একটি ভালোবাসার গল্প

একটি ভালোবাসার গল্প

আমি সাগর।লেখাপড়া শেষ করে চার মাস আগে একটি কোম্পানিতে চাকরিতে জয়েন করেছি। অফিসে যতো সময় থাকি কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকি কিন্তু অফিস থেকে বাসায় আসলেই শুরু হয়ে যায় মা,বাবা,আরছটো বোন নিশির জ্বালা।মা, বাবা বলে বিয়ে করে আমাদের জন্য বৌমা নিয়ে আয়,আর ছটো বোন নিশি আমার জন্য একটা লক্ষি ভাবি চায়। কিন্তু আমি আমার জীবনে রাত্রি ছারা আর কাউকে কল্পনাও করতে পারি না। রাত্রি আমাকে একা রেখে হারিয়ে গিয়েছি দূর আকাশে তারার দেশে।

এভাবে তারা প্রতিদিন আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় আমি নানা বাহানা করে তা এড়িয়ে চলি। এভাবে কিছু দিন যাবার পর, আজ অফিসে বসের মেয়ে মানে আমাদের ম্যাডাম জয়েন  করেছে।এখন থেকে তিনিই সব কিছু দেখা শোনা করবেন। আমাদের ম্যাডামের নাম রিয়া।রিয়া চৌধুরি। দেখতেও ভালো।যে কেউ তার প্রেমে পরে যাবে।কিন্তু আমার এতে কোন আগ্রহ নেই।আমি আমার রাত্রিকে কল্পনা করেই ভালে আছি। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে কাজ করে বাসায় আসা আবার পরের দিন অফিসে গিয়ে কাজ করা, এটাই আমার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে। রিয়া ম্যডাম দেখতে শুনতে ভালো হলে কি হবে অফিসে যতোসময় থাকি সবসময় চাপের ভিতর রাখে আমাকে। অফিসে অন্য সকলের চাপে না রাখলেও আমাকে সবসময় চাপে রাখে কেন তা জানি না। আরো কিছু দিন এভাবে যাবার পর একদিন রিয়া ম্যডাম আমাকে তার কেবিনে ডেকে পাঠালো।

আমি গিয়ে বললাম, আমাকে ডেকেছিলেন ম্যাডাম? হ্যা,বসুন! কি জন্য ডেকেছিলেন ম্যাডাম? আচ্ছা আপনার সমস্যা টা কি বলবেন কি? কেন ম্যাডাম আমার কোন কাজে কি ভুল হয়েছে? না, আপনার কাজে কোন ভুল হয় নি কিন্তু! কিন্তু কি ম্যাডাম? আপনি সব সময় চুপচাপ থাকেন, কারো সাথে তেমন কোন কথা বলেন না।চুপচাপ কাজ করেন। আবার বেশি কাজ দিলেও কিছু বলেন না, চুপচাপ করে যান।সমস্যা কি? এটা একান্তই আমার পার্সোনাল বিষয়।কাজের কিছু থাকলে বলতে পারেন! তাই বলে এভাবে কেউ চলতে পারে কি? ম্যডান আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।কোন কাজ থাকলে বলবেন।এখন আমি আসি। এটা বলেই ম্যাডামের কেবিন থেকে চলে আসলাম। কিছু দিন পর আবার রিয়া ম্যডামের কেবিনে বসে আসি। রিয়া ম্যাডাম বললো আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?  ( কি বলবো কিছুই বুজছি না) কি হলো কিছু বলছো না যে? (না বলতে গিয়েও হ্যা বলে ফেললাম) বললাম ওকে ম্যাডাম আমরা তো এখন ফ্রেন্ড সো এখন থেকে আর ম্যাডাম বলবে না কেমন,তুমি করে কথা বলবে! ওকে ম্যাডাম।

আবার ম্যাডাম বললে! সরি, ভুল করে বলে ফেলছি আর হবে না। রিয়ার সাথে কথা বলার সময় কি হলো জানি না শুধু হ্যা,,না এভাবেই কথা বলেছি। আস্তে আস্তে আমরা আরো ক্লোজ হয়ে গেলাম,,মাঝে মধ্যে অফিস শেষে কফি শপে বসে আড্ডা দিতাম। অফিসেও সবার সাথে কথা বলতে লাগলাম। এভাবে দেখতে দেখতে ছয়টা মাস কেটে গেলো। ডেস্কে বসে বসে কাজ করছি এমন সময় রিয়া এসে বললো আমার সাথে নাকি তার কিছু প্রয়োজনীয় কথা আছে।আমি বললাম বলো কি বলবে। এখানে না বিকালে অফিস শেষে পার্কে গিয়ে কথা বলবো। ওকে। এটা বলেই রিয়া চলে গেলো। আমি আর এ নিয়ে বেশি মাথা ঘামালাম না। বিকালে পার্কে একটি বেন্সে আমি আর রিয়া বসে আছি।আমি বললাম বলো কি বলার জন্য ডেকেছিলে?

আমি বেশি কথা বলবো না সোজাসুজিই বলছি! ওকে,বলো! তেমার সাথে এই ছয় মাস মিসতে মিসতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলিছি তা আমি নিজেও জানি না। আমি তোমাকে ভালেবাসি, সাগর। আমি তো তোমাকে শুধুই ফ্রেন্ড ভেবেছি,আর কিছু না। প্লিজ না করো না।আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। কিন্তু এটা সম্ভব না রিয়া। কিন্তু কেন। তুমি জানতে চেয়েছিলে না, আমি কেন এতো চুপচাপ থাকতাম। হ্যা চেয়েছিলাম। তাহলে শোনো,,,, তখন আমি অনার্স ২য় বর্সে পড়তাম।রাত্রি এর সাথে আমার পরিচয় অনার্স প্রথম বর্সে।রাত্রি খুবই জেদি আর পাগলী একটা মেয়ে।প্রথম দেখাতেই আমি রাত্রির প্রেমে পড়ে যায়।ও দেখতে খুবই কিউট।কিন্তু যেই ওকে প্রপোজ করতে যেতো, সেই চর খেয়ে ফিরতো।

তাই আমি আর ও দিকে পা বাড়ায় নি।কিন্তু একদিন লাইব্রেরিতে বসে বই পরছি এমন সময় রাত্রি এসে আমারপাশে বসে বললো কি ব্যাপার ক্লাসের সবাই আমার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু তোমাকে আমার আশে পাশেও দেখি না। এমনি,,আমার ও সব ভালো লাগে না তাই। এরপর রাত্রি বললো আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি। ওকে। রাত্রির সাথে ফ্রেন্ড হওয়ার পর বুঝলাম ও কি লেভেলের পাগলী আর জেদি।দেখতে দেখতে আমরা ১ম বর্স থেকে ২য় বর্সে উঠলাম।কখন যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেও জানি না।কিন্তু ও যে রাগি এই জন্য ওকে বলতে ভয় পায়।আর যদি ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করে দেয় তাওলে ওকে হারাতে হবে।এই ভয়ে কিছু বলি নি। সকালে শুয়ে আছি এমন সময় ফেন বাজছে। ঔ ভাবেই ফোন ধরে বললাম কে? ঔ,কুত্তা কে মানে কি? ও তুই! তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস।তোর না আজ আমার সাথে শপিং এ যাবার কথা। তোর সাথে যাওয়া মানে ১ টা জিনিস কিনতে তুই২ ঘন্টা লাগাস।আমি যাচ্ছি না।

দেখ সাগর,তুই যদি ১০ মিনিটের ভিতর না আসিস তাইলে কিন্তু আমি তোর বাসায় চলে আসবো। যা করার কর,আমি আসছি না। এই বলেই ফোন কেটে দিলাম। কিছু সময় পর মনে হলো কে যে আমার গায়ে পানি ধেলে দিলো।তাকিয়ে দেখি রাত্রি রাগি লুক নিয়ে পানির জগ হাতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয় যেন আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।আমি তারাতারি উঠে বললাম তুই এখানে,আর কি করে ভিতরে এলি,,মা, বাবা কিছু বলে নি? বলেছি যে আমার স্বামির সাথে দেখা করতে এসেছি। ওওও।কিহহহহ কি বলেছিস।আমি তোর স্বামি,,, ঔ  কি উল্টা পাল্টা বলেছিস।এখন আমাকে কি আব্বু আস্ত রাখবে।এটা, আমার কথা না শোনার আগে মনে করা উচিত ছিলো না। এই রকম পাগলামি করতো।তাই ওরে খুব ভয়ও পেতাম যখন যা বলতো তখন তাই করতো। এটা বলেই রিয়ার দিকে তাকালাম দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে,, বললো তারপর কি হলো?

এভাবেই দিন কেটে যেতে লাগলো।আমি রাত্রি কে অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি।ও বুঝেও না বোঝার ভান করতো।এতোটুকো সিউর ছিলাম যে রাত্রিও আমাকে  ভালোবাসতো।কেনো মেয়ের দিকে তাকাতে পর্যন্ত দিতো না।ভাবলাম এভাবে হবে না তাই আমার খালাতো বোন শিলাকে বললাম হেল্প করতে।শিলা রাজি হয়ে গেলো।তারপর রাত্রির সামনে দিয়ে যাচ্ছি পাশে শিলা আছে রাত্রিকে দেখে শিলা আমার হাত জরিয়ে ধরলো,, তা দেখে রাত্রি তেলে বেগুনের মতো জ্বলে উঠল আর আমার সামনে এসেই আমার দুই গালে কি যেন দিন,, শুধু ঠাস ঠাস শব্দ হলো।আমি দুই গালে হাত দিয়ে দারিয়ে আছি আর ও বলতে লাগলো আমাকে ভালোবাসিস বলে বলে এখন অন্য আরেক জনের সাথে ঘুরছিস। তুই বুঝিস না আমি তোকে কত্তো ভালোবাসি। তখন পাশ থেকে শিলা বললো সাগর ভাই কাজ হয়ে গেছে।

এটা শুনে রাত্রি অবাক চোখে আমার আর শিলার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ওকে সবকিছু খুলো বললাম।তখন ও বললো এই এ দিকে আই। না,, তাইলে তুই আবার মারবি।ঔ তুই আসবি না কি। ওর কাছে গেলাম, শব্দ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।কিন্তু শব্দের বলদে দুইটা মিষ্টি পেলাম। এভাবেই আমাদের দিন কেটে যাচ্ছিলো।হঠাত একদিনরাত্রি বললো যে ও ওর খালাদের বাসায় বেড়াতে যাবে। আমিও বললাম যাও ঘুরে আসো। কিন্তু এটা জানতাম না যে আমি ওকে ওটাই শেষ বার দেখছি, আর ওর সাথে আমার শেষ কথা। ওর খালাদের বাসায় যাওয়ার সময় বাস এক্সিডেন্ট করে আর ও মারা যায়।তারপর থেকে আমিও একদম নিচ্চুপ হয়ে গেলাম।আর এরপর আবার তুমি আমার লাইফে আসলে,, আর তারপর কি হয়েছে তা তো জানোই। এর পর পার্ক থেকে বসায় চলে আসলাম।তারপরের দিন অফিসে গিয়ে রিজাইন দিয়ে আসলাম।

আমি চাই না আমার জন্য রিয়া কষ্টে থাকুক।কয়েকদিন পর আমাকে ভুলে যাবে।আর সামনে থাকলে আরে বেশি কষ্ট পাবে। কিছু দিনপর,,,, চাকরি ছেরে দিয়েছি  তাই অনেক বেলা করে ঘুমিয়ে আছি,, এমন সময় কে যেন মনে হলো আমার মাথায় হাত বুলি দিচ্ছে।চোখ খুলে দেখি রিয়া আমার বিছানায় আমার  পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমি তারাতারি উঠে পরলাম।বললাম তুমি? কেন, তুমি কি অন্য কাউকে আশা করছিলে না কি? না মানে,তুমি এখানে কি করে,,আর আম্মু আব্বু কথায়?

আমাদের বিয়ের কথা বলছে আমার মা বাবার সাথে! বিয়ে মানে?  বিয়ে মানে বিয়ে! কার বিয়ে? বুদ্ধু, তোমার আর আমার বিয়ে! কিহহহহ হুমমমমম কিন্তু,,আমি তো তোমাকে সব বলেছি যে! কিচ্ছু বলতে হবে না,, তুমি যেমন আছো তেমনই থাকে,শুধু তোমার বুকে আমাকে মাথা রাখার একটু জাইগা দিয়ো। কিন্তু,,,আর কিছু বলতে পারলাম না,তার আগেই রিয়া আমাদের  দুজনের চার ঠোট এক করে দিলো। এভাবেই আমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায় সূচনা হলো।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত