এক্সাম শেষ করে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছি।
লম্বা হুইসেলে বাসটা জানান দিচ্ছে সে এসে পড়েছে তাই স্টপ অবধি থামতেই হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম বাসে।
একটাও সিট খালি নেই অনেকগুলা মানুষ ঝুলে ঝুলেই যাচ্ছে!
সাধারনত এই দুপুর টাইমে ভিড়টা এখানে বেশী হয় আর যাত্রীর বেশীর ভাগই হয় ছাত্র ছাত্রী।
হঠাৎ লক্ষ করলাম, বাসের মাঝ বরাবর একটা সিটে একটা মেয়ে বসে আছে পাশের সিটটা খালি, ভীঁড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম তার দিকে
:এক্সকিউজ মি
:জ্বি বলুন
:সাথে কি কেউ আছে?
:কেন বলুন তো?
:বসা যাবে?
এমন ভাবে “না” টা উচ্চারন করল যেন তাকে বিরক্তির সাগরে ডুব খাওয়াচ্ছি তাই আর কিছু বললাম না!
ভাবছি আর চুপচুপ দাড়িয়ে আছি, না এটাকে দাড়ানো বলা ঠিক হবে না বরং ঝুলে আছি বলাই বাহল্য!
আর এসব মেয়েদের সাথে কথা বাড়ানো উচিত নয় কারন এদের হালচালই ঝগড়াটে টাইপ!
বাস চলছে নিজ গতিতে! জানালার বাইরের প্রকৃতি যেন দৌড়াচ্ছে বিপরীত দিকে, ভালই লাগে পলকে পলকে স্থানের পরিবর্তন দেখতে!
:এই যে মিস্টার
মেয়েটি কাউকে ডাকছে ভেবে তাকালাম ওর দিকে।
মুখোশের ফাঁকে টলটলে চোঁখ জোড়া যে আমাকেই ইন্ডিকেট করছে সেটা ঠিক বোঝাই যাচ্ছে তবুও কনফিউশান কাটাতে প্রশ্ন ছুড়লাম….
:জ্বি, আমাকে বলছেন?
:হু আপনাকেই বলছি, বসতে পারেন…
আজব মেয়ে তো!অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি হঠাৎ এখন কেন বসতে বলছে, কনফিউশন থেকে উঠতে আবারো প্রশ্ন…
:এখন কেন?
:বসলে বসেন না হয় এত প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি না!
এদিক ওদিক না তাকিয়ে বসে পড়লাম! লোকাল বাসে আরেকটি অভিজ্ঞতার জন্ম হল…
“স্লিম মেয়েদের সাথে বসলে জোড়ালো সিটের বেশীর ভাগটাই দখল করা যায়”
আর বেশী কিছু ভাবা ঠিক হবে না তাই পকেট হতে ছৌ মেরে ফোনটা বের করে চাপাচাপি শুরু করলাম!
ফেবু গরম করছি, এটাকে মাঝে মাঝে বেকারদের বন্ধু মনে হয় অপরপক্ষে চাকুরি জীবীদের শত্রু!
:মিস্টার, উঠে দারাবেন দয়া করে!
:কেন বলুন তো?
:আমি নামব তো তাই
:ওহ
নিশ্বাসটা এবার একটু জোড়েই নিলাম কেননা রাগী মেয়েদের দেখে বিশ্বাস নেই,
যে কোন সময় একটা অঘঠন গঠাতে পারে যেমন কপালে থাকলে এটুকু আবার দাড়িয়ে যেতে হত!
মেয়েটি নেমে গেছে! আমিও নামব সামনের স্টপেই তাই নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলাম।
রাতে পড়া শেষ করে ফেবু গরম করতে এসে দেখি “রাগুনী বুড়ি” নামক আইডি থেকে মেসেজ আসছে,
“কারো থেকে হেল্প নিলে তাকে সাধারনত ধন্যবাদটা দিতে হয়”
মেসেজটা দেখে কিছুক্ষনের জন্য ভাবুক রূপ নিলাম তবুও কোন উত্তর জুটল না মাথায়
:মানে?
:বাসে তো বেশ আরমেই বসে আসলেন পাশের সিটটায় এবার বুঝতে বাকী নেই আর। আইডিটা সে তখনই দেখে নিয়েছে…
:সরি, আসলে তখন বিভিন্ন ভাবনার চাপে ঠিক খেয়ালই ছিল না
:তো এখন খেয়াল হয়েছে কি?
:জ্বি থ্যাংকু
:হু, আর শোনেন ফোনটা একটু কম দেখবেন
:কেন বলুন তো?
:তখন দেখলাম একটু হলে তো ফোনের ভিতরেই ঢুকে যেতেন
:হু
:আরেকটা কথা
:জ্বি বলুন
:মেয়েদের দিকে ওভাবে তাকাবেন না এতে মেয়েটির মনের অবস্থারও পরিবর্তন হতে পারে!
ভারী কথাটা পুরোটুকু যেন মাথার উপর দিয়ে গেল আর জানান দিল সব কথা বুঝতে নেইরে পাগলা!
তবুও জিজ্ঞাস করলাম
:কি বললেন? ঠিক বুঝলাম না
:এত বুঝতেও হবে না, টাটা ঘুমাব….
তারপর এত শত টেক্স করেও কোন রিপ্লে জুটেনি হয়তো আমাকে ভাবনায় গড়াগড়ি খেলিয়ে উনি ঠিকই ঘুম সাগরে ডুব খাচ্ছেন!
পরদিন সকালে আবার মেসেজ
:কি মিস্টার, এত উতালা কেন?
:অর্ধেক বুঝতে পারা কথা গুলো পুরোটা না বোঝা পযন্ত তো শান্তি নেই
:তো কি বুঝতে চান?
:যা বুঝাতে চেয়েছেন
:আচ্ছা, আপনার কি রূপন্তী নামের কাউকে মনে আছে?
:রূপন্তী
(নামটার সাথে পুরোনো কিছু স্মৃতি জড়ানো! সর্টকাটে বলতে গেলে ছোট্ট একটা চিরকুট দিয়েছিলাম।
একই ক্লাসে পড়ুয়া রূপন্তী মেয়েটাকে তারপর তার চৌদ্দগুষ্টি কে জানিয়ে দিয়েছিল মেয়েটি ।
এরপর যা হওয়ার তাই হয়েছিল মা বাবার বকানী আর স্যারের প্যাদানী!)
:কি হল মিস্টার?
:জ্বি
:মনে পড়ছে, অবশ্য মনে পড়ারই কথা আমাকে না হলেও স্যারের দেওয়া পিটানি গুলোকে
:হু পড়ছে তো, তুমি রূপন্তী?
:না
:তো কে?
:রূপন্তীর কেবলা ভূত, আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও তো….
এ মেসেজটা যেন আমার চোঁখের আকার দিগুন করে দিল! আবার কি মেয়েটি ফাঁসাতে চাচ্ছে
:কেন নাম্বার দিয়ে কি হবে?
:তুমি কি ভয় পাচ্ছ? আচ্ছা সমস্যা থাকলে লাগবে না
:ধুর, ভয় কেন পাব! ০১৭৬০……
সাহস যেন বেড়ে গেছে তাই দ্রুত স্পিডে নাম্বরটা দিয়েই দিলাম! কয়েকটা সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই কল
:এখনো আগের মতই ভিতু আর অগোছালোই রয়ে গেছ
:হু, গুছানোর কেউ নেই তো
:খুঁজে নাও
:ভয় হয়
:পিটানি খাওয়ার…..
কথাটা বলেই হেঁসে কুঁটি কুঁটি হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা!
সে এক অস্থির হাসি, মনকে আবোল তাবোল ধরানোর জন্য এত টুকুই যথেষ্ট!
:না, বউটা যদি বেশী রাগী হয়
:রাগের আড়ালে তো ভালবাসাও থাকতে পারে
:তাই নাকি
:খুঁজে দেখো
:কি??
:ধুর গাধা, এজন্যই এখনো কেউ জুটেনি তোমার
:সেটাই ভাল ছিল
:কেন?
:সেই ফাঁকা স্থানে হয়তো আজ রূপন্তি কে জুটেছে আবার
:কিইইইই! দাড়াও আব্বুকে আবার বলে দিচ্ছি
:রূপন্তী, এত শখ কেন বিয়ে করার?
:আজব, আমার কই শখ হল?
:তো এত তাড়াতাড়িই বাবাকে বলতে চাচ্ছ যে!
মেয়েটা আবারো হেঁসেছে সেই পুরোনো চুন্নির বেশে এক মহা মন চুন্নির বেশে!
:ভালই কথা শিখছো দেখি
:তুমিও হাসিতে মায়া জড়াতে শিখছো দেখছি
:আসছেন আবারো সেই পিচ্চি কবি কবি ভাবওয়ালা
:পিচ্চি নয় বলো এক যুবক কবি
:হইছে হইছে বুইড়া কবি যেন কোথাকার…
আবারও হাঁসছে আমাকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য হয়তো কিন্তু সে কি জানে তার সেই প্রথম হাসিতেই পুরোটা আমি জিম্মি হয়ে আছি!
চলছে ভালই আমাদের সেই পুরাতন প্রেমের নতুনত্ব কাহিনী, জমছে ভালই রাতের তাঁরায় তাঁরায় কথা বিলানো!
ছাঁদের কোনায় ফুলের টবটায় দিন রাত্রী ভালবাসা জমানো!
হাওয়ায় হাওয়ায় চলছে রটানো ভবিষতের গল্পের ঘুড়ি উড়ানোর!!
চলতে থাকুক আমাদের ভালবাসা নামক গাড়ী দুলাইনে পাশাপাশি আবারো!