আবির মামার বাসার সামনে এসে থমকে যায়! প্রায় ২ বছর পর মামার বাড়িতে এসেছে আবির। ২ বছর আগে ছিলো টিনের ঘর। এখন দেখছে এখানে বিশাল বিল্ডিং। মা অবশ্য বলেছে যে তোর মামা বাড়িঘর ঠিক করেছে। কিন্তু টিন থেকে বিল্ডিং হবে তা তো জানেনা। গেইট বাড়ির ভিতর থেকে বন্ধ। কাউকে দেখাও যায়না। আবির কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে তবু কাউকেই আসতেদেখেনা। আবির মনে মনে রাগ করে ভাবে বাড়িতে ফিরে যাই। আবার ভাবে মা কতোদিন সাধা-সাধির পর পাঠিয়ে দিলো… বাড়ির সামনে এসে কেমনে ফিরে যাই? ডাকা-ডাকির অভ্যাস না থাকা সত্বেও বাধ্য হয়ে ডাক দেয় এই সুপ্তি আছিস নাকি রে? সুপ্তি হলো আবিরের মামাতো বোন। পুরো নাম ইসমত আরা সুপ্তি একটুপর গেইট খুলে উকি দেয় রত্না ভাবি। (সুপ্তির একমাত্র ভাইয়ের বউ)
-সাহেব তাইলে বেলকুচির রাস্তা খুঁজে পাইছেন? এই বলে হেসে ওঠে ভাবি…
-হুম। কেমন আছেন ম্যাডাম?
-ভালো আর থাকি কেমনে? দেবররাই খোঁজ খবর রাখেনা। তো তুমি কেমন আছো আবির?
-রাখে আল্লাহ্ মারে কে? তা ম্যাডামকে কি ভাইয়া দেখেনা?
-তার দেখা তো শুধু রাতে… দিন হইলেই উদাও।
-তবে এখনো পাল্টেনি ভাইয়া?
-না রে ভাই।
আচ্ছা পরে এসব আলাপ হবে আগে ভিতরে চলো তো এই বলে আবিরকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকে ভাবি। মামার রুমে নিয়ে যায় আবিরকে প্রথমে। মামি আবিরকে দেখেই ভ্রু কুচকে বলে~আব্বাজান তাইলে আমাদের বাসা চিনছো? মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবির মিষ্টির ব্যাগটা মামির হাতে দিয়ে বলে কেমন আছেন মামি?
-ভালো আছি বাবা। তুমি ভালো তো?
-হা ভালো।
-বাড়ির সবাই কেমন আছে?
-সবাই ভালো আছে। মামা চিটাগাং থেকে ফিরে নাই?
-না। একসপ্তাহ পর ফিরবে।
আচ্ছা পরে কথা হবে। আগে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো যাও। ভাবি আবিরকে নিয়ে বাথরুম দেখিয়ে দেয়। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে ভাবিকে বলে~সুপ্তি কই? ওর রুম কোনটা?
-ও তো কলেজে। একটুপরই আসবে। আসো ওর রুমে। খুব সুন্দর গোছানো রুম। কি নেই রুমের ভিতর? পুরো রুমটা দামি জিনিষপত্র দিয়ে সাজানো। তবে সবচে বেশি আছে দেয়ালের সাথে আবির এর ফটো। আবির আরো একবার অবাক হয়! অবশ্য আবির জানে সুপ্তি ওকে কতো ভালোবাসে। এ জন্য সুপ্তিরা মাঝে-মাঝেই যায় আবিরদের বাড়িতে। আর আবির এলো দুই বছর পর। এ নিয়ে আবিরের উপড় খুব অভিমান সুপ্তির। সুপ্তি আবিরকে খুব ভালোবাসে। আর এই বেপার ওদের দুই পরিবার ই জানে। এতে কারো বাধা বা অমত ও নেই। শুধু আবির ই এখনো সুপ্তি কে বলেনি আমি তোকে ভালোবাসি। ভাবি বিস্কিট, চানাচুর নিয়ে ঘরে ঢোকে।
-কি দেখো সাহেব? প্রিয়তমার পাগলামি?
-আচ্ছা ভাবি ও এতোটা পাগল কেনো?
-পাগলিটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। খুব মিস করে তোমায় এই বলে ভাবি পানি আনতে যায়। হঠাৎ ঘরে ঢুকেই দরজাটা আটকে দিয়ে ড্রেজ খুলতে থাকে সুপ্তি। আবির কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুলে ফেলেছে কিছু। আবির ঘরে আছে তা টের ই পায়নি সুপ্তি। ছোট টা খুলতে যাবে ওমনি চোখ যায় টেবিলের উপর। কে যেনো বসে আছে অন্য দিকে মুখ করে।
-এই কে রে আমার ঘরে? চিৎকার দিয়ে বলে আবির চোখদুটো বুঝে সুপ্তির দিকে ঘুরে তাকায়। সুপ্তি তাড়াহুড়া করে সব পড়ে নেয়। আবিরের দিকে অবাক কন্ঠে বলে~স্যার কি ভুল করে এসেছেন নাকি? আর ভুল করে আমার রুমেই ঢুকে গেছেন ভেজা বিড়ালের মতো আমার সব দেখতে।
-ঐ ছেমরি তোর কি দেখলাম রে? (আবির)
-ঐ বলদা আমি রুমে ঢুকলাম তখন তোর আওয়াজ কি খোয়ারে রাখছিলি? শালা চোর আমার সব দেখে ফেলেছে এমন সময় ভাবি দরজায় টোকা দেয়। কেরে সাহেব কি হলো? দরজা আটকে দিলেন যে? সুপ্তি দরজা খুলে ভাবিকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে বলে~ এই শয়তানটাকে ঘরে ঢুকতে দিছো কেনো?
-কেনো কি করছে সাহেব মেমসাহেব কে? এই মিষ্টার ফুল দেখেই ভ্রমর সেজেছো? দিছি বিস্কিট খেতে আর তুমি মধুর সন্ধানে গেছো?
-ভাবি আমি কিচ্ছু করিনি বা দেখিনি।
-বুঝছি কি করেছো দুজন দরজা আটকে
-এই এসব বলবে না। আমি কলেজ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকে সব খুলেছি। আর ঐ বদমাশ কিছু না বলে দেখেছে সব। এটুকুই হয়েছে। এর বেশি না। ভাবি হাসতেছে হা হা হা আবির মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে। মনে হয় অপমান বোধ করেছে। ভাবি বুঝতে পারে। একটু কড়া চোখে সুপ্তির দিকে চেয়ে বলে~নিজে বেতাল হয়ে এসে কিছু না দেখে বেহায়ার মতো কান্ড করেছিস। আর দোষ দিচ্ছিস আমার সরল দেবরটাকে। এই বলে আবিরের ঘা ঘেসে বসে ওর থুতনি ধরে বলে~খাও তো ভাই। ঐ কুটনির কথা বাদ দাও।
সুপ্তি আবিরের দিকে তাকায়। মনটা ভার করে আছে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় সুপ্তির। আবির এমন ছেলে না যদিও মজা করে বলছি কিন্তু ও রিয়েলি ভেবে কষ্ট পেয়েছে। সুপ্তি এগিয়ে যায়। আবিরের পাশের টেবিলে বসে ওর হাতের উপর হাত রাখে। সরি একটু মজা করতে গিয়ে বেশি করে ফেল্লাম। আসলে কতোদিন পর এসেছো তো সামলাতে পারিনি। ক্ষমা করে দাও। আবির তাকায় সুপ্তির দিকে ওর চোখে পানি টলমল করছে। একটু মজাতেই হেসে ফেলে আবার একটু কষ্টেই কেঁদে ফেলে। খুব বেশি ভালোবাসে আমাকে ও আবির হাতটা টান দিয়ে বলে~এতোদিন পর এসেছি কোথায় একটু খাইয়ে দিবি তা না নাটক সাজিয়েছিস। সুপ্তির চোখের পানি বের হয়ে যায়আবিরের হাতটা শক্ত করে ধরে। ভাবিও চোখটা মুছে বের হতে যায় ঘর থেকে। আবির ভাবির হাতটাও ধরে কি ম্যাডাম কই যান? তোমরা ভালোবাসা করো। আমি আম্মার সাথে তোমাদের খাবার রান্নায় যোগ দেই।
-এই আমরা একা খাবো নাকি? নিয়ে যাও কয়েকটা (সুপ্তি) ভাবি দুইটা বিস্কিট আর চানাচুর হাতে নিয়ে সুপ্তিকে চোখটিপ মেরে বলে~খা তোরা এখন আরামসে কতোদিন পর ভ্রমর এসেছে মধু খেতে। এই বলে বের হয়ে যায় ভাবি। যাওয়ার সময় দরজার পর্দাটা টেনে দেয়। আবির কথা বলছে না, খাচ্ছেও না। সুপ্তি ওর মুখে বিস্কিট দেয় আর বলে
-আমাকে খাইয়ে দেবে না? একাই খাবে?
-খা তুই না করছে কে?
-ঠিকাছে একাই খান আপনে আমি যাই এই বলে উঠতে যায় সুপ্তি। আবির আবার হাত ধরে টান দিয়ে কোলের উপর বসায় সুপ্তি কে।
-কি রে একটুতেই অভিমান? এই নে খা।
-নাও হয়েছে তো খাওয়া এবার ছাড়ো। ভাবি এসে আমাকে তোমার কোলে দেখলে তুমি আবার লজ্জায় লাল হয়ে যাইবা নে।
-ছাড়বো কেনো রে? সবাই জানে তুই আমাকে ভালোবাসিস। আর এজন্যই তো ভাবি তোকে আমার কাছে রেখে গেলো।
-আচ্ছা আবির আমি তো তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসি এই পৃথিবীর সবাই জানে।বাট তুমি আমায় এখনো বলোনি আমায় ভালোবাসো কিনা তুমি তো আসোনা আমাদের বাসায়। এজন্য ২/১ সপ্তাহ পর-পর আমি যাই তোমাদের ওখানে। কতোবার তোমায় বলেছি তোমায় ভালোবাসি। কই একবারো তো আমায় বলোনি তোকে ভালোবাসি। জানো তোমার-আমার পরিবারের সবাই জানে আমরা দুজন-দুজনকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি জানি.. তুমি কখনো আমার ভালোবাসায় সাড়া দাওনি। আমাকে বুকে জড়িয়ে বলোনি ভালোবাসি তোকে। কেনো? কেনো বলোনা তুমি আবির? আমি কি তোমার অযোগ্য?
-এই কথার উত্তরটা তোকে সামনে মাসের ১০ তারিখে দেবো।
-কেনো? তার মানে তুমি আমায় ভালোবাসোনা?
-বল্লাম তো ১০ তারিখে এই বলে আবির খাটে উঠে হেলান দিয়ে শোয়। সুপ্তি ও ওঠে। আবিরের গা-ঘেসে বসে। হাতটা আবিরের কাঁদে দিয়ে টেনে নেয় বুকের কাছে। আবির উঠে যেতে চায়। যেটা ও কয়েক বছর ধরে করে আসছে।
প্রতিবার সুপ্তি যখন ওকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে নিতে চায়, আদর করতে চায় তখনি কেটে পড়ে আবির। সুপ্তি হাতটা টান দিয়ে বুকের উপর ফেলে নেয় আবিরকে। জোর করার মতো করেই আষ্ঠে-পিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে। ঠোটের উপর আক্রমন চালায় এবার সুপ্তিকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যায় আবির। বলে তোকে ভালোবাসি না আমি।আবির বাইরে চলে গেছে। সুপ্তির চোখে আবার পানি চলে এসেছে। একটুপর ভাবি এসে বলে আবির কই রে? সুপ্তি জবাব দেয় না। ভাবি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারে কিছু হয়েছে। ভাবি ওর কাছে আসে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে মন খারাপ করিস না বোন। ও তোকে ভালোবাসলে তোর ই হবে। আর যদি তোর জন্য ওর ভালোবাসা না থাকে শত চেষ্টা করেও পারবি না ওর ভালোবাসা পেতে। তুই একটু দেখ ও কোথায় গেলো। সুপ্তি বাইরে চলে যায়। আবিরকে কোথাও দেখা যায় না। গেইট খুলে বাইরে গিয়ে রাস্তার দুপাশে চোখ রাখে কোথাও নাই আবির। সুপ্তি আবিরের নাম্বারে কল দেয় কোথায় তুমি?
-এইতো বাজারে এসেছি। রান্না হোক দুপুরের আগেই ফিরবো।
-ওকে তাড়াতাড়ি আসো সুপ্তি ভাবির কাছে এসে বলে ও বাজারে গেছে দুপুরের আগেই ফিরবে। সুপ্তি ঘরে এসে শুয়ে পড়ে। আবিরের কথা ভাবে কতো ভালোবাসি ওকে আর ও বুঝলোই না। সুপ্তি ঘুমিয়ে পড়েছে। আবির এসে ঘরে ঢোকে দেখে সুপ্তি ঘুমিয়ে আছে। আবির এসে ওর পাশে বসে। চেয়ে চেখে সুপ্তির মায়াবী মুখটা। ভাবে পাগলিটা খুব ভালোবাসে। কিন্তু এই ভালোবাসা ওকে শুধুই কাঁদাবে হয়তো। আবির সুপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বুকের ওড়নাটা একটু সরে গেছে। ঠিক করে দিতে যায় আবির ওমনি সুপ্তির ঘুম ভেংগে যায়। চেয়ে দেখে আবির ওড়নাটা বুকে রেখে হাত সরাচ্ছে। অবাক হওয়ার মতো তাকায় সুপ্তি! আবির মাথা নিচু করে
-কি হইলো? আমাকে বললে তো এমনেই আমার দেহ সপে দিতে পারি আপনাকে। ঘুমের মধ্যে চুপ করে এসে এসব করার কি দরকার? (মুচকি হেসে)
-না না সুপ্তি এমনটা নয়। আমি তোর ওড়নাটা ঠিক করে দিলাম।
-ওকে। এবার গোসল করে আসেন সাহেব। আবির অপরাধির মতো মাথা নিচু করে আছে। সুপ্তি হাতটা ধরে বলে সরি তুমি এমনটা না আমি জানি। আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। তাইতো পাগলামি করে তোমায় জড়িয়ে ধরি, বুকে টেনে নেই। এসব ঠিক না জানি। তবুও তোমাকে খুব আপন মনে করেই এসব করি। আবির তাকায় সুপ্তির দিকে। দেখে ওর চোখে আবার ও পানি।
-এই ছেমরি তোর চোখে কি ঝরনা আছে নাকি? কিছু বললতেই পানি বের হয়ে যায়। এই বলেই আবির সুপ্তিকে টেনে নেয় বুকে। মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। বলে এই পাগলি জানি তুই আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসিস। কিন্তু ১০ তারিখের আগে তোকে আমার কথা জানাতে পারবো না। তাই তোর এই পাগলামিতে, ভালোবাসার আদরেতে নিজেকে মিশাই না। আগে ১০ তারিখ আসুক জানিয়ে দেবো।
-ঠিকাছে। তবে আমাকে এভাবে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখো। তোমার বুকে মাথা রাখলে আমার মনে হয় আমি আমার ভালোবাসার মানুষের বুকে আছি। মনে হয় জনম-জনম এভাবেই থাকি। আবির সুপ্তির মাথাটাকে বুকের সাথে চাপ দিয়ে ধরে
-কি হচ্ছে আপনাদের মাঝে..? (ভাবির আগমন) ভাবিকে দেখেই দুজন-দুজন কে ছেড়ে দেয়। ভাবি মুচকি হেসে বলে পরে এসব কইরেন আপনারা এখন দুজন গোসল করে খেয়ে নেন। আবির গোসল করতে বাথরুমে যায়। ভাবিকে বলে একটা লুঙ্গি আর গামছা দিতে। ভাবি সুপ্তি কে বলে যা তো এগুলা দিয়ে আয় আবিরকে। গোসল খানায় লুঙ্গি নিয়ে ঢুকেই সুপ্তি ভিতর থেকে আটকে দেয় দরজা! আবির অবাক হয়ে বলে কি হলো? সুপ্তি এগিয়ে যায় আবিরের কাছে। দুই হাত দিয়ে আবিরের মুখটা ধরে। কপালে একটা চুমু দিয়ে এক ঝটকায় টেনে নেয় বুকের সাথে।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি আবির ভাইয়া। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। কেনো আমাকে এড়িয়ে চলো? বলো এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে সুপ্তি। আবির এই প্রথম চোখদুটোকে বাধা দিতে পারেনি টুপ করে গড়িয়ে পড়ে দু-চোখে দু-ফোটা জল। সুপ্তি কে বুকের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে। থুতনিটা তুলে ঠোটে একটা ভালোবাসার চুমু একে দেয়। বলে এই পাগলি আমাকে এতো পাগল করিস না। আমি তো তোকে কথা দিতে পারি না ১০ তারিখের আগে। তবে এটা শুনে রাখ.. যদি কোনদিন কেউ আমার বউ হয়, কাউকে ভালোবাসি সেই মেয়ে হবি তুই। আর যদি কোনদিন হারিয়ে যাই তবে হারিয়ে যাবো সবার থেকে দূরে। কেউ আমার হবে না। আমিও কারো হবো না। তবে ১০ তারিখ পর্যন্ত আমায় সময় দে। এর আগে তোর কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না রে পাগলি।
-ঠিকাছে. জানিনা ১০ তারিখে কি হবে। কি জন্য তুমি ১০ তারিখের অপেক্ষায় তবে এটা জেনে রেখো এই সুপ্তি তোমার ভালোবাসা না পেলে, তুমি অন্য কারো হলে বা তোমার কিছু হয়ে গেলে বাঁচবে না এই পাগলিটা। আবির আবারো থুতনিটা তুলে কপালে একটা চুমু দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওকে যা। যদি কারো হই তবে তোর ই হবো।গোসল করে আবির খেতে বসছে…
-আব্বাজান এইবার কিন্তু কয়েকদিন থাকবে আমাদের বাড়িতে। (সুপ্তির মা)
-আজকেই ফিরতে হবে মামি। অন্যসময় এসে আবার কয়েকদিন থাকবো।
-না-না তুমি যে কতো আসবে তা জানি। আজ যাওয়া হবে না। খাওয়ার পর আবির বাড়িতে যেতে চাইলেও ওর মামি আর ভাবি যেতে দিলো না। ভাবির কথা হলো.. কয়েকদিন না থাকলেও আজকের রাতটা থাকতেই হবে। বাধ্য হয়ে আবিরকে থাকতে হয় সেই রাতটা। বিকেলে ভাবি, সুপ্তি আর আবির ঘুরতে যায় এনায়েতপুর বেড়ি-বাধ এ এই জয়গায়টা দারুন লাগে ওদের। ঘোরাফেরা করে এনায়েতপুর হাসপাতালের ক্যান্টিনে বসে খেয়ে নেয় ওরা। এরপর বাসায় ফিরতে সন্ধা হয়ে যায়। রাতে খাওয়ার পর আবিরকে সুপ্তির পাশের রুমে নিয়ে যায়। এটাই গেস্টরুম। শুয়ে পড়ে আবির। ভাবি টিভিটা অন করে দেয়। তারপর আবিরের মাথার কাছে এসে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে~তোমার কি হয়েছে আবির? আবির ভাবির দিকে তাকায়। চোখদুটো ছল
– ছল করছে আবিরের।
-আমি ১০ তারিখের আগে কিছু বলতে পারবো না ভাবি।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তবে জানো..? সুপ্তিু তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। যদি পারো ওকে আপন করে নিও। ভাবি হিসেবে এটুকুই আমার চাওয়া।
-ওকে ভাবি যদি আমার জীবনে কেউ আসে তবে সে হলো সুপ্তি। ভাবি চলে যাওয়ার পর সুপ্তি আসে ঘরে। আবিরের চোখের দিকে চেয়ে বলে~জানিনা ১০ তারিখে কি হবে তুমি ভালো থেকো এই বলে ঘর বের হতে যায় সুপ্তি। আবির ডাক দিয়ে বলে সুপ্তি শোন সুপ্তি আবিরের কাছে আসে। আবির কাছে বসায় ওকে দু-হাতে মাথাটা ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে যা এখন ঘুমিয়ে পর। সকালে উঠে খাওয়ার পর আর দেরি করেনা আবির। রেডি হয়ে মামি ও ভাবিকে বিদায় দিয়ে সুপ্তিকে খোঁজে আবির। ভাবি বলে যাও ওর ঘরে আছে ও ঘরে গিয়ে দেখে খাটের এক-কোনায় বসে কাঁদছে সুপ্তি। আবিরের ভিতরটা কষ্টে তছনছ হয়ে যায় ওর এই কান্নার দৃশ্য দেখে। আবির ওর কাছে গিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়েধরে ওকে সুপ্তি আবিরের বুকে মাথা রেখে কাঁদে আর বলে খুব ভালোবাসি তোমাকে। আবির ওর কপালে একটা চুমো দিয়ে বলে আসি রে সুপ্তি ১০ তারিখটার অপেক্ষায় থাকিস।
ও যাওয়ার পর সুপ্তির একেকটা দিন যেনো একেকটা বছর মনে হয়। এভাবেই চলতে থাকে দিন। আজ ৮ তারিখ। বুকের ভিতরটা কেমন জানি লাগে সুপ্তির। ভাবির কাছে গিয়ে বলে একটু ফোন করো ওদের বাসায়। আমার ভিতরটা কেমন জানি করছে। ১০ তারিখে কি হবে ওর? ও কেনো বলতে পারে না? একটু ওর বাবা-মার কাছে জেনে নাও না প্লিজ। ভাবি বলে ঠিকাছে ফুফা শ্বশুরের কাছে ফোন করে দেখি কি বলে। ভাবি ফোনটা নিয়ে বলে চল মা-কে দিয়ে কথা বলাই। সুপ্তির মা-কে সব কথা খুলে বলতেই সে বলে আবিরের আব্বার কাছে ফোন করো। আমি কথা বলছি ফোন করতেই ওপাশ থেকে সালাম দেয় সালামের উত্তর দিয়ে বলে~ কেমন আছেন দুলাভাই? খুব ভালো নেই ভাবি। ছেলেটার অবস্থা খুব খারাপ। এইমাত্র আবির ফোনে বললো আপনাদের ফোন করে জানাতে। ফোন ই করবো তার মধ্যে আপনিই করেছেন।
আবিরকে সিরাজগঞ্জ সদর থেকে আজ ঢাকায় পাঠানো হইছে। আপনারা আগামিকাল ভোরেই চলে আসেন। কালকে ওর অপারেশন হবে মনে হয়। আবিরের মা এপাশ থেকে চমকে যায়! আবিরের কি হইছে দুলাভাই? ওর কি হইছে আমরাও জানতাম না। এর আগে আপনাদের ওখান থেকে আসার কয়দিন পর থেকেই খাওয়া-দাওয়া কমে গেছে। চুপ হয়ে শুয়ে বসে থাকে একা-একা। কারো সাথে মেশে না কথা ও বলতে চায় না। এটুকু বলেই ওপাশ থেকে হাউ-মাউ করে কেঁদে ওঠে আবিরের বাবা। ফোনটা এবার আবিরের মা নিয়েছে কানে সেও কান্না জড়িত গলায় বলে আমার সুপ্তি মামনিকে নিয়ে তোমরা ভোরেই চলে আসো। আজ ফোনে বারবার শুধু সুপ্তির কথাই বলেছে আমার আবির টা। সুপ্তির মা কথা বলতে পারে না আর। ফোনটা সুপ্তির কাছে দেয় ওপাশ থেকে আবিরের মা বলে জানো সুপ্তিকে না খুব ভালোবাসে আমার আবির। একথা জানায়নি ও ওর ভিতরের অসুখের কারনে। আমাদের ও জানায়নি।
কাল যখন খুব খারাপ লাগছিলো তখন বললো মা-গো আমার কেমন জানি লাগছে। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাও এরপর জানতে পারলাম ওর ভিতরে বড় একটা অসুখ আছে। আমরা কষ্ট পাবো বলে কাউকে জানায় নি। তবে ও চিকিৎসা হয়েছে একাই। সিরাজগঞ্জ সদরের ডাক্তার বলেছিলো ১০ তারিখে তোমার অপারেশন করতে হবে। কাল ওকে সদরে নেয়া হইছিলো। সেখান থেকে ঢাকায় নেয়া হইছে। আসিফ (আবিরের বড় ভাই) ওর সাথে গেছে ঢাকায়। আসিফ ফোন করে বলেছে ওর অবস্থা খুব খারাপ। সম্ভবত কালকেই অপারেশন হবে ওর। তাই আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। এখন তো রাত হয়ে গেছে। কাল ভোরেই রওনা দেবো আমরা। তোমরা সবাই তাড়াতাড়ি চলে আসো। এই কথাগুলো একটানা বলে ওপাশ থেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আবিরের মা। সুপ্তি ফোনটা কান থেকে সরিয়ে মা-কে জড়িয়ে ধরে মা-গো আমার আবির টা আমাকে অনেক ভালোবাসে।
ওর ভিতরে অসুখের জন্য কিছু বলে নি আমায়। আমায় এক্ষুনি ওর কাছে নিয়ে চলো মা এই বলে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে সুপ্তি। সুপ্তির বাবা বাসায় আসে তখনি। এসব শুনে সে বলে এক্ষুনি আমরা সিরাজগঞ্জে (আবিরদের বাসা) রওনা দেই। বেশিদূর তো নয়। আজ রাতে গেলে কাল ভোরেই সবাই ঢাকায় রওনা দেবো। রাতেই ওরা আবিরদের বাড়িতে চলে যায়। ভোরে সবাই রওনা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। যমুনা পাড় হওয়ার পরেই ফোন আসে ওদের আর যেতে হবেনা। আবিরকেই পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িতে। একটু আগেই নাকি ওর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়ে গেছে। ওদের গাড়ি ব্যাক করে বাসায় ফিরেছে। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেছে। শুধু একটা মানবী কাঁদছে না। তার বিশ্বাস তার আবির তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না। আবিরকে যে সে পাগলের মতো ভালোবাসে। আবির তো ১০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। আজ তো কেবল ৯ তারিখ। আবির কখনোই মরতে পারে না। সুপ্তি রাস্তার ধারে মাটিতে বসে এক নয়নে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে।
প্রায় ৪ ঘন্টা পর এ্যাম্বুলেন্স আসে বাড়িতে। সুপ্তি দৌড়ে যায় গাড়ির কাছে। আবিরের বড় ভাই গাড়ি থেকে নেমেই ১ টা চিঠি হাতে দেয় সুপ্তি কে বলে এটা আবির তোকে দিয়েছে। সুপ্তি চিঠিটা নিয়ে পাগলের মতো বাড়ির ভিতরে যায়। ঐদিকে আবিরের লাশ গাড়ি থেকে নামাচ্ছে। কিন্তু সুপ্তির সেদিকে খেয়াল নেই। ভালোবাসার মানুষের চিঠি পেয়ে পড়ায় ব্যস্ত। চিঠিটা খোলে সুপ্তি প্রিয়তমা সুপ্তি জানিরে পাগলি আমার উপড় তোর অনেক অভিমান। সেই কিশোর কাল থেকে তুই আমাকে পছন্দ করিস, ভালোবাসিস। অথচ আমি তোর ভালোবাসায় সাড়া দেইনি। এটা কি সত্য? আমি কি সত্যিই সাড়া দেইনি? সুপ্তি তোর মনে আছে? ক্লাস ফাইভে থাকতে তুই যখন আমাদের বাড়িতে এসে প্রথম আমাকে তোর ভালোলাগার কথা জানালি। তখন তোকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বলেছিলাম আমি তোকে ভালোবাসি। সেদিন থেকেই তোকে আমার মনের রাজ্যের রাজকুমারী বানিয়ে রেখেছিলাম।
কিন্তু ২ বছর আগে হঠাৎ করে বুকের ভিতরটায় খুব ব্যথা করে ওঠে। আমি ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলে খারাপ কিছু হয়েছে। তখনি আমি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ভালো করে মেডিকেল করাই নিজেকে। সবচেয়ে ভালো হাসপাতালে, সবচে বড় ডাক্তারের কাছে যাই। সবাই আমাকে সেই একি বানী শোনায়। মেডিকেল রিপোর্টে দেখি আমার ভিতরের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। দুটো কিডনিতেই পাথর ধরেছে। দেহের ভিতরের প্রায় সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। আমি না খুব কঠিন মানুষ রে। তাইতো এই কথা কাউকে বলিনি। জানিস এরপর থেকেই তোদের বাড়িতে যাইনা। তুই যখন আমাদের বাড়িতে আসতি তখন তোকে এড়িয়ে চলতাম। এতে তোর ভিষন কষ্ট হতো জানি। সেই সময় বাড়িতে ফেরার পর ঘরে ঢুকতেই তুই যখন আমাকে বুকের মাঝে টেনে নিতি। বলতি ভালোবাসি তোমাকে। জানিস তখন আমারো ইচ্ছে হতো তোকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি, বলি আমিও তোকে ভালোবাসি।
এরপর শেষবার কয়েকদিন আগে যখন তোদের বাড়িতে গেলাম। তখন তোর ঐ ভালোবাসার পাগলামি দেখে আমার ও ইচ্ছে হয়েছিলো আমি তোর ঐ পাগলামিতে সাড়া দেই। বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলি সুপ্তি রে আমিও তোকে ভালোবাসি। কিন্তু আমিতো জানতাম আমার আজকের এমন পরিস্থিতির কথা। তাইতো বুকের মাঝে কষ্টগুলোকে অনলি মি করে রেখে তোকে বলেছিলাম ১০ তারিখে জানতে পারবি সব। কারন ডাক্তার শেষ আশা দিয়ে বলেছিলেন ১০ তারিখে একটা অপারেশন হোক তোমার। আল্লাহ যদি চায় তো বাঁচবে না হলে চলে যাবে না ফেরার দেশে। আমিও রাজি হই আর ১০ তারিখের জন্য ওয়েট করি।
কিন্তু ভাগ্য বিধাতার ইচ্ছা হয়েছে এই ১০ তারিখ আমার জীবনে না আসুক। তাইতো আজকেই অপারেশন করতে হলো। এই অপারেশনে ৯০% মরন লেখা ছিলো। তাই অপারেশনের আগে তোর জন্য খুব কষ্টে এই চিঠিটা লিখলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিস রে পাগলি বলতে পারলাম না আমি তোরে কতো ভালোবাসি চিঠিটা পড়ে সুপ্তি আবিরের লাশের কাছে যায়। ওর মুখে হাতটা বুলিয়ে দেয়। সবার মতো চিৎকার করে কাঁদতে পারেনা সুপ্তি। দু-চোখ বেয়ে শুধু গড়িয়ে পড়ছে কষ্টের স্রোতধারা বুকের ভিতর বয়ে যাচ্ছে কষ্ট নামের ভুমিকম্প। বারবার সুপ্তির চোখে ভেসে উঠছে আবিরের চিঠিতে লেখা শেষ লাইন তোরে কতো ভালোবাসি।
সমাপ্ত।