হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসা

হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসা

– ভাইয়া একটু দাঁড়ান।
(ছোঁয়া)
– জ্বী বলেন।
– আমি আপনার থেকে জুনিয়র তিন বছরের তারপরেও কেন আপনি করে বলেন?
– কেন ডাকলেন সেটা বলুন।
(আমি)
– ইয়ে মানে ভুলে গেছি।
– ঠিকাছে বাই।
– না না ভাইয়া মনে পড়েছে।
– বলেন।

– আপনার নাম নীল না?
– ওহ এখনো নাম জানেন না?
– না মানে… জানি।
– তাহলে তো হইছেই। যাই টা টা।
– না মানে ফেসবুক।
– শুভ্রনীল বাপ্পি।
– পায়নি খোঁজে।
– খোঁজছিলেন নাকি?
– হুম কিন্তু পাইনি।
– গুগলে সার্চ দিয়েন “গান গবেষক” ওকে? এখন যাই?
– ঠিকাছে ভাইয়া ধন্যবাদ। পরেরদিন আবারো।

– এইযে নীল ভাইয়া।
– বলে ফেলেন।
– না মানে আপনি কি ফ্রি আছেন?
– কেন সেটা বলতে হবে।
– তাহলে একসাথে শপিং এ যেতাম আরকি। মানে আমার বান্ধবীরাও যাবে।যদি সিনিয়র একজন
– সিনিয়রদের তো অভাব নেই। আমিই কেন?
– না মানে…।
– কখন?
– এখনি। ওরা তো রাস্তায় অপেক্ষা করছে।
– চলেন দেখি। আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই কিন্তু।
– কি যে বলেন।

একটু হেঁটে একসাথে সবাই শপিং এ গেলো। মেয়েদের মাঝে বেকুবের মতো হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। সবাই তো অনেক কিছুই কিনলো।
– আচ্ছা ভাইয়া ঘড়িটা সুন্দর না?
– হুম। কিন্তু এটা তো ছেলেদের জন্য।
– একজনকে গিফট দিবো। ভালো হবে না? কথাটা শুনে ছোঁয়ার অদ্ভুত খারাপ লাগলো তারপরেও মুচকি হেসে।
– হুম অনেক সুন্দর।

ঘড়িটা সহ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছুই কিনলো। বলে শেষ করা যাবেনা। মেয়েদের লিষ্ট বলে কথা। আসার সময় শেষ রাস্তায় দুজনে রিকশায়।

– ভাইয়া ঘড়িটা আপনার জন্য।
– কেন?
– এমনিই। আমাদের সাথে গেলেন। আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট হলো। ঘড়িটা নিলে খুব খুশি হবো।

– আপাদত রেখে দেন। আমি কাউকে কিছু না দিয়ে কিছু নেইনা।
– কতজনের সাথে দেয়ানেয়া করেছেন?
– অনেক অনেক।

কথাটা শুনে মুহুর্তের মধ্যে ছোঁয়ার মুখটা কালো হয়ে গেলো। সিয়াম ব্যাপারটা বোঝতে পারলো।

– না ওরকম কিছু না আবার।
– কিরকম?
– এই ধরেন হয়না গার্লফ্রেন্ড প্রেমিকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
– ভালো।

পরেরদিন ছোঁয়ার জন্য একটা আয়না কিনে মাঝ মাঠে দাঁড়িয়ে আছে জানে এখনি ছোঁয়া আসবে। আর পিছন থেকে ডাক দিবে। ভাবার আগেই।

– ভাইয়া।
– ও হ্যাঁ আসছেন? ঘড়িটা আনছেন?
– নাহ বাসায়।
– ওহ আপনার জন্য একটা গিফট আনছিলাম আরকি।

– সত্যি আমার জন্য? কি বলুন তো।
– কাল ঘড়ি দিয়ে গিফট নিয়ে যায়েন।
– ভাইয়া চলেন আমার বাসায়।

এখান থেকে তো পনেরো মিনিট লাগবে। আম্মুর হাতের চাও খাওয়া হবে আর ঘড়িটাও নিয়ে আসবেন।

– যাওয়া যায় কিন্তু আমি বেশিক্ষন থাকতে পারবোনা।
– ঠিকাছে চলেন। বাসায় গিয়ে নীলকে ঘড়িটা দিলো আর নীল দিলো আয়না।
– আয়না কেন?
– এটাই আপনার বেশি দরকার।
– কেন?
– মেয়েরা দিনে সবচেয়ে বেশি আয়নায় তাকায় চেহারা দেখে আরকি।
– ইন্ডাইরেক্টলি সুন্দরী বললেন ভাইয়া।
– এর উল্টোও হতে পারে।
– আচ্ছা।
– আজ তাহলে আসি।
– হুম.. চা?
– না আরেকদিন।

আপনারা শুনেন নতুন আরেকটি প্রেমের গল্প শুরু হচ্ছে। পরেরদিন ছোঁয়া অপেক্ষা করছে। কিন্তু আজ একটা খারাপ খবর আছে। সেটা হলো বারবার আয়নায় নিজের রুপ দেখতে গিয়ে আয়নাটা ভেঙ্গে ফেলেছে। সেই মন খারাপ ছোঁয়ার।

– ভাইয়া।
– আয়না ভেঙ্গে গেছে? কথা শুনে ছোঁয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
– হুম। কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
– চোখ দেখেই বোঝাযাচ্ছে মন খারাপ।সেটা আয়নার জন্য।
– আপনি নিশ্চয় দুনম্বর আয়না দিছেন।
(ছোঁয়া)
– আচ্ছা চলেন আজ আরেকটা কিনে দিবো কিন্তু আয়না না চুড়ি।
– চুড়ি কেন?
– আচ্ছা তাহলে দিবোনা। বাই যাই কেমন?
– না না শুনুন.. চলেন না। এমনিতে আমারও চুড়ি খুব পছন্দ কিন্তু পড়া হয় খুব কম।

– জানতাম। আচ্ছা তাহলে চলেন চশমাও কিনে দেই। আপনার ঘোড়ার ডিমের চোখ আর মানুষকে দেখানো যাবেনা।
– কেনো কেনো?
– অধিকার।
– অধিকার মানে?
– না না কিছুনা।

চলেন। শপিং মলের দোকান থেকে কিছু চুড়ি আর একটা কালো চশমা কিনলো। ছোঁয়া ভাবছে আল্লাহ যা করে ভালই করে। আয়না ভাঙ্গলো আর… হিহি।

– ধন্যবাদ ভাইয়া।
– হুম বাসায় যান এখন। আর হ্যাঁ বাইরে বেরুলে চশমাটা কিন্তু অলয়েজ পড়ে থাকবেন। ঠিকাছে?
– না। শুধু আপনার সামনে চশমা থাকবেনা। আমার ঘোড়ার ডিমের চোখ শুধু আপনাকেই দেখাতে হবে।

– চালাক হয়ে যাচ্ছেন দিনদিন। এতো চালাক হওয়া ভালোনা। বাসায় যান।
– ঠিকাছে টা টা।
– টা টা।

বাসায় চলে গেলো ছোঁয়া। আর নীল মনেমনে হাসছে। ঘোড়ার ডিমের চোখ অন্য কেউ দেখবে কেনো। কিন্তু কিছুই করার নেই।

নিজের ভাললাগা ভালবাসা কুরবান না করা ছাড়া উপায় নেই। বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। ছোঁয়ার বাবা চাইলে নীলকে কেন নীল যে মহল্লায় থাকে সে মহল্লা পুরোটা দিনে দশবার কিনতে পারে। শিল্পপতি, কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও শুনেছে মানুষ হীসেবে ভালই। কিন্তু ভালো হলেই কি। ছোঁয়াও সহজ সাধারণই। তবে ঘনঘন শপিং করার অভ্যাসটা আছে। একদিন নীলের বাসায় যাওয়ার জন্য বায়না ধরলো। সবসময়ই মা, বাবার কথা নীল ছোঁয়াকে বলে তো এজন্য আংকেল আন্টিকে দেখতে চাইলো আরকি। শেষ পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে পারলোনা। গ্রামের বাড়ির মতো। তবে এখানটা শহরই। বড় বাজারের পরপরই গ্রামটার শুরু আবার গ্রামের দিক দিয়ে শেষ। সবমিলিয়ে মাঝখানে।

নীল আর নীলের বাবা অনেক ফ্রি। মানে মা’র থেকে বাবার সাথে খাতির বেশি আরকি। মা শুধু সারাক্ষণই বকাবকি করে। বাবা শেয়ার বাজারে ধরা খেয়ে এখন ছোটখাটো একটা ব্যাবসা নিয়ে আছে। ভালই যাচ্ছে। দুভাই এক রুমে বারান্দার রুমে থাকে। নীলের মা’র সাথে অনেকক্ষন গল্প করে ছোঁয়া। বড় দাদা (নীলের ছোট ভাই। খুব বেশি পাকনা। এজন্য সবাই বড় দাদা বলেই ডাকে। এ নামে সে বেশ পরিচিত) বাসায় ছিলোনা। কিছুক্ষন পর ছোঁয়াকে এগিয়ে দেয় নীল বাসায় যেতে। কিছুদিন পর ছোঁয়ার জন্মদিন।

সিয়াম ব্যাপারটা জানতো কোনভাবে যে জন্মদিনে ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়ার বিয়ে ঠিক করার কথা এনাউন্স করবে।বাবার পকেট কেটে অনেক দামী লাল বেনারসি শাড়ী কিনলো নীল। পার্টিতে সবাই উপস্থিত আছেন। ছোঁয়ার বাবার বন্ধুবান্ধব। ছোঁয়ার বন্ধু বান্ধব। নীলও উপস্থিত। ছোঁয়া খুব এক্সাইটেড ছিলো যে কখন নীলের গিফটের প্যাকেটটা খুলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ছোঁয়ার বাবার বিয়ের এনাউন্সিং শুনে আকাশ নেমে মাথায় পড়লো ছোঁয়ার। এক দৌড়ে মা’র কাছে গিয়ে কান্না করছে। রাতে একসময় কান্নার ফাঁকে নীলের গিফটের বাক্সটা খুলে লাল বেনারসি দেখে ছোঁয়া আরো বেশি কান্না করছে। কান্না অবস্থায় ফোন দিলো ছোঁয়া নীককে। নীল এসময় নিজের রুমে শুয়ে বুক চেপে কান্না করছে। চোখ দিয়ে পানি পড়লেও সমস্যা। মা জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবে।

– লালা বেনারসি কেনো?
আমার বিয়েতে আপনি খুব খুশি তাইনা? আপনাকে কেউ আর জ্বালাতন করবে না। ( স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ)
– কি বলেন? বিয়ে তো আরো দুবছর পর। এখনি কান্না করছেন? বিয়ের দিনের জন্য কিছু কান্না বাকি রাখেন।
– সবসময় ফান ভালো লাগে না। আর হ্যাঁ বিয়ে যেহেতু আরো দুবছর পর তাহলে আজ শাড়ি দিলেন কেন?
– দুবছর পর আমি কোথায় থাকি কে জানে এজন্য আরকি।

ফোন কেটে দিলো ছোঁয়া। আর কথা বলতে পারতেছিলোনা ছোঁয়া। নীল দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্বান্ত নিয়ে নেয়। বাসায় থাকলে প্রতিদিনি দেখা হবে। এতে আরো মায়া বেড়ে যাবে। কিন্তু পারলোনা। ব্যবসা নিয়ে পড়া শেষ করতে আরো কয়েকদিন বাকি আছে। ছোঁয়ার বান্ধবীরা ছোঁয়ার হবু স্বামীকে নিয়ে মজা করছে। কিন্তু ছোঁয়ার মুখ কালো হয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজন বললো।

– কিরে ছোঁয়া? মুড অফ নাকি? ছোঁয়ার পুরো নাম ছোঁয়াতিহা রহমান ছোঁয়া।
– নাহ রে।
– আরে এয়ার.. বলনা আমাদের।
– কিছুনা আমার ভাল্লাগছেনা রে আমি যাই। বলেই উঠতে চাইলো ছোঁয়া।

– ঐ দাঁড়া.. তুই কি কোনভাবে নীল ভাইকে… ইন লাভ?
– (ছোঁয়া চুপ করে বসে আছে)
– সিরিয়াসলি ছোঁয়া? ছোঁয়া এবার মাথা নিচু করে মাথা নড়িয়েই সম্মতি দিলো কথায়।
– এটা কোনদিনও হবেনা রে ছোঁয়া।

তুইও জানিস। আমরা জানি নীল ভাই ভালো একটা মানুষ, ফ্রেন্ডলি যাহোক তোর বাবা মানবেনা। তার উপর বিয়ে ঠিক করে রেখেছে… ।

– (ছোঁয়া কান্না করছে)
– ওকে ওকে প্লীজ কান্না থামা।

আরো দুবছর আছে। আংকেলকে বোঝালে বোঝবে মনে হয়। ছোঁয়া এবার উঠে বাসার দিকে রওনা দিলো। চোখ মুছছে বারবার। রাতে খাওয়ার সময় ছোঁয়া তার বাবাকে “আব্বু” বলে ডাক দিয়েই কান্না আরম্ব করছে।

– কি হলো মা? কান্না করছিস কেন হটাৎ? শরীর খারাপ?
-( ছোঁয়া কান্না করেই চলেছে )
– বল না কান্না করছিস কেন? কেউ কিছু বলেছে? আমার মেয়ে তো লক্ষি কেউ কিছু বলবে না। তাহলে কি কিছু লাগবে?
– হুম (কান্নার মাঝে বললো)
– আজ পর্যন্ত কিছু না করেছি? বল কি লাগবে।
– পারবেনা।

বলেই খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। এদেখে ছোঁয়ার মা বাবার হলো অনেক টেনশন। একমাত্র মেয়েটা দুদিন ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। আবার বলছেওনা কেন কান্না করছে। ছোঁয়ার মা ছোঁয়ার এক বান্ধবীর কাছ থেকে নীলের ব্যাপারে জানে। নীলের বলতে নীল ছোঁয়া দুজনেরই। ব্যাপারটা অনেক জটিলতর হয়ে গেলো। এদিকে বিয়ে ঠিক করা হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন পর [Engagement]। আর ছোঁয়া দিনরাত কান্না করছে কিছুই বলছে না। নীককে ভালবাসি কথাটাও বলা হয়নি। তবে না বলা হলেও দুজন দুজনকে ভালবাসে। একরকম ইচ্ছা বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে প্রায় পাড় হয়ে গেলো দুটো বছর। বিয়ের শানাই বাজবে কয়েকদিন পর মাত্র। এদিকে নীক বাবার ব্যবসার হাল ধরেছে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংসারের সব দ্বায়িত্ব এখন তার উপরে। ছোঁয়ার [Engagement] হয়নি পরে। বিয়ের আগেরদিন ছোঁয়া ফোন দেয় নীলকে।

– আমি পারবোনা কাল আপনার বেনারসি পড়তে। এটা এসে নিয়ে যান। ( কান্না করছে )
– যা আপনার ইচ্ছা।
– আপনি এখনো কিছু করবেন না? কালকে আমার বিয়ে।
– কি করতে পারিই আমি। আপনিই বলেন।

– আপনাকে আর কিছু করতে হবেনা। যা করার আমিই করবো।
– নিজের যদি এক চুল পরিমাণ ক্ষতি করবেন তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।

বলে ফোন কেটে নীল চিল্লায়ে চিল্লায়ে কাঁদছে অপরদিকে ছোঁয়া বিষের বোতলটা দেখছে। কালকে তার জীবনের শেষ দিন। নীল আন্দাজ করতে পারছিলো ছোঁয়া খারাপ কিছু করবে। তাই ছোঁয়ার মা’কে ফোন করে বলে দিয়েছে খেয়াল রাখতে ঠিক করে। মা ছোঁয়ার বাবাকে বললে বাবা বিয়েটা বন্ধ করে দেয়। বিয়ের সব কাজ স্টপ করে দেয়। এজন্য তাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। নীলকে ডাকে ছোঁয়ার বাবা তার অফিসে।

– আমি তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে পারি এক শর্তে। বলো রাজি আছো? (ছোঁয়ার বাবা)

– শর্ত মেনে আর যাই হোক কোন বন্ধন বা সম্পর্ক হয়না। আপনার তুলনায় আমার বা আমাদের চুল পরিমাণ টাকাও নেই। তবে শর্তটা বলুন।
– এসব কিছুনা বাবা।

দেখো আমার একমাত্র মেয়ে। বোঝতেই পারো কত আদরের। ওর চোখে জল সহ্য করতে পারিনা। শুধু একটাই শর্ত সারাজীবন মেয়েটার মুখে হাসি দেখতে চাই।

– তা ইনশাল্লাহ পারবো। যদি আপনাদের দোয়া আমাদের সাথে থাকে। অফিস থেকে বের হয়ে ছোঁয়াকে ফোন দেয় নীল।
– কি থাকতে পারবে এই গরিবের সাথে সারাজীবন?
– তারমানে আব্বু রাজি হয়ে গেছে?
– হুম সামনের মাসে আমাদের বিয়ে।
– এমন শ্বশুর কোথাও পাওয়া যায় বলুন।
– হ্যাঁ শ্বশুর মশাইকে অনেক গুলা…. থাক বললাম না।
– বলেন বলেন। খারাপ কিছু বলছেন নিশ্চয়।
– না না যে শ্বশুর আমার চন্দ্রাকে আমার হাতে দিয়েছে তাকে বলবো খারাপ!

– আচ্ছা এখন রাখছি হ্যাঁ। পরে আমি ফোন দিবোনে।
– ওকে টাটা আর শুনেন.. না বলবোনা।
– কেনো কেনো?
– আরে কিছুনা বাংলা একটা মুভির নাম আরকি।
-শুনতেই হবে?
– নাহলে আজ ঘুমুতে পারবোনা।
– বলবো কথা বাসর ঘরে।

বলেই ফোন কেটে দিলো নীল। অতঃপর বহু আশা প্রত্যাশার সেই বিয়েটা হলো। সেই না থুক্কু এই বিয়েটা হলো। বাসর রাত। ছোঁয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। নীল সামনে গিয়ে বসলো।

– হাই ঘোড়ার ডিমের চোখ।
– (ছোঁয়া চুপ)

– ঘোড়া আপনার চোখ দুটো দেখান প্লীজ তারাতারি আমি আর থাকতে পারতেছিনা। চোখদুটোর মাঝে অনেকদিন হারাই না।
– (ছোঁয়া চুপ)
– আরে তোমার নীল ভাইয়া সামনে বসে আছে কথা বলবে না? ছোঁয়া এবার রাগে নিজেই ঘোমটা সরিয়ে বললো।
– জবাই করে ফেলবো আরেকবার যদি আমার ভাই বলেন।

– বাসর রাতেই জবাই! আমি আব্বাকে ডাক দেই?

– মেজাজ খারাপ করছেন? কোনদিন ঝগড়া না করে আসছেন বাসর রাতে ঝগড়া করতে? এই আপনার “বলবো কথা বাসর ঘরে”
– ও তাই বলবেন তো। বলেন আমি শুনি।
– আমি বলবো কেন আপনি বলবেন।
– কি বলবো বোঝতেছিনা তাই ঝগড়া করার চেষ্টা করতেছি।
কিন্তু দেখুন সেটাও পারছিনা।

– আপনি না একটা… একটা.. থাক আর বললাম না।

– বাসর রাত আরেকটা আসবে না বলে ফেলুন।
– হুহ কে বললো? প্রতিদিনই বাসর রাত আমার কাছে শুধু আপনি পাশে থাকলেই হয়।
– একটা কথা বলবো ভাবছিলাম।
– অনুমতি দিলাম।
– এক মিনিট দাঁড়ান গিটার টা নিয়ে আসি।
– বাসর রাতেও গান ছাড়া গেলো না?
– আচ্ছা ছাড়লাম।

কিছুদিন পর। খুব সকাল নীল ঘুমাচ্ছে। হটাৎ চোখ খুলতেই দেখলো ছোঁয়া চোখে আগুন নিয়ে বসে আছে। নীল বোঝতে পারলো কাহিনি জটিল। নিশ্চিত বড় ধরনের ছোট ভুল করে ফেলেছে।

– কি গো? চোখ লাল কেন?
– উঠে রেডি হোন জলদি। আব্বুর বাসায় চলে যাবো আর আসবোনা। থাকবোনা আর আপনার বাসায়।
– কি করলাম আমি আল্লাহ।
এমন করছেন কেন?
– কি করছেন জানেন না? ঘুমের মধ্যে অন্য আরেকটা মেয়ের নাম নিছেন কত সুন্দর করে।

– খোদা কি বলো জান? ভুলেও না। তুমিই আমার সয়নে স্বপনে জাগরণে সবখানে। অন্য কোন মেয়ে আসতে পারেই না
– না আমি স্পষ্ট শুনেছি.. অপর্না বলছেন।
– আচ্ছা এর পরে কি বলছিলাম?
– ও না এখন সেটাও জানতে চান।
– আমি নিশ্চিত ছোঁয়া বলছিলাম। তুমি একটু বেশি অপর্না শুনেছ।

– তার মানে কি? আমি কানে শুনিনা?
– কি বলো.. এ কথা আমি বলছি?
– আপনি অফিস যাওয়ার আগে আমাকে নামিয়ে যাবেন।

– আমি থাকবো কি করে বউ?
– কেন অপর্নাকে নিয়ে থাকবেন।
– ধুর্যালা স্বপ্নে কোন মেয়ের নাম নিলাম এটা নিয়ে এতো চিল্লাপাল্লা করছো কেন?
– ও তারমানে আপনি নাম নিছেন। আমি ঠিকই শুনছি।

– মাফ করো। এই কান ধরলাম। আর কোনদিন স্বপ্নও দেখবোনা।
– আমি এতো কিছু জানিনা।

আমাকে আব্বুর বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবেন। বলে ওদিক তাকিয়ে চোখ মুছছে। নীল উঠে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো।

– খবরদার ছুবেন না আমাকে।
– একশোবার ছুবো, হাজারবার ছুবো ভালবাসি তো।
– হুম কেমন ভালবাসেন স্বপ্নে অন্য মেয়ের নাম নেন।
– এই দেখো কানে ধরছি..
উঠবস করি? বলেই উঠবস করা আরম্ব করা শুরু করতে লাগলো। ছোঁয়া আটকালো।

– উঠবস করতে কে বললো?
– তুমি তো কিছুই বলছিলেনা।
– তাই বলে উঠবস করতে হবে?
– আচ্ছা..শুনো.. তোমার হাতের মিষ্টি চা কিন্তু এখনো পেলাম না।
– তিতা চা’ও আজ থেকে পাবেন না।
– ঠিকাছে তোমার সোনালী হাসিটা দেখেও দিন শুরু করতে পারলাম না। কি আর করা। রেডি হও তুমি। আমি রেডি হয়ে পৌঁছে দিয়ে আসবো।
– আচ্ছা।
নীল গিয়ে বড় দাদাকে পাঠিয়ে দিলো তার ভাবীর কাছে। বাকিটা সে’ই সামাল দিবে।

– ভাবী ও ভাবী তাকাও না আমার দিকে।
– কি?
– ভাইয়া তো হাত পুরিয়ে ফেলেছে চা বানাতে গিয়ে।
– কিহহ?
কথাটা শুনে এক দৌড়ে রান্নাঘরে গেলো ছোঁয়া। সত্যি সত্যিই হাত পুরিয়ে ফেলেছে। তবে অভিনয় করছে আরকি। (আপনারা কেউ বইলেন না আবার এটা দুভাইয়ের কারসাজী)

– এই পাগল কি করছো তুমি এটা? নীল ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম তুমি করে বললো। ইশ কি যে ভাল লাগছে।
– কই কিছুনা তো।
– দেখি দেখি তোমার হাতটা দেখি।

আমি বলেছি বলে কি চা বানিয়ে দিবো না নাকি? দেখোতো কতটুকু পুরে গেছে। তুমি না আমাকে খুব কষ্ট দাও।

– আবার কি করলাম? হাত পুরলো তো আমার।
– তোমার কষ্ট হলে আমার কষ্ট হয়না? এতোদিনে এটুকু বোঝেছ?

– বাদ দেও এ কিছু হয়নি। তুমি রেডি হও আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি। ছোঁয়া এবার নীলের বুকে জড়িয়ে কাঁদতে আরম্ব করলো।
– সরি.. আমি বোঝিনি।
– আবার সরি কেন? স্বপ্নে তো আমিই অন্য মেয়ের নাম নিছিলাম।
– নাহ তুমি আমার নামিই নিয়েছিলা।
– তাহলে? তুমি…!
– সরি তো ক্ষমা করে দাও। আর হবেনা।

– এইযে শুনোনা একটা কথা বলবো তারপর তুমি কিন্তু আমাকে ছাড়তে পারবানা।
– বলো।
– আমার না হাত পুরেনি। বড় দাদা শিখায় দিছিলো। কি করবো তুমি চলে গেলে আমি থাকতাম কি করে?
– ইউ…!
– ছেড়ে দিবা?
– না ছাড়বোনা।

অতঃপর রান্নাঘরের শেষ প্রান্ত থেকে বড় দাদা বললো…
– ভাইয়া, ভাবী আমি কিন্তু কিছুই দেখিনাই আর কিছুক্ষনের জন্য কান চেপে ধরে রাখছিলাম। এখন আমার পাওনা কি?
– আসো তোমারে কোলে নেই।
কি হবেনা দাদা? ( ছোঁয়া )
– হহু।

এসবে হবেনা। কাল সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে টেবিলে বা ব্যাগে ৫০০ টাকার কড়কড়া নোটটা রেখে দিও। নাহয় বাইরে লিক হবে মনে রেখো।

– ঠিকাছে বড় দাদা।
– লক্ষী ভাবী।
– টাকা না দিলে ওমনিই পঁচা ভাবী হতাম তাই না?
– না না তুমি অলয়েজই লক্ষী।
– তাহলে কাল টাকা নিয়োনা।
– তাহলে কিন্তু।
– ঠিকাছে দাদা।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত