গত এক সপ্তাহ ধরে আমি দিনে অন্তত
তিনটা করে সিনেমা দেখছি।
সেগুলোর
মধ্যে হিন্দী+ইংলিশ রয়েছে। অবশ্য
তার
সবগুলিই রোমান্টিক। আসল কাহিনীটা
হলো চন্দ্রীমার মতে আমি একটা
আনরোমান্টিক ভদ্র ছেলে। রিলেশনের
ছয়
ছয়টা মাস গেলো অথচ আমি হাতে
গোনা
কয়েকবার ওর হাত ধরেছি। ও আকার
ইঙ্গিতে অনেকবার বোঝাতে চেয়েছে
কিন্তু আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে
গেছি। আমি জানিনা ও কেন আমার
মতো
এমন একটা ছেলেকে ভালোবাসলো!!
.
সেদিন হঠাৎ করেই ফোন আসলো দুপুর
বেলা।
ভার্সিটির গেট পার হতেই আমাকে
ফোন
দিয়ে বললো এই মুহূর্তে আমার বাসার
সামনে আসো। কথামতো গেলাম।
– এই লিস্টগুলো নাও।
-কিসের ??
-যেসব মুভির নাম আছে সবগুলো দেখবা
আগামী দশ দিনে। বলেই চলে গেলো।
-আমি লিস্টের দিকে তাকিয়ে হতাশ
কারণ
সবগুলোই রোমান্টিক। আর আমি তো
ডিটেকটিভ, অ্যাডভেঞ্চারের ভক্ত।
যদি কথা না শুনি তাহলে হয়তো ….
সেই থেকে আমার সিনেমা দেখার
মিশন
শুরু হইছে। যদিও ইংরেজি মুভিগুলো
মনোযোগ দিয়ে দেখলেও হিন্দী গুলো
আধঘন্টায় শেষ করে ফেলতাম।
.
10 Days Letter….
আজ চন্দ্রীমা ডেকেছে। যাই দেখি
কপালে
আজ কি থাকে !!
-হাই।
-সবছবিগুলো দেখেছো ??
-ইয়ে না মানে সময় হয়নি তো তাই
সবশেষ
হয়নি।
-মুখটা ঘুরিয়ে বসে থাকলো।
-শুনতে পাচ্ছো চলো একটু হাঁটি।
-আমার কথা শুনে ভেবেছিলো হাঁটার
সময়
ওর হাতটা এইবার অন্তত ধরবো। কিন্তু
কোথায় কি !! আমি যেমন ছিলাম
সেরকমই
আছি। ওর মুখের চাহনি দেখে বুঝা
যাচ্ছে
যে ও বেশ বিরক্ত আমার উপর।
আর হবে না কেন ?? প্রত্যেক মেয়েই
তো
চায় যে তার সঙ্গী তার হাত ধরে
একসাথে
রাস্তা চলবে। আর আমি ??
.
-এই কয়েকদিনেও আমার যথেষ্ট অবনতি
হয়েছে বলে আমার মনে হয়। সিনেমায়
এতো
সুন্দর মুহূর্তগুলো দেখার পর আমি
সিদ্ধান্ত
নিতাম আজকে রোমান্টিক কিছু করবই।
কিন্তু ওর পাশে থাকলে আমার মনেই
হয়না
যে আমি সিনেমাগুলো দেখেছি।
আমার
মষ্তিষ্কে চাপ দিলে বের হয়ে আসে
ইন্ডিয়ানা জোনসের রহস্যভেদ,
জেমস বন্ডের অ্যাকশন দৃশ্য। কখনো বা
রোনালদোর বল নিয়ে ছুটে চলাও
মাথায়
ঘুরপাক খায়। অথচ কত সুন্দর
মুহূর্তগুলোকে
আমি মাথায় বন্দী করেছি।
আর ওর সামনে আসলে সব হারিয়ে যায়।
-তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা
সম্ভব
নয়।
-প্রচন্ড রকম শক পেলেও বলি হুম জানি ।
-তোমার মধ্যে কোনো রোমান্টিকতা
নেই।
আমার হাত নিজ ইচ্ছায় কখনো ধরেছো ?
-না ।
-কখনো আমাকে নিয়ে ফুচকা খেতে
গিয়েছো ? সব আমি বলার পরে করেছো।
আমি চাইনা তোমার মতো ….
যাই হোক আজ থেকে আমাদের
ব্রেকআপ।
আর আমি ভেবেও পাইনা কি করে
তোমার
মতো একটা ছেলের সাথে আমি
রিলেশন
করলাম।
মাথা নিচু করে ছিলাম….
সবকিছু হজম করলাম। ও চলে গেল।
.
ইদানিং আমার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য
করছি। মেয়েদের সাথে কথা বলার
জড়তা
কেটে গিয়েছে। পড়াশোনা সহ
বিভিন্ন
বিষয়ে কথা বলি। কাছের বন্ধুরাও
পর্যন্ত
অবাক। আমি এখন যতটা স্বাচ্ছন্দে কথা
বলি চন্দ্রীমা ততই আমার দিকে কঠোর
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মনে হয়
আমাকে
বোবা করে দিতে পারলে ভালো হতো।
চন্দ্রীমাকে আজকাল দেখি বিজয়ের
সাথে
ঘুরতে। হয়তো বিজয় খুবই রোমান্টিক।
একসাথে প্রায়ই ওদের ঘুরতে দেখা যায়।
আমি অবশ্য মনে মনে নিজের উপর ভিষণ
ক্ষুব্ধ। কারণ আমার জন্যই তো চন্দ্রী
চলে
গিয়েছে…. ভেতরে ভেতরে খুব জ্বলে
আমার।
.
চন্দ্রীমা গেটে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
হয়তো
বিজয় আসেনি।
-কি হলো চন্দ্রী কাঁদছ কেনো ?
-চুপ
-চন্দ্রীমা কথা বলো।
পুরো নাম ধরে ডাকতেই আমাকে
জড়িয়ে
ধরলো। একটু অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। কারণ
ওতো এখন আমার না। এই ছেড়ে দাও
বিজয়
যেকোনো সময় আসতে পারে।
-কাঁদতে কাঁদতেই বললো ওর নাম
নিবানা
আর।
-কেন ?
-তোমাকে জেলাস করানোর জন্য ওর
সাথে
কয়েকদিন মিশেছি। ও সব জানতো কেন
মিশছি। আজ আমাকে খারাপ প্রস্তাব
দিয়েছে।
-কু*** বা** টা কই ? অনেক রেগে গেছি।
কারণ আমার চন্দ্রীর সাথে এমন আচরণ
আমি মেনে নেবো না।
-থাক বাদ দাও। যা হবার হয়ে গেছে।
-কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললাম এখন
বাসায়
যাবে ?
-হুম।
-এই রিক্শা ! যাও উঠে পড়ো।
-তুমি ও আসো।
-না ঠিক আছে। আমি এমনিই পরে চলে
যাবো।
-ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো মনে হয়।
তাই হুট করে উঠেই পড়লাম।
-ওর মুখে একচিলতে হাসি দেখলাম।
-এমন সময় রিয়াও অন্য রিকশা
খুঁজছিলো।
আমাকে দেখে হাই বললো।
জবাবে আমিও হাই বললাম।
রিকশাওয়ালা
টাকা ভাঙাবে বলে দোকানে গেছে।
এই
সুযোগে আরো অনেকক্ষণ কথা হলো।
নেক্সট
ফ্রাইডেতে আমরা সিনেমা হলে
যাবো
সেটা ও মনে করিয়ে দিলো।
চন্দ্রীমা আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে
তাকিয়ে
আছে। মনে হয় কোনো অপরাধ করেছি।
-কিছু বলবা ?
-তুমি ওই মেয়ের সাথে কথা বললা
কেন ?
-আমার ফ্রেন্ড তাই।
আর ফ্রেন্ডের সাথে কথা বললে কি
এমন
হবে ?
-তোমার মুখে খুব কথা ফুটেছে দেখছি।
আর ওকি শুধু ফ্রেন্ড ? নাকি অন্য কিছু।
-কেন ! শুধু ফ্রেন্ড।
-তাহলে এতো হেসে কথা বলার কি
আছে ?
আর সিনেমা একসাথে দেখবি মানে
কি ?
-একি তুই করে বলছো কেন ?
-তোকে আপনি করে ডাকতে হবে ?
-আশ্চর্য সিনেমা দেখতে যাবো এজন্য
এতো
কথা বলার কি আছে !! সিনেমাহলে
ফ্রেন্ডরা যায়না একসাথে !! আর ওতো
দেখতে ভালোই।
-মাথা নিচু করে চন্দ্রীমা ফুঁপিয়ে
কাঁদছে।
-হুহহ ব্রেকআপ করসে আবার ঢং দেখো।
-একথা বলার সাথে সাথে আমার আমার
শার্টের কলার আর গলা চেপে ধরে
বললো
কি বললি তুই ? ব্রেকআপ ?
কোনো ব্রেকআপ নাই। আজ থেকে
ব্রেকআপ
শেষ। ভুলেও কোনো মেয়ের দিকে
তাকাবি
না।
-কিন্তু আমি যে রোমান্টিক না ।
-আমার রোমান্টিক বয়ফ্রেন্ড দরকার
নাই।
আনরোমান্টিকই ভালো। বিয়ের পর
রোমান্টিক হলেই হবে। এই বলেই আমার
হাত ওর দু হাতের মধ্যে নিয়ে আমার
কাঁধে
মাথা রাখলো।
-আর ছেড়ে যাবে নাতো।
-কখখনো না।
ওর চুল গুলো বাতাসে উড়ে আমার মুখে
এসে
পড়ছে। আমি সরিয়ে দিচ্ছি না। কারণ
ওর
চুল থেকে অসম্ভব সুন্দর একটা গন্ধ
আসছে।
যেটাতে নাক ডুবিয়ে রাখতে ইচ্ছা
করছে।
ওর ঠোঁটের নিচে তিলটা আজকে
অনেকদিন
পর আবার মন ভরে দেখলাম। উফফ
মেয়েটা
এত্তো কিউট কেন ???????
.
.
:::::::::::”সমাপ্ত”:::::::::::
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক