পূর্ণতায় তুমি আমারই

পূর্ণতায় তুমি আমারই

-হাতদুটি ধরেছি তোমার, মানবোনা কোন বাধা আর। শুনবোনা কারো কথা যে আর, মন্দ বলুক সমাজ। তুমি আমারই বলবো শত বার।

একতালা একটা বাসার ছোট্ট একটা রুমে থাকি আমি।একটা মাত্র পরিবার থাকে এখানে।বাড়িটা তাদেরই।অনেকটা সাবলেট বলা যায়। আশেপাশে অনেক বড় বড় বিলডিং আছে।তিন, চার পাচ এবং সর্বশেষ ছয় তালা বিলডিং।আমার রুমটা একটু বাইরের দিকে। গেটের পাশে।আশেপাশের বড় বড় বিলডিং গুলার কাছে আমাদের বিলডিংটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগে।অনার্স প্রথম বর্ষ।তাই তেমন একটা পড়াশুনাও নাই।প্রতিদিনই অনেক রাতে ছাদে যায়।এই ২-৩ এর মধ্যে।এক দেড় ঘন্টা থেকে আবার চলে আসি।আর সাথে থাকে আমার প্রিয় গিটার। মাঝে মধ্যে একটু সুর তোলার চেষ্টা করি।

এখন রাত ২:৪৭। সবাই ঘুমে চারিদিকে।একটু সুর তোলার চেষ্টা করলাম সাথে আমিও একটু  গলা মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা
-একসাথে রয়েছি দুজন,একডোরে বাধা দুটি প্রান, ছিড়বেনা কভু এ বাধন, আসলে আসুক তুফান।

কিন্তু নিজের কাছেই মনে হলো বেখাপ্পা লাগছে।আরেকবার চেষ্টা করে দেখি।
নাহ কোন মতেই মেলাতে পারছিনা।আজ আর মনে হয় হবে না আমার দ্বারা।
-সুর মিলছে না?
মনে হলো কারো গলা শুনলাম।কিন্তু এতো রাতে আবার কে বলবে।তাই মনের ভুল বলে পাত্তা দিলাম না।
-উত্তর দিলেন না যে?
এখন মনে হচ্ছে কেউ সত্যিই কথা বলছে। চারিপাশেই দেখতে লাগলাম। কিন্তু অন্ধকারের মাঝে কাউকেই দেখতে পেলাম না।

-আপনার ডান পাশের বাড়ির ছাদে তাকান
অন্ধাকারের মধ্যে একটা ছায়ামূর্তি দেখতে পেলাম।অন্ধকারেরজন্য মুখটা ভালোভাবে বুঝতে পারলাম না।উত্তর দিতে ইচ্ছা করছিল না তাই উত্তর না দিয়েই চলে আসলাম।

ছাদ থেকে আসার পর পরে খুব একটা ঘুম হয়নি।যার জন্য সকালে কলেজে যেতে দেরি হয়ে গেল।রুম থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা ডাকলাম।কিন্তু কোথ থেকে একটা মেয়ে এসে হুট করে উঠে গেল।
-প্লিজ অন্য একটা রিকসা নিয়ে নিয়েন।আজ আমার পরীক্ষা আছে।

এ কেমন মেয়ে রে বাবা।বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এসে রিক্সা নিয়ে চলে গেল।কিন্তু পরীক্ষার কথা বলাতে আর কিছু বলতে পারলাম না।কলেজে যাওয়া আর হলো না।

রাত্রে যথারীতি ছাদে আসলাম।আজ মনটা ভালো থাকায় গিটারে সুর তুললাম।
-ও আমার বন্ধু গো, চিরসাথি পথ চলাম
তোমারি জন্যো গড়েছি আমি মাজ্ঞিল ভালবাসার

– -একসাথে রয়েছি দুজন,একডোরে বাধা দুটি প্রান,
ছিড়বেনা কভু এ বাধন,
আসলে আসুক তুফান।
শেষের লাইন গুলা পাশের ছাদ থেকে কেউ গাইলো।ঠিক কাল যেখানটাই কেউ একজন দাড়িয়ে ছিল।মনের অজান্তেই বলে ফেললাম

-ওয়াও। সো বিউটিফুল। অনেক ভাল গান তো আপনি
-কিন্তু আপনার মতো অতটা সুন্দর না।
-আমার মতো না কিন্তু আমার থেকে অনেক বেশি ভালো।
-কিন্তু আমার কাছে আপনার টা বেস্ট।
-আপনার সাথে তর্কে পারবো না তাই হার মেনে নিলাম
-এত সহজে হার মেনে গেলেন।কি আর করা।
আপনি এত রাতে ছাদে আসেন কেন?
-নিসঙ্গ রাত্রিকে সঙ্গ দেবার জন্য।আবার সঙ্গ পাবার জন্য এটা বলা যায়।
-কিন্তু রাত কি সঙ্গ দিতে পারে।
-পারে।আমার সঙ্গ দেয়।আমি বসে বসে গান করি আর রাত তা পরম মনোযোগের সাথে শুনতে থাকে।তো এর থেকে ভাল সঙ্গি আর কেউ হতে পারে।
-হ্যা তাও ঠিক।কিন্তু সবাই তো আর আপনার মতো করে ভাবতে পারে না।
-হতে পারে।
আজকের মতো বিদায়।
আমি আবার কারো সাথে বেশি ক্ষন কথা বলতে পারিনা।বিরক্তি চলে আসে।কিন্তু মেয়ে হলে বিরক্তিটা আরো বেশি হয়।
পরদিন সকালে কলেজে যাচ্ছি।পেছন থেকে কারো ডাকার শব্দ শুনলাম।
-এইযে দাড়ান

আমি আমার মতো চলতে থাকলাম।
-আপনাকে না দাড়াতে বললাম।
-এইতো এখন দাড়ালাম।
মেয়েটা দৌড়ে আসার কারনে হাপাতে থাকলো।কিছু বলতে শুরু করার আগেই আমি বললাম

-স্যরি বলার দরকার নেই।আমার পরীক্ষার লেট হয়ে গেলে আমিও এমনটাই করতাম।
-ওকে।কিন্তু..
আবার ও আমি মেয়েটাকে না বলতে দিয়ে বললাম
-রাতে ছাদে যার সাথে কথা বলছিলাম সে আপনিই।তাই তো?
-হ্যা এটাই বলতে গিয়েছিলাম।কিন্তু আপনি আমার বলার আগেই আপনি নিজেই বলে দিলেন।
-আমি অনুমান করে বলেছি মাত্র।
-আপনার অনুমান একদমই ঠিক ছিল।
-জানি।
-আজকে আর রিক্সা ডাকলেন না?
-নাহ।কেন আজও কি রিক্সা নিয়ে যেতেন?
-নাহ।আজতো লেট হয়নি।
-তা ঠিক।আচ্ছা আমার একটু কাজ আছে।আপনি যেতে থাকেন।
মেয়েদের সাথে কথা বলতে তেমনি পারিনা।বিরক্তি লাগে।
এখন রাত ২:৩৯।ছাদেই আছি
এতক্ষন ধরে গিটার বাজাচ্ছিল।নাহ এবার ঘুমোনো দরকার।

-আজ আর গাইলেন না কেন?
মেয়েটা আজও আসছে।অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললাম
-এমনি
-ওহ।আচ্ছা তাহলে আপনি বাজান আমি গাচ্ছি।
-স্যরি।ঘুমোতে যাবো এখন।অনেক রাত হয়েছে।বাই।
আমি কোন মেয়ের সাথেই আগে থেকে কথা বলিনা।বিরক্তি লাগে।
আজ ছাদে এসেই দেখি আগে থেকেই মেয়েটা চলে আসছে।আমাকে আসতে দেখেই বলতে লাগলো
-আপনার সামনে একটা যে ইটা আছে ওটার নিচে একটা সুতা পাবেন।সুতাটা হাতে নিন

অনেকটা বিরক্ত লাগলো।কিন্তু তার পরও নিলাম হাতে।
-নিয়েছি।এখন কি করবো?
-হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকুন।

সুতার অন্য প্রান্ত মেয়েটার কাছে।অন্ধাকরে খুব একটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। মনে হলো কিছু একটা সুতায় বেধে দিল।বেধে সুতায় ছোট্ট একটা ঝাকি দিলো।কিছুক্ষন সুতোয় ভ্রমন করার পর ছোট্টো একটা প্যাকেট অনেকটা সিগারেটের প্যাকেট এর মতো দেখতে আমার হাতে এসে ঠেকলো।প্যাকেটটার দুই সাইড সাদা কাগজে মোড়ানো।তার উপর নিল কালি দিয়ে লেখা
-আপনার প্রতিটি গানের কি আমার জন্য গাইতে পারবেন? প্রতিটা গানের ডুয়েট সিঙ্গার করবেন আমাকে? একদিন না সারা জীবনের জন্য?

-আচ্ছা আমার নামটাই তো এখনো জানেন না। এর মধ্যেই ভালবেসে ফেললেন?
-নাম আশিক। অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।বাসা যশোর। আর আপনার আব্বু শিক্ষক।আর কিছু?
এই মেয়ে এতকিছু জানলো কি করে।জানছে জানুকগ্গে।অনেক কথা বলে ফেলছি মেয়েটার সাথে আর না।

এরপর থেকে আর ছাদে যেতাম না।যদি দেখতাম আমার দিকে আসছে তাহলে অন্য দিকে চলে যেতাম।কথা বলার সুযোগই দিতাম না।এভাবে প্রায় কয়েক সপ্তাহ কেটে গেল।মনে হলো এত দিনে মেয়েটা ভুলে যাবে।সন্ধ্যার দিকে বের হলাম।চারিদিকে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।বাসার একটু দূরে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে বসে পুকুরে ঢ়িল ছুড়ছি।মনে হলো কেউ আমার কাধে হাত রাখলো।পেছেনে ফিরে দেখি মেয়েটা।আমার পাশে বসে পড়লো।আবছা আলোতে দেখলাম মেয়েটা আগের থেকে একটু শুকিয়ে গিয়েছে আর মুখটাও কেমন মলিন লাগছে।
-আচ্ছা এখন আর ছাদে আসেন না কেন
-এমনি।ঘুমায় এখন রাতে।
-আমার উত্তরটা কিন্তু এখনও দেননি আপনি?
-আমার মনটা আগে থেকেই আমি এক জনকে দিয়ে রেখেছি।
-কিন্তু সে তো আর নেই।

আমি হতবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মেয়েটা জানলো কিভাবে।নাকি ঢ়প মারছে?
-কে বলেছে সে নেই
-মিথ্যা বলবেন না।কি মনে করেন যাকে ভালবাসি তার সম্পর্কে কিছুই জানিনা।যে আপনাকে ধোকা দিয়েছে তার জন্য কি আপনি সব মেয়েকেই তার সাথে তুলনা করবেন?
-যথেষ্ট হয়েছে।আর না।আমি তোমাকে ভালবাসিনা ব্যাস।ইভেন তোমাকে দেখলে আমার বিরক্ত লাগে।আর কে কি করেছে না করেছে অথবা কার সাথে আমি কার তুলনা দেব সেটা একান্তই আমার একান্তই পারসোনাল বিষয়।আর আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কারো কাছ থেকে কোন প্রকারর কথা শুনতে আমি অভ্যস্থ নই।আর আপনি আমার সামনে না আসলে আসি খুশি হবো।

মেয়েটা আমার কথা শুনে কাদতে লাগলো।এই প্রথম আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম।নিল চোখ।চোখে কাজল দেওয়া।চোখের জল আর কাজল মিশে অনেকটা কাজল লেপ্টে গেছে।এ এক অনিন্দ্য সুন্দর। আমি আটকে গেছি মেয়েটার চোখের মায়ায়া।মেয়েটা উঠে চলে যাচ্ছে।কিন্ত আমি যে ওর চোখের মায়াজালে জড়িয়ে গেছি।শত চেষ্টা করলেও যে এ মায়াজাল ছিন্ন করার সাদ্ধি আমার নেই।

আজ ছাদে আসলাম।রাত ২:৩২।
গিটারটা হাতে নিলাম।আমার বিশ্বাস মেয়েটা আসবে।
-টুং টাং করে সুর তুলতে থাকলাম।
ও আমার বন্ধু গো, চিরসাথি পথ চলার
তোমার জন্যে গড়েছি আমি মাজ্ঞিল ভালবাসার।
একসাথে রয়েছি দুজন,একডোরে বাধা দুটি প্রান,
ছিড়বেনা কভু এ বাধন,
আসলে আসুক তুফান।
তুমি আমারই বলবো শতবার।

কিন্তু মেয়েটা এলো না।আসবে না মনে হয়
।অনেক ক্ষন বসে আছি তবুও মেয়েটা এলো না।আর আসবে না মনে হয়।নিচে আসার জন্য মাত্র পা বাড়িয়েছি, শুনতে পেলাম কেউ একজন গাইছে
– -হাতদুটি ধরেছি তোমার, মানবোনা কোন বাধা আর।
শুনবোনা কারো কথা যে আর, মন্দ বলুক সমাজ।
তুমি আমারই
বলবো শত বার

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত