– অর্ক, তোমার সাথে কথা আছ।
নিজের ডেক্সে বসে বসে ভাবছি এখানে আর আমার মনে হয় চাকরি করা হবে না। কারন, আজ যাকে এখানে দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি চাই ও না ওখনো মিমির সাথে আবার দেখা হোক। এখন মনে হচ্ছে কেনো যে এখানে চাকরিটা করছি।””মাথাটা নিচু করে বসে বসে ভাবছি কথাগুলো। ঠিক তখনি মিমি এসে উপরের কথাটি বলে। আমি ভাবতেই পারছি না মিমির সাথে আমার এভাবে দেখা হবে। ওর কথা শুনে বললাম..
– জ্বী ম্যাম বলুন।
– ম্যাম কেনো বলছো? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। কথাটি শুনেই চুপ হয়ে গেলাম। কারন এই কথাটি আমি আর শুনতে চাই না কোনো ভাবেই। বিশেষ করে মিমির কাছ থেকে তো নয়ই। পুরোনো কথা আবার রিপিট আমি শুনে বললাম
– ম্যাম প্লীজ…এসব বলবেন না। আমি কাল থেকে আর আসবো না। আপনার কোনো প্রবলেম হবে না।
– অর্ক এভাবে কেনো বলছো?
– প্লীজ ম্যাম আপনি এখান থেকে যান,,সবাই দেখলে খারাপ ভাব্বে। না হলে আমিই চলে যাবো। কথাটি শুনে আমার দিকে মিমি করুন দৃষ্টি দিয়ে একটু তাকালো। সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি সেই চাহনির মানে বুঝেও না বোঝার মত বসে রইলাম। নিজেকে কেমন একটা ভাবতে লাগলাম। আমি আর চাই না এসব কিছু আবার আমার সাথে ঘটুক পূরোনো দিনের মত।
মিমি চলে গেলো আমার সামনে থেকে। গেছে ভালোই হয়েছে। কারন, ও যত সামনে থাকবে আমার,,ততই রাগ উঠবে ওর প্রতি। যেটা এখন কন্ট্রোল করাটা আমার কাছে বড় একটি ব্যাপার। মিমি চলে যাওয়াতে পুরোনো কিছু কথা আজ খুব মনে পড়ছে। যেটা আমাকে সবসময় কষ্ট দিয়ে আসছে। তিন বছর আগের কথা। আমি মিমি কে অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু মিমি আমার সাথে অভিনয় করে। যেটা আমি আজো মেনে নিতে পারিনি। একদিন ভার্সিটিতে এসে দেখি মিমি সহ ওর বান্ধবীরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের আড্ডাতে আমার পৌছাতে লেট হয়। কিন্তু ওখানে পৌছে ওদের আড়ালে যা শুনি সেটা শোনার পর নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। ওরা বলছিলো
– কিরে মিমি তোর টাইম পাস বয়ফ্রেন্ড এর কি অবস্থা? (মিমির বান্ধবি)
– আসতে বলেছি চলে আসবে। (মিমি)
– হা হা হা… টাইম পাস এর জন্য আর লোক পেলি না?
– কি করবো বল? ও খুব ভালো ছাত্র।
– তাই বলে প্রেম??
– আরে কিসের প্রেম? আর কিসের রিলেশন? আমি তো ওর কাছে থেকে নোটস সংগ্রহ করবো বলেই তো এতকিছু করি। আর দেখিস না কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে না,,তাই জিদের বসে এমনি প্রেম করছি। ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই কেটে পড়বো। (মিমি) কথাগুলো শুনে আমি ঠাই ওখানে দাড়িয়ে থাকলাম। চোখ দিয়ে রাগ এর আগুন বের হতে লাগলো। সোজা হেটে ওর সামনে গেলাম। স্বাভাবিক হয়ে কথা বললাম..
– বাবু কেমন আছো? (আমি)
– এই তোরা থাক,,আমরা যায়। (বান্ধবিরা)
– আরে না না তোমাদের জন্য গিফট এনেছি। যেও না।
– কি গিফট (মিমি)
– একটু উঠে দাড়াতে পারবে?
– হুমম মিমি উঠে দাড়ালো।
– কি হল কি গিফট দেখাও? কোনো কথা না বলে ওর মুখের দিকে তাকালাম। অপলক তাকালাম।
– ঠাসসসস ঠাসসসস
– ছেমড়ি আমাকে ব্যাবহার করিস তাইনা? এক্সামের জন্য প্রেম করছিস আমার সাথে তাইনা? সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আর মিমি গালে হাত দিয়ে কান্না করতে লাগলো।
– তোরা মেয়েরা নিজেদের কি ভাবিস হুমম? ছেলেদের খালি টাইম পাস এর জন্য ব্যাবহার করিস তাই না? তবে মনে রাখ, ছেলেরাও পারে সব কিছু। তোকে তো মন থেকে ভালোবাসছিলাম আমি। আমার ভালোবাসাতে তো কোনো কমতি ছিলো না।
– আমাকে মাফ করে দাও অর্ক। (মিমি)
– ঠাসসস…আর কখনই আমার সামনে আসবি না।
কথাটি বলেই চলে আসলাম ওর থেকে। প্রচন্ড ভালোবাসি তাকে আমি। কিন্তু সে এমন করলো,,কখন যে কান্না চলে আসেছে বুঝতেই পারিনি। তারপর থেকেই আমি আর ক্লাসে যেতাম না। খালি এক্সাম দিতে যেতাম। কিন্তু দেখতাম মিমি আমার দিকে কেমন করে তাকাতো।
– অর্ক সাহেব..বাসায় যাবেন না?(কলিগ) কলিগের কথা শুনে বাস্তবে ফিরলাম। আসলে অফিস টাইপ শেষ এর দিকে প্রায়।
– হুমম যাবো। কাজটা গুছিয়ে বের হবো।
– ওকে।
কাজ শেষ করেই তাড়াতাড়ি বাইরে চলে আসলাম। কেননা, মিমি আবার এসে কথা বলবে যেটা আমি চাইনা। বাড়িতে এসে ভাবছি আজকের কথা। মিমি হল আমার অফিসের বসের মেয়ে। এখানে চাকরি করছি আজ ছ মাস হল। তবে বসের সাথে ভালো একটা খাতির হয়ে গেছে। কারন, আমি সময়মত কাজ করে দিতাম বিধায় আমাকে তিনি স্নেহ করতেন। বস অসুস্থ কদিন ধরেই। তাই বসের মেয়ে মিমি আজ দুইদিন হল অফিসে জয়েন করেছে। আর তাতেই এত কিছু। কাল অফিসে এসে ডেক্সে এমনি বসে আছি। তখনি পিওন এসে বললো..
– স্যার ম্যাম ওনার কেবিনে ডাকছে।
– হুমম চুপচাপ বসে রইলাম ডেস্কে। কি করবো ভাবছি। ওনার কেবিনে যাবো কিনা ভাবতে ভাবতে উঠে গেলাম।
– ম্যাম আসবো?
– এসো..আর তোমাকে না বলেছি ম্যাম না ডাকতে?
কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই বললাম.
– কি জন্যে ডাকলেন?
একটু চুপ থেকেই বললো..
– আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্ক।
– হিহিহিহি..
– বিশ্বাস হয়না?
– কোনো কাজ থাকলে দেন।
– সত্যিই ভালোবাসি তোমাকে।
তোমার কাছে থেকে ঐ তিন থাপ্পড়গুলা খাওয়ার পর বুঝতে শিখেছিলাম ভালোবাসা কাকে বলে। তোমাকে সেদিন এর পর থেকে খুব মিস করতাম। আর তারপর থেকে তোমাকেই ভালোবাসতে থাকি।
বিশ্বাস করো অর্ক আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। কথাগুলো শোনা মাত্রই আমি বসা থেকে উঠে দাড়ালাম আর সোজা চলে আসলাম একদম অফিসের বাইরে। “”নাহ এখানে আর চাকরি করা যাবে না। শুধু শুধু কেনো আবার তাকে বিশ্বাস করবো?”” সে যে ঠকাবে না এমন কি আছে?আজ তিন দিন হল আমি অফিসে যায়না। রুমে শুয়ে আছি সন্ধ্যার ঠিক আগে আমার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। ফোনটা ধরেই..
– অর্ক..
– হুমম কিন্তু কে আপনি?
– আমি মিমির বাবা বলছি..
– ওহ স্যার? কেমন আছেন?
– ভালো না বাবা..
– কেনো স্যার?
– মিমিকে নিয়ে হসপিটালে এসেছি।
– মানে?কেনো?
– আজ তিনদিন হল ও ঠিকমত খাইনা। আর আজ অনেকগুলা ঘুমের ঔষধ খাইছে। একটু আগে ওর ঙ্গান ফিরলো,,আর তখনি তোমার নাম নিছে। তুমি একটু আসবে বাবা? ফোনটা কেটে দিলাম। কেমন যেনো হতে লাগলো বুকের মধ্যে। হুট করেই একটা চাপা শুন্যতা অনুভব করলাম। কেনো জানি মনে হল মিমির ওখানে যাওয়া দরকার। ভাবলাম ভুলতো মানুষ একবারই করে। তবে সে কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না? আল্লাহ তো বলেছে ক্ষমা করার কথা। তাহলে আমি না হয় মিমিকে আর একটি বার সুযোগ দিই। হসপিটালে চলে আসলাম। রিসিপশনে মিমির আব্বুর নাম বলমেই কেবিন এর সংখ্যা বলে দিলো। সোজা কেবিনের সামনে আসলাম।
– বাবা তুমি আসলে তাহলে..আমি তো ভেবেছিলাম আসবে না। (মিমির বাবা আমাকে কেবিনের বাইরে দেখেই কথাটি বললো)
– মিমি কেমন আছে?
– ও কেবিনেই আছে। কেবিন ঢুকলাম,,মিমি আমাকে দেখে উঠে বসতে লাগলো।
– উঠছো কেনো? শুয়ে থাকো। কথাটি শুনে মিমি শুয়েই থাকলো। আমি কেবিনের পাশে যেয়ে বসে পড়লাম একটি টুল নিয়ে।
– কেমন আছো? এবারো মিমি কোনো কথা বললো না চুপ করেই তাকিয়ে রইলো আমার চোখের দিকে।
– আমাকে ভালোবাসবে তো? আমাকে একটা সুযোগ দাও না প্লীজ অর্ক। আমি তোমাকে আর কখনই ছেড়ে চলে যাবো না। সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি আমি সেদিনের ঘটনার পর থেকে।
– চুপ করে শুয়ে থাকো তো? কেনো এমন করলে তুমি আজ? (আমি)
– আমাকে ভালোবাসবে তো অর্ক? কথাটি শুনে কিছুই বললাম না। শক্ত করে মিমির ডান হাতটা ধরলাম। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম..
– হুমম খুব মিমি মুচকি হেসে আমার হাতটি আরো শক্ত করে ধরলো।
এই ধরাই বুঝলাম সে আমার হাতটি কোনো প্রকার বাধা আসলেও আর ছাড়বে না। আমিও মুচকি হেসে ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।