— এই যে উঠেন (নীরা)
— হুম..(আমি)
— হুম কি তাড়াতাড়ি উঠেন?
— আরে আরেকটু ঘুমাই না।
— না, আর ঘুমানো চলবে না।
— প্লিজ..আজ অফিস বন্ধ। তাহলে একটু ঘুমাই না।
— বলছি না আর ঘুমানো যাবে না।
— কেন?
— আমি একা একা কাজ করছি আর আপনি খালি ঘুমাচ্ছেন। কোথায় একটু বউ কে সাহায্যে করবেন তা না করে খালি ঘুম।
— আচ্ছা তোমাকে একটা কথা বলি?
— একটা কেন হাজার টা বলেন।
— আচ্ছা..আমাদের বিয়ের বয়স কতোদিন হলো?
— হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন।
— যা বলছি তাই বলো।
— এইতো ৭ মাস হলো।
— ৭ মাস হলো আর তুমি এখনো আমাকে আপনি আপনি করে বলো কেন?
— আপনি করে বললে ভালোবাসা বারে।
— তাই বুঝি।
— হুম তাই..
— কি রকম ভালোবাসা বারে।(টান দিয়ে আমার বুকে নিয়ে)
— এই করছেন ছাড়ুন বলছি।
— কি করছি আবার ভালোবাসা বাড়াচ্ছি।
— যা আপনি না খুব দুষ্ট।…
— ও আমি দুষ্ট তাই না।…
— হুম..দুষ্ট
— এইযে এটা কি হলো ।…(নীরা)
— কোনটা গো? (আমি)
— এইযে এখনি কি করলেন?
— আমি আবার কি করলাম।
— ইস.. ন্যাকা মনে হয় আপনি কিছুই বুঝেন না।
— বুঝি তো।
— কি বুঝেন?
— তোমাকে ভালোবাসতে পারি।.…
— হয়েছে আর ঠং করতে হবে। উঠে আসুন আমি আপনার জন্য নাস্তা রেডী করছি।
— আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।…
— হুম..তাড়াতাড়ি আসুন…এই বলে নীরা চলে গেল। আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে খারাব টেবিলে গিয়ে বসললাম।…..
— কি..হলো তোমার।(আমি)
— আর একটু অপেক্ষা করুন আসছি।
(নীরা)…..চলুন বউ আসার ফাকে পরিচয়টা দিয়ে দেই…..কি বলেন আপনারা
আমি নিরব।
একটা বেসরকারি কোম্পানীতে জব করি। বাবা- মা কেউ নেই। আপন বলতে শুধু নীরা। সবি ছিল এক সময়। নীরা আর আমি ভালোবেসে বিয়ে করি। অবশ্য ওর পরিবারোও রাজি ছিলো। ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল যখন আমি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি।বাবা মা মারা যাও পর আমি একদম ভেঙ্গে পরি। তখন আমাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল আমার বন্ধু আকাশ। ওর মাধ্যমে একটা টিউশনি খুজে পাই। টিউশনি টা একটা মেয়েকে পড়াতে হবে। মেয়েটির নাম নাকি নিলা। সে ক্লাস ৭ এ পড়তো।..টিউশনি করিয়ে যা পেতাম তাই দিয়ে কোনো রকমে আমার চলে যেত। আর আমি যাকে টিউশনি করাতাম সে ছিল নীরার ছোট বোন।…এভাবেই আমাদের পরিচয় হয়েছিল। আমরা যাস্ট ওর বাড়িতেই কথা বলতাম।আমার ফোন নাম্বারো ছিলো ওর লাছে কিন্তু কোনদিন কথা হয়নি। আজ টিউশনি বন্ধ। তাই রুমে শুয়ে আছি।হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো।তাকিয়ে দেখি unknown নাম্বার। দেখতে দেখতে প্রথম বার কেটে গেল। ২য় বার কল আসতেই রিসিভ করে
হ্যালো…আসছালামুআলাইকুম(আমি)
ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠে জবাব এলো ওয়ালাইকুমুস্ছালাম।
কে বলছেন?..(আমি)
— আমি নীরা।(নীরা)
— ও তা আজ হঠৎ করে ফোন দিলেন যে
— কেন ফোন দিতে কি মানা আছে।
— তা অবশ্য না..কিন্তু আপনি তো কোন দিন ফোন দেননি তাই।
— আচ্ছা আপনার কি কোন কাজ আছে বিকালে।
— তেমন কিছু নাই..কেন বলুন তো?
— আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন।
— কোথায়
— নদীর ধারে।(নাম গোপন )
— আচ্ছা কখন আসতে হবে বলুন।
— বিকাল ৫টায় আসবেন?
— আচ্ছা আসবো এখন রাখি।
— আচ্ছা
.আমি ফোন কেটে দিয়ে ভাবছি কিছু কি হয়েছে। না হলে আমাকে এতো দিন ফোন দেয় নি কিন্তু আজ হঠাৎ কি মনে করে ফোন দিলো। যাক অবশেষে আমি গেলাম নদীর ধারে। গিয়ে দেখি নীরা আগে থেকেই ওখানে ছিলো। ও একটা নীল শাড়ি পরে এসেছে। হাল্কা মেকাপ করেছে আর হাতে কাঁচের চুড়ি।যা সুন্দর লাগছে না..আমি হা করে তাকিয়ে আছি।নীরার ডাকে ঘোর ভাঙলো।
— কি দেখছেন এইভাবে। (নীরা)
— আমি ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে বললাম
— কিছু না।(আমি)
— আপনি জানেন আমি আপনাকে কেন দেখেছি?(নীরা)
— না,কেন ডেকেছেন?(আমি)
— আপনাকে কিছু বলার ছিলো?
— কি বলুন।
— দেখুন আমি সব সময় সোজা কথা বলতে পছন্দ করি।
— হুম তো
— আমি আপনাকে ভালোবাসি।
–কি
— আমি আপনাকে ভালোবাসি।
— আপনি ঠিক আছেন তো?
— হুম আমি ঠিক আছি।
— না আপনি ঠিক নেই।
–কেন ?
— কারণ আপনি যা বলছেন তা কখনো হয় না।
— কেন হয় না। আমি কি দেখতে খারাপ। আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়নি।….
— তা না
— তাহলে
— আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
— কি জানিনা বলুন।
— তাহলে শোনুন তারপর ওকে সব খুলে বললাম। বলার পর ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
— আমি সত্যিই আপনাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আপনি আমাকে দুরে ঠেলে দিয়েন না। আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। আপনি কি আমাকে সুযোগ দিবেন আপনার পাশে থেকে আপনার সেবা করার।(নীরা)
— আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না তো?(আমি)
— এজীবন থাকতে না।
এভাবে চলতে থাকলো আমাদের প্রেম। দেখতে দেখতে আমার অনার্স কমপ্লিট হলো। একটা চাকরিও পেলাম। তারপর ওর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেই। নীরাই ওর পরিবার কে রাজি করায়। তারপর তো আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল।
এই কি ভাবছেন? (নীরা)
নীরার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
–কি হলো কি ভাবছেন?(নীরা)
— না কিছু না।(আমি)
— তাহলে খাচ্ছেন না কেন?
— এই তুমি খাইয়ে দেও গো।
— কেন নিজের হাতে খেতে পারেন না।
— না পারি না।…
— ঠং না করে খান।
— তুমি খাইয়ে না দিলে খাব না।
— ওহ এই মানুষটাকে নিয়ে যে কি করি। দিনদিন মনে হয় বাচ্চা হচ্ছে। হা করো
নীরা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি নীরার দিকে চেয়ে আছি। কি অরুপ সুন্দর যত দেখছি ততো যেন প্রেমে পরছি। তারপর দুজনে খাওয়া শেষ করলাম। খাওয়া শেষ করে আমি ঘরে গেলাম আর নীরা সব কিছু গোছাতে লাগলো। এভাবে কাটছিলো আমাদের দিনগুলি। দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেল। আজ আমাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী। পাগলীটা ঘুমিয়ে আছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১২.০০ বাজে। তাই আমি নীরার পাশে বসে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম। দিতেই ও চোখ খুলে তাকালো।
— কি ব্যাপার এখনো ঘুমাননি।(নীরা)
— হ্যাপি এনিভার্সারি….আমার পাগলী বউ।(আমি)
— কি আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী।….আমি তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম।
এবার উঠো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।(আমি)
— কি সারপ্রাইজ গো?(নীরা)
— আগে উঠোই না।
— এই যে উঠেছি এবার বলেন। আমি কোন কথা না বলে নীরা কে কোলে করে নিয়ে ছাদে গেলাম। ছাদে আগেই সব কিছু রেডী করে রেখেছিলাম। ছাদে নিয়ে গিয়ে..ওকে নামিয়ে দিয়ে ওর সামনে একটা কেক রাখলাম। তারপর একটা মোমবাতি জালিয়ে দিলাম। ও মোম বাতি নিয়ে দিল আর দুজনে কেক কাটলাম। তারপর আমি বললাম
— তোমার জন্য একটা গিফ আছে।..(আমি)
— কি গিফ?(নীরা)
— আগে চোখ বন্ধ করো।
— কেন ?
— আহা করো না বলছি?
— এই যে চোখ বন্ধ করছি। এবার বলেন?
— হুম এবার চোখ খোল।
— এইটা কি ?
— খুলেই দেখো না
— ওয়াও
— পছন্দ হয়েছে তোমার ?
— হুম,,খুব সুন্দর । আপনি একটু দাড়ান আমি এটা পরে আসছি।
— হুম যাও। কিছুক্ষণ পর নীরা শাড়িটা পরে আসলো। যা সুন্দর লাগছে না ওকে। আমি আর সামলাতে না পেরে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। নীরাও কিছু না বলে শুধু বললো।
— এবার বলেনতো আমাকে কেমন লাগছে?(নীরা)
— আপনি নয় এখন থেকে শুধু তুমি..(আমি)
— আচ্ছা বাবা..তুমি। হয়েছে
— হুম
— এবার বলো আমাকে কেমন লাগছে।
— একদম নীল পরীর মতো লাগছে।
— সত্যি বলছো।
— হুম আমার পাগলী বউ সত্যি বলছি ।
— হুম শুধু তোমারই পাগলী । আর তুমি আমার পাগলা। শুধু আমার
— হুম আমি তোমার আর তুমি শুধুই আমার। এই পাগলী টাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি। এই পাগলী টাকে ছাড়া আমি মরে যাবো।
— এই চুপ একদম চুপ।(আমার মুখ চেপে ধরে)
— আর কখনো এসব কথা মুখে তুলবে না। আমি কি তোমাকে কম ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমিও বাচবো না।(নীরা)
— আমি জানি আমার পাগলীটা আমাকে অনেক ভালোবাসে। (আমি)
— হুম এই পাগলটা যে আমাকে তার প্রেমে বস করে রেখেছে। তাকে কি ভালো না বেসে থাকা যায়।
আমি আর ওকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি আমার দুষ্টমিতে ওর ঠোঁট ভরে দিলাম। নীরাও আর সহ্য করতে না পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমি ওকে কোলে করে নিয়ে রুমে আসলাম। রুমে এসে ওকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে আমরা দুজনেই হাড়িয়ে গেলাম ভালিবাসার অতলে আরে বাকিটা আপনাদের জানার দরকার নেই।
(সমাপ্ত)