পাগলীটা কে অনেক ভালোবাসি

পাগলীটা কে অনেক ভালোবাসি

আম্মুঃ ইমরান, ওঠ। আর কতো ঘুমাবি।

ইমরানঃ উহু উহু। আম্মু তুমি রোজ এমন করো। প্লিজ আরেকটু ঘুমাই না।

আম্মুঃ হাতে কী এইডা দেখছস?

ইমরানঃ ঝাড়ু। কেন?

আম্মুঃ বারি খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি উঠবি ভালো মানুষের মতো?

ইমরানঃ ওও আল্লাহ গো। আচ্ছা উঠছি উঠছি।

আম্মুঃ হুম এখনি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে যা। অফিসে যাবি না?

ইমরানঃ হুম যাবো। আজকে মিটিং আছে।

আম্মুঃ আচ্ছা আয় নাস্তা করে যা।

ইমরানঃ আচ্ছা আম্মু।

এবার আমার পরিচয়টা দেই। আমি ইমরান। পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ৩ বছর যাবত বাবার কোম্পানি টা কে নিজের হাতে গুছিয়ে রাখছি। পরিবারে শুধু মা ছাড়া আর কেউ নেই। খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি বলেই বলা যায়। টাকা, পয়সা, ধন জহরত সবই ছিলো কিন্তু ছিলো না মাথার ওপর বাবা নামের একটা হাতের ছায়া। একটা বাবা নামের গার্ডিয়ান। আমাকে ছোট রেখেই আমার বাবা মারা গেছেন।

তখন আমি ক্লাস 7 এ পড়ি। তারপর থেকে মা এই আমার বাবা। মা এই আমার মা। মা কখনো বাবার অভাব টা আমাকে বুঝতে দেন নি। আমার মা উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যাক্তি। তিনিই বাবার সব কিছু দেখে রেখেছেন। আর আমি যোগ্য হবার পর তিনি সব আমার হাতে তুলে দেন। আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান। তাই আমাকেই নিতে হবে এসবের দ্বায়িত্ব। যাই হোক। এবার অফিসের জন্যে বের হতে হবে। নইলে লেট হয়ে যাবে। ব্যাস। সারাটাদিন খুব ব্যাস্ততার মাঝে কেটে গেল। বাসায় ফিরতে মন চাচ্ছিলো না। ইচ্ছে হচ্ছিলো অফিসেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তবুও গাড়িটা কোনো রকম ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরলাম। এসে দেখি আম্মু বসে আছে। আমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে আছি। তখন আম্মু আমার রুমে এলো।
আমি বললাম,

ইমরানঃ আম্মু? বসো। দাঁড়িয়ে আছো যে?

আম্মুঃ হুম। ইমরান তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।

ইমরানঃ হ্যা আম্মু বলো।

আম্মুঃ দেখ বাবা। এভাবে আর কতো দিন যাবে বল তো? ঘর টা পুরো ফাকা। এবার ঘরে একটা নতুন মানুষ আনতে হয়।

ইমরানঃ কি বলছো আম্মু আমি তো কিছুই বুঝলাম না।

আম্মুঃ বলছি যে তোর বিয়ের ব্যাপারে আমি এবার এগোবো। কতো গুলো দিন পেরিয়ে গেল।আমি আজ আছি কাল নেই। সংসার টা কে ও তো কারও দেখতে হবে আমার অবর্তমানে।

 

ইমরানঃ কী যে বলো না আম্মু। এখন বিয়ে?

আম্মুঃ হ্যা। আর শোন। এইবার না করে কাজ হবে না। তোকে বিয়েটা করতেই হবে।

ইমরানঃ কিন্তু?

আম্মুঃ কোনো কিন্তু নয়। মনে রাখিস। আমি তোর মা। আমি কখনোই তোর খারাপ চাইবো না। আমি যা করছি তা তোর ভালোর জন্যেই করছি।

ইমরানঃ হুম। ঠিক আছে। যা ভালো বোঝো করো।

আম্মুঃ ঠিক আছে। তুই এখন ঘুমা। আমি যাই।

ইমরানঃ আচ্ছা যাও।

এই বলে শুয়ে পড়লাম। আম্মু ও চলে গেল। এখন বিয়ে? ইমরান চৌধুরী। এতো সেল্ফ ডিপেন্ডেড একটা মানুষ বিয়ে করতে যাচ্ছে? হাহাহা ব্যাপার টা নিজের কাছেই অনেকটা হাস্যকর। কারণ আমার বন্ধুরা বিয়ে করে বাবা পর্যন্ত হয়ে গেছে। আর আমি এখনও বিয়ে করিনি। কি করে যে থাকবো একটা অজানা মেয়ের সাথে। ভাবা যায়?  এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন একটু বেলা করেই ঘুমালাম। কারন সেদিন ছিলো শুক্রবার। আম্মু ও জানে শুক্রবার এ আমি একটু বেলা করে ঘুমাই। তাই আর ডাকে নি সকাল সকাল। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে জুম্মার নামাজে গেলাম।  নামাজ থেকে আসার পর আম্মু বললো,

আম্মুঃ ইমরান, বিকেল বেলা রেডি থাকিস।

ইমরানঃ কেন আম্মু?

আম্মুঃ আমরা পাত্রী দেখতে যাবো তোর জন্যে। আমারই বান্ধবীর মেয়ে। তোর নিশি আন্টি কে চিনিস না? ওরই মেয়ে। নাম ফারিয়া।

ইমরানঃ ওহ। আচ্ছা। আম্মু যা বললো তা তে আমি বিন্দুমাত্র ও অবাক হলাম না। কারন কাল আমাকে বলার আগেই হয়তো নিশি আন্টির  সাথে কথা বলে রেখেছিলো।যাই হোক। তা নিয়ে ভেবে কোনো লাভ নেই। অতঃপর, বিকেল বেলা। আমি আম্মুকে নিয়ে গেলাম আন্টিদের বাড়ি। যাবার পর তারা দুজন খুব কথা বললো,। তারপর আন্টি কোথায় যেন গেল। কিন্তু, মেয়েটি কে এখনও দেখছি না। নাম কী যেন? ফারিয়া। হুম। ওকেই তো দেখছি না এখনও।

প্রায় ১০ মিনিট পর আন্টি ফারিয়া কে নিয়ে চলে এলো। আমি তো দেখে প্রায় অবাক হয়ে গেলাম।ভাবছেন মেয়েটা অসুন্দর? নাহ। মেয়েটা অনেক সুন্দর আর অনেক কিউট। কিন্তু, মেয়েটা অনেক টাই মোটা। খুব বেশি না। তবে অনেক টাই মোটা। হিহিহি মনে মনে নাম দিলাম আলুর বস্তা আমি দেখে হা করে চেয়ে রইলাম। তারপর দেখলাম ফারিয়া আমাকে চোখ টিপি দিলো। আমি তখন বুঝে গিয়েছিলাম যে এই মেয়ে কতটা পাজী। আসলে ফারিয়া আর আমি একে অপর কে আগে থেকেই চিনি। কিন্তু ফারিয়া আমার সাথে মিশতে চাইলেও আমি সুযোগ দিতাম না। ফারিয়ার ও বাবা নেই। আমার মতোই তার অবস্থা। তার পরিবার এ তার ভাইয়া ই সব। তিনিই সবকিছু দেখে রেখেছেন। আমি তখনও ফারিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। সব নিরবতা ভেঙে নীল ভাইয়া মানে ফারিয়ার ভাইয়া বললো,

নীল ভাইয়াঃ কিরে ইমরান। চোখা চোখি শেষ হলো?

ইমরানঃইয়ে মানে,আ…. আ…আমি।

আমি এটা বলতেই সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।  আর ফারিয়া তো আমার দিকে অবিরাম তাকিয়ে রয়েছেই। আমি অন্যদিকে তাকিয়েও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।  তারপর সেখানে আম্মু,আন্টি,আর নীল ভাইয়ারা মিলে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে নিলেন।আর আম্মু নিজের হাতে ফারিয়াকে আংটি পড়িয়ে দিলো। পাঁচ দিন পর বিয়ে। আর এটাই ফাইনাল। আমি আর আম্মু চলে আসছিলাম তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তখন দেখি ফারিয়া বেলকোনি তে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুটকি টা কি? হ্যা? খালি আমার দিকেই তাকিয়ে থাকে। সেই কখন থেকে দেখে যাচ্ছি শুধু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। অবশ্য তাকাবেই না কেন? ওর সাথেই তো আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আম্মুকে নিয়ে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এলাম। আম্মু বললো,

আম্মুঃ ইমরান, বাবা ফারিয়া কে পছন্দ হয়েছে?

ইমরানঃ তোমার পছন্দ করা মেয়ে। বললাম তো যা করার করো তোমরা। আমার কিছু বলার নেই।

আম্মুঃ মেয়েটা অনেক ভালো। ওর মতো মেয়ে হয় না। হাতের কাছে সোনা কে রেখে এতোদিন কতো জায়গায় পাথর খুজেছি। মেয়েটা সত্যিই লক্ষী একটা মেয়ে।

ইমরানঃহুম।

আম্মুঃবাবা। ৫ দিন পর তোর আর ফারিয়ার বিয়ে। আমরা কাল সব শপিং করে রাখবো।
ইমরানঃ ওকে আম্মু।

তারপর থেকে শুরু হলো আম্মু আর নিশি আন্টির বিয়ের নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। আমি নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত ছিলাম। এসবের মধ্যে আমি যাই নি। কারন এসব মহিলাদের কাজ। আমি নিজের কাজ কেন চালিয়ে যাবো না? তারা করুক তাদের মতো আয়োজন। আমার কিচ্ছু বলার নেই। এভাবে কেটে গেলো ৫ টা দিন। চোখের পলকে যেন সবগুলো দিন কেটে গেল। আজ আমার আর মুটকি টার বিয়ে। ইয়ে মানে ফারিয়ার বিয়ে। আমার আত্নীয় স্বজন দের মধ্যে প্রায় অনেকেই এসেছেন। আমি বিয়ের আসরে শুধু ফারিয়া কে দেখছিলাম। সত্যিই লাল টুকটুকে বউ এর মতোই লাগছিলো ওকে। মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিলো। হিহিহি। আলুর বস্তা একটা। হিহিহি

অবশেষে সারাদিন হাড়ভাঙা ক্লান্তির পর সব কিছু সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হলো। এখন ফারিয়া আমার বউ।
কতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেলো। এখন ফারিয়া হয়তো বাসর ঘরে বসে আছে।  আমি এসব ভাবছিলাম তখনই আমার চাচাতো ভাই এর বউ মানে একটা বিচ্ছুর দল এসে আমাকে ঘরে টেনে, হিচড়ে, ঠেলে,ধাক্কিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো। আমিও আর বের হইনি। কারন এখন ঘর থেকে বের হলে আম্মুও উলটো টা ভাবতে পারে। আমি বিছানার কাছে যেতেই দেখলাম বউ আমার ইআআআআ বড়ো ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।  আমি যেতেই সে উঠে আমাকে পায়ে ধরে সালাম করলো। আমিও তাকে উঠিয়ে বিছানায় বসতে বললাম। তারপর সে কথা বলা শুরু করলো।

ফারিয়াঃ তা,কেমন আছো?

আমি অবাক হলাম। কারন বাসর ঘরে মেয়েরা বেশি একটা কথা বলেনা। তাও আবার আমি আর ফারিয়া অচেনা দুজন মানুষ। আমার মাথায় মেয়েটা কে পরীক্ষা করার জন্যে একটা বুদ্ধি আসলো। ভাবলাম মেয়েটা কেমন তা পরীক্ষা করা যাক। আসলেই।সে কেমন তা তো জানতে হবে আমার। নইলে একে নিয়ে সারাজীবন কেমনে কাটাবো?
আমিও ভাব নিয়ে বললাম,মিশন স্টার্ট।

ইমরানঃ হুম। ভালো না।

ফারিয়াঃ কেন কেন? ভালো নেই কেন?

ইমরানঃ আপনারা ভালো আর থাকতে দিলেন কোই? আম্মু, আন্টি যেভাবে বিয়ের জন্যে তাড়া দিচ্ছিলো। অবশেষে বিয়েটা করলাম। কিন্তু এক বিন্দুও ভালো নেই।

ফারিয়াঃ বিয়ে করেও ভালো নেই তুমি? আর আমাকে আপনি নয়। তুমি করে বলবা। আমি কী তোমার বয়সে বড়?

ইমরানঃ জানিনা। আর শুনুন।আমার উপর এসব অধিকার খাটাতে আসবেন না। বউ বউ এর মতো থাকুন। আমার কাছে আপনাকে ভালো লাগে না।

ফারিয়াঃ কেন? ভালো লাগে না কেন? (মন খারাপের সুরে)

ইমরানঃ আমার আপনাকে পছন্দ হয় নি।

আর আমার থেকে দূরে থাকবেন।আমার অন্য কেউ আছে। কথাটা মাথায় থাকে যেন। এখন সরুন। আমাকে ঘুমাতে দিন। আমি তখনই শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে দেখলাম মেয়েটা কাঁদছে। তার মানে আম্মুর কথা টাই ঠিক। মেয়েটা খুবই কোমলমতি মনের মেয়ে। হয়তো আজ আমার এভাবে কথা বলা টা আশা করেনি। কিন্তু তাকে তো এভাবে আরও কিছু পরীক্ষা দিতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কখন তা আমি নিজেও জানি না। হয়তো বেশি ক্লান্ত ছিলাম তাই এমন হয়েছে। সকালে জেগে গিয়েছি অনেক আগেই।

আমার অভ্যাস সকাল ৭ টার মধ্যে ওঠা।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। উঠে দেখি মেয়েটা আমার পাশে শুয়ে আছে। আহা। মেয়েটা কে জেগে থাকলে যতটা সুন্দরী মনে হয়, ঘুমিয়ে থাকলে তার সৌন্দর্য্য আরও বেড়ে যায়।
কতো মায়াবী একটা চেহারা। ইশশশশ!!! চোখের কাজল গুলো লেপটে গেছে। কাল রাতে বোধহয় বেশিই কেঁদেছে। এখন নিজের এই যেন কেমন জানি লাগছে। ফারিয়া কে দেখলে যে কেউ প্রথম দেখা তেই প্রেমে পড়ে যাবে। আমিও তো পড়েছি। এখন সেটা স্পষ্ট টের পাচ্ছি। কী আর করার। কোনো কাজ নেই। আগে থেকেই প্ল্যান করেছিলাম কয়েকদিন অফিসে যাবো না। বাসায় থেকে একটু আরাম করবো। কম ধকল তো আর যায় নি বলুন?। শুয়ে ছিলাম।  তখনই ফারিয়া এসে বলল,

ফারিয়াঃ এই, শোনো। এই? ফারিয়া কে অসম্ভব সুন্দরী দেখাচ্ছিলো।সবুজ একটা শাড়ি পরেছে আজ। কপালে ছোট্ট একটা টিপ আর চোখে ঘন কালো কাজল দেয়া। আমিও ঘুমের ভান ধরে বললাম,

ইমরানঃ উমমম, কে?

ফারিয়াঃআমি,ফারিয়া। ওঠো। আম্মু ডাকছে।

ইমরানঃ তা আম্মু ডাকছে আম্মু কে বললেই পারতেন। আম্মুই আমাকে ডেকে দিতো। আপনি এলেন কেন? জান তো এখান থেকে । সরুন!!!!!!!

এই বলে আমি ওয়াশরুম এ গেলাম। আমি ওয়াশরুম এর দরজা টা একটু ফাক করে দেখি মেয়েটা শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছছে। হয়তো আবার কেঁদেছে।  আমিও তা আর খেয়াল করলাম না। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে এলাম। আমার চাচাতো, মামাতো ভাই আর তাদের বউয়েরা তো ঝড় তুলে দিলো আমার দিকে। সবার মুখে একই কথা, “বাসর রাত কেমন কাটলো”। সবাই বাঁদরামো শুরু করে দিলো। আমি খেয়াল করলাম ফারিয়া আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। চাউনি টা অনেক বেদনার সংকেত দিচ্ছে।

আমি মেয়েটা কে অনেক টা কষ্ট দিয়েছি তা সত্য। বিয়ের পর আমি তার কাছে যাইনি। বরং তাকে আরো দূরে ঠেলে রেখেছি। স্বাভাবিক সে এমন টা করতেই পারে। আম্মু আগেই বলেছিলো মেয়েটা অনেক নরম মনের আর ভালো একটা মেয়ে। আর খুব ভালো বলেই এতো স্বল্প কারনেই কেঁদে একাকার করে দেয়। এভাবে কেটে গেলো ২মাস।এখনও এভাবেই কাটছে আমাদের দিন।  আর ফারিয়াও এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। সে আমার সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে প্রতিবার। আমার সাথে আরও বেশি করে কথা বলতে চায়। সব সময় তো আর সুযোগ না দিয়ে থাকা যায় না। একদিন রাতে ঘুমাচ্ছি তখন একটা অবাক করা কান্ড ঘটে গেলো যা আমি আশা করিনি।আমি ঘুমাচ্ছিলাম। ঠিক ঘুমাচ্ছিলাম না। জেগেই ছিলাম। তখনই ফারিয়া এলো। আমি চোখ বুজে পড়ে রইলাম। সে এসে বললো,

ফারিয়াঃ এই ইমরান। তুমি কী শুনতে পাচ্ছো? আর শুনতে পাও বা না পাও। এটা জেনে রাখো। আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার আমাকে পছন্দ না তাই না? বেশ। আমিও তোমার মনের মতো হবার চেষ্টা করবো। কী নেই আমার মধ্যে? তুমি এমন কেন? আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তা তুমি কেন বোঝো না? আমাকে এভাবে কেন দূরে ঠেলে রাখো? তুমি অন্য কাউকে যদি ভালোবাসো তাহলে বলো। আমি তোমার সুখের জন্যে সব কিছু করতে রাজি। তোমাকে ছেড়ে আমি চলে যাবো যদি তুমি সুখী হও।তোমাকে আমি কতো আগের থেকে চেয়ে এসেছি তা হয়তো তুমি নিজেও জানো না। কিন্তু আমার বিশ্বাস আমাদের মাঝে একদিন না একদিন এই দেয়াল টা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে

এই বলে ও আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো। তারপর উলটো দিকে শুয়ে কাঁদতে থাকলো। আর এদিকে আমার মনটার ভেতর সাইক্লোন এর চেয়েও ভয়াবহ ঝড় উঠতে লাগলো। আমি যেরকম মেয়ে চাইতাম আল্লাহ পাক ঠিক তেমন মেয়েই আমাকে বউ হিসেবে দিয়েছেন। আমি আজ খুব খুশি। আবার একটু একটু কষ্টও লাগছে কারন ফারিয়া কে এভাবে কাঁদিয়েছি এই ২ টা মাস। মেয়েটা আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো। আর আমি কি না পরীক্ষা করার জন্যে ওকে কষ্ট দিলাম। আর কষ্ট দিলে চলবে না। ওকে কাছে টেনে নেবো।

আমিও পাগলী টা কে অনেক ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত থাকাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরদিন,আমি অফিস থেকে আজ খুব তাড়াতাড়িই চলে এলাম। আজ সকালে ফারিয়া আমায় ডাকেনি। ও আমায় রোজ ডাকে। অবাক হলাম না আমি কারন হয়তো সে আমার প্রতি অভিমান করে আছে। আজকে কিছু একটা করতে হবে আমাকে। এভাবে আর আমি থাকতে পারছি না। ও নিজেও ভালো নেই আর আমি তো দুরের কথা। ও দুপুরবেলা আমার জন্যে খাবার নিয়ে বসে ছিলো। আমি বললাম বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। আজ দুপুরে খাবো না। সে কাঁদো কাঁদো চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। সারা সকাল মেয়েটা কিছু খায় নি। আম্মু অনেকবার বলেছিলো খাবার কথা কিন্তু ও বলেছিলো আমার সাথে খাবে।

আর আমি এসেই ওর মন টা আরও খারাপ করে দিলাম। আসলে আমি আর আমার কয়েকজন কলিগ মিলে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিলাম। তাই বাসায় এসে কিছু খাই নি। আমি তো জানতাম না যে ফারিয়াও না খেয়ে থাকবে। ইসসস। আরেকটা ভুল করে ফেললাম। সারাবিকেল চুপচাপ ছিলো ফারিয়া। আমিও আর কথা বলিনি। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম। কখন ও ঘরে আসবে। এসে বেলকোনি তে দাঁড়াবে। আজই ওর সব কষ্টের অবসান ঘটাবো আমি। রাতেরবেলা, রাতেরবেলা খেয়ে দেয়ে এসে রুমে শুয়ে আছি।  এমন সময় ফারিয়া এলো। এসে মাথা আচড়াতে লাগলো। আমি তখন আড়চোখে শুধু ফারিয়া কে দেখছিলাম।  সত্যিই। কি সুন্দর তার রুপ। মেয়েটা মুটকি হলেও অনেক সুন্দরী। আর তাকে এরকম মুটকি তেই মানায়। রোগা -পটকার মতো মানায় না।  আমি আরও একবার বিদ্ধ হলাম তার মায়া জালে।  সে মাথা আচড়ানো শেষ করে বেলকোনি তে গিয়ে দাঁড়ালো। আমিও চুপিচুপি সেখানে গেলাম। তারপর তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।সে ভয়ে আমার দিকে ফিরতেই আমি তার ঠোট চেপে ধরলাম। আর বললাম,

ইমরানঃ চুপ। একদম চুপ। আজ আমি যা বলবো সব শুনবা। সে আমার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করছে না। তারপর সে ইশারা দিয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো। আমি বললাম,

ইমরানঃ অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় তাই না ফারিয়া?আজও তাই হবে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে এই ২ মাস দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমি আসলে দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কেমন মেয়ে। কিন্তু বিশ্বাস করো। আমার এ ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না। আমি জানি তুমি অনেক আঘাত পেয়েছো। কিন্তু তবুও আমি বলছি,
আমায় ক্ষমা করো প্লিজ। সেই বিয়ের রাত থেকে যে ভুল করেছি তার জন্যে ক্ষমা করো আমাকে।ফারিয়া কিছু বলছে না। শুধু কাঁদছে। তারপর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আরও বেশি কাঁদতে লাগলো। আর বললো,

ফারিয়াঃ তুমি জানো কতো টা খারাপ লেগেছে আমার? তোমাকে আমি কতো আগে থেকে ভালোবাসতাম। বিয়ের আগে আম্মু যখন জানালো তখন কতো খুশি হয়েছিলাম তোমায় পাবো বলে। কিন্তু বিয়ের পর যখন তুমি বললা তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি। তখন আমার খুব আঘাত লেগেছে। মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিলো।আমি কতো ভাবে তোমায় আমার ভালোবাসার কথা টা বোঝাতে চেয়েছি কিন্তু তুমি তো বোঝো নি( কেঁদে কেঁদে)

ইমরানঃ এই পাগলী। প্লিজ আর কেদো না।তোমার কান্না যে আমার সহ্য হচ্ছেনা। খুব কষ্ট হয় আমার তুমি কাঁদলে।

ফারিয়াঃ এহহ!!!. আইছে। এতোই যখন লাগে তাহলে আমায় এভাবে কাদালে কেন?

ইমরানঃ সেটাতো তোমার পরীক্ষা ছিলো।

ফারিয়াঃ তাই? তাহলে এখন তোমার পরীক্ষা হলো আমি দেখবো যে তুমি আমার কাছে না এসে কতোদিন থাকতে পারো।

ইমরানঃ প্লিজ। এমন টা করো না। আমি যে মরে যাবো এমন টা করলে। তুমি যদি আমার কাছ থেকে দূরে সরে থাকো তাহলে আমি কাকে ভালোবাসবো?  কাকে কাছে টেনে বুকে আগলে বলবো ভালোবাসি? প্লিজ এমন করো না।অনেক তো হইছে। আর এমন করো না প্লিজ। আমায় ক্ষমা করো।

ফারিয়াঃ Shhhhh…….চুপ। একদম চুপ। জিভ কেটে কৌটায় ভরে রাখবো আর একবার মরার কথা বললে। তুমি সত্যিই একটা গাধা। আমি কী করে পারবো তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে??? আমি বললাম আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?

ইমরানঃ অনেক ভালোবাসি তোমাকে ফারিয়া।

ফারিয়াঃ আমিও তোমাকে ভালোবাসি। অনন্তকাল ধরে, আর জন্মের পর জন্মে তুমি শুধু আমার। মৃত্যুর পরও আমি তোমায় বিধাতার কাছে চাইবো। আমার সব কিছু শুধু যে তোমায় ঘিরেই।

ইমরানঃ তোমার মতো মানুষ হয় না ফারিয়া।তোমায় আমি হারাতে চাই না। খুব ভালোবাসি তোমায়। আচ্ছা তুমি কী জানি বলছিলে? আমার মনের মতো হবার চেষ্টা করবা না কি যেন?

ফারিয়াঃ হুম। ডায়েট শুরু করবো।

ইমরানঃকেন?

ফারিয়াঃ আমি মোটা তো,তাই। আলুর বস্তা হয়ে কতদিন থাকবো শুনি????

ইমরানঃ এই। তুমি যেমন ঠিক তেমন এই থাকো। আমি তোমাকে এভাবেই চাই।
আমার সুন্দরী আর এতো কিউট বউটা কে কি করে তার সৌন্দর্য্য টা কে নষ্ট করে দিতে দিই বলো?

ফারিয়াঃ যাহহ। শয়তান একটা। তাহলে কেন বললা সেদিন তোমার অন্য কেউ আছে? জানো? তুমি সেটা বলার পর থেকে আমি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারিনি।

ইমরানঃ বিশ্বাস করো ফারিয়া। তুমি আমাকে এই কটা দিন ধরে পাগল করে ফেলেছো। তোমার শরীরের গন্ধ,তোমার চুলের সুবাস,তোমার কাজল কালো চোখ, সবকিছু আমাকে আধা পাগল করে দিয়েছে। তোমায় কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে করলেও নিতে পারিনি। তা তো তুমি জানোই। আমার অন্য কেউ নেই। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আর বেসে যাবো।

ফারিয়াঃ তাই বুঝি???? তোমায় তো সবে আধা পাগল করেছি। আর তুমি যে আমায় দূরে সরিয়ে ভেতরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছো তার বেলায়???  আজ তার সব শোধ তুলবো জনাব। আজ পালাবেন কোথায়?

ইমরানঃ তাই? তা কি করবেন আপনি?

ফারিয়াঃ আজ রাত থেকে শুরু করে তোমায় সারাজীবন, পুরো পাগল করে দেবো। কাছে এসো না প্লিজ ইমরান,( কলার চেপে ধরে) অতঃপর, বাকিটা ইতিহাস। বিদ্যুৎ গোলযোগ এর কারনে এখানেই।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত