একটা শাড়ি কিনে দিবা। আচ্ছা দিব। নীল শাড়ি কিন্তু। ওকে। নীল শাড়ির সাথে সাথে নীল কাচের চুড়ি কিনে দিতে হবে। আইচ্চা তাও দিব। নীল শাড়ী আর কাচের চুড়ি পড়ে সারা দিন তোমার সাথে ঘুরব। তুমি না শাড়ি পড়তে পারো না। পারি না বলে কি শিখব না। শাড়ি তো তোমার অপছন্দ, তাহলে শিখবা কেনো? তুমি না বলছো নারীরা শাড়িতে সুন্দর, তাই আমি শাড়ি পড়া শিখব, আর তুমি শিখাবা আইচ্ছা এটাও শিখাব। আচ্ছা বাবুটা। ওকে। মেয়েটা মা বাবার দুলালী। ছোট বেলা থেকে সকল চাওয়া পাওয়া ইচ্ছাগুলো তারা পুরণ করেছে— কষ্টের ছায়া পড়তে দেয় নি । মেয়েকে খুব আগলিয়ে রেখেছে। মেয়েটির নাম আনু।
আনুর সাথে আমার পরিচিয় টা হয় খুব নাটকিয় ভাবে। গ্রীষ্মের ছুটি পেয়ে মামা বাড়িতে বেড়াতে গেছি। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টিতে সকল কাজিন গুলা বায়না ধরল আম খাবে। তাও আবার সেই আম চুরি করে আনতে হবে। আম চুরি করার দায়িত্ব আমার আর দুইটা কাজিনের উপর পড়ল। বেশি লেট না করে বৃষ্টিতে ভিজে আম চুরি করার জন্যে বেরিয়ে পড়লাম। পাশে কয়েকটা বাসা পড়েই একটা ছোট আম গাছ আছে। ঠিক করলাম সেখান থেকেই আম চুরি করব। যথারিতি আম গাছের নিছে পৌছে গেলাম। আমি গাছেও উঠে গেলাম। বাকি দুইজন নিছে। আগেই বলে দিয়েছি, কেউ আসলে যাতে আমারে নিয়া পালায়, গাছে উঠে বেশ অনেক গুলা আম পারলাম, কিছুক্ষণ পর আমি গাছের নিছে তাকিয়ে দেখি ফাজিল দুইটা গায়েব। গেলো কই নাকি কেউ আসছে, এই ভেবে তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমেই পড়লাম। নেমে যা দেখলাম তা দেখে পুরাই থ খেয়ে গেলাম। গাছের নিছে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটিকে দেখে চুপ করে চলে আশা শুরু করলাম তখনেই বাঘিনীর গর্জন।
এই যে মিস্টার আম চোর কই যাচ্ছেন। বাসায়। কেনো আর আম নিবেন না। ধুর কাচা আম কেউ খায় নাকি। কেউ খায় না তাহলে আপনার সাথের দুইটা আম নিয়ে গাছে কেনো। ওদের আমি চিনি না। সত্যি নাকি? হ্যা আপনার মাথা ছুয়েে বলছি ।(মাথায় হাত দিতে যাব) এই আমাকে ছুবেন না। আচ্ছা নাইবা ছুলাম। নাম কি আপনার। অমর ফারুক । আপনার? জানতে হবে না। আম চুরির অপরাধে কান ধরে উঠ বস করতে হবে, তাও ১০ বার। আমি? (মাথা নিচু করে) না হলে কি আমি করব। আম কি আমি চুরি করছি নাকি আপনি। (চোখ বড় বড় করে গম্ভীর ভাব নিয়ে) চার দিক টা ভাল ভাবে তাকিয়ে নিয়ে দিলাম এক ভোঁ দৌড়। কি মেয়েরে বাবা এত বড় একটা ছেলেকে কানে ধরে উঠবস করতে বলে। মেয়ে না যেন ডাকাত দলের দলপতি।
কয়েকদিন পর এই যে মি. আম চোর এই দিকে আসেন? কাকে বলছেন?আপনাকেই বলছি। আপনি ছাড়া এখানে আর কেউ চুরি করেনি তো। দেখেন আম চোর বলবেন না। তাহলে কি সাধু বলে ডাকব। ভিতু কোথাকার। ভিতু বলেন কেনো। সেদিন দৌড়ে পালিয়ে আসছেন কেনো। না পালিয়ে কি ওখানে আপনার সাথে ডান্স করব। কি ডাইনি মেয়েরে বাবা। দেখেন ডাইনি বলবেন না। তাহলে আম চোর বলবেন না? বলব না তবে একটা শর্ত আছে? আচ্ছা বলেন শুনি, কি শর্ত। আমাকে আইস্ক্রিম খাওয়াতে হবে। তাও দুইটা। আচ্ছা আপনার শর্তে রাজি আছি। আচ্ছা চলেন তাহলে। আপনার নাম টা কিন্তু জানা হল না? আমি আনু , আন্টির বাড়ি বেরাতে এসেছি,, থাকি চট্টগ্রামে। আমার নাম তো জানেন। মামা বাসায় বেরাতে এসেছি। থাকি কক্সবাজারে।
আইস্ক্রিমের দোকান থেকে দুই জনে দুইটা আইস্কিম কিনে খাওয়া শুরু করে দিলাম। খাচ্ছি আর হাটছি। বিকালে গ্রাম্য রাস্তা দিয়ে হাটার মজাই আলাদা। আমি আর আনু খুব পাশা পাশি হেটে চলছি। মেয়েটা খুব তৃপ্তির সাথে আইস্ক্রিম খাচ্ছে। আসলে মেয়ে মানুষের খুব পছন্দের খারাব হল তিন টা আইস্ক্রিম,ফুসকা আর চকলেট। আমার মনে হয়ে এই তিনটা খাবারের জন্যে তারা ঘোর শত্রুর সাথে মিত্র করতেও দ্বিতীয় বার ভাববে না। প্রিয় কোন ব্যাক্তি আর সে যদি মেয়ে হয় তাহলে তার অভিমান ভাঙ্গানোর জন্যে, ভরদুপুর বা রাতে হাতে আইস্ক্রিম বা চকলেট নিয়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে তার রাগ এক নিমিষে পানি হয়ে যাবে। এভাবে ঝগড়া আর আইসক্রিম খাওয়ানো থেকে রাগ ভাঙানো হতো প্রতিদিন।বন্ধুত্ব হয়ে উঠি আমরা চলতে থাকে।
ফারুক কাল আমরা চলে যাব। (মন খারাপ করে) হুম। কিছু তো বল। কি বলব? কিছু বলার নাই। আছে তো অনেক কিছু বলার। (খুব আস্তে) কিছু বলছ কি? না কিছু বলি নি। কাল কখন যাবা। রাতে। জানো ফোরকান তোমার সাথে কাটানো এই একটা সপ্তাহ ছিল আমার জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ সময়। যা কখনো ভুলতে পারব বলে মনে হয় না। খুব মিস করব দুষ্টুমি গুলা। চিঠিটা রেখে দাও। আমি যাওয়ার পর খুলে দেখবা। আসি ভালো থেকো। আনুর সাথে পরিচয়ের কিভাবে যে সাত দিন কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না। এই সাত দিন আমার জিবনের ও বেষ্ট দিন ছিল। হঠাৎ চলে যাবে কথাটা শুনে খুব শূন্যতা অনুভব করছি। মনে হচ্ছে কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে ।
বাসায় এসে আনুর চিরকুটের কথা টা হঠাৎ মনে পরে গেলো। সকালেই কক্সবাজার এসেছি। ক্লান্ত আর টেনশনে থাকায় চিরকুটের কথা ভুলেই গিয়েছি। এই তিন দিনে মেয়েটাকে কম হলে তিনশ বার ফোন দিয়েছি কিন্তু কোন রেস্পন্স পাইনি। হঠাৎ চিরকুটের কথা মনে পড়ায় মানি ব্যাগ থেকে চিরকুট টা বের করে হাতে নিলাম। খুলতে খুব ভয় হচ্ছে, কি না কি লেখা আছে। চোখ বন্ধ করে খুলেই ফেললাম। আর যা দেখলাম তা দেখে রিতিমত আমি বাকরুদ্ধ। দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে আনুকে একটা টেক্সট করলাম। হ্যা আমি তোমাকে সারা জীবন রোজ আইস্ক্রিম খাওয়াতে চাই। তুমি কি আমার আইস্ক্রিম পার্টানার হবা। টেক্সট পাটানো প্রায় ৫ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেলো কেনো উত্তর আসল না। আসলে চিরকুটে লেখা ছিল।তুমি কি আমাকে সারা জীবন রোজ আইস্ক্রিম খাওয়াবে। প্রায় ১০ মিনিট পর আনুর ফোন আসল।
তুমি খুব পচা। (আনু) হ্যা তোমার পচা। (আমি) হ্যা শুধু আমার। ভালোবাসি। আমিও। তুমিও কি। বলব না। কেনো। আইস্ক্রিম কিনে দিলে বলব। আচ্ছা দিব, এখন বল। ১০ টা কিনে দিতে হবে। আচ্ছা তোমার যতগুলা চাই ততগুলাই দিব। ভালোবাসি। কাকে? একটা আম চোরকে। হা হাহা তুমি একটা ডাইনি। হ্যা সেই ডাইনির অত্যাচার এখন থেকে সহ্য করার জন্যে প্রস্তুত থাকো। সদাপ্রস্তুত ম্যাডাম। পাগল একটা। ডাইনির পাগল। কোথায় তুমি? (আনু) এই তো জান আর একটু অপেক্ষা করো।তাড়াতাড়ি আসো। আর মাত্র ৫ মিনিট।
তোমার ৫ মিনিট মানে যে ৩০ মিনিট সেটা আমি দীর্ঘ ১ বছর ধরে দেখে আসতেছি। কথা না বলে আজ আসো খবর আছে। শহরের প্রেমগুলার অধিকাংশ প্রেমিককে বকা খেতে হয় শুধু দেরি করে যাওয়ার জন্যে। আর এই দেরি করার মুল কারন হল জ্যাম। শহরে আর কিছু ফ্রিতে আর কম দামে পাওয়া গেলে এক মাত্র জ্যাম নামক অসহ্য যন্ত্রনা টা পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর পার্কে গিয়া পৌছালাম। শহরে প্রেম করে শান্তি নাই বুঝছো। চল আমরা গ্রামে চলে যাই। (আমি) তুমি এখান থেকে উঠে দাড়াও।(আনু) কেনো জান আমি কি করছি। তুমি পুরাই ৪৫ মিনিট লেট। মাত্র।
লজ্জা করে না তোমার একটা মেয়েকে এত ক্ষন অপেক্ষা করাতে। বাবু আমার আমি কি করব বল রাস্তায় এত জ্যাম এত জ্যাম যে হেটে আসার মত জায়গা নাই। হইছে আর বলতে হবে না। থাকো তুমি জ্যাম।নিয়ে আমি আসি। ওই বাবু কই যাও। যে দিকে মন চায়। সরি বাবুটা আর হবে না। রাখো তোমার সরি। আচ্ছা আজ যা শাস্তি দিবা তাই মেনে নিবো। প্রমিস! সত্যি তো হ্যা! তাহলে কানে ধরে ১০ বার উঠ বস করো। এইডা কি বল বাবু। করবা নাকি চলে যাব। এই না। শুন দৌড় দেয়ার চেষ্টা এক দম করবা না। তাহলে এক বারে ডিভোর্স । কি মেয়েরে বাবা পুরুষ নির্যাতন করে।
কানে ধরতে যাব তখন আনুকে আমার বুকে অনুভব করলাম। আমিও তাকে খুব করে জড়িয়ে ধরলাম। নীল শাড়ি আর সাথে কাচের চুড়িতে বেশ অপরুপ সুন্দর লাগছে। আজ আমরা সারাদিন ঘুরব। তার পছন্দের সব আইস্ক্রিম খাওয়াতে হবে, আইস্ক্রিম পাগলি একটা মেয়ে। তার সব রাগ ভেনিস করার জন্যে একটা আইস্ক্রিমেই যথেষ্ট। এক হাতে আইস্ক্রিম আর আমার কাধে মাথা রেখে আইস্ক্রিম খাচ্ছে। গল্পটা একটা বড় ভাইকে নিয়ে লেখলাম। অনেক দিন থেকে লেখব কিন্তুু লেখা আর হয়না। নিজের গল্প নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম তাই আজকে সময় করে লেখে ফেললাম। কেমন হলো যানাবেন কিন্তুু সবাই।
সমাপ্ত