ভালবাসার মূল সমীকরণ

ভালবাসার মূল সমীকরণ

– জানু,বই মেলায় যাই?
– না।
– কেন?
– সেখানে অনেক সুন্দরী মেয়ে থাকে।
– তাতে কি?আমি তো তোমার দিকে ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকাই না।
– আমি যেতে মানা করছি,ব্যস যাবা না।
– ওকে,কিন্তু রনি ফোন দিচ্ছে।ওর সাথে দেখা করতে বের হবো?
– দেখা করলে কোন লাভ আছে?সারাদিন শুধু ঘোরা আর আড্ডা।
– বুঝেছি।
– কি বুঝলা?
– তুমি আমায় হাতে চুরি পড়ায়ে ঘরে বসায় রাখতে চাচ্ছো।
– দরকার হলে তাই করবো।
– আচ্ছা,হিসু চাপছে।যাবো একটু?
– ছিঃ যাও।

<অতঃপর বালক মুত্র বিসর্জন দিয়ে আবার বালিকার নাম্বারে কল করলো।ভাগ্যক্রমে রিসিভ করে ঝাড়ি।>

– এই এত সময় লাগে?
– লেগে গেলো।
– তুমি পুরো পাঁচ মিনিট সময় নিয়েছো।কাজটা করতে অবশ্যই পাঁচ মিনিট সময় লাগে না।
– আমার লাগলে কি করবো?
– বুঝি!আমি সব বুঝি!কোন মেয়ের সাথে কথা বলতেছিলা সেটা বলো?
– কিইইই?কখন কোন মেয়ের সাথে কথা বললাম?
– এতো ন্যাকা সাজার কিছু নাই।সত্যিটা বলো।আমি রাগারাগি করবো না।
– ধুর বাবা!সত্যি মেয়ের সাথে কথা বলি নাই।
– শেষ সুযোগ দিলাম,স্বিকার যাও।না হয় পরে কিন্তু পস্তাবা।
– বিশ্বাস করো আমি জাস্ট হিসু করতে গেছিলাম।

– হিসু করতে গেছিলি?আমি কিছু বুঝি না?পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে কোন শালা হিসু করে?ফাজলামি করস তুই আমার সাথে?মিথ্যাবাদী,প্রতারক।কোনো কন্টাক্ট রাখবি না আমার সাথে।আজ এই মুহূর্তে থেকে তোর সাথে ব্রেকআপ।গুড বাই।আর হ্যা,কন্টাক্ট করার কোনপ্রকার চেষ্টা করলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি।টাটা।

কল কেটে গেলো।নিধান হতভম্ব।কি থেকে কি হয়ে গেলো এখনো বোঝার বাহিরে।
তবে সে মনে মনে জেদ ধরে নিয়েছে,আর কখনো অনামিকার সামনে যাবে না।

শীতল গভীর রাত।
চারিপাশ শান্ত নীরব।
আকাশে চাঁদ উঠেছে।
নিধান মুহূর্তটায় ছাদে দাঁড়িয়ে অনামিকার সাথে সকালে ঘটে যাওয়া স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করছে।
ঠিক তখন ফোন বেজে উঠলো।
সাথে কেঁপে উঠলো হৃদয়ের স্পন্দন।
অনামিকা কল করেনি তো?
ভাগ্যক্রমে ফলাফল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
স্ক্রিনে স্নিগ্ধার নাম্বার।
এক হ্রাস হতাশা নিয়ে নিধান ফোন রিসিভ করলো।

– হ্যালো।
– নিধান,কোথায় তুমি?
– বাসায়।
– ফ্রি আছো?
– হ্যা।
– আমাদের বাসায় আসতে পারবা,প্লিজ।
– রাত বাজে একটা।এখন তোমাদের বাসায় যাই কিভাবে?

– আসো প্লিজ।আমার কম্পিউটারে কি যেন ডিস্টার্ব দিচ্ছে।আমি কিছুতে ঠিক করতে পারছি না।তুমি তো এর আগেও ঠিক করে দিয়েছিলে।আবার যদি একটু কষ্ট করে।

– সকালে এসে দেখছি।
– কিন্তু সকাল হতে তো অনেক দেরী।
– বিন্দু মাত্র ধৈর্য নেই তোমার মাঝে?
– আছে।কিন্তু!
– চুপচাপ ঘুমাও।আমি দশটা বাজলে এসে দেখছি।
– ঘুম আসছে না যে।
– তাহলে চোখ খুলে বসে থাকো।

এর মধ্যে অনামিকার কল।
নিধান আতংকিত।
রিলেশন যাও টিকার সম্ভাবনা ছিলো তাও শেষ।
তবুও কিছু একটার আশায় নিধান অনামিকার নাম্বারে কল করলো।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে নম্বর অফ।

স্নিগ্ধ সকাল।
জানাল খুলে দিতে ফুলের সুভাষ।কোয়াশায় মাখা বাতাস।মনমুগ্ধকর এক পরিবেশ।
সে পরিবেশে খুব আরাম করে ঘুমিয়ে আছে নিধান।
দেখার বিষয়,সেটা কতক্ষণ?
কিছুক্ষণ বাদে স্নিগ্ধা এসে ডেকে তুললো।
– ভাইয়া..ভাইয়া চলো প্লিজ।
– <ঘুমন্ত>
– এই ভাইয়া উঠো।
– <ঘুমন্ত>
– অনেক কষ্টে এপর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।আর পারছি না।প্লিজ চলো।
– হুম।[চোখ ডোলতে ডোলতে]
– ওঠো প্লিজ ভাইয়া।
– কয়টা বাজে?[ভাঙা গলায়]
– সাতটা।
– ওহ্ গড!এই সময় কেউ ঘুম থেকে ওঠে?
– জানিনা।তুমি চলো।

নিধান উপায় না পেয়ে হাড় কাঁপানো শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
স্নিগ্ধা খুশিতে আন্তহারা।

মুখের উজ্জ্বলতা সরাসরি এর প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে।

ফাঁকা রাস্তা।গাড়িঘোড়া নেই বললে চলে।
মাঝে মাঝে অল্প সংখ্যক মানুষ হেঁটে যাচ্ছে।
এরূপ অবস্থায় নিধান এবং স্নিগ্ধা তাল মিলিয়ে পথ চলছে।
পথে গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি বা জুঁই ফুল বিছানো থাকলে মন্দ হতো না।
সাথে বেহালার সুর হলে তো কথাই নেই।
কিন্তু হিতে বিপরীত ঘটে সামনে যদি অনানিকা পেচে যায় তাহলে কি বা করার।
কাঁপতে হবে নিধানকে।
সাথে হাসপাতালে ভর্তি ফ্রি।

অনামিকা নিধানের দেখা পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো।এই ছেলে দশটার আগে ঘুম থেকে ওঠার মানুষ নয়।তাহলে কি সে ভুল দেখছে?সাথে আবার মেয়ে।ভুল হলে হতেও পারে।
তবুও নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যাক।

এই আক্ষেপে অনামিকা নিধানের কাছে এগিয়ে এলো।

– জানু।
– হুম।[কাঁপতে কাঁপতে]
– সূর্য আজ কোন দিকে উঠে?
– সূর্য এখনো উঠেনি জানু।দেখো!একটুও রোদ নেই।
– তাই তো।সাথে কে সোনা?
– ছোট বোন।
– ও!আগে তো দেখেনি।
– চাচাতো বোন।
– গুড।রাতে ব্রেকআপ আর সকালে নতুন একটা জোটানো হয়ে গেছে।তুমি তো মেয়ে জাতির চেয়েও দ্রুত।
– তুমি যা ভাবছো তা না।
– যাইহোক না কেন,আমি তোকে ছাড়ছি না।বিয়ে আমি তোকেই করবো।
– এখানে বিয়ে আসলো কোথা থেকে?
– কেন!বিয়ে করবি না?
– করবো।কিন্তু!
– কোনো কিন্তু না।চল কাজি অফিসে।আজকেই বিয়ে করতে হবে।
– কাজি অফিস তো খুলে নাই।
– তাতে কি হইছে?অপেক্ষা করবো।প্রয়োজনে কাজিরে বাসা থেকে তুলে আনবো।বাট বিয়ে তোকে করবোই।
– জানু বুঝো একটু।
– চোপ শালা।চল….

এই বলে অনামিকা নিধানকে একপ্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেলো।অপরদিকে স্নিগ্ধার মুখে আমাবর্ষা নেমে এসেছে।

চোখ এই বুঝি টপ করে বৃষ্টি ঝরাবে।
মস্তিষ্ক হারিয়ে ফেলেছে কিছু বুঝে ওঠার ক্ষমতা।এবার কে ঠিক করে দিবে তাঁর কম্পিউটার?
স্নিগ্ধা ছলছল চোখে হাত বাড়িয়ে বললো,’ভাইয়া আমার কম্পিউটার?’

রাগ ইগো এবং ভুল বুঝাবুঝি ঘিরে ভালবাসা।
এই তিনটা দ্বারা তিনটাকে কাটাকাটি করে যা বেঁচে থাকে তা ভাল থাকা।
ভালবাসার মূল সমীকরণ সবসময় সহজ এবং উত্তর “০”।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত