আপনি খুব ভালো ছেলে

আপনি খুব ভালো ছেলে

অফিসের কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল। রিক্সা পাচ্ছি না। তবুও একটা রিক্সা পেলাম। রিক্সা করে বাসার কাছে আসতেই দেখি একটা মেয়ে আমার রিক্সার দিকে ছুটে আসল। আমার কাছে এসেই বলল ” আমাকে একটু সাহায্য করবেন? ”

আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা ডাকাত নয় তো। এ রকম অনেক মেয়ে দেখছি রাতকে ডাকাতি করে। আমি বললাম ” কি করতে পারি আপনার জন্য ? ” মেয়েটা কান্না করে বলল ” আমি এই ঢাকা শহর টা ভালো করে চিনি না। এখানে এসেছিলাম আন্টির বাসায়। আন্টির বাসার এড্রেস ব্যাগে রেখেছিলাম । কিন্তু একদল ছেলে আমার মোবাইল আর ব্যাগ টা চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন আমি কোথায় যাব কোথায় তাকব কিছু বুঝতে পারছি না । ”

আমার খুব ভয় করতাছে। আমি তো ভাবলাম আমাকে নরম নরম কথা বলে বোকা বানানো হচ্ছে। তাই বললাম ” এই নেন আমার মোবাইল বাসায় ফোন দেন। ”

মেয়েটা আমার মোবাইল নিয়ে বাসায় ফোন দিল। তবুও আমি বিশ্বাস করলাম না। আমি বললাম ” এখন আমি যাই। আপনার বাসায় ফোন দিয়েছেন এখন আপনাকে তারা নিয়ে যাবে। ”

এই কথা বলতেই মেয়েটা ভ্যা করে কান্না করে দিল। মেয়েটা কান্না করে বলল ” আপনি এতো খারাপ। একটা মেয়ে কে এভাবে একা রেখে চলে যাচ্ছেন ?

আমি মিনমিন করে বললাম ” তাইলে কি আমি আপনাকে আমার সাথে করে বাসায় নিয়ে যাব। ”
এই কথা বলতে না বলতেই মেয়েটা বলল ” আপনি আমাকে আপনার বাসায় নিয়ে যান সকাল হলে চলে যাব। ”
আমি সাথে সাথে বললাম ” না না তা হবে না। আমি একা বাসায় থাকি। কখনও না জীবনেও না। ”

মেয়েটা আবার কান্না করে দিল। আমি মেয়েটার কান্না দেখে বললাম ” শুনেন মেয়ে মানুষের কান্না আমি সহ্য করতে পারি না একটু নিরব হয়ে আমার রিক্সায় উঠেন। ”

মেয়েটা রিক্সায় উঠল। আমিও সাথে সাথে বললাম ” কিছু জায়গা ফাক তাকবে আমাদের মাঝে বলে দিলাম। ”
মেয়েটা একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। হয়তো এ কথা বলার জন্য। মেয়েটা চুপ হয়ে সামনের দিকে চেয়ে আছে। চোখ থেকে পানি পড়ছে। আমি বললাম ” কান্না করেন কেন ? ”

মেয়েটা বলল ” আমার ব্যাগ আর মোবাইলের জন্য। ”
আমি বললাম ” আপনার বাসা কোথায় ?
মেয়েটা কান্না থামিয়ে বলে ” সিলেট। ”
তারপর আর কিছু বলে নি।

বাসার কাছে আসতেই মেয়েটাকে বললাম ” শুনেন এখানে অনেক পরিবার থাকে। আমাকে বিপদে ফেলবেন না। আমি আপনার কাছে একটা অনুরোধ করলাম। ”
মেয়েটা বলল ” সত্যি আপনাকে বিপদে ফেলব না। ”

আমি তো রাতে রান্না করি। বাসায় খাবার নেই। আমি মেয়েটাকে বললাম ” আপনি ফ্রেশ হতে চাইলে ওয়াশরুমে যেতে পারেন। আমি আপনার জন্য খাবার তৈরি করছি। ”

তারপর মেয়েটা বলল ” আপনি যান আমি আপনার জন্য খাবার তৈরি করছি। রান্নাঘর টা দেখিয়ে দেন। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা কে সুযোগ দেওয়া যাবে না যদি খাবারে বিষ মাখিয়ে দেয় তাইলে আমি একাবারে শেষ তাই বললাম ” না আপনি যান। আমি করতাছি। ”

রাতের বেলা ঘুমানো যাবে না । আমি বললাম দেখেন আমার অফিসের কাজ আছে কাজ করতে হবে । আপনি ঘুমিয়ে যান। মেয়েটা আমার কথা শুনে ঘুমিয়ে গেল। আমি ২ টার পর সোফায় ঘুমিয়ে থাকলাম । তারপর সকাল ৮ টায় উঠলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি সজাগ। মেয়েটা কে দেখলাম ঘুমিয়ে আছে। আমি কফি করে মেয়েটার জন্য আনলাম। মেয়েটা কে ঘুম থেকে তুলে হাতে কফি দিয়ে আমার কাজ করতে লাগলাম। রান্নাবান্না করলাম। আমি অফিস যাব আর মেয়েটা কেও সাথে করে নিলাম। বাসের টিকেট কাটলাম। মেয়ে টা আমাকে অনেক ধন্যবাদ দিল। মেয়েটা আমার নাম্বার নিল। মেয়েটা কে ২ হাজার টাকা দিলাম। উপকার যেমন করেছি ভালো করে উপকার করলাম। বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। মেয়ে টা বাসায় গেল কিনা তা জানতে পারলাম না। মেয়েটা কলও দেয় নি । তারপর আমার মনে হল মেয়েটা তো আমার মোবাইল দিয়ে কল দিয়েছিল তাই মোবাইল টা বের করলাম কিন্তু নাম্বার পাই নি।

৬ মাস পর আমার অফিসের কাজের জন্য সিলেট গেলাম। সিলেটে গিয়ে একটা দোকান খুঁজতে লাগলাম। দোকান টা অনেক বড়। অফিসের বস আমাকে পাঠিয়েছেন কাগজ টা দিতে। কিছু সময় খুজার পর দোকান টা পেলাম। কাগজ দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে যাব এমন সময় পেটে অনেক খিদা লাগল। তাই খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে লাগলাম একটা মেয়ে আমাকে পিছনের দিক দিয়ে ডাকতে ডাকতে আমার সামনে আসল। মেয়েটা কে আমি চিনে ফেললাম সেই মেয়ে টা। আমি বললাম ” আপনি ? ”

মেয়েটা আমার কথা শুনে বলে ” আমি অনেক সরি। সেদিন আপনার নাম্বার টা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি দুই মাস পর আপনার খুঁজে ঢাকা যাইতে ছিলাম। আপনি এখানে কি কারণে এসেছেন ? ”

আমি খেতে খেতে বললাম ” অফিসের কাজে। ”
মেয়েটা বলল ” চলেন আমার মায়ের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেই। ”
আমি বললাম ” আগে খাই তারপর যাব। আপনি খাবেন কি? ”

এই কথা বলতে মেয়ে টা না করল। খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর মেয়েটার মায়ের সাথে পরিচয় হলাম। আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন। এমন ভাবে কথা বললেন যেন আমি তাদের নিজের আপন লোক। আমারও খুব ভালো লাগল। আমি এক সময় বললাম ” আমার যেতে হবে নইলে বাস মিস করে ফেলবো। ”

তারপর মেয়েটা কিছু পথ এগিয়ে দিতে আসতে চাইল। আমি না করলাম। মেয়েটা কে আমি বললাম আপনার নাম

কি ? ”
মেয়ে টা বলল ” রূপা। ”
রূপা আবার আমার নাম্বার চাইল। আমি নাম্বার দিলাম। তারপর বাসে উঠলাম।
বাসে উঠে বাসায় আসতে লাগলাম।

রূপা রাতে কল দিয়ে জানতে চাইল কি করি আমি বললাম ” এইতো অফিসের কাজ করি। ”
দু’জনের মধ্যে অনেক কথা হলো।

কয়েক দিন পর রূপা ঢাকা গেল। তার আন্টির বাসায় এবার ঠিকানা ভুল করে নি। আমাকে কল দিয়ে দেখা করতে বলল। আমিও রূপার সাথে দেখা করলাম। রূপা কিছু শপিং করল। রূপা অনেক কেনাকাটা করল। একসময় আমাকে বলল ” এক কাজ করেন। আমার ভাইয়ের জন্য একটা টিশার্ট কিনব। এক কাজ করেন আপনার মাপ টা দেন। আমিও একদম মাপ টা দিয়ে দিলাম। আমি দেখতে পেলাম শার্ট অনেক দাম। ১৫০০ টাকা। আমি একটা কাশি দিলাম। এতো দাম দিয়ে জীবনেও শার্ট পড়ে নি। সব কাজ শেষ করার পর রূপা চলে গেল। রূপা খুব ভোরে কল দিল। বলল দেখা করতে। আমি তৈরি হয়ে দেখা করলাম। হাতে দেখতে পেলাম কিছু খাবার। আমাকে বলল ” নেন আপনার জন্য। আপনি খান। ”

আমি বললাম বাসায় গিয়ে খাব। আমি চলে আসতে যাব রূপা ডাক দিয়ে বলল ” এই শার্ট টা রাখেন আপনার জন্য কিনেছিলাম। ”

আমি বোকা হয়ে বললাম ” এইটা আপনার ভাইয়ের জন্য ? ”
রূপা এমনিতেই সুন্দর। তাই হাসি দিয়ে বলে ” জ্বী না এই টা আপনার জন্য কিনেছিলাম। ”
আমি বললাম ” তাই। ”

রুপা যাওয়ার সময় বলল ” আমি আজ চলে যাব। ভালো থাকবেন। ”

দুই মাস যাওয়ার পর রূপা আমাকে বলল ” আপনি কি আমাদের বাসায় আসতে পারবেন কিছু কথা ছিল। ”
আমি বললাম ” এমন কি কথা ফোনে বলা যায় না ? ”

রূপা অনেক অনুরোধ করল তারপর একদিন সময় বুঝে রূপাদের বাসায় গেলাম। রূপাদের বাসা টা খুব সুন্দর। অনেক ফুল গাছ। আমি ভিতরে যেতেই বৃদ্ধ একজন মানুষ দেখলাম। আমি প্রথম উনাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন। আমাকে বসতে বললেন। তারপর তিনি একটা খবরের কাগজ নিলেন। আমাকে বললেন ” কি করো ? ” আমি বললাম চাকরী করি।

আমি দেখতে পেলাম রূপা আসছে। অন্য দিন থেকে রূপা কে আজ খুব সুন্দর লাগছে। রূপা চুপ করে বসে আছে। এখন আমি বুঝতে পারলাম এই বৃদ্ধলোক রূপার বাবা। আমাকে বললেন ” বাসায় কে কে ? ”
আমি বললাম ” মা বাবা ভাই বোন। ”

রূপার বাবা বললেন ” আমার মেয়েকে পছন্দ করো। ”
রূপা দাঁত মুখ কেমন অসহায় ভাব নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আমাকে বলতাছে ” হ্যা বলতে। ”
আমি কেমন যেন অনুভূতি অনুভব করলাম। তারপর বললাম ” হ্যা। ”
রূপার বাবা আবার জিজ্ঞাস করলেন ” আমার মেয়ে কে কয় বছর ধরে ভালবাসো ? ”

রূপা হাত দিয়ে ৫ বছর বলতে বলল । আমি মনে ভাবতে লাগলাম এই মেয়ে কি পাগল। এক বছর হলো না পরিচয় হয়েছে আর বলছে ৫ বছর এইটা কি করে সম্ভাব। আমিও বলে দিলাম ৫ বছর। রূপার বাবা হাসি দিয়ে বললেন ” আমার মেয়ে কে সুখে রাখতে পারবে ? ”

রূপা আমার দিকে চেয়ে হাসি দিয়ে বলে ” হ্যা বলতে। ”
আমিও হ্যা বলে দিলাম। তারপর রূপার বাবা উঠে গেলেন। আমি তো কিছুই বুঝতে পারে নি। রূপাকে বললাম ” এগুলা কি ? ”

রূপা মিটমিট হাসি দিয়ে বলে ” আপনার সাথে আমার বিয়ে ? কেন আপনার কি কোনো গফ আছে নাকি ? আর যদিও থাকে সে বাদ আজ থেকে আমি তাকব আপনার স্বপ্নের দেশে। কেন আমাকে বিয়ে করবেন না ? ”
আমি রূপার দিকে চেয়ে বললাম ” ভাবতে হবে ? ”

রূপা মন খারাপ করে বলল ” ভাবতে হবে না আমি খুব ভালো মেয়ে। আমি ছোট বেলা থেকে ভালো মেয়ে। দরকার হলে মাকে জিজ্ঞাস করেন যান। ”

আমি বললাম ” আচ্ছা আমাকে কেন বিয়ে করতে চাও ? ”
রূপা এবার হাসি দিয়ে বলে ” আপনি খুব ভালো ছেলে। ”
আমিও মাথা টা নিচু করে বললাম ” বিয়েতে রাজি আমি। “

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত