বাবু শনোনা
-হুম শুনছি বলো
>আজ খুব পেটে ব্যথা করছে বাবু
-এত সকালে পেটে ব্যথা করবে কেন?
>আমি কি করে জানবো? আজ আর অফিস যেতে পারবো না বাবু।
-একটু বসো আমি আসছি।
>শুনো না বাবু
প্লিজ
-হ্যা এই নাও ঔষধ খাও।নিজের হাতে তোমার জন্য বানিয়েছি।দুই মিনিটে ব্যথা চলে যাবে।তারপর নাস্তা করে অফিসে যাও।
>এটা কিসের ঔষধ?কি রকম গন্ধ বের হচ্ছে।
-এটা নিমের পাচন।খেয়ে নাও।ব্যথা সেরে যাবে এখুনি।তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।
>কি আমি আমি নি নি নিমের পাচন খাবো?(মুখটা মলিন করে)
-হ্যা তুমি নিমের পাচন খাবে।
>আমার পেটে ব্যথা সেরে গেছে বাবু।
-সত্যি?(মুচকি মুচকি হেসে)
>হুম সত্যি(মন খারাপ করে)
-দেখলে নিমের পাচন এর কি পাওয়ার।দেখা মাত্রই সুস্থ হয়ে গেলে।
>বাবু আজ অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না।
-এইবার লাইনে আসছো বাছা।সব অফিস না যাওয়ার ধান্দা তাই না।
>মাত্র একমাস হল বিয়ে করছি।বউকে ছেড়ে কি কোথাও যেতে ইচ্ছে করে বলো?
-তাই না??
এতক্ষন কথা হচ্ছিলো ফিহা আর ফারদিন এর সাথে।একমাস হল ওদের বিয়ে হয়েছে।তবে বিয়ে টা ওদের অজান্তে জোর করে দুই পরিবার থেকে দিয়েছে।কেউ জানতো না কাকে বিয়ে করছে।সবাই ওদের সার্প্রাইজ দিবে বলে ওদের জানাই নি।ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো তাও কেন না জানিয়ে বিয়ে দিল চলুন জেনে আসি।
>এই ফিহা কি করিস?(ফারদিন)
-তোর মাথা করি।(ফিহা)
>আমার মাথা তো আমার কাছে।তুই তো বই পড়ছিস।
-তুই তো দেখছিলি বই পড়ছি।তারপর ও জিগাইলি কেন।
>এভাবে কথা বলছিস ক্যান?
-তুই আমায় ডিস্টার্ব করছিস কেন?নিজে তো পড়িস না।আমাকেও শান্তি দিস না।
>হুহ দেখবো এত পড়ে কি করিস?সেই আমাকেই সেবা যত্ন করে জীবন কাটাতে হবে তোর।
-কি বললি তুই?
>কিছুনা
-দূর হো এখান থেকে।
>হা হা হা
-এই ফারদিন কি করিস?
>ঘুমাই
-তুই তো টিভি দেখতেছিস।তাহলে ঘুমাস বললি কেন?
>দেখেও আবার জিগাও ক্যান?
-আচ্ছা যা স্যরি।
>মহারানি স্যরি বলছে।হা হা হা
-রাগে ফিহার গা জ্বলে যাচ্ছিলো তবে কিছু করার নাই।ওরে নিয়ে সপিং এ যেতে হবে কিছু কেনাকাটা করতে হবে।তাই মাথা ঠান্ডা করে বললো বাবু শোন।
>ওই আমারে বাবু বলবি না।কি বলবি বলে দূর হো।(ফারদিনকে ফিহা যেভাবে তারাইছিল ও সেভাবেই তারাতে চাচ্ছে ফিহাকে)
ফিহার বাবা আর ফারদিনের বাবা খুব ভালো বন্ধু।দুই পরিবার পাশাপাশি ফ্লাটে থাকে,আর খুব মিল ওনাদের ।কিন্তু ফিহা আর ফারদিন সারাক্ষন টম&জেরীর মতো দুজন দুজনের পেছনে লেগে থাকে।কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা।আবার কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারেনা।শত ঝগড়াও পরও একজন আর একজন এর সাথে কথা বলে।যতক্ষন কথা না বলতে পারে ততোক্ষন যেন ওদের শান্তি হয় না।কারনটা আপনারা বুঝতেই পারছেন।কারন আমি জানি আপনারা আমার চেয়ে একধাপ বেশি এগিয়ে।তবুও যদি না বুঝেন তাই বলেই দেই।ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে,কিন্তু কেউ কাউকে বলেনা।
-ফারদিন আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে।চলনা আমার সাথে।আব্বু বলছে তোকে নিয়ে যেতে।
>আমি যেতে পারবো না।
-চলনা প্লিজ।
>যাবোনা বলছি তো।
-কেনো যাবিনা?
>ইচ্ছে করছে না তাই যাবো না।
-দাড়া আন্টিকে ডাকছি।আন্টি আন্টি
=কি হইছে ফিহা ডাকছো কেন?
-আন্টি তোমার বান্দর ছেলেরে বলোনা আমার সাথে একটু সপিং এ যেতে।
-এই ফারদিন ফিহা যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই তোর যেতে হবে।যা ফিহার সাথে যা।
>মা তুমিও ওর হয়ে কথা বলছো।
=হ্যা বলছি।ভবিষ্যতে ওর সাথে তোমারই যেতে হবে।
>হ যাবো না নে ওর সাথে? খেয়ে দেয়ে তো কাজ নাই আমার।তবে আজ তুমি বলছো বলে যাচ্ছি।
-হুম চলো এবার মশাই।
এভাবে ওদের দুজনের ঝগড়ার দিনগুলো চলতে থাকে।সবাই দেখলে ভাববে দুজন দুজনের শত্রু।তারপর একদিন…
>এই বুড়ি কি করিস?
-ফিহা শুয়ে আছে কিন্তু কথা বলছে না।
>কিরে কথা বলিস না কেন?
-ভালো লাগছে না রে।(ফিহাকে খুব মলিন দেখাচ্ছিল।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।কিন্তু ওর বাবা মা একটু দরকারি কাজে নানু বাড়ি গেছে।)
>কেন কি হইছে তোর? শরীর খারাপ?
-হুম একটু খারাপ(কাঁপতে কাঁপতে বললো)
>ফারদিন ফিহার কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এ গা পুরে যাচ্ছে।সেটা দেখে ও যেন পাগলের মত হয়ে গেল।ফিহার বাবা মা ও বাসায় নেই।তাই ফারদিন ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসলো বাসায়।তারপর ডাক্তার ফিহাকে ট্রিটমেন্ট করে ঔষধ দিয়ে গেল।সেদিন ফারদিন সারাক্ষন ফিহার পাশে ছিল।রাত ফিহাকে যত্ন করে,ঔষধ খাইয়ে,সারারাত জলপট্টি দিয়ে ওর জ্বর কমায়।এটা দেখে ফিহা ওর প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যায়।
তারপর থেকে সবাই ওদেরকে নিয়ে মজা করতো।লজ্জায় ওরা কথা বলা বন্ধ করে দেয়।সবাই সেটা লক্ষ করে।আর তারপরই তাদের বিয়ে দেওয়ার প্লান করে।যদিও ছোট বেলাতেই ওদের বিয়েটা ঠিক করা ছিল।
বিয়ের ব্যপারটা তো আগেই বলেছি আপনাদের ওদের না জানিয়ে বিয়ে দিছে।বিয়ে শেষ দুজনের ই মন খারাপ।বাসর ঘরে জোর করে ফারদিনকে পাঠানো হলো।কিন্তু ফারদিন শুধু ফিহার কথা ভাবছে।আর ফিহাও শুধু কাঁদছে আর ভাবছে ওর বিয়ে হয়ে গেল কিন্তু ফারদিনকে একটি বার ও দেখতে পেল না।যেই ফারদিন রুমে ডুকলো।তখনই দেখতে পেল ফিহা খাটের উপর বসে কাঁদছে।ফারদিন তো পুরাই অবাক।এ দেখি ওর রাজকন্যা।
>ফিহা তু তু তুই
এখানে।(হা করে তাকিয়ে)
-ফারদিন এর কন্ঠ শুনে ফিহা চমকে উঠে।আর তাকিয়ে বলে ফারদিন তুই এখানে এই পোষাকে?
>গাধী তুই এখনো বুঝছিস না কিছু?
-কি বুঝবো?
>তুই আমার বউ,আজ আমার সাথে তোর বিয়ে হইছে।
-তুই বলিস নি কেন তোর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে?
>আমি কি জানতাম নাকি?আর জানলে কি তোরে বিয়ে করতাম নাকি?
-আমি জানলেও তোর মত হারামীরে বিয়ে করতাম না।
>তোরে বিয়ে কে করতো রে পেত্নি?
-কি বললি? দাড়া আমার শাশুরি আম্মা কে ডাকছি,আম্মা!আম্মা!
>হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো ফারদিন।আর ফিস ফিস করে বলবো I love u পেত্নি।
-ফিহার চোখ থেকে পানি চলে আসলো।এতদিন তো এটাই শুনতে চাইছিল ফিহা ফারদিন এর কাছে।
>আবার ফিস ফিস করে বললো কাঁদিস কেন পাগলি।তোর চোখে আমি কখনো পানি আসতে দেবো না।খুব ভালোবাসি তোকে।
-ফিহা ফারদিন এর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো বউ কে তুই করে বলতে হয় না।
>আগে বলবি তো!না না আগে বলবা তো বাবু।তাহলে কখনো তুই করে বলতামই না।
-আগে কেমনে বলবো,আগে কি জানতাম নাকি আমি তোমার বউ হবো।
>আচ্ছা আজ আর ঝগড়া নয়।বুকে আসো বাবু।তারপর ফিহাকে জড়িয়ে ধরলো ফারদিন। .
এই আপনারা এখনে আছেন?জানেন না অন্যের বাসর দেখতে নেই।যান যান ভাগেন।নইলে আপনার বাসর ও আপনার বন্ধুরা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নিবে।তখন বুঝবেন।
সমাপ্ত