এক মুঠো কদমফুল

এক মুঠো কদমফুল

অদিতি জানালার পাশে বসে বৃস্টি দেখছে….বৃস্টি তার ভীষণ প্রিয়….এমন একটা সময় এমন ছিল যে বৃস্টি হচ্ছে আর অদিতি ভিজবে না এটা হতেই পারে না…..কিন্তু আজ কাল বৃস্টি তার কাছে বড় বেশি এক ঘেয়ে লাগে…..

তখন সবে অদিতি ফেসবুক ব্যবহার করতে শুরু করেছে…….অদ্ভুত লাগে অজানা অচেনা কত মানুষ এর সাথে পরিচয় হয়…..প্রায় রাত জেগে ফেসবুক চালায় আর নতুন কিছু শিখে…..এভাবে একদিন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এ দেখে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এসেছে…..মালিকের নিজের কোন ছবি নেই কিন্তু অনেক সুন্দর একটা বাচ্চার ছবি দেয়া যা দেখে এড না করে পারলো না……

জীবন হয়ত এমনই চলার পথে অনেক কিছু গড়তে সেখায় আবার তা ভুলতেও সেখায়….অদিতি সেই সুন্দর বাচ্চাটার ছবি রোজ একবার করে দেখত মন খারাপ থাকলেও দেখত কারন ছবিতে বাচ্চাটা এতো বেশি কিউট যে অদিতির মন ভাল হয়ে যেত…..কিন্তু কোন দিন বাচ্চা ছবি পরিধান করা মালিকের সাথে কথা হয় নি……

আইডিটা এড করার পর কখনো কোন সময় অনলাইন এ দেখেনি……..প্রায় মাস খানেক পর যখন অদিতি প্রায় ভুলেই গেসিল আইডি টার কথা মাঝ রাতে আইডি টার বাচ্চাটার ছবি দেখছে হঠাত চোখ আটকে গেলো তার নামটার পাশে সবুজ একটা বৃত্ত আর তা দেখে অদিতির ঠোঁটের ফাকে মুচকি হাসি…….সে কিছু না ভেবেই নক করল……কিন্তু অনেকখন কেটে গেলেও কোন উত্তর এলো না ওপাশ থেকে……অদিতি মন খারাপ করে ঘুমোতে গেল আর নিজেকে হাজারটা গালি দিতে লাগলো যে কেন নিজে থেকে বেহায়ার মত কথা বলতে গেল…….

শুদ্ধ অনেকদিন হল ফেসবুক আইডিটা খুলেছে কিন্তু কখনো বসে না বসলেও অনলাইন হয় না…….আজ হঠাত কি মনে করে বসলো আর সাথে সাথে একটা মেয়ে অদিতি হাসান তাকে নক করল……..কিন্তু কে সে তা মনে করতে পারছে না…..শুদ্ধর আইডি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘ কত দিন চালিয়েছে হয়ত সে তখন মেয়েটিকে এড করেছে…..এসব নিয়ে শুদ্ধ মাথা ঘামাল না ল্যাপটপ টা অফ করে শুতে চলে গেল…..

কিন্তু ঘুম আসছে না শুদ্ধর কখনো তো এমন হয় না….আজ কি হল….??? আবার ফেসবুক এ বসল এবার অদিতি হাসান এর আইডি টা খুব মনোজগ দিয়ে দেখল……মেয়েটা ওর থেকে বছর তিনেক ছোট…..মেয়েটার ছবি দেখে অনেকক্ষণ চোখ সরাতে পারলো না……কিছু একটার জন্য চোখ আটকে যায়……কেন জানে না সে শুধু এটা বুঝতে পারছে যে মেয়েটার চোখেরর গভীরতার মায়া সবাইকে সংক্রমিত করে ফেলে…….আর আজ তাকে সংক্রামিত করলো কিন্তু এরপর……

এরপর

এর তাদের দিন স্বাভাবিক ভাবেই যাচ্ছিল……কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখন যখন শুদ্ধ অদিতিকে সামনা সামনি দেখল আর পুরপুরি ভাবে অদিতির ওই চোখের গভীর এ নিজেকে হারিয়ে ফেলল…..সেদিন ছিল শ্রাবণ মাসের কোন একদিন……শুদ্ধ একটু কাজে বের হয়েছিল কিন্তু এমন বৃস্টি হবে তা বুঝতে পারেনি……আশেপাশে একটা আশ্রয় খুঁজে বৃস্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলো……..হঠাত দেখলো রাস্তার অপাড়ে দুতলা বিল্ডিং এর ছাদে এক মেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃস্টি দেখছে…….খুব ভালভাবে খেয়াল করে মনে হল আগে কোথাও দেখেছে…….অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শুদ্ধর মনে পড়ল যে সে যাকে এখন দেখছে সে আর কেউ নয় অনেকদিন আগে রাতে ফেসবুক এ নক করা সেই মেয়েটি অদিতি হাসান…….

রাতে শুদ্ধ অদিতিকে অনলাইন এ নক করলো…..অদিতি একটু অবাক হল কারন প্রায় মাস খানেক আগে সে শুদ্ধ কে নক করেছিল আর বেশি অবাক হল ম্যাসেজটা দেখে কারন সেখানে লেখা ছিল
কাজল কালো আখির মাঝে
ভালবাসার স্বপ্ন সাজে
দূর দেশের কাজল আখি
ছুঁয়ে গেলে মন প্রজাপতি
রংগিন প্রজাপতি আজ খুঁজে ফেরে সেই আখি
যাহার মাঝে নিজেরে আজ হারায়েছি …..
অদিতি অনেক আগে থেকেই কাজল দেয় কিন্তু এভাবে কেউ কখনো বলে নাই…..একটু অবাক হয়ে সে উত্তর দেয়….এভাবে চলতে থাকে দুজনের রাত জাগা আর কথার মালা গাথা……

এভাবে অদিতি আর শুদ্ধের মাঝে পরিচয় তা এক সময় পরিণত হল পরিণয়ে…….যেহেতু অদিতির পড়া শেষ এর পথে আর শুদ্ধ ও ভাল একটা অবস্থায় আছে তাই আর দুই পরিবার রাজি না হওয়ার কোন কারনই থাকলো না………

বিয়ের পর ছয়-সাত মাস যেন স্বপ্নের মত ছিল……..কিভাবে দিন গেছে অদিতি শুদ্ধ কেউই বুঝলো না………এর মাঝে আবার শ্রাবণ মাসের বৃস্টির সময় হয়ে গেল……….শুদ্ধ অদিতিকে সারপ্রাইজ দিবে বলে আজ তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসল……….বাসায় এসেই অদিতিকে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হতে কারন আজ তারা ঘুরতে যাবে……….যদিও প্রায়ই তারা লংড্রাইভে যায় আজকের দিনটা শুদ্ধ এর জন্য স্পেশাল কারন এই দিনেই সে অদিতিকে দেখে হাত-পা বেধে প্রেমে পরে গেছিলো……….

আজ শুদ্ধ একদম ঢাকা শহরের বাইরে চলে আসছে……..অদিতি কিছুই বুঝচ্ছে না শুদ্ধ আজ বাচ্চাদের মত অদিতির সাথে বৃস্টিতে ভিজচ্ছে……….অদিতিও ভিজচ্ছে হঠাত অদিতি রাস্তার ওপাড়ে একটা কদম গাছ দেখতে পেল……….গাছটা কদমফুলে হলুদ হয়ে গেছে……..শুদ্ধকে দেখাল অদিতি শুদ্ধও বউকে আরো বেশি খুশি করতে চলে গেল রাস্তার ওপাড়ে কদম

একটা কদম গাছ দেখতে পেল……….গাছটা কদমফুলে হলুদ হয়ে গেছে……..শুদ্ধকে দেখাল অদিতি শুদ্ধও বউকে আরো বেশি খুশি করতে চলে গেল রাস্তার ওপাড়ে কদমফুল আনতে………..এই কদমফুল আনাই কাল ছিল শুদ্ধের জন্য……..এক মুঠো কদমফুল নিয়ে তাড়াহুড়ো করে শুদ্ধ যখন রাস্তা পার হচ্ছিল তখন একটা ট্রাক শুদ্ধোর বুকের উপর দিয়ে চলে যায় আর তারসাথে অদিতির পা দুটোও নিয়ে যায়………..

এরপরের ঘটনা খুবই ছোট শুদ্ধকে হাসপাতালে নেয়া হল ডাক্তার শুদ্ধকে সাদা চাদরে ঢেকে দিল সবাই শুদ্ধকে নিয়ে গেল মাটি দিতে………….কিন্তু অদিতি সে তো এখন জীবিত লাশ………শুদ্ধকে নিয়ে যাওয়ার সময় অদিতি শুধু একটা কথাই বার বার বলেছে তাকেও জেন শুদ্ধোর সাথে কবর দেয়া হয়………….

কখন সন্ধ্যা হয়েছে কে জানে অদিতির রুমে আলো জ্বালানতে তার ধ্যান ভাংলো………..শুদ্ধ যাওয়ার পর এখন অদিতির এক মাত্র সংগী হুয়িলচেয়ার আর অতিতের ভাবনায় ডুবে থাকা কারন শুদ্ধ মারা যাওয়ার সময় অদিতির পা টা ট্রাকের নিচে পড়ে হারিয়েছে শুদ্ধকে বাঁচাতে গিয়ে আর গভীর শকে চলে গিয়ে কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে…………….এখন অদিতি খালি শুদ্ধের কাছে যাওয়ার অপেক্ষায়……………..

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত