ভালোবাসি

ভালোবাসি

চারতলায় থাকি। আমার বাসার পাশের বাসার চারতলায় একটি জীব থাকে। নাম জিনাত। মানুষ বললাম না কারণ আমার মনে হয় মানুষের মতো তার কোনো ফিলিংস্ই নেই। মেয়েটাকে আল্লাহ এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে যেকোনো ছেলেই তার উপর ক্রাশ খেতে বাধ্য। আমারও তাই। তাই লেগে পড়লাম তার পিছনে। তার জানালা আর আমার জানালা একই পাশে হওয়ায় প্রতিদিন তাকে ২-৩ বার দেখার সুযোগ হয়।

জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে সে। অপলক দৃষ্টিতে তাকে আমি দেখছি। একটা হাই ও দিলাম। সে দেখেও দেখল না। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আবার চলে গেল। আমার দিকে একবারও তাকাল না। এভাবে কেটে গেল কয়েক দিন। সে জানালার পাশে আসে, আমি তাকে হাত নেড়ে স্বাগত জানাই, সে দেখে না (আসলে কিন্তু দেখে। মেয়েদের চোখ সামনে দুইটা, পিছনে একটা)। ইদানীং মনে হয় বেশিই করে ফেলছি। সে আর জানালার পাশে আসে না। কিন্ত তাকে না দেখে আর কতদিন থাকা যায়! তাই, ঠিক করেছি কাল থেকে তাকে প্রতিদিন কলেজে এগিয়ে দিয়ে আসব (মানে পিছু নেব)।

তার বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত সে বেরোবে। এইতো বেরিয়েছে। বাহ্! কলেজ ড্রেসে তাকে ভালোই লাগছে। ধীরে ধীরে তার পিছনে হাটছি। সে কিছুক্ষণ পর পর পেছনে তাকাচ্ছে, বিনিময়ে তাকে আমি মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিচ্ছি। এভাবে ৫-৬ দিন তাকে ফলো করার পর একদিন সে পিছনে ফিরে দাড়িয়ে পড়ল। আমিও কম না। কাছে গিয়েই শুরু করলাম,

– মনে হচ্ছে আমার জন্যেই অপেক্ষা করছেন। আমার সাথে পরিচিত হওয়ার খুব ইচ্ছে? এনিওয়ে, আমি সোহান।
– – ফালতু আলাপ রাখেন। আমার পিছনে ঘুরঘুর করেন কেন?
– আমাকে নিয়ে এটা আপনার কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। প্রতিদিন এই সময় একটা বিশেষ কাজে আমাকে এদিকে আসতে হয়।
– – কি কাজে আসেন আমার ভালো করেই জানা আছে। নেক্সট টাইম যদি এদিকে আসতে দেখি তাহলে খবর আছে।
– আপনি কী করে ভাবলেন আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে আপনার মতো মেয়ের পিছনে ঘুরবে? এসব আজগবি চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিন।
— হ্যা, দেখেই বুঝা যায় আপনি যে একটা বখাটে ছেলে। কাল থেকে যদি আমার পিছনে আসেন, তাহলে আমি ভাইয়াকে বলে আপনার হাত -পা ভাঙ্গার ব্যবস্থা করে দেব।
– আপনার ভাইয়াকে দেখে এতটা অভদ্র মনে হয় না যে উনি আমার হাত-পা ভেঙ্গে দিবেন।

মেয়েটা আর কিছু না বলে রাগে হনহনিয়ে চলে গেল। আমিও তার পিছু পিছু যেতে লাগলাম আজকে বিকালে সে জানালার পাশে এসেছে। আমিও যথারীতি তাকে হাই দিলাম। বিনিময়ে সে-ও হাত নাড়ল। তবে হাই নয় চড়ের ইঙ্গিত দিল। তবু এই ভেবে ভালো লাগছে যে সে আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে। ভূতের মতো ফুলে থাকার চেয়ে তবু এটা ভালো। পরদিন আবার তার সাথে দেখা।

– হ্যালো, এবার পিছন থেকে নয়, সামনে থেকেই ফলো করছি।
– – দেখুন………
– দেখেছি , আপনার চোখগেলো অনেক সুন্দর।
– – আমি জানি, আপনাকে বলতে হবে না।
– এনিওয়ে, আমি সোহান।
– – আমার নামটা এতোদিনে নিশ্চয় জেনে নিয়েছেন। তাই বলার আর প্রয়োজন বোধ করছি না।
– আজকে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে?
– – আমার সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে খাতির জমিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। চেহারা ভালোই আছে, নতুন মেয়ে ধরেন; সহজেই পটাতে পারবেন।
– আমার সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ জেনে ভালোই লাগল। তবে আপনার বিএফ আছে একথা আগে বললে হয়তো আপনার পিছনে এতো সময় নষ্ট করতাম না, আপনাকে বিরক্তও করতাম না।
– – ফালতু আলাপ করবেন না। আমার বিএফ আছে একথা আপনাকে কে বলল!!
– ওও, নেই। তাহলে চিন্তা করবেন না, যেভাবেই হোক আপনাকে আমি পটাব।
– – আপনাকে জুতার বারি দিয়ে আমার জুতার অমর্জাদা করতে চাই না।

এই বলেই সে চলে গেল। উল্টা পাল্টা যাই বলুক, মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারছি তাতেই শান্তি। বুঝতে পাচ্ছি এই মেয়ে সহজে পটবে না। তার সাথে আগে বন্ধুত্ব করা দরকার।দেখা যাক বন্ধু হতে পারি কি না। অনেক কষ্টে তার ফেসবুক আইডি খুজে বের করেছি। ফ্রেন্ড রেকুয়েস্ট দেওয়ার ২দিন পরে আমাকে একসেপ্ট করল। সুন্দরী মেয়েরা তো নিজেদের সেলিব্রেটি ভাবে। এফবি তে তাদের একটাই চাওয়া ; লাইকস্ এন্ড কমেন্টস্। এজন্যেই মনে হয় সে আমার রিকু একসেপ্ট করেছে। একসেপ্ট করার সাথে সাথেই তাকে মেসেজ করলাম।

– হাই
– – হ্যালো
– চিনতে পেরেছেন?
– – প্রোফাইল ঘুরে এসে তারপর বলি।
– ওকে।
– – ওও, আপনি!
– আগে জানলে ফ্রেন্ড বানাতেন না?
– – অবশ্যই না।
– ফ্রেন্ড যখন বানিয়েই ফেলেছেন তো রিয়েল লাইফে ফ্রেন্ড বানাতে আপত্তি আছে?
– – হ্যা, আছে। কেননা, আপনার উদ্দেশ্য আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করা নয়।
– আপনি সবসময় দুই লাইন বেশি বুঝেন।
– – ঠিক আছে, ফ্রেন্ড হব।
– ওকে, বাই। কাল দেখা হবে।
– – কালকেও কি আমার পিছনে হানা করবেন?
– হুম, তবে বন্ধু হিসেবে। প্রপোজ করার কোনো ইচ্ছে নেই।
– – মনে থাকে যেন।
– অকে।
– – অকে বাই।
– বাই।

তার সাথে এফবি তে নিয়মিত কথা বলা শুরু করেছি, তবে তার সামনে কম যাই। মেয়েটা ভীষণ চালাক। বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে যখন তাকে আমি তুমি করে বলি, সে তখন আরও একধাপ এগিয়ে আমাকে তুই করে বলে। কাছে যাওয়ার বিন্দু মাত্র সুযোগও দেয় না। সুন্দরী মেয়েদের মুখ থেকে তুই ডাক কোনো ছেলেরই কাম্য নয়। আর আমি তো তাকে ভালোবাসি। কেমনে আমি এই ডাক সহ্য করি! তাই বয়সের পার্থক্যের কথা বলে তাকে তুই করে ডাকতে বারণ করি। নিরূপায় হয়ে সে আমাকে তুমি করে বলে। আমার বয়স এতো বেশি হয় নি যে আমাকে আপনি করে বলতে হবে। তাই, তাকে প্রথমেই আপনি করে ডাকতে না করেছিলাম।

মেয়েটা ইদানীং আমার কথার ভালোই মূল্য দেয়। তাকে দেখা করতে বললে দেখা করে, আমার সাথে ঘুরতে যায়, পার্কে গিয়ে ফুচকা খাই। অবশ্য বাসার কাছে তার কোনো ফ্রেন্ডও নেই। এজন্যেই আমি একটু প্রাধান্য পাই।
বন্ধু হিসেবে তার সাথে ৬মাস কাটিয়ে দিলাম। আমি এখন তার বেস্ট ফ্রেন্ড। সে এখন আমার উপর অনেকটা নির্ভরশীল। তাকে প্রপোজ করার এটাই সময়। ভাবছি কালই তাকে প্রপোজ করব। সময় থাকতে কাজ না করলে পরে পস্তাতে হবে। নদীর ধারে পার্কের একটি বেঞ্চিতে বসে আছি দুজন। আর বাদাম চিবুচ্ছি।

– আচ্ছা জিনাত, কেমন ছেলে তোমার পছন্দ?
– – তোমার মতো।
– তাই! তাহলে প্রপোজ করব?
– – আসলে ছেলেদের নিয়ে আমি এখনো তেমনভাবে ভাবি নি।
– জিনাত!
– – হুম …
– একটা সত্যি কথা বলব?
– – বলো।
– আমি তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবি।
– – এটা ঠিক না। তুমি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছো।
– সত্যিই তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। তুমি কিছু বলো।
– – আমার কিছুই বলার নেই। তার হাতটা ধরে বললাম,
– প্লীজ, কিছু একটা বলো।
– – হাত ছাড়ো বলছি।
– তুমি আগে উত্তর দাও। ও আমাকে একটা চড় মারতে চাইল। কিন্তু আমি তার হাত ধরে বললাম,
– থাক, গালে হাত বুলাতে হবে না। তোমার উত্তর পেয়ে গেছি।

সে আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি সেখানেই বসে রইলাম। বসে বসে নিজের টাকায় কেনা বাদামগুলো হালাল করছি।  ৭ দিন হয়ে গেল জিনাতের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে জিনাতকে দেখি মাঝেমাঝে আমার জানালার দিকে আনমনে চেয়ে থাকে।  জিনাত ইদানীং আমাকে ফলো করছে। আমি জানালার পাশে আসলে আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। আমি তাকে এখন না দেখার ভান করি। আসলে ওইদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম, তাই অনেক অভিমান জমে আছে।  অনেকক্ষণ ধরে ঘরে বসে আছি। যাই একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। রাস্তা দিয়ে উদাসীন হয়ে হাটছি। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি জিনাতও আমার পিছনে হাটছে আর মৃদু হাসছে। না থেমে আমিও হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর সে পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরে হাটতে লাগল। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, ভালোবাসি। আমিও মুচকি হাসছি। কী বলব বুঝতে পাচ্ছি না। তবে তার হাতটা ধরে ঠিকই হাটছি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত