রহস্যময় বিয়ে

রহস্যময় বিয়ে

রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটতে ছিলাম, আর ভাবতে ছিলাম ( কিভাবে ঐ পর্যায়ে যেতে পারি যেইখানে খুব কম মানুষ যেতে পেরেছে ),রাতে একা হাঁটলেই কেনো জানি এইসব ভাবনা গুলো মাথায় চলে আসে, কিন্তু বাসায় গেলেই আবার সেই আগের আমি হয়ে যাই, যেমন: প্রচুর গল্প এর বই পড়ি আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দি। হঠাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো, আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করে, স্কিন এর দিকে তাকিয়ে দেখি, আরমান ফোন দিয়েছে।

কলটা রিসিভ করলাম,,

আরমান:: দোস্ত তুই কৈ, এখন?

আমি:: আমি এই বাসার পাশের রাস্তায়, কেনো কি হয়েছে?

আরমান:: তুই দশ মিনিট এর ভিতরে র্পাক এ চলে আয়, তোর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

আমি:: দোস্ত এখন র্পাক এ কেনো, তুই যা বলবি ফোনে বল।

আরমান:: তোকে আসতে বলেছি তুই তাড়াতাড়ি আয়, আর সব কথা ফোনে বলা যায় না।

আমি:: ঠিক আছে, দশ মিনট এর ভিতর আসতেছি।

আমি দশ মিনিট এর আগেই পৌছে গেলাম। আর দেখতে পেলাম আরমান এর সাথে রিয়া আর একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা দেখতে অনেক কিউট।

আরমান:: দোস্ত, আজ একটু আগে আমি আর রিয়া বিয়ে করেছে, রেজেস্টি মেরেজ। তুই তো সবাইকে সাহায্য করিছ তাই তোকে ফোন দিয়েছি, এখন কি করবো বল, রিয়া পালিয়ে এসেছে বাসা থেকে, তুই একটা বুদ্ধিবের কর।

আমি:: বুদ্ধি পরে বের করবো,আগে বল তুই আমার সাথে এই রকম দুই নাম্বারি কাজ কেনো করলি।

আরমান:: কি করেছি, দোস্ত?

আমি;: এখন তো ভাজা মাছটা ও উলটে খেতে পারো না, আমাকে না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে করতে পারলি।

আরমান:: দোস্ত, রিয়া সন্ধ্যা ৬টায় আমাকে ফোন করে বলে পনেরো মিনিট এর ভিতরে কাজী অফিসে আসতে, আমি কিছু বলতে যাবো ফোনটা কেটে দিল।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গেলাম, যেয়ে দেখি রিয়া আর তার কিছু বন্ধু কাজী আফিসের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারপর দু’জনে রেজেস্টি করে বিয়ে করলাম, ফেন্ডদের মিষ্টি খাইয়ে তোকে ফোন দিলাম, দোস্ত রিয়া তো, ওর বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে, এখন কি করবো, কিছু একটা বল, আর তোকে না জানাতে পারার জন্য, সরি দোস্ত।

আমি:: হয়েছে, আর সরি বলতে হবে না। শোন তোরা দু’জন তোদের বাসায় যাবি আর এমন ভাব করবি যেনো কিছুই হয়নি। আর রিয়া পালিয়েছে তো ছয়টায় এখন বাজে ৯টা, বাড়ির সবাই কিছু বলবে না এখন গেলে, রিয়া শুধু বলবে ওর এক ফেন্ড এর বাসায় গিয়েছিলো।

রিয়ার পাশে থাকা মেয়েটা;: হ্যা, ভাইয়া তো অনেক ভালো একটা প্লান বের করেছে। এইভাবে কিছুদিন যদি সবাই কে না জানিয়ে থাকতে পারে তাহলে সময় বুঝে দুইজনের ফ্যামেলিকে জানালে, দুইজনের ফ্যামেলি মেনে নিতে বাদ্ধ।

আরমান:: আমার মনে হয় এটা করাই ঠিক হবে। তাহলে রিয়া তুমি এখন বাসায় চলে যাও।

আমি:: তোর কি বুদ্ধিরে, এতো রাতে দুইটা মেয়েকে একা একা বাসায় পাঠাবি। তুই রিয়াকে আর ওর বান্ধবিকে বাসায় পৌছে দিয়ে আয়, আমি এই খানে অপেক্ষা করতেছি।

আরমান:: রিয়ার পাশে তো ওর খালাতো বোন, আর তুই এইখানে দাড়িয়ে থেকে কি করবি। আমাদের সাথে চল। আরমান দুইটা রিক্সা ডাকলো

রিয়া:: আমি আর আবির একটায় বসবো আর একটায় তোমারা দুইজন বসবা, তোমাদের কোনো আপওি আছে নাকি।

পরিস্থিতি এর জন্য দুইজনই রাজি হয়ে গেলাম। এখন আমি আর রিয়ার খালা তো বোন একসাথে রিক্সায় বসে যাচ্ছি। আমি মনে মনে ভাবতেছি জীবনে কোন দিন ভাবি নাই যে, এত কিউট আর সুন্দরি একটা মেয়ে আমার পাশে বসবে। কিছু সময় দুইজনের কেউ কথা বলি নাই। আমিই আগ্রহ নিয়ে বল্লাম, আপনার নাম টা জানতে পারি।

ইরা:: হুম, আমি ইরা।

আমি:: কোথায় পড়াশোনা করেন?

ইরা:: খুলনা ভার্সিটিতে, কেমেস্টি নিয়ে, প্রথম বর্ষ।

আমি:: আমি ও তো খুলনা ভার্সিটিতে পড়ি, কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং, ৩ বর্ষ। আপনি এতো কিউট বি এফ আছে নিশ্চয়ই।

ইরা:: না, আমার কোনো বি.এফ নেই। আমি মনে মনে খুশি হলাম।

আমি:: সত্যি বলতেছেন আপনার কোনো বি.এফ নেই।

ইরা:: সত্য বলতেছি বিয়ে করলে, বি. এফ থাকবে কিভাবে।

আমি আরো কিছু বলবো, রিক্সা থেমে গেলো, আরমান বল্ল দোস্ত রিক্সা থেকে নিচে নাম রিয়া দের বাসায় চলে এসেছি, রিয়া আর ইরা বাসার ভিতর ঢুকলো। তারপর আমি আর আরমান আমার বাসার দিকে যেতে লাগলাম, আরমান কে বল্লাম দোস্ত ইরাকে দেখে মনে হয় না ওর বিয়ে হয়েছে।

আরমান:: এ তুই কি বলিস, ইরার বিয়ে হতে যাবে কেনো। আর তোকে এইসব কথা কে বলেছে।

আমি:: ইরা নিজের মুখে বলেছে। দেখতে দেখতে বাসার সামনে চলে এলাম,আমার বাসা থেকে আরমান এর বাসার দূরর্ত্ব পাঁচ মিনিট এর পথ।

আরমান:: ইরা তোর সাথে মজা করেছে, ওর বিয়ে হয় নি। আর তুই এখন বাসায় যা তোর সাথে মজার আর অদ্ভূত কিছু ঘটনা ঘটবে। কাল সন্ধ্যায় আমার সাথে দেখা করবি, এখন বাই। আমি বাসায় ঢুকতেই দেখি আব্বু আম্মু ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, আমাকে দেখেই বল্ল, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো, তোমার সাথে গুরুত্ব পূর্ন কিছু কথা আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসলাম,

আব্বু:: কালকে আমাদের সকলের দুপুরে দাওয়াত আছে, ২.৩০ টার সময় তুমি রেডি থাকবা। আমি একটু অস্পষ্ট স্বরে আব্বুকে বল্লাম, আব্বু কালকে আমার গুরুত্ব পূর্ণ ক্লাস আছে ( আসলে ইরা কেনো আমাকে মিথ্যা কথা বলেছে তাই শুনতে ব্যাকুল হয়েছিলাম।)

আব্বু:: কিছু বললি, তুই?

আমি:: না, আব্বু কিছু বলি নাই তো। কালকে দুপুরে তাহলে আমরা দাওয়াত এ যাব ( হঠাৎ আরমানের সেই কথাটা মনে পড়ে গেল ” তোর সাথে মজার কিছু ঘটবে”) তাই আর আব্বুকে না করলাম না” অবশ্য আমি তেমন একটা দাওয়াত এ যেতাম না ”

পরের দিন দুপুর ২:৩০ মিনিট এ আমি, আব্বু আর আম্মু, আব্বুর গাড়িতে করে দাওয়াত এ গেলাম, অবশ্য যাওয়ার পথে আব্বু অনেক মিষ্টি কিনেছিল, ( দাওয়াত এ এত মিষ্টি আব্বুকে আগে কখনো কিনতে দেখি নাই ) আর একটা অদ্ভূত ঘটনা হচ্ছে গাড়িটা রিয়াদের বাসার সামনে দাড়িয়েছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। “আব্বুকে যে কিছু জিঞ্জাসা করবো, কী জিঞ্জাসা করবো সেইটাই তখন মাথায় আসতেছিলো না”

আব্বু – আম্মু রিয়াদের বাসার সামনে দাড়ালো, আমি তাদের পিছনে দাড়ানো, কলিং বেল দিতেই, রিয়ার বাবা – মা আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলো। এবং ডাইনিং টেবিলে বসতে বললো। দেখলাম অনেক খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

আর আমাদের খাবার পরিবেশন করতেছে “ইরা”। রিয়ার আম্মু, বললো, ” এত সব রান্না ইরা একাই করেছে। আমি তখন কিছু একটা বুঝতে পারলাম, আমার সাথে কী, ঘটতে চলেছে। “আমার মনে হল সব কিছু আগে থেকে প্লান করা” খাওয়া দাওয়া শেষে, আব্বু রিয়ার বাবাকে বল্ল, তাহলে ২০ তারিখ ই দিন ধার্য করা হল। আজ তো “দশ”তারিখ। তারপর সবাই চলে আসতেছি গাড়িতে, আমি আব্বুকে বল্লাম, তুমি একবার আমাকে জানাতে পারতা, তুমিতো জানো তোমার কথার অবাদ্ধ আমি হতাম না। আর আমি ও জানি তুমি আমার খারাপ কখনোই চাইবা না।

আব্বু:: হুম তোকে বলতে পারতাম, তবে তখন তোর আর আমার সর্ম্পক হয়ে যেতো বাবা- আর ছেলের। আসলে আমি কখনোই তোকে বাবার মত শাসন এ রাখি নাই, সব সময় তোর সাথে বন্ধুর মত আচারণ করেছি।

এইজন্য একটু মজা করলাম, আর ইরা অনেক গুনবতী, রুপবতী এবং অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে। তোমার আর ইরার বিয়ে ঠিক হওয়ার পিছনে একটা অদ্ভূত ঘটনা আছে,,শোন তাহলে,,”” আমি আর রিয়ার বাবা অনেক বছর ধরে বিজন্সে র্পাটনার, অবশ্য আমাদের বিজন্সে নিয়ে সব কথা অফিসেই হত। কিছুদিন আগে রিয়ার বাবা গুরুত্ব পূর্ণ কাজের জন্য আমাকে তাদের বাসায় যেতে বল্ল। আমি গেলাম, এবং আমাকে নাস্তা দিতে এল ইরা।”” আমি জানতাম রিয়ার বাবার একটি মাএ মেয়ে “রিয়া”। তাই রিয়ার বাবাকে বল্লাম এই মেয়েটা কে?

রিয়ার বাবা:: রিয়ার খালাতো বোন, নাম হচ্ছে “ইরা”।

আসলে ওর বাবা রোড এক্সডেন্ট এ মারা গিয়েছিল, যখন ইরার বয়স ছিল “দশ” বছর, আর বছর তিন আগে ওর মা ব্রেইন স্টোক এ মারা গিয়েছে। তারপর থেকে ও আমাদের বাসায় থাকে। এখন ওর জন্য পাএ দেখতেছি।” আমার তখন তোর কথা মনে পড়ে গেল। এবং রিয়ার বাবাকে বল্লাম আমার কাছে ভাল পাএ আছে। কিন্তু “তুই” সেইটা আমি বলি নাই। আর বলেছিলাম আপনার সাথে কালকে বিকালে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো। পরের দিন আরমান কে ডেকে বল্লাম ” তুই ” কাউকে ভালোবাসিস কিনা।

আরমান:: না আংকেল আবির তো কাউকে ভালোবাসে না, ও তো পড়াশোনা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েই সময় কাটায়, হঠাৎ আপনি এই কথা বললেন কেনো? আসলে আবির এর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। ” তখন আবির কে সব ঘটনা বলেছি ইরার সম্পর্কে।

আরমান:: আংকেল আবিরকে তাহলে কিছু বলবেন না, ইরাকে দেখতে যাওয়ার পড়ে সব ঘটনা বলবেন, ওকে সারপ্লাইজ দিব। “আমি তাই তোকে কিছু বলি নি” সব কিছু শুনতে শুনতে কখন যে বাসার সামনে গাড়ি চলে এল টেরই পেলাম না। সন্ধ্যায় আরমানের সাথে দেখা করতে ওদের বাসায় গেলাম এবং আরমানকে দেখা মাএই ” এইসব এর মাস্টার মাইন্ড তুই তাই না।

আরমান:: প্রথম পার্ট এর আমি সেকেন্ড পার্ট এর ইরা। ” আসলে আমি আর রিয়া বিয়ে করি নাই, ইরা তোর সাথে কথা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু ভয় পাচ্ছিল, তাই ও, ঔ প্লান করেছিল। আর কাঁকতালিয় ভাবে আমি আর রিয়া অনেক ভাল বন্ধু ছিলাম।

আমি:: দোস্ত এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তোর মত বন্ধু আর পাব না। এখন আমি আর ইরা অনেক সুখে আছি

 সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত