আজ কি রান্না করবে গো? (স্বপনীল)
-তোমার মাথা। (নিশি)
-বাহ তবুও ভাল নিজের মাথা নিজে খাব।
– স্বপনীল
-কি?
-তুমি ফাজলামো ছাড়া আর কিছু জান না?
-কই ফাজলামো করছি তুমিই তো বললে আমার মাথা রান্না
করবে।
-হ্যা বলেছি তবে রাগের কারনে।
-এ মা তাই তো, আমার বউটা কি কারনে এত রেগে আছে?
-রাগার যথেষ্ট কারন আছে?
-যেমন…?
-আবার জিজ্ঞাসা করছ যেমন?
-হ্যা তো…
-বাসার কি অবস্থা করে রেখেছ? জামা কাপড় নোংরা করেছ কেন?
– ইয়ে মানে আসলে কি হয়েছে কি জান….
-থাক ।কেন যে তোমার মত আগোছালো একটে ছেলেকে বিয়ে
করতে গিয়েছিলাম খোদাই জানে।
-এভাবে বলছ কেন?
-কেন বলছি এটা কি…?(একটা টি শার্ট বের করে আনল বাথরুম থেকে)
-এটা কি?
-কি দেখছ না এটা চিনতে পারছ না?
-না তো।(চোখ কচলিয়ে দেখলাম)
-গাধা বর আমার, এটা এবারের বিবাহ বার্ষিকীতে তোমাকে দিয়েছিলাম সেই টিশার্টটা।
-কি????(চোখ ছানাবড়া করে তাকালাম), ওহ আসলে কি হয়েছে জানো
-চুপ কোন কারন দেখাবে না তুমি আলসের ডিব্বা।
-বিশ্বাস কর নিশি এটা ধুয়ে রেখে গোসল করে বেরিয়েছি বের করতে খেয়াল নেই।
-তুমি কি করে পারলে আমার দেওয়া উপহারটা এতো অযত্নে অবহেলায় রাখতে।
-বিশ্বাস কর বাবু….
-চুপ একদম বাবু ডাকবেনা।বাসায় না থাকলে রাজত্ব হাতে পাও তাই না?
-এ মা ছি ছি তা কেন?
-এগুলো কি..?(একটা পাত্রে কিছু ইয়ে মানে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ দেখাল)
-ইয়ে মানে.. এগুলা কোথায় পেলে তুমি?
-মনে হচ্ছে ভুত দেখছ?কি ভেবেছিলে ময়লার ঝুড়িতে রাখলে আর পাব না?
-এ মা তা কেন। আসলে তুমি দেশের বাড়ি গেলে আমার এক কলিগ এসেছিল সেই এটা করেছে।
-তোমার কলিগ তাই না?
-হুম বিশ্বাস কর।
-চুপ মিথ্যুক লজ্জা করেনা তোমার বার বার মানা করা সত্বেও…
-নিশি তোমাকে ছাড়া থাকতে যে খুব কষ্ট হয়।
-কষ্ট হয় বলে এসব ছাইপাস খাবে?
-খেতে চাই না তবুও…
-তবুও কি আমি মরে গেলে তখন ছেড়ে দিও।
-নিশি প্লিজ এভাবে বল না।
-কেন বলব না তুমি এমন কেন বল তো।
-তোমাকে না দেখতে পেলে কিছু ভাল লাগেনা।
-থাক। এই শোন…
-হুম বল…
-তুমি গোসল করেছ আজ?
-ইয়ে মানে…
-ইয়ে মানে কি হুম সত্যি বলবা কিন্তু।
-ইয়ে মানে…
-আবার ইয়ে ইয়ে করছ।
-না।
-কিইই?কতদিন কর না?
-মাত্র চারদিন।
-হে আল্লাহ, এই এই গাধা এক্ষুনি দূর হও গোসল করে আস।
-এত রাতে ঠান্ডা লাগবে তো।
-ঠান্ডা আমি বের করছি লজ্জাহীন একটা ছেলে আবার দাঁত বের করছে।
-বলছি শোন না সকালে করি।
-এক্ষুনি যাবা।(চিৎকার করে)
-যাচ্ছি তো বাবা।
-যাও।
কোনমতে পাশ কাটিয়ে দৌড় দিলাম বাথরুমে। বউটা কাছে থাকলেও জ্বালা না থাকলেও জ্বালা। কাছে থাকলে কড়া নজদারি একেবারে সবসময় দৌড়ঝাপ এটা কর ওটা কর সময়মত।একটু অনিয়ম দেখলেই শুরু হবে বকা।আর কাছে না থাকলে সময়টা যেন ফুরাতেই চায় না।আসলে ওর মিষ্টি শাসন গুলো ওর উপস্থিতি এতটাই মিস করি বাসায় ঢুকতেই খারাপ লাগে।এমনিতেই সিগারেট ছুঁতে দেয়না তবু ও যখন দূরে যায় তখন না খেয়েও থাকতে পারিনা।পাগলীটাকে বড্ড বেশি ভালবাসি। নিশি যেদিন থেকে আমার স্ত্রী হয়ে এসেছে আমি অন্যরকম সুখে পরশ পেয়েছি। আমাদের বিয়েটা আব্বু আম্মুরাই ঠিক করে দিয়েছিল।আমি থাকি শহরে ছোট্ট একটা জব করি। আব্বু আম্মু গ্রামে থাকে উনারা গ্রাম ছেড়ে আসতেই চায় না। বিয়ের পর উনাদের অনুমতিতেই নিশিকে এখানে নিয়ে থাকি।আমার এমনিতে ছুটি কম যার কারনে গ্রামে সবসময় যেতে পারিনা তবে নিশি মাঝে মাঝে যায়।
এইতো পনের দিন আগে নিশি গ্রামে গিয়েছিল। প্রতিবারই হাসিমুখে বিদায় দেই তবু ও চলে গেলে বাসাটা একেবারা ফাঁকা হয়ে যায়।কিছু ভাল লাগেনা। চোখের সামনে থাকলে এতটা ভাল লাগে বলে বোঝাতে পারব না।বাড়ি গেলে দিনে দশবার ফোন দিয়েও মনের তৃষ্ণা মিটেনা। এমনিতেই আমি অলস প্রকৃতির তারপর ও বাসায় না থাকলে জামাকাপড় আগাছালো ভাবেই রাখি।কিন্তু ভুলে এবার ওর দেওয়া টিশার্টটা পাঁচদিন বাথরুমে রেখেছি ভিজে অবস্থায়।প্রতিবারই এমন করি তবে এবার বোধহয় মেয়েটা একটু কষ্ট পেয়েছে ওর দেওয়া উপহারটা নষ্ট করে ফেলেছি।এতটা কেয়ারলেস আমি নিজের উপরই নিজের রাগ হয়।ওর এখানে আসা কথা ছিল কাল।কিন্তু আজ এসে গেছে যার কারনে ধরাই পড়লাম সিগারেট খাওয়া নিয়ে। বুঝিনা মেয়েটা বাসায় ঢুকে আগে কেন ময়লার ঝুড়ি চেক করে।আসলে সিগারেট খাওয়াটা ও একেবারে সহ্য করতে পারেনা।খুব কান্নাকাটি করে টের পেলে।আজও অভিমানে মরার কথা বলল।সত্যি বলতে আমিও খেতে চাই না। কিন্তু ও দূরে গেলে নিজেকে কেন জানি কন্ট্রোল করতে পারিনা। এই স্বপনীল স্বপনীল(চিৎকার করে ডাকছে নিশি)
-কি হয়েছে বল।( স্বপনীল )
-বের হও এক্ষুনি।
-কেন?
-হতে বলছি হবে।
-যা বাবা মাত্র বলল ঢুকতে এখন আবার বেরোতে বলছে।
বেরোলাম।
-কিছুক্ষন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
-কি হয়েছে বলবা তো।
-কি হয়েছে?গ্যাস সিলিন্ডার চেইঞ্জ করনি কেন বাসায় থাকতে ফুরিয়ে গেছিল।
-ইয়ে মানে…
-ফ্রিজে কোন বাজার নেই কি ইচ্ছে করছে জানো?
-কি?
-তোমার মাথাটা রান্না করতে।
-হিহিহি কর।
-লজ্জা করে না তোমার হাসছ আবার।আমি বাসায় আসছি জেনেও বাজার করনি কেন?
-মনে নেই তো।
-মনে নেই তো এতদিন তাহলে বাসার বাইরে খেয়েছ?
-হুম।
-উফফ তুমি এমন কেন ইচ্ছে করছে চিবিয়ে খাই।
-বাবু এখন বাজার যাই?
-না চুপ থাক তুমি একটাও কথা বলবা না।
চুপ করেই গেলাম বেশি কিছু বলতে গেলে মহারানী রাগে কি করতে কি করবে। এখন মধ্যরাত খেয়ে শুয়ে পড়েছি ঘুম আসছেনা।ও হো খাবার পেলাম কোথায়?আমার প্রানপ্রিয় আম্মু আছেনা। বউমার কাছে আমার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে বুঝতেই পেরেছে বাইরে খাই ।অনিচ্ছা সত্বেও মহারানী কট কট করে তাকিয়ে গোমড়া মুখে খাবারটা শেয়ার করে খেয়েছে।তবে ঘুম আসছেনা কারন শাস্তি দিয়েছে। ফ্লরে ঘুমাতে হবে।উফ বিশ্রি রকম ঠান্ডা একে তো বৃষ্টি হয়েছে তারপর পিঠের নিচে বরফ সমান ঠান্ডা।ও দিকে মহারানী তো গভীর ঘুম।এই মশাগুলোও হয়েছে তেমন কমে ছাড়ছেনা। এপাশ ওপাশ করতে করতে চোখটা বন্ধ করে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে যেই নীরব হয়েছি। বুকের উপর কিছু একটা পড়েছে।মানুষের মতই তো লাগছে আবার ফুঁপে ফুঁপে কাঁদছে দেখি।
-এ মা পেত্নিরা আবার কাঁদতে জানে নাকি?( স্বপনীল )
-হ্যা জানে তো, কাঁদালে কাঁদতেও জানে।(নিশি )
-কে কাঁদিয়েছে শুনি?
-তুমি।
-আমি?
-হ্যা।কেন কর বল এমন।
-সত্যি বলব।
-হুম।
-তোমার এই মিষ্টি আদর পেতে।(বলেই ওকে আলতো করে জাপটে ধরলাম)
-ফাজিল ছাড়।
-না আমার বউ আমি ধরেছি ছাড়বনা।
-হুম হইছে আর সোহাগ দেখাতে হবেনা।উপরে উঠ ঠান্ডা লাগবে।
-বাব্বা বউ এত ভাবে আমাকে নিয়ে।
-হুম ভাবে।তুমি তো ভাব না।
-কে বলেছে।
-আমি বলছি আমার দেওয়া টি…..
-থাক বাবু আমার অন্যায় হয়ে গেছে এবার আরেকটা দিও।
-আর হবে না তো।
-নাহ।
-আমি বাড়ি গেলে তুমি এমন আগোছালো ভাবে থাক কেন?
-জানিনা পাগলী, কিছু ভাল লাগেনা তোমাকে ছাড়া।
-বুঝেছি আমার পাগল এবার উপরে চলেন।
-থাকি না আরেকটু।
-চলে যাব কিন্তু।
-থাক উঠছি।
-হি হি হি।
পাগলীটা হাসছে কত সুন্দর করে।কেন যে এত কষ্ট দেই। এবার আর ভুল করবনা সামনেই তো বিবাহ বার্ষিকী আমাকে কিছু একটা দিতেই হবে।ভাবছি পাগলীটাকেনিয়ে শুয়ে শুয়ে বুকের ওপর, হঠাৎ কানে কানে বলল সেই সবথেকে আনন্দ সংবাদ আমি বাবা হতে চলেছি।পাগলীটাকে আরও জোরে জাপটে ধরেছি বুকের সাথে।দুজনেই কাঁদছি। এটা খুশির অশ্রু, খুশির বার্তার।