মাত্র ক্লাস থেকে বের হইছি। তার মধ্যেই ছোঁয়ার ফোন
– স্যার. আপনি কোথায়?
– এইতো জাহান্নামের তিন নাম্বার রাস্তায় হাওয়া খাই.
– তাই? কীভাবে যাইতে হয়! আমিও যাব।
– বগুড়া সাতমাথা হয়ে পশ্চিম দিকে চলে আসো। তাহলেই পেয়ে যাবে।
– ওইইই রাখো তোমার জাহান্নাম ফোনে তো ভালই বক বক করো, সামনে আসলে তো লজ্জায় আমার দিকে ঠিক ভাবে তাকাতেও পারো না।
– কসসসস্ কী?
– এইটা কেমন ধরনের ভাষা! তুমি আমাকে তুই করে বলল্লা? যাও তোমার সাথে কোন কথা নাই।
– আচ্ছা সরি। হঠাৎ মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। এখন বলো ফোন দিছো কেন?
– তুমি এখন কোথায়?
– আমি তো কলেজে, বসে বসে টানতেছি।
– তোমাকে না কত দিন নিষেধ করছি, আর সিগারেট খাবা না। তারপরেও খাও কেনো?
– ভাল লাগে তাই। এই শোন না আমাকে কিছু টাকা দিবা? আমার কাছে টাকা নাই, এই দুই দিন সিগারেট খাবো কী দিয়ে? আব্বু দুই দিন পর টাকা দিতে চাইছে।
– দাঁড়াও তোমার জন্য বিষ কিনে রাখতেছি।
– আমি কখন বিষ কিনতে বললাম! সিগারেট খাবো বলে তোমার কাছে টাকা চাইলাম।
– না..আমি সিগারেট খাওয়ার জন্য কাউকে টাকা দিতে পারবো না।
– আচ্ছা, তোমার টাকা দিতে হবে না। দুই প্যাক কিনে দিও.
– বললাম তো দিব না। এতো কথা বলো কেনো তুমি? দশ মিনিটের মধ্যে পৌর পার্কে চলে আসো
– কেনো? নতুন বফ এর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিবে?
– দেখো সব সময় মজা করবা না। দশ মিনিটের মধ্যে যেন তোমাকে পার্কে পাই!
– অকে যাচ্ছি তো! কলেজ থেকে বের হয়ে সোজা পার্কে চলে আসলাম।
যদিও দশ মিনিটের মধ্যে উপস্থিত হতে পারি নাই। তারপরেও ছোঁয়াকে খুঁজতে খুঁজতে দেখি পার্কের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে। আমিও চুপচাপ ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আর পকেট থেকে সবে মাত্র একটা সিগারেট নিয়ে মুখে দিয়েছি, এখও জ্বালাই নি। তারমধ্যেই ছোঁয়া আমার মুখ থেকে সিগারেট টা নিয়ে ভেঙ্গে ফেলল.
– কী হল এটা?
– আমার ইচ্ছা হলো তাই।
– ওকে, একটা সিগারেট ভেঙ্গে ফেলছো না?? এখন একটার পরির্বতে যাওয়ার সময় ৪ টা কিনে দিবে!
– এহহহহহ আমার বয়েই গেছে!
– থাপ্পর দিব একটা.
– আমার কী হাত নাই! আমিও দিব একটা থাপ্পর। [ বলে কী!! মেয়ে না অন্য কিছু ]
– ওহ, আমি যা যা করবো তুমিও সেগুলোই করবা?
– হুমম।
– আচ্ছা, আমি যদি তোমায় একটা চুমু খাই?
– তাহলে, আমিও একটা চুমু খাবো। ইশ! মনে হচ্ছে আমার সাথে তাল মিলাচ্ছে, কথাটা গভীর ভাবে চিন্তা করে নি, এইটাই সুযোগ। হাত ছাড়া করা যাবে না
– আচ্ছা চল তাহলে চুমু দিয়েই শুরু করা যাক
– (একটু পর কথাটা বুঝতে পেরে…) ওইইই বদজ্জাদ! আশে পাশে কত্তো মানুষ। কী বলো এইসব হুম?
– আমার কী দোষ? তুমিই তো বলছো…..
– আচ্ছা শোন না??
– হুম বলো…..
– তুমি বিয়ে করবা কবে?
– আব্বু বলেছে অর্নাস টা শেষ হলেই ভাল একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করাবে।
– মানে? তাহলে আমি কী বসে বসে ঘোড়ার ঘাস কাটবো?
– জানি না, ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও।
– ওইইই এখন কিন্তু তুমি সত্ত্যি মার খাবে!মজা বাদ দিয়ে বলো তো, আমাকে কবে বিয়ে করবা?
– তোমার কী মাথা খারাপ হইছে। এত বিয়ে বিয়ে করতেছো কেনো?
– বলতে পারো একরকম মাথা খারাপই হইছে, তোমাকে ছাড়া রাতে একা একা ঘুমাতে আর ভাল লাগে না। ( আল্লাহ্!! এ কোন মেয়ের ফাঁদে পড়লাম)
– আচ্ছা দাঁড়াও পাবনার একটা বন্ধুকে ফোন করি।
– কেনো?
– ওকে বলি যেন পাবনা মানসিক হাসপাতেলে একটা বেড বুকিং দিয়ে রাখে।
– কার জন্য?
– কার জন্য আবার তোমার জন্য।
– ওইইই…..
– হুম বলো?
– কী বলছো তুমি? আর একবার বলো তো?
– কই কিছু বলি নি তো!!
– ন্যাকামি করো নাহ্?
– হুম।
আব্বুকে তোমার কথা বলছিলাম বুঝছো, আব্বু বলছে সামনে দিনে আব্বুর সাথে তোমার পরিচয় করে দিতে।
– তাই সত্ত্যি বলছো তো?
(ছোঁয়া)
– জ্বী ম্যাডাম। আমার আব্বু তোমার আব্বুর মত নাকি
– সব সময় তুমি আমার আব্বুর নামে বদনাম করো কেনো?
– আমি তো সত্ত্যি কথাই বলছি…।
– কচু বলছো।
আজ তিন মাস পর, আমি ছোট খাটো একটা চাকরী করি। আমাদের দুই পরিবারের মতামতে আমার আর ছোঁয়ার বিয়েটাও ঠিক হয়ে গেল। সামনে কিছু দিন পরই আমাদের বিয়ে। মেয়েটা খুশিতে আত্নহারা। যে বিয়ে পাগলী মেয়ে বাবা! সারাদিন শুধু বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসল। আজ বিয়ের প্রথম রাত। সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম কাজ নিয়ে। রুমের দরজাটা খুলতেই ছোঁয়া দৌড়ে এসে আমার পায়ে সালাম করল
– আরেহ্ কী করো অনেক বড় হও
– হুম স্যার এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?
– এইতো বন্ধুদের সাথে বাহিরে আড্ডা দিলাম। আমার অনেক ঘুম পাইছে ঘুমাতে হবে। তুমিও ঘুমাও
– মানে? আজকে সারারাত তোমার সাথে বসে গল্প করবো।
– জ্বী না। ( এই বলে অলরেডি বিছানায় শুয়ে পড়লাম)
– তোমার আজকে ঘুমানো নাই সারারাত। ( আমার হাত টা ধরে টেনে তুলল ছোঁয়া)
– উফফফ কী যন্ত্রণা! শান্তি মত একটু ঘুমাতেও দিবে না নাকি
– না, আজকে আমার পাগলটার সাথে সারারাত ধরে মনের কথা গুলো বলবো।
– অকে তুমি বলো। আমি ঘুমাই….
– কিসের ঘুম??
– ঘুম আবার কিসের হয়!
– আচ্ছা শোনো আমার আগে কয়টা মেয়ের সাথে প্রেম করছো তুমি?
– নয় টা।
– কিহহহ্? তার মানে আমি দশ নাম্বার
– হুম মনে হয়।
– তোমারর চোখ এত্তো খারাপ?
– নাহ্ আমি শুধু একটা মেয়েকেই ভালবেসেছি, সেটা হল আমার বিয়ে পাগলী বউ ছোঁয়াতিহা।
– হুম ন্যাকামি বাদ দাও এখন ঘুমাও।
– হুম তুমিও
– আমিও কী?
– ঘুমাও….
– কচু
– কাল সকালে আম্মাুকে বলো রান্না করে খাওয়াবে নি।
– চুপ করো। ঘুমাও… শুধু আজাইরা কথা। অনেকটা ঘুম পাইছে, তাই আর কিছু না বলে, ঘুমের দেশে চলে গেলাম। আবারও,ঘুমের মাঝে ছোঁয়ার ডাক
– শোন না, আমাদের বাবু হবে কবে?
– কালকে (আশীর্বাদ করলাম)
– মানে? (ঘুমের মধ্যে কী বলতে কি বলে ফেলেছি আল্লাই জানে)
– ওহ সরি। হবেই নি কিছু দিন পর। তোমার চিন্তা করতে হবে না।এখন ঘুমাও তো
– হুম
হঠাৎ, মাঝরাতে কী যেন স্বপ্নে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা ঘুমাচ্ছে। অনেক ভালবাসে আমায় মেয়েটা। সব সমময় আমাকে জোর দিয়ে কথা বলে ভালবাসা আদায় করে নেয় আহারে! আমার কিছু হয়ে গেলে মেয়েটা সত্ত্যি বাঁচবে না ছোঁয়াকে আজ অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি মায়াবী লাগতেছে। মনে হয়, আকাশের চাঁদ যেন, আমার রুমে প্রবেশ করেছে। এই রাতে ছোঁয়াকে অালতো করে স্পর্শ করতে খুব ইচ্ছা করতেছে। তাই ছোঁয়ার কপালে অালতো করে একটা চুমু খেলাম ইশ! ছোঁয়াকে স্পর্শ করার সাথে সাথে ঘুম থেকে জাগা পেয়ে গেছে মেয়েটা এইবার আমার খবর আছে।
– এই যে মিঃ লুকিয়ে লুকিয়ে বউকে চুমু খাওয়া হচ্ছে তাই না?
– উহুহুহু, আমার বউকে আমি হাজার বার চুমু খাবো।
– সারাজীবন ঘুমের মধ্যে এইভাবে লুকিয় লুকিয়ে চুমু খাবে তো? কখনও কোথাও হারিয়ে যাবে না তো?
– আরেহ্ না। এইসব কী বলে আমার পাগলী টা! তোমাকে একা রেখে কখনও কোথাও যাব না।
– হুম।
আমাকে একা ফেলে কোথাও গেলে, তোমাকে একদম খুন করে ফেলবো। সেই মূহুর্তে ছোঁয়ার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল আর শুরু হলো খুনসুটি কি হলো লাইট অফ করে দিলাম তো তবুও কি করে আপনারা এখনো তাকিয়ে আছেন ঠিক আছে দাড়ান আমরাই ব্যাবস্থা করতেছি ওগো চলো উনরা যাবে না আমরাই খাটের নিচে চলে যায়….
সমাপ্ত