লাইব্রেরি প্রেম

লাইব্রেরি প্রেম

আমাদের প্রেমটা হবে লাইব্রেরিতে। সেখানে দরকার ছাড়া খুব একটা কথা বলা যায় না তাই আমাদের প্রেমালাপটা হবে চোখাচোখি। প্রেম হোক আর ভালোবাসা হোক, চোখের ভাষা বুঝতে হয় আর যাই হোক চোখ যে মনের কথা বলে। লেকের ধার,পার্ক,রাস্তার ধার– এসব জায়গায় প্রেম করতে নেই..আশেপাশে অন্যান্য প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখলে মনে হয়, ইশশ আমাদের প্রেমের গল্পটাও যদি তাদের মতো হতো!

কিন্তু লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বইয়ের ভীড়ে শুধু একটা কথাই মাথায় আসে, এই বইগুলো চিরকাল এভাবে পাশাপাশি থাকে..কেউ কাউকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় না এই যেমন- কেউ একটা বই তাক থেকে বের করে নিয়ে পড়লো। পড়া শেষে বইটাকে তার আগের জায়গায়ই রাখতে হয় আবার কেউ একটা বই সপ্তাহখানেক এর জন্য নিলে ফেরত দেওয়ার পর লাইব্রেরিয়ান কিন্তু ঠিকই বইটাকে আগের জায়গায়, আগে ঠিক যেই বইয়ের পাশে ছিল তার পাশেই রাখে।

খেয়াল করে দেখলে এর মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল পাওয়া যাত আর তা হলো,”সারাটা কাল পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা। মাঝেমধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও বন্ধন বিচ্ছিন্ন না হবার প্রতিজ্ঞা।”

আর এটা শেখানোর জন্যই তোমায় নিয়ে যাবো হাজারটা বইয়ের ভীড়ে,”লাইব্রেরিতে”। কতোই তো প্রেমালাপ হয়, কতোই তো প্রতিজ্ঞা হয়। কিন্তু কই? সব প্রতিজ্ঞা তো আর রাখা হয় না..ওই বইগুলোর মধ্যেও নিশ্চয়ই কোন এমন প্রতিজ্ঞা রয়েছে। তারা তো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে ঠিকই..আর তুমি,আমি কিনা বই পড়ে, বই জেনে, বই লিখেও বইয়ের মতো হতে পারবো না!

সারাজীবন পাশাপাশি থাকার, কাঁধে মাথা রেখে ভোরের সূর্য দেখার ইস্পাতদৃঢ় মনোবলটা যে বইয়ের কাছ থেকেই আয়ত্ত করে নিতে হয়। সবাই তো বলি,”বই আমাদের প্রকৃত বন্ধু।” তবে প্রকৃত এই বন্ধুদের সাক্ষী রেখেই আমাদের প্রেম হবে..

কোনো লেকের ধার, ল্যাম্পপোষ্টের আলোর নিচের জনশূন্য রাস্তা, পার্কের কোনো বেঞ্চকে সাক্ষী রেখে প্রেম করবো না আমরা। তারা আবহাওয়ার মতো পাল্টে যাত..লেকের ধারটায় হঠাৎই শরতের কাশফুল ফুটে উঠে, ল্যাম্পপোষ্টের আলোর নিচের জনশূন্য জায়গাটাও মুহূর্তের মধ্যে কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠে, পার্কের শূন্য বেঞ্চটাও ক্ষাণিকপর পূর্ণ হয়ে উঠে.. বদলে যায় সবকিছুই.. কিন্তু লাইব্রেরিটা!! ওটা ঠিক আগের মতোই রয়ে যায়। বইয়ের তাকগুলোতে বইগুলো ধূলোবালি জড়ানো থাকলেও পাশাপাশি রয়ে যায়..এতোটুকু যত্ন না পেলেও অভিযোগ-অভিমান না করে দিব্যি ভালোবেসে যায়..

তোমায় ঠিক সেই ভালোবাসাটা শেখাতেই নিয়ে যাবো সেখানে..সবসময়ই যে শর্ত দিয়ে ভালোবাসা হয় না তা শিখবে তুমি। যত্নহীন ভালোবাসা পেয়েও যে অপরূপ মায়ার বন্ধনজালে আটকে থাকা যায় তা জানবে তুমি.. সবশেষে সব অভিযোগ-অভিমান ছেড়ে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে হয়, এটাও জানবে!.

তারপর? তারপর আর কি! টেবিলে মুখোমুখি দুটো চেয়ার টেনে দুটো উপন্যাস নিয়ে বসবো দুজনে। এরপর দুজনেই ডুবে যাবো বইয়ের পাতার ভাঁজে..কি ভাবছো? চোখাচোখি প্রেমালাপ কখন হবে? বেশ বলছি তো..

পড়তে পড়তেই হুট করে বইয়ের আড়ালে মুখটা সামান্য লুকিয়ে গাঢ় কাজলের প্রলেপ মাখানো চোখদুটো দিয়ে তোমায় উৎসুক দৃষ্টিতে দেখবো। তুমি তখনো বইয়ের ভেতর কোনো এক অসমাপ্ত পংক্তিমালার সমাপ্তি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে..কিন্তু আমি মায়াভরা চোখে চেয়েই থাকবো ক্যাবলা এই ছেলেটার দিকে!

তুমিও আমায় বেশ অবাক করিয়ে দিয়ে বইয়ের আড়াল থেকে মাথা তুলে চশমার কাঁচের ভেতর থেকে আড়চোখে তাকাবে তোমার চাহনিতে থাকবে চুরি করে ধরা পড়ে যাওয়া চোরের মতো নজর..আর তা দেখেই আমি ফিক করে হেসে ফেলবো!

এবার তুমিও ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইবে,”এ্যাঁইই হাসলে কেন?”
আমি বিজ্ঞের মতো গম্ভীর গলায় বলবো,”তোমার চোখ দেখে হেসেছি।”
তুমি খানিকটা অপ্রস্তুত সুরে বলবে,”কি এমন দেখলে চোখে?”

আমি এবার মাথাটা খানিক ঝুঁকিয়ে ফিসফিস করে বলবো,”প্রলয় দেখেছি! এমন প্রলয় যা মুহূর্তেই মনে ঝড় বইয়ে দিতে পারে”

তুমিও এবার চোখে চোখ রেখে সাহস দেখিয়ে বলবে, “ঝড় দেখলে ভয় হয় না? হাসতে ইচ্ছে হয়?” আমি আরো হেসে বলবো,”হাসির কবলে পড়ে ঝড় তো থেমেও যেতে পারে তাই হাসি”

এবার তুমি আমায় আগের চেয়েও অবাক করিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলবে,”উঁহু! এই হাসি, কাজলকালো চোখদুটোর মায়াই যে প্রলয়ের সৃষ্টি করে..সারাটা হৃদয়জুড়ে গড়ে তোলে বিশাল এক তোলপাড়”

ব্যাস! আমি তাকিয়েই থাকবো..আর তুমি আমার হাতে তোমার পড়া সেই অসমাপ্ত উপন্যাস খন্ডটা ধরিয়ে দিয়েই বেরিয়ে যাবে সেখান থেকে..বইটা কেমন যেনো ফুলেফেঁপে আছে! ভেতরে কোনো ভাঁজ আছে হয়তো! এটা চিন্তা করতে করতেই বইটা খুলবো আমি..বই খুলেই দেখবো তোমার লেখা একটা চিরকুট ভাঁজ করে রাখা তাতে..
চিরকুটে লেখা,”আজ থেকে আর ক্যাবলা ছেলে ডাকা চলবে না কিন্তু..আজ থেকে যে আমার অন্য নাম হলো, “লাইব্রেরি প্রেমিক।” তো,,কাল দেখা হচ্ছে তো লাইব্রেরিতে,”বইপোকা ম্যাডাম?”

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত