফেলে দিয়ে ওদের বসতে বললাম। -আচ্ছা তোমাদের আপুটা কি ভালো নাকি খারাপ? (আমি) আমার কথায় দুই বোন চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! -কেন, কিছু হইছে ভাইয়া?! আপু কোন কষ্ট দিছে আপনাকে? (বড় শালি) -আরে নাহ। জানতে চাইলাম ও কোন টাইপের? আমার প্রশ্নটা ঠিকভাবে করা হয়নি।
-আসলে আমাদের আপুটা অনেক ভালো। আমাদের কোনদিন কখনো কষ্ট দেয়নি। নিজে না খেয়ে আমাদের দুই বোনকে খাইয়ে মানুষ করেছে ভাইয়া। আমাদের কাছে আমাদের আপু অনেক ভালো। জানেন ভাইয়া? ও না কখনোই কষ্ট পেতে দেয়না আমাদের। একটু চাপা স্বভাবের। তবে ওর বুকে অনেক মমতা, ভালোবাসা আছে। এই বলে ছোট শালিটা চোখ মুছছে। বড়টাও চোখ মুছছে আর বলছে ভাইয়া… ওকে আমরা খুবই মিস করবো। আমাদের কোন ভাইয়া নেই। ঐ আপুই আমাদের সব। এরমধ্যেই রিক্তা ঘরে ঢুকলো। ওরা চুপ হয়ে গেল। বউ এসেই আমার সামনে এক গ্লাস দুধ দিলো। খেয়ে নিলাম। শালি দুইটা উঠে যাচ্ছে। বললাম কি ব্যাপার যাও ক্যান? থাকবে না আমার সাথে? -না ভাইয়া, অন্য সময় গল্প করবো আপনার সাথে। এখন আমাদের এই মিষ্টি আপুটাকে নিয়ে গল্প করেন। এই বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল শালিরা। বউ দরজা লাগিয়ে খাটে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। একটু নিরবতার পর রিক্তা আমায় বলল কি সমস্যা তোমার বলো এখন? আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
চুপ করে আছি। হঠাৎ রিক্তা উঠে আমার পাশে একটা হাত রেখে আধশোয়া হয়ে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল কি কাহিনী তোমার মাঝে? আমায় বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছো না ক্যান? নাকি কাউকে ভালোবাসো? বাসলে বলো সমস্যা নাই। আমি তোমায় এ বিষয়ে বন্ধুর মতো হেল্প করবো। শুধু আমায় আপন মানুষ ভেবে সব খুলে বলো। আমি রিক্তার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললাম… -আমি একজনকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি কাউকে জীবনসাথী করার কল্পনাও করতে পারছি না। আমার কথা শুনে রিক্তার সুন্দর মুখটা কালো হয়ে গেল। -ঠিকাছে। সে কি তোমাকে এখন মেনে নিবে তার কাছে ফিরে গেলে। -হা নেবে। কিন্তু তুমি? তোমার কি হবে? -হা হা হা… আমার আবার কি হবে? কপালে যা আছে তাই হবে। এখন তুমি ঘুমাও। তোমায় আমি হেল্প করবো এ বিষয়ে। এই বলে গয়না শাড়ীটা খুলে ফেলছে রিক্তা। আমি অপরদিকে মুখ করে শুইলাম। একটুপর হাতটা আমার উপর তুলে দিলো রিক্তা। -কিছু মনে করো না আমি ছোট বোনদের এইভাবে জরিয়ে ধরে ঘুমাইতামমাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দে! তাকিয়ে দেখি বউ রিক্তা পাশে নেই!! লাফ দিয়ে উঠে দেখি মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে মোনাজাতে বসে কাঁদছে মেয়েটা! এই দৃশ্য দেখে অজানা কোন এক মায়ায় পড়ে গেলাম আমি।
ওর কান্না দেখে বুকের মধ্যে একটা কষ্ট নামক ঝড় বইছে আমার। আমি কোন ভুল করছি না তো? এই নিষ্পাপ মেয়েটার কি দোষ? সে তো আমায় কখনো বলেনি আমায় বিয়ে করো। সে তো জোর করে আমায় বিয়ে করেনি। অন্য সবার মতো তারও তো স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার আশা ছিলো। সেই আশাটাকে তছনছ করে দিচ্ছি না তো আমি? এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি জমে গেছে আমার। আমি কি করবো এই মুহুর্তে? কোন পথ বেছে নেবো? ওর মোনাজাত শেষ হওয়া লক্ষ করে চোখ দ্রুত মুছে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লাম। ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি। তাড়াহুড়া করে শুতে গিয়ে অপরদিকে মুখ না করে বউয়ের দিকেই মুখ করে শুয়েছি। রিক্তা একটুপর এসে খাটে উঠলো। কিছুক্ষন যাবার পর অনুভব করলাম ও একটা হালকা চাদর আমার শরীরের উপর দিলো। এরপর আমার কপালে একটা চুমো দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো আমায়। আমার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে অজানা কোনো এক শিহরনে। ও বুঝতে পারেনি আমি জেগে আছি। ঘুমের ভাব নিয়েই এই প্রথম রিক্তাকে আমি বুকের সাথে নিজ থেকে জড়িয়ে নিলাম। কিছুক্ষন ওভাবেই কাটালাম। মেয়েটা ছটফট করছে আমার ছোয়া পেয়ে। আমি বুঝতে পারছি ও ওর স্বামীর আদর, ভালোবাসা পাবার জন্য ব্যাকুল।
কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না আমায়। আমার ভিতরের পুরুষত্ব জেগে উঠছে। পরক্ষনেই রত্নার কথা মনে পড়তেই আবার পাথর হয়ে গেছি। চুপ করে অবুঝ বালকের মতো রিক্তার বুকে শুয়ে আছি। নিজেকে আজ অপরাধী মনে হচ্ছে। কেন আমি জেনেশুনে বিয়ের পিরিতে বসলাম। কেনই বা বিয়ে করেও দুইটা জীবন নিয়ে খেলছি। মনে হচ্ছে বিয়ে করা বউটার উপর একটু বেশি অন্যায় করে ফেলছি আমি। ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুললো ছোট শালি। -এই দুলাভাই। রাতে কি গল্প করা বেশি হইছে আপুর সাথে? উঠে হাত মুখ ধুয়ে নেন। খেতে হবে, খাবার রেডি। আমি উঠে শালির সাথে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসলাম। খাওয়া দাওয়া সেরে দুই শালিকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হলাম। এই গ্রামটা আমার খুবই পরিচিত। কারন ছোটকাল থেকেই এখানে আসা, যাওয়া আছে। গ্রামটা দারুন। রাস্তার একপাশে ঘরবাড়ি অন্য পাশে একটা ছোট নদী বয়ে গেছে। হাটতে বেশ ভালোই লাগছে। হঠাৎ মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো আমার। তাকিয়ে দেখি রত্না কল করেছে। আমি শালিদের চেয়ে একটু দুরে গিয়ে ফোনটা ধরলাম। -হ্যালো, কেমন আছো রত্না? (আমি) -যেমনটা রেখেছো আমায়। তুমি নিশ্বচয়ই নতুন বউকে নিয়ে খুব সুখে আছো? (রত্না) -আমিও ভালো নেই রত্না। আমি বিয়েটা করেছি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে। তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো রত্না।
-আমিও ভালো নেই রত্না। আমি বিয়েটা করেছি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে। তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো রত্না। -বাহ…! এসব নাটক বাদ দাও এখন। যদি আমার কাছে আসতে তবে বিয়ে না করেই আসতে। এখন তুমি অন্য কোন মেয়ের স্বামী। তুমি অন্য কোন রক্তে মিশে গেছো। -নাহ রত্না। আমি বিয়ে করেছি ঠিকই। কিন্তু বউ বলে ওকে মেনে নেইনি। এখনো আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি। -ঠিকাছে, তাহলে তুমি আমার কাছে আসো। আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাও। যেখানে আমাদের কেউ বাধা হয়ে দাড়াবে না। -হা আসবো। তুমি কয়টা দিন সময় দাও। আমার বিয়ে করা স্ত্রীও এ ব্যাপারে আমায় সাহায্য করবে। -বিশ্বাস হয়না। কোন মেয়ে তার স্বামীকে হারাতে চাইবে না। আর তুমি বলছো ও তোমায় এ ব্যাপারে সাহায্য করবে!! -হ্যা সত্যি। ও খুবই ভালো মেয়ে। -আচ্ছা তুমি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমায় ফোন করো। আমি সব সামলে তোমার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবো।
-ওকে রত্না রাখি। আমার শালিরা আছে সাথেই। পরে কথা হবে। – ওকে রাখো। কল কেটে দিয়ে শালিদের কাছে এগিয়ে গেলাম। দেখি বাদাম কিনে খাচ্ছে আর কয়েকটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। আমি এগিয়ে যেতেই বড় শালি আমায় দেখিয়ে ওই মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলল ইনিই আমার দুলাভাই। মেয়েগুলো আমায় সালাম দিলো। আমি উত্তর দিয়ে ওদের দিকে তাকালাম। একটা মেয়ে আমায় দেখে চোখ কপালে তুলে, অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল – আপনি এমডি মুনসুর হেলাল না? -হা, আপনি চেনেন আমায়? -আরে ভাইয়া আমি ইরানি সুলতানা। আপনার গল্প নিয়মিত পড়ি আমি। আপনার সাথে তো মাঝে মধ্যে কথা ও হয়। -ও হা। আপনি সেই মেয়ে! আসলে আপনাকে দেখা হয়নি তো আগে তাই চিনতে পারিনি। -হুম, আপনি বিয়ে করেছেন তাইতো আর গল্প পাচ্ছিনা ফেসবুকে। তো ভাইয়া আমাদের বাসায় আপনার দাওয়াত। চলুন আমাদের সাথে। -ধন্যবাদ আপু। তবে আজ যেতে পারছি না। বিয়ে যেহেতু এই এলাকায় করলাম পরবর্তীতে এসে ঘুরতে যাবো আপনাদের বাসায়। একটু পর আমাদের ওখান থেকে লোক আসবে। এখন ফিরতে হবে আমাদের। এই বলে ওনাদের বিদায় দিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
-দুলাভাই আপনি গল্প লেখেন তা তো বলেননি। আমি তো গল্পখোর মেয়ে। (বড় শালি) -এ বিষয়ে কথা উঠলে তো বলবো। -আচ্ছা বাসায় গিয়ে আপনার সব গল্প পড়বো আমরা। বিকেলে আমাদের পক্ষের লোক আসলো। খাওয়া দাওয়া হলো। এইদিকে আমার ফোন নিয়ে গল্প পড়ায় ব্যস্ত আমার দুই শালি। -এই যে আপুরা। এতো প্রেমের গল্প পড়লে আবার ভিতরে প্রেম চলে আসবে তোমাদের। তখন আবার আমার ছোট ভাইদের সাথে লাইন মারতে চাইবে। -উহ… একটা ভাই ও তো নাই আপনার। যেই কাজিনগুলা আছে। একেকটা একেক রকম বান্দর স্টাইলে ঘুরে বেড়ায় সামনে। ওসব স্টাইলওয়ালা ছেলেদের ভালো লাগেনা দুলাভাই। আপনার মতো একটা সুইট শান্ত পোলা থাকলে না হয় দেখতাম। এই বলে হি-হি হাসছে দুই বোন। -আচ্ছা আমার মতো পোলাই খুঁজবো নে। এখন ফোনটা দাও। একটুপর বিদায় নিতে হবে। -দুলাভাই আপনার গল্পের ভক্ত হয়ে গেলাম আমরা। দারুন লেখা।
আমরাও ফেসবুক আইডি খুলে আপনাকে বন্ধু করে নেবো নে। -ওকে নিও। এখন যাও তোমাদের আপুকে তাড়াতাড়ি সাজিয়ে বের করে দাও। রাত আটটার দিকে গাড়িতে উঠলাম। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী সহ বাড়ির সবাই রিক্তাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে দোয়া করে দিলো। আমার শ্বাশুড়ী বারবার কান্নাজড়িত কন্ঠে আমার হাত ধরে তার মেয়েটাকে আমার হাতে তুলে দিলো। তার মেয়েটাকে যেন দেখে রাখি। বুকে আগলে রাখি। এইদিকে রিক্তার ছোট বোনদুটোও বোনকে ধরে কাঁদছে। এতো মায়া, এতো ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি। শালি দুটো আমার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে আমার আপুটাকে দেখে রেখো ভাইয়া। মনের ভিতরটা কেমন জানি কেঁদে উঠছে আমার। শালি দুটোকে আপন বোনের মতো বুকে জড়িয়ে বললাম তোমরা ভালো থেকো বোন। তোমাদের বোনকে দেখে রাখবো আমি। গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। রিক্তা এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর মাথাটা আমার ঘাড়ে রাখা। নানান চিন্তা আমার মাথায় ভর করছে! কি করবো আমি? একদিকে ভালোবাসার মানুষ, অপরদিকে এক সহজ সরল মেয়ে।
আমি কি পারবো ভালোবাসার মানুষটাকে না করে দিতে? অথবা আমি কি পারবো এই নিরীহ মেয়েটাকে স্বামীহারা করতে? আমি পথহারা পথিকের মতো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে কোন এক রাস্তা বেছে নিতে হবে আমায় নিজেকেই। এক ঘন্টার ভিতর বাড়িতে পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে সবাই নামছে। রিক্তা এখনও আমার ঘাড়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর কথা বলার বা নেমে হেটে যাওয়ার শক্তি নাই দেহে। আস্তে করে ওকে ধরে নামিয়ে ঘরে নিয়ে এলাম। মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছে। হয়তো তার পরিবারকে ছেড়ে আসায় খারাপ লাগছে। আবার স্বামীকে আপন করে পাবেনা এটা ভেবে আরো মানষিক চিন্তায় আছে হয়তো। ওকে কোনভাবে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। দরজাটা আটকে খাটে বসে পড়লাম। একটা সিগারেট বের করে ধরালাম। রিক্তাকে যেভাবে শুইয়ে দিয়েছি ওভাবেই শুয়ে আছে।
সিগারেট টানছি আর চেয়ে আছি ওর মায়াবী মুখটার দিকে। কি করে পারবো এই মেয়েটাকে স্বামীহারা করে জনম দুঃখী করে দিতে? সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিলাম। প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পড়লাম। দারুন গরম পড়েছে আজ। ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে রিক্তাকে ভালোভাবে শুইয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ মনে পড়লো শাড়ী পড়ে ও তো ঘুমাতে পারে না। আস্তে করে ওকে টেনে তুলে বসালাম। আমার বুকে মাথা ঝুকে আছে রিক্তা। আমি নিজ হাতে ওর পরনের শাড়ি খুলে দিচ্ছি। এরপর গলা, কানের গয়না ও কোমরের বিছাটাও খুলে দিলাম। বুক থেকে আস্তে করে শুইয়ে দিলাম ওকে। রিক্তা আমার দিকে চেয়ে আছে। চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে ওর। আমি হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। এরপর অনেক্ষন চুপচাপ শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার শরীরের উপর ওর হাত পড়লো! জড়িয়ে ধরেছে আমায়। আমি ওর দিকে তাকালাম। ঘুমিয়ে গেছে ও। মুখটা কাছে নিয়ে আস্তে করে কপালে একটা চুমো দিলাম। বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম ওকে। এভাবে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন ভোরে উঠেই বেরিয়ে পরলাম মাঠের দিকে। রত্নাকে কল দিলাম
– কোথায় তুমি? (আমি)
-বাড়িতে। (রত্না)
-একটু মাঠের দিকে আসো।
-কেনো? কথা আছে।
-ওকে আসতেছি দাড়াও মাঠে। এই বলে ফোন কেটে দিলো রত্না। রত্নাদের বাড়ি আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই। আর যে মাঠে দেখা করবো এটা দুই গ্রামের মাঝখানে। মাঠে গিয়ে বসে ভাবছি আগের দিনের কথা। কেন জানি আমার মা, বাবা রত্নার কথা শুনতে পারেনি। ওর কথা বারবার বলেছিলাম বাড়িতে কিন্তু বাবা বলেছে ঐ মেয়েরা ভালো না। কিন্তু আজ পর্যন্ত খারাপের কিছু দেখিনি রত্নার মাঝে আমি। আর এটাও জানি আমার মতো রত্নাও আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। কিন্তু বাবা, মার চোখে কেন খারাপ ওরা আজো বুঝিনি। রত্নাকে দেখা যাচ্ছে কাদে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কতোদিন পর ওকে দেখছি। ও এসেই আমার হাত ধরে টেনে বলছে চলো।
-কোথায় যাবে? এখানেই বসো কথা বলি। (আমি)
– মানে? কথা বলার সময় নাই। চলো বিয়ে করবো সিরাজগঞ্জ কোর্টে গিয়ে।
-কি বলছো এসব! আমি তো তোমায় ডেকেছি একটু কথা বলার জন্য। এখন তো বিয়ে করার সময় না।
-চুপ, আমায় যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো তবে এখনি বিয়ে করতে হবে। নইলে চিরতরে হারাবে আমায়। আমি রত্নার কথায় কোনকিছু না ভেবেই ওর সাথে চলে গেলাম।
কোর্টের কাছে যেতেই ২/৩ টা ছেলে আর মেয়ে আসলো ওর কাছে। বুঝলাম সাক্ষির জন্য ওদের আগেই ফোন করে আসতে বলেছে এখানে। কোর্টে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। বাইরে এসে রত্না আমায় বলল বিকেলে তুমি বাড়ি থেকে বের হবে। আমিও বের হয়ে মাঠে এসে থাকবো। ওখান থেকে আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাবে। মনে থাকে যেনো নইলে কিন্তু আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে উঠবো। এই বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল রত্না। আমি অবাক চোখে চেয়ে আছি ওর দিকে! এসব কি হয়ে গেল এক মুহুর্তে! আমি খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। হাটতে হাটতে বাড়িতে আসলাম। বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে পড়লাম। কি করবো এখন আমি? একদিকে নতুন বউ রিক্তা বাড়িতে। অন্য দিকে রত্নাকে কোর্টে বিয়ে করলাম। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল সব। একটুপর রিক্তা বিছানায় এসে বসলো। আমার কপালে চিন্তার ভাজ দেখে মাথায় হাত রাখলো রিক্তা।
-কি হয়েছে তোমার? মাথা ব্যথা করছে? এই বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রিক্তা। আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। ওকে যতো দেখি ততো বেশি মায়ায় পড়ে যাই।
– আচ্ছা রিক্তা’ আমি যদি তোমায় তাড়িয়ে দিতে চাই বা খুব কষ্ট দেই তুমি চলে যাবে আমার কাছ থেকে। আমার এই কথা শুনে রিক্তা একটু চমকে যাওয়ার মতো দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে!
-কোন মেয়ে স্বামীর বাড়ি আসলে সে যাওয়ার জন্য আসেনা। হাজার কষ্ট সয়েও সে স্বামীর ঘরে থাকতে চায়। তবে তুমি যদি আমাকে না রাখো তোমার সংসারে বাধ্য হয়ে আমায় চলে যেতে হবে। আর এতে আমার চেয়ে আমার পরিবারের লোক হয়তো বেশি কষ্ট পাবে। তবুও তোমার যদি এটাতে ভালো হয় আমি চলে যাবো। আর যদি কোনভাবে আমায় তোমার এই সংসারে ঠায় দেয়া যায় তবে আমি খুবই খুশি হবো। কিচ্ছু লাগবে না আমার। শুধু দু বেলা দু মুঠো ভাত আর একটু কাপড় দিলেই চলবে। আমি চাকরানীর মতো সব কাজ করবো। কোনঅধীকার চাইবো না। এতে হয়তো আমার পরিবারের লোক কষ্ট পাবেনা। তারা জানবে তাদের মেয়ে সুখে আছে। আর এতেই আমার সুখ হবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছা। যদি সম্ভব হয় আমায় কাজের মেয়ে হিসেবে একটু ঠাই দিও। তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিয়ে আসো কিচ্ছু বলবো না। এই বলে রিক্তা আমার পা ধরে কাঁদছে। আমি ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
-আমি তোমায় না জানিয়ে একটা ভুল করে ফেলেছি রিক্তা। আমি খুব টেনশেনে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না।
-কি করেছো তুমি আমায় বলো। আমি তো আগেই বলেছি আমি বন্ধুর মতো তোমার উপকার করবো। তোমার কোন কাজে আমি বাঁধা দেবো না। শুধু আমায় একটু ঠাই দিও এটাই আমার চাওয়া।
-আমি আজ রত্নার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে আমায় ওকে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করতে হয়। এবং বিকেলে ওকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে হবে এটাও বলে দিয়েছে। নইলে ওকে চিরতরে হারাতে হবে। আমি এখন কি করবো রিক্তা? এসব বলে রিক্তার দিকে তাকালাম। ওর মুখটা ছোট হয়ে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে কষ্ট চেপে বলতেছে -ঠিক আছে তুমি যাবে। আমি এইদিকটা সামলে নেবো। রিক্তার মুখে এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে! আল্লাহ্ কি দিয়ে বানাইছে ওরে?! এই মেয়েটাকে কোন কিছু না দিয়ে একবুক যন্ত্রনা উপহার দিচ্ছি আর ও তা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছে। আমি পাগলের মতো ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি খুব বড় ভুল করছি।
খুব বেশি অন্যায় করতেছি এই অসহায় মেয়েটির উপর। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে গোসল করে আসো। আমি খাবার বাড়ছি। বিকেলে তুমি যাবে ওনার কাছে। এখন খেয়ে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাও।দুপুরে খাওয়ার পর একটু বিছানায় শুয়ে পড়ি। ঘুম আসেনা চোখে। শুধু টেনশন হচ্ছে আমার। আমি বুঝতে পারছি জীবনের বড় একটা ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছি আমি। একটুপর রিক্তা কাছে এসে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো! রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো -তাড়াতাড়ি মাঠে আসো। এই বলেই ফোন কেটে দিলো রত্না। আমি ফোন রেখে চেয়ে আছি রিক্তার দিকে। শত ব্যথা বুকে চেপে আমার মুখের পানে চেয়ে আছে মেয়েটা। আমি উঠে আলমাররির ড্রয়ার থেকে টাকা বের করলাম। প্যান্ট, শার্ট পড়ে বের হওয়ার জন্য রিক্তার সামনে আসলাম। অসহায়ের দৃষ্টিতে রিক্তা চেয়ে আছে আমার দিকে।
-আমি যাচ্ছি। তুমি এদিকটা সামলে নিও রিক্তা।
-হুম যাও। তবে নিজেকে দেখে রেখো। যেখানেই যাও চিন্তা, ভাবনা করে যেও। আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এসো। ওনাকে নিয়েই এসো। আমি না হয় তোমার মা, বাবাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবো। আর সব সময় ফোনে যোগাযোগ রেখো। কোন কিছু হলেই ফোন করবে আমায় ঠিকাআাছে? কথাগুলো একটানে বলে মেয়েটা চেয়ে আছে আমার দিকে। জানি কথাগুলো অনেক কষ্টে বলেছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর থুতনিটা ধরে বললাম আচ্ছা।
-আমি জানি সবচেয়ে বড় ভুলটা করতে যাচ্ছি আজ আমি। আমি দিশেহারা হয়ে গেছি রিক্তা আমি তোমায় খুব বেশি ঠকিয়ে দিলাম। ক্ষমা চাওয়ার মতো যোগ্যতাও যে নেই আমার। এই বলে ঘর থেকে বের হলাম আমি। মাঠে গিয়ে রত্নাকে দেখতে পেলাম। রত্না আমায় দেখেই বলল কোথাও যেতে পারবো না আমি। আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাও।
-কি বলছো এসব পাগলের মতো?! এই মুহুর্তে তোমায় বাড়িতে নিয়ে গেলে কেউ মেনে নেবে না। এটা অসম্ভব।
-আমি কিছুই শুনতে চাই না। আমায় বিয়ে করেছো, এখন বউ হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যাবে এটাই শেষ কথা।
-দয়া করে কয়েকটা দিন সময় দাও আমায়। এরমধ্যে একটা ব্যবস্থা করে তারপর নিয়ে যাব।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তবে তিনদিন সময় দিলাম। এরমধ্যে আমায় বউ হিসেবে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে। রত্নার কথা শুনে কিছুক্ষন ভেবে বললাম
-আচ্ছা বাড়িতে যাও। আমিএদিকটা দেখছি। এই বলে আবার বাড়িতে চলে এলাম। এসে দেখি রিক্তা মায়ের পাশে বসে মার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। আমি সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার মাথায় কিছু কাজ করছে না। তবে কিছু একটা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। একটুপর রিক্তা ঘরে এলো। আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিলো।
-কিছু হয়েছে তোমার, উনি দেখা করেনি? আমি উঠে বসলাম বিছানায়। রিক্তার মুখোমুখি বসে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আমার চাওয়া দেখে ও মাথা নিচু করে আছে।
-আচ্ছা রিক্তা’ আমায় খুব ভালোবাসো তাইনা?
-এসব বলছো কেনো, কি হয়েছে?
-বলো আগে ভালোবাসো কিনা?
-তুমি আমার স্বামী। স্বামী হলো বিয়ের পর যে কোন মেয়ের কাছে সবচেয়ে আপন মানুষ। আপন মানুষকে কে না ভালোবাসে বলো?
-আমার বুকে আসবে একটু? -হুম, তুমি যে আমার স্বামী। তুমি চাইলে সবই করবো। (লজ্জালজ্জা কন্ঠে)
-তবে এই যে আমি শুয়ে পড়লাম। তুমি এসে আমার এই বুকে মাথা রেখে একটু শোও। এর বেশি কিছুই চাইবো না। শুধু তোমায় বুকে নিয়ে একটু শান্তিতে ঘুমাবো। -ঠিক আছে। রিক্তা আমার বুকে মাথা রেখে একটা হাত দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কাটছে। আমি চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করছি। একটুপর কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা। সন্ধ্যার আগে ডাকছে আমায় রিক্তা
-মা ভাত নিয়ে বসে আছে। চলো ভাত খাই। উঠে হাতমুখ ধুয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসে খাচ্ছি। কি সুন্দর সুখ, শান্তির দৃশ্য! ভালোবাসায় ভরা সংসার। খাওয়া, দাওয়ার পর আমি ঘরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম! রিক্তা দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে মাকে ডাক দিলো। মা, বোন আর বাবা দৌড়ে আসলো। আমি তখন অচেতন। আমাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেয়া হলো। ডাক্তারের সাথে বাবা কথা বলল।
ডাক্তার আমায় পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে গেল। আমায় পরীক্ষা, নিরীক্ষা করে ডাক্তার বাইরে গেল। এবং তিনি বললেন আমার ভিতরে বড় ধরনের কিছু হয়েছে। ভালো হাসপাতালে পাঠাতে হবে। আমার বাবা তখন ডাক্তারকে বললেন কোন হাসপাতালে নিতে হবে? কি করতে হবে করুন। যতো টাকা লাগে লাগুক আমার ছেলের জন্য। তখন ঐ ডাক্তার আমাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসলেন। সেখানে পরীক্ষা করার পর জানিয়ে দেয়া হলো আমার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে!! আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম!! এই খবর শুনে আমার পরিবারের সবাই পাগল হয়ে যায়। হঠাৎ এমন কেনো হলো আমার?! আমার মা, বোন সবাই আসে আমার কাছে। ওরা আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদে। আর ঐ রিক্তা নামের মেয়েটা কাঁদেনা সহজে। ও আমার কাছে থাকে। আমার হাত পা টিপে দেয় সবসময়। কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে তোমার কিচ্ছু হবেনা দেখো।
আমি আছি তো পাগল এই বলে মেয়েটা আমায় জড়িয়ে ধরে। পাগলের মতো বলে আমার দুটো কিডনি আমি তোমায় দিয়ে দেবো দেখো তুমি বাঁচবে আমি তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না। এসব বলে আর নিজেকে ধরে রাখতেপারেনা রিক্তা। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। ওর কান্না আর আহাজারি দেখে মনে হয় আমিই সেই অভাগা… যে কিনা এমন একটা বউ পেয়েও তাকে ভালোবাসতে পারিনি। তার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারিনি। মনের অজান্তে দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আমার। আজ তিনদিন হয়ে গেল হাসপাতালে আছি। আশেপাশের গ্রামের সবাই জানে “রোমান” নামের ছেলেটি আর বেশিদিন বাঁচবে না। তাই সবসময় গ্রামের এবং আশে পাশের চেনাজানা সবাই আমায় শেষবারের মতো দেখতে আসে। অথচ বারবার খবর পাঠানোর পরও আমার ভালোবাসার মানুষ রত্নার মুখটা দেখলাম না। খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার। ওকে একটা নজর দেখবো। শেষমেশ আমি নিজেই রত্নাকে কল দিলাম
-হ্যালো রত্না, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। তুমি একবার দেখে যাও আমায়।
-রোমান তুমি দয়া করে আমাদের বিয়ের কথাটা কাউকে বলো না। আমার জীবনটা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
-তুমি তো আমার বউ। এ কথা বলছো কেনো?
-কিসের বউ? দেখো এসব কাউকে বলবে না কিন্তু।
-আচ্ছা বলবো না। তবে আমায় একটা কিডনি দান করবে? হয়তো কিডনি পাল্টালে আমি বাঁচবো।
-দেখো তুৃমি এখন মৃত্যুর দুয়ারে। সেখান থেকে কেনো আরেকজনের বিপদ আনতে চাও?
-মানে? তুমি আমায় বাঁচাতে চাও না।
-ডাক্তার বলেছে যে তুমি বাঁচবে না। আমি বাঁচাবো কি করে? তোমার হায়াত না থাকলে তুমি মারা যাবে এটাই নিয়ম। এই বলে ফোন রেখে দেয় রত্না। আরেকবার আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
মানুষ এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে!! ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুর কথা জেনেও মানুষ এমন আচরন করতে পারে?! কাকে ভালোবেসেছিলাম আমি! এই কি ওকে পাগলের মতো ভালোবাসার প্রতিদান? আজ বুঝতে পারছি বারবার বলার পরেও কেন বাবা মা রত্নার কথা শুনতে পারেনি। তাকে বউ করে আনতে চায়নি আমার সাথে। কারন তারা ওর পরিবার ও ওর সম্পর্কে জানতো হয়তো। আর আমি কিনা সেই মেয়েকেই বিয়ে করলাম সবার অজান্তে। ঘরে একটা লক্ষি বউ রেখেও আমি অন্ধ ভালোবাসার মোহে পড়ে আরেকটা বিয়ে করলাম। নকল মানুষকে আপন ভেবে আসল মানুষটাকে দুরে ঠেলে দিতে চেয়েছিলাম। আগামিকাল আমার অপারেশন হবে। আমার বউ রিক্তা আর মা একটা করে কিডনি আমায় দান করতে চেয়েছে। অপারেশনে লাভ যদিও খুব একটা নাই। কারন ৮০% মৃত্যুর সম্ভবনা আমার। আমি বেডে শুয়ে আছি। আমার মাথার পাশে বসে আছে আমার বউ রিক্তা। হঠাৎ মা, বাবা আর ছোটবোন রুমে ঢুকলো। ঢুকে বাবা সবার উদ্দেশ্যে বলল তোমরা একটু বাইরে যাও।রোমানের সাথে আমার ব্যক্তিগত গোপন কিছু কথা আছে। মা, বোন আর রিক্তা বাইরে চলে গেল। আমি বাবার দিকে চেয়ে আছি অবাক দৃষ্টিতে! কি এমন কথা! যা আমায় একান্তে বলবে বাবা?
-কি বলবেন আব্বা বলেন? (আমি)
-তুমি কি বুঝতে পেরেছো কিছু? (বাবা)
-হা, আমার কিডনি নষ্ট হয়নি। এটা আপনার নাটক ছিলো রত্নার আসল রুপটা প্রকাশ পাওয়ার জন্য তাইনা আব্বা?
-হা, তবে আরেকটা সত্য লুকিয়ে আছে। তা বাবা হয়ে ছেলেকে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না।
-কি সেটা? বলেন।
-তার আগে বলো, আমি যা জানতে চাইবো তার সত্য জবাব দেবে কিনা?
-হা দেবো, বলেন।
-তুমি সব ধরনের নেশা করো কতোদিন ধরে?
-আব্বা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যেদিন প্রথম আপনাদের কাছে রত্নার কথা বলেছিলাম আর সেদিন আপনারা সরাসরি ওকে ভুলে যেতে বলেন। তারপরেও কয়েকদিন বলার পরেও যখন মেনে নিলেন না ঠিক তখন থেকেই আমি আপনাদের না জানিয়ে নেশার মধ্যে চলে যাই। আমি মদ সহ সব ধরনের নেশার জিনিষ পান করতাম নিয়মিত। আমি একটা মেয়ের জন্য আপনাদের না জানিয়ে এই অন্যায়টা করেছি। আমায় ক্ষমা করে দেন আব্বা। এসব বলে বাবার দিকে তাকালাম ওনার চোখে পানি!
-কি হয়েছে আব্বা, কাঁদছেন কেনো?
-আমরা তো তোমায় কোনকিছুর অভাব দেইনি কখনো। শুধু ঐ একটা মেয়েকে ভুলে যেতে বলেছিলাম। কারন মেয়েটির পরিবার সম্পর্কে জানতাম। ওরা ভালো মনের মানুষ না, স্বার্থপর। আর তুমি আমাদের না বলেই এমন জঘন্য পথ বেছে নিলে? জানো এতে কতো বড় ক্ষতি হয়েছে তোমার?
-কি হয়েছে আমার? বলেন আব্বা।
-এই নাও, রিপোর্ট টা পড়ে দেখো। আমি কিডনি নষ্টের ব্যপারটা রিপোর্ট না দেখেই ডাক্তারকে বলতে বলেছিলাম। কারন এতে তুমি বুঝতে পারবে কে আসল ও কে নকল ভালোবাসার মানুষ। কে তোমার আপন, কে তোমার পর। হা বুঝতেও পেরেছো এখন। কিন্তু আসল রিপোর্টটা পেয়ে আর বলতে পারছে না বাবা। বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। আমি রিপোর্ট টা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম আমার এক ধরনের ক্যান্সার হয়েছে। তবে সময়মতো এর সঠিক চিকিৎসা করালে এই ক্যান্সার নাকি ভালো হতে পারে। তার আগে একটা অপারেশন করাতে হবে। প্রচুর টাকা লাগবে এই চিকিৎসায়। তারচেয়ে বড় কথা এই অপারেশনে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
-রিপোর্ট পড়ে খুব বেশি অবাক লাগছে না আমার। কারন বেশ কিছুদিন হলো আমার কেমন জানি লাগে। মাঝে মধ্যে ভিতরে কষ্ট হয়। কখনো কখনো গলা থেকে মুখ দিয়ে রক্ত আসে। কখনো আবার মাথা ঘুরে পড়ে যাই। আবার কখনো ভিতরের যন্ত্রনায় একা একা লুকিয়ে কাঁদি। কাউকে বলতে পারিনি। বুঝতে পারতাম আমার ভিতরে বড় কোন সমস্যা হয়েছে। কিছুদিন হলো তাই সব নেশা বাদ দিয়ে শুধু সিগারেট টানি। তাও খুব বেশি না। আমি ভেবেছিলাম সব ছেড়ে দিয়ে সবার অজান্তে নিজের চিকিৎসা করাবো। বাবা আমার কাধে হাত রেখেছে।
-আমি ব্যপারটা এখন না বললেও পারতাম খোকা। কিন্তু ঘরে একটা মেয়েকে এনে দিয়েছি। মেয়েটা খুবই ভালো। আমি জানি তুমি ওকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নাওনি। আমি চাই আল্লাহ্ যতোদিন তোমায় ভালো রাখে ততোদিন মেয়েটাকে আপন করে নাও। আল্লাহুর কাছে নামাজ পড়ে দোয়া করো তোমার রোগটা যেনো ভালো করে দেয়। আর তোমার চিকিৎসা আমি করাবো। যতো টাকা লাগে লাগুক। প্রয়োজনে সব জমি বিক্রি করে দেবো।
-হা আব্বা। রিক্তার জন্যই কষ্ট হচ্ছে। মাত্র কয়টা দিন হলো ও আমাদের বাড়িতে এসেছে। অথচ কতোটা ভালোবাসে আমাকে ও।
-হা খোকা।
আর এই ব্যাপারটা তোমার মা বা পরিবারের অন্য কাউকে জানাবে না। আজকেই তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো। তবে তোমার যে ক্যান্সার হয়েছে এটা পরিবারের কাউকে জানানো দরকার নাই। সবাই এই নিয়ে টেনশনে থাকবে। শুধু কিডনি নষ্টের ব্যাপারটা মিথ্যা এটাই বাড়ির লোক জানবে। ঐ রত্না নামের মেয়েটাকে ডিভোর্স না দেয়া পর্যন্ত এটা সবাইকে জানানোর দরকার নাই। বাড়িতে এসে দুইদিন পরই কোর্টে গিয়ে আগে রত্না নামের মেয়েটাকে মুক্তি দিলাম। ডিভোর্স দিলাম ওকে। আজ আমি চিন্তা মুক্ত। আজকেই আমি আমার বউ রিক্তাকে বউয়ের অধিকার দেবো। এখনো আমাদের স্বামী স্ত্রীর মিলন হয়নি। আজকেই হবে আমাদের নতুন করে বাসর রাত। রাত আটটা বাজে। খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে ঢুকলাম। একটুপর রিক্তা এলো ঘরে। ওকে কাছে ডাকলাম…
-আজকে বউ সাজবে তুমি।
নিজ হাতে তোমায় সাজিয়ে দেবো আমি। আজকে হবে আমাদের বাসর রাত। রিক্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে আমার কাছে আসে। আমি ওকে নিজ হাতে শাড়ি, গয়না পড়িয়ে বউ সাজাচ্ছি। ও হাসছে মিটিমিটি। সাজানো শেষে ওকে বললাম তুমি খাটে গিয়ে বসো। খাটে বসে আছে আমার লক্ষি বউ রিক্তা। আমি উঠে ওর ঘোমটা সরিয়ে দিলাম। একটা পরিকে দেখতেছি আমি। কি সুন্দর লজ্জাময় হাসি ওর।
-এই রিক্তা…
-হুমম বলো…
-আমি তোমায় খুব কষ্ট দিয়েছি এই কয়টা দিন তাইনা?
-নাহ আমি কষ্ট পাইনি।
গভীর রাতে যখন তুমি উঠে আমার কপালে একটা চুমু দিতে আমি তখন ঘুমের ভান করে থাকতাম। তখন আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যেতো। যখন ঘুমের মধ্যেই তোমার ঐ বুকে জড়িয়ে নিতে তখন ই বুঝতাম এই লোকটা অনেক ভালো। শুধু আমায় বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছে না পরিস্থিতির কারনে। তোমার ভালোবাসার মানুষ যদি তোমার হতো তবে সত্যিই আমি সব মেনে নিতাম। এমন একটা মানুষের ঘরে চাকরানী হয়ে থাকলেও সুখ। এই কথাগুলো বলে রিক্তা আমার বুকে মাথা রাখে। আমি ওকে বুকের উপর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি। ওর মুখটা আমার মুখের সামনে। কিছুটা লজ্জাময় mহাসি দিয়ে আমায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। আমি ওর মিষ্টি ঠোটের দিকে তাকাই। ও যেন আমার চাহনি আর চাওয়াটা বুঝে ফেলে।
আমাকে পাগল করে দিতে থাকে। আমিও আমার স্ত্রীকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিতে থাকি। অবশেষে শুরু হয় আমাদের নতুন মিশন। ভোরে উঠে চেয়ে আছি রিক্তার ঘুমময় মুখের দিকে। আগামিকাল আমার অপারেশন। হয়তো হতে পারে এটাই আমার শেষ দিন। তাই এই সত্যটা ওকে জানানো দরকার। ওকে ধীরে ডাক দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলাম। ধীরে ধীরে ওকে সব খুলে বললাম। ও আমায় আরেকটু জড়িয়ে ধরে বলে তোমার কিচ্ছু হবেনা। আমি নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করবো। আল্লাহুর কাছে আমার স্বামীর প্রান ভিক্ষা চাইবো। তুমি ঠিকই সুস্থ হয়ে যাবে।
-হা পাগলি তাই যেন হয়। আল্লাহ্ আমাকে ভালো করলে আমরা তার দেখানো পথেই সংসার শুরু করবো। আমার “আপন মানুষ” কে বুকে নিয়ে নতুন করে জীবন সাজাবো।
সমাপ্ত।