প্রেমের গল্প

প্রেমের গল্প

এটা কি আপনার সিট ? বেশ কঠিন গলায় বলল মেয়েটা ! আসলে অনেকে মনে করে সুন্দর মেয়েরা নাকি ধমক দিতে পারে না। কিন্তু আমার মনে হয় কঠিন গলায় কথা বলা টা সুন্দরীদের কাছে কোন ব্যাপার না। মাস খানেক আগের কথা। আমি ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাচ্ছি। বাসে খুব ভীড়। অনেকই দাড়িয়ে আছে। আমার ঠিক পাশেই একটা মেয়ে দাড়িয়ে ! আমি যথেষ্ট চেষ্টা করছি যেন মেয়েটার সাথে আমার কোন রকম ধাক্কা না লাগে ! কিন্তু লেগেই গেল। তবে আমার সাথে না। মেয়েটির সামনে দাড়ানো একটা ছেলের সাথে ! আর যায় কোথায় ! এমন কিছু কথা শোনালো আমি একেবারে চুপ করে শুনতে লাগলাম আর মেয়েরার চেহারার দিকে তাকাতে লাগলাম। মেয়েটার চেহেরাটা কেমন  একটা স্নিগ্ধ ভাব আছে। আমার প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে মেয়েটা এমন কঠিন কথা বলতে পারে। যাই হোক ব্যাগ রাখার সময়ই দেখেছি আমার পাশে বসা মেয়েটিও মাশাল্লা কম সুন্দরী না। এবং সাথে একটু আধুনিক ! পোষাক আষাকে তো তাই মনে হচ্ছে।

কালো জিন্সের সাথে কাল ফতুয়া পরেছে মনে হয় ! এটাকে সম্ভবত ফতুয়াই বলে। ফতুয়ার মাঝ খানে বড় একটা আল্পনা আকা !! আর মেয়েটার ফলায় একটা স্কাপ জড়ানো। ইদানিং মেয়েরা দেখি আর ওড়না পরে না। যাই হোক মেয়েটাকে দেখলাম যথেষ্ট বিরক্ত ! আমি যে তার বিরক্তির কারন এটা বুঝতে পারছি ! অবশ্য মেয়েটাকে আমি খুব বেশি দোষ দেই না। বাসে উঠতে যাবে বাসের সুপার ভাইাজর গেটের মুখেই আমাকে আটকে বলল আপনি এই বাসের ? আমার মনে হল একটা থাপ্পর দেই বেটা কে। কিন্তু দিলাম না । মনে মনে বললাম বেটা ফাজিল আমি এই বাসের না হলে এই বাসে উঠতে যাবো কেন ? আমি খানিকটা বিনয়ের সাথে বললাম জি এই বাসের ! টিকিট দেখাবো? সুপার ভাইজার পথ ছেড়ে দিল। আমি বাসে উঠে মনে হল সুপার ভাইজেরকে কিছু বলি কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম । বেচারাকেও দোষ দিয়ে লাভ নাই ! আমার পোষাক দেখে যে কেউ মনে করবে আমি অযাচিত ভাবে এই ভলভো বাসে উঠে পড়েছি !

মেয়েটা আবার বলল এটা কি আপনার সিট ? আপনি এখানে বসবেন? এবারও তার গলার বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ! আমি এবার একটু হাসি দিলাম। যদিও আমি সকাল বেলাতেই ভাল করে দাত মেজেছি আর আমার দাতও বেশ সুন্দর ! এট লিষ্ট এটা বলতে পারি যে আমার মুখ দিয়ে কোন প্রকার ঘন্ধ বের হয় না। কিন্তু মেয়েটা সেটা বুঝলো না। নিজের মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। আশ্চার্য ফাজিল মেয়ে !! এই ভাবে মুখের উপর কেউ মুখ ঘুরিয়ে নেয় !! হাজার হোক আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছেলে। আরে একটা গেঞ্জি, জিন্স পরে কি ভলভো বাসে উঠা যায় না ? এটা কোন দেশের কথা ?? অবশ্য ক্ষয় হওয়া চটি পরে এই এসি বাসে উঠলে বাস কে অপমান করা হয় ! হায় মানুষজন !! কেবল বাইরের জিনিসটাই দেখলি !! আমার ভিতরের কি আছে এইটা দেখলি না ?? আমি মেয়েটির পাশে বসে পড়লাম।

সকাল বেলা বাসায় যাওয়ার কোন প্লানই ছিল না। ভার্সিটি থেকে এস কি মনে হল যাই একবার বাসা থেকে ঘুরে আসি। আমার আবার একবার কিছু মনে হলে সেই কাজটা না করে শান্তি নাই !! আমার বাসায় যাবো এই কথা মনে হলে তো কোন কথাই নাই। কেউ আমাকে ধরে রাখতে পারে না। কোন মতে কিছু গোজ গাছ করেই রওনা দিয়ে দিলাম। হঠাৎ করে আসাতে অন্য বাসের কোন সিট পেলাম না। তাই রয়েল এক্সপ্রেসই ফাকা ছিল। আমাদের এলাকার এমপি নতুন গাড়ি নামিয়েছে। কি মনে হল যাই ভলভোতে !!

আগে যদি জানতাম যে আমাকে ভলভে যেতে হবে তাহলে আরো ভালো গেট আপ নিয়ে আসতাম। হাজার হলেও এসি গাড়ীর একটা মানসম্মান আছে তো !! যদিও খুব একটা সমস্যা নাই স্নিকারটা ব্যাগেই আছে। একটা স্তিরি করা শার্টও আছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো !! পাশের মেয়েটা এখনও কেমন মুখ শক্ত করে বসে আছে। কেমন একটা নাক সিটকানো ভাব !! না !! এই মেয়ের একটা কিছু করতেই হবে !! আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটা হিমু স্টাইলে হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর বললাম আমার শরীর থেকে কি খুব দূর্ঘন্ধ বের হচ্ছে ?? মেয়েটা কোন জবাব না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি আর একটু হেসে বললাম একটু সহজ হয়ে বসুন ! আর মুখটা একটু সহজ করেন ! এমন করে যদি চার পাঁচ ঘন্টা বসে থাকেন তাহলে মুখের পেশি ব্যাথা হয়ে যাবে !!

এবার মনে হল একটু বেশি বলা হয়ে গেল। মেয়েটা বলল আমি কিভাবে বসবো সেটা আমার বিষয় ! আপনি আপনার চরকায় তেল দিন ! আরে সেটাই তো দিতে চেষ্টা করছি। আপনিই বলুন পাশে যদি একটা সুন্দরী মেয়ে বসে থাকে একটা ছেলের কি অন্য দিকে মন ঘোড়ানো সম্ভব? এবার দেখলাম মেয়েটার মুখের পেশি একটু সোজা হল? আসলে যতই বিরক্ত হোক না কেন মেয়েরা সম সময় নিজেদের প্রশংসা শুনলে খুশি হয় ! হবেই ! মেয়েটা আর কিছু বলল না। আবারও অন্য দিকে মুখ ঘুরে তাকালো !! আবার ইগনোর !! এই ফাজিল মেয়ের সাহস তো কম !! কথা বলতেছি আর ফাজিলটা অন্য দিকে মুখ করে ফেলছে। এমন একটা ভাব যেন আমার সাথে কথা বলতে সে খুব বেশি আগ্রহী না !! দাড়া !! ড়া !! তোকে আগ্রহী করতেছি !! চটি স্যান্ডেল পরে আসা বেজায় ভুল হয়েছে !!

তক্কুনি স্নিকার বের করলাম। তারপর চটি দুটি ব্যাগে ঢুকিয়ে স্নিকার পরলাম। গেঞ্জির উপরেই শার্ট পরলাম। ইনকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু মেয়েটার সামনে ইন করা যাবে না। ফেরিতে করতে হবে !! শালার আগে স্মার্ট হইয়া নেই !!
আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছিলাম মেয়েটা আমার কাজ কারবার আড় চোখ লক্ষ্য করছে। আরো অনেকেই লক্ষ্য করছে !! এবার আমি মেয়েটার দিকে থেকে মুখ সরিয়ে নিলাম। যা বেটি !! দুরে গিয়া মর !! তুই আমারে পাইছোস কি ?? সুপার ভাইজার টিকিট চেক করতে এসে আমাকে দেখে একটু চমকালো ! আসলে তখনকার আমি আর এখন কার আমি কে ঠিক যেন মেলাতে পারছে না। টিকিট দেওয়ার সময় আম টিকিতের পিছনে যেখানে নিয়মাবলী লেখা থাকে সে টা পরতে ঠাকলাম।

সুপার ভাইজার বলল স্যার কোন প্রশ্ন ছিল !! আমি বললাম নামে মানে দেখছিলাম এই বাসে উঠতে গেলে কোন পোষাক কোড মেনে চলতে হয় নাকি ? সুপার ভাইজার ঠিক যেন বুঝতে পারলো না ! মানে ঠিক বুঝলাম না ! বুঝলেন না ?? আমি একটু হাসলাম ! তারপর বললাম এই যে একটু আগে আপনি আমাকে ঠিক বাসে উঠতে দিচ্ছিলেন না ! আর এখন স্যার বলে ডাকছেন ! না স্যার এমন কোন কথা না ! আমি তো সবার টিকিক চেক করেই গাড়িতে চুলছিলাম ! জি ! আমি খুব ভাল করেই দেখছি আপনি কি রকম চেক করছিলেন !! লোকটা একটু যেন লজ্জা পেল। আর কোন কথা না বলে চেল গেল তাড়াতাড়ি করে ! আমি যদিও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নেই তবুও আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আম চট করে মেয়েটার দিকে তাকালাম।

হ্যা !! আমার ধারনা ঠিক ! আচ্ছা মেয়েটা আর একটু ভড়কে দেওয়া যাক ! খুব যেন পরিচিত এমন একটা ভাব করে বললাম একটা গল্প আছে না ঐ যে একজন গুনি লোক কে দেশের রাজা দওয়াত দেয়। সেই গুনি লোকটা সাধারন পোষাকে আসলে দাওয়ান তাকে ঢুকতেই দেয় না। তারপর ভাল পোষাক পরে আসলে সালাম ঠুকে ! শুনেছেন গল্পটা ? মেয়েটা একটা যেন লজ্জিত ভাবে বলল জি শুনেছি ! লোকটার নামটা কি বলতে পারেন ? আমার ঠিক মনে পড়ছে না !

মেয়েটা কিছুক্ষন ভেবে বলল আমারও পড়ছে না !! যাক !! না পড়লে আর কি করা !! আসলে এই সব গল্প থেকে মানুষকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ !! কিন্তু মানুষ কি আর নেয় ? কেবল বাইরের চাকচিক্যই দেখে ! আমি এবার মেয়েটার থেকে মুকখ ঘুরিয়ে নিলাম ! মেয়েটার যদি লজ্জা থাকে তাহলে সে নিজেই এবার আমার সাথে কথা বলবে !! কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম !! ফেরিতে উঠলেই আমার কেবিনে যাওয়ার অভ্যাস !! আর কিছু না খেলেই না ! বেশ খিদেও লেগেছে !! হাত মুখ ধুয়ে আমি অর্দার দিতে লাগলাম। ঠিক তখনই দেখলাম মেয়েটা কেবিনের ভিতরে এল ! আমি ততক্ষনে শার্ট ইন করে ফেলেছি ! আমি অর্দার শেষে বেয়ারাকে বললাম আর ঐ ম্যাডামের জন্য চা নিয়ে এসো ! জি না ! দরকার নাই ! তারপর আরো কিছু বলতে গেল কিন্তু ততক্ষনে আমি বেয়ারাকে পাঠিয়ে দিয়েছি !

মেয়েটি আমার চেয়ারে বসতে বসতে বলল আমার জন্য অর্দার দেওয়ার দরকার ছিল না ! আরে এক কাপ চাই তো !! অন্তত আমাকে মনে তো রাখবেন যে একটা ছেড়া চটি স্যান্ডেল পরা একটা ছেলে আমাকে এক কাপ চা খাইয়ে ছিল ! মেয়েটা এবার একটু লজ্জা পেল ! লজ্জিত মুখেই বলল আই এম সরি ! সরি ? কেন? আপনি তো সরি বলার মত এমন কিছুই করেন নি !! মেুয়েটি আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম আচ্ছা ! বাদ দেন ! আমি তানভীর ! ইকোলোমিক্সে পড়ি। ফাইনাল ইয়ার ! আপনি ? মীম ! এবার থার্ড ইয়ার ফাইলাম দেব ! ফার্মেসি !! ও মাই গড !! ফার্মেসি ?? আমি যত দুর জানতাম সুন্দরী মেুয়েরা খুব বেশি মেধবী হয় না ! আপনি দেখছি তার উল্টো !! বিউটি উইথ ব্রেন ! মীমের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে প্রশংসা ওর পছন্দ হয়েছে । কেবল লজ্জা মিশ্রিত একটু হাসি দিলো !! তারপর বলল না এমন কিছু না ! কত মেয়েই তো ফার্মেসীতে পড়ে !

আমি বললাম পড়তে পারে কিন্তু তারা স্বাধারনত সুন্দরী হয় না !! আপনার মত ! মীম এবার আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল আপনি কি আমার সাথে ফ্ল্যাট করার চেষ্টা করছেন ??  জি ! আপনি বুঝতে পারছেন না ?? আমি আপনার সাথে ফ্ল্যাড করছি !! ইভ টিজিং না কিন্তু !! মীম একটু গম্ভীর হতে গিয়ে জোরে হেসে ফেলল !! তারপর কথা চলতে লাগলো। কোথায় বাড়ি কোথায় থাকি !! ইত্যদি !! ইত্যাদি !! পাঁচ ঘন্টার জার্নি যেন পাঁচ মিনিতেই শেষ হয়ে গেল !! বাসার সামনে নামতে গিয়ে মীম নিজে এল গাড়ীর গেট পর্যন্ত ! হাত নেড়ে বিদায় দিল !! এমন কি জানলা দিয়ে হাত বের করেও টাটা দিল।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত