তাসফি! (নীলাঞ্জনা) হুম (আমি) দেখো তো, আমায় কেমন লাগছে? আচ্ছা টিপ টা কি শাড়ির সাথে ম্যাচ করেছে? নীল টিপ থাকলে বেশ হতো। নীল শাড়ির সাথে কি লাল টিপ মানায়? সেদিন কত্তো করে বললাম, নীল আর কালো রঙের দুই প্যাকেট টিপ আনবা। তোমার মনে তো শখ আহ্লাদ বলে কোনো জিনিসই নাই ওই শুনতেছো?
হুম কিসের হুম? এত্তো কষ্ট করে সাজলাম! মোবাইল থেকে চোখ সরাও বলতেছি! তাছাড়া কিন্তু গতবারের মতো এটাও ভেঙ্গে দিব! নীলাকে বিশ্বাস নেই। সত্যি সত্যি মোবাইলটা আছাড় দিলেও দিতে পারে। তাই ওপরের দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব মায়া, সব রুপ সৃষ্টিকর্তা নীলাকে উপহার দিয়েছে! অবশ্য চমকানোর কিছু নেই। কিছু কিছু মানুষ থাকে, যাদের মুখে জন্মগত ভাবেই সৃষ্টিকর্তা এক ধরণের মায়া তৈরী করে দেন। তারা সব সময়ই সুন্দর! নীলা সেইসব সৌভাগ্যবানদের একজন। বললে না তোহ, কেমন লাগছে? ভালো। বলোতো, আমি আজ হঠাৎ করে সাজলাম কেন? আজ. . .ওহ হ্যাঁ! আজ তো তোমার জন্মদিন । হ্যাপি বার্থ ডে! সত্যিই তাসফি! আমি অবাক! অবাক হওয়ার কিছু নাই।
তোমার জন্মদিন, আর আমি মনে রাখব না? হতেই পারে না! দেখলাম, নীলা কেমন জানি মনমরা হয়ে গেল। নীলার পুরো নাম নীল নীলাঞ্জনা। কোনো এক মনিষী বলেছিলেন, রুপবতী মহিলারা নাকি বেশি অহংকারী হয়। সেই মনিষীর নাম আমি জানি না। কিন্তু তার কথা ভুল প্রমাণিত করতেই বোধহয় নীলার জন্ম হয়েছিল পৃথিবীতে আমার দেখা তিনজন ভালো মানুষের মধ্যে নীলা একজন। নীলার হঠাৎ মন খারাপের কারণটা উপলব্ধি করে তাড়াতাড়ি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, নীলা, চলো আজ লং ড্রাইভে যাব! তোমার জন্মদিন বলে কথা! আচ্ছা তুমি খুশি হওনি? হয়েছি। তাহলে তাড়াতাড়ি চলো! আজ দূরে কোথাও যাব।
যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমনটা হলো না। দুই ঘন্টা যাবৎ গাড়ির মধ্যে আটকে আছি। কারণটা হলো জ্যাম! এখন মনে হচ্ছে, গাড়ি বের না করে রিকশায় করে ঘুরলেই ভালো হতো। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নীলার সেই যে মুড অফ হয়েছে, এখনও তা অব্যাহত আছে। গাড়ির এক পাশে বসে চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। জ্যাম থেকে বের হয়ে নীলাকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম। প্রথমেই বিভিন্ন রঙের টিপ কিনলাম। তারপর কয়েকটা শাড়ি কিনলাম। যদিও নীলা কোনো কিছুতেই আগ্রহ দেখালো না। যা কিনেছি, সব আমার পছন্দতেই। মার্কেটিং শেষে ঢাকার বাইরে একটা বিশেষ জায়গার দিকে রওনা দিলাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। আমি আর নীলা পাশাপাশি দাড়িয়ে আছি। বাতাসে নীলার চুল ভাসছে। এখানে ঢাকা শহরের কোলাহল নেই, কোনো ব্যস্ততা নেই, মানুষের ভিড়ও নেই। আছে শুধু একটা নদী, নদীর ধারে কাশফুলের বন আর অনেকগুলো নাম না জানা গাছ। এই জায়গাটা নীলার প্রিয় একটা জায়গা এবং আমারো।
তাসফি! হুম বলো। আমার এতোক্ষণ মন খারাপ করে থাকার কারণটা কি জানো? না। আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না। প্রথমে তো ভেবেছিলাম আমি আজকের দিনটা ভুলিনি ভেবে তুমি আনন্দে পাথর হয়ে গেছ (!) কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তুমি রাগ করেছো। কেন রাগ করেছ? রাগ করিনি । হতাশ হয়েছি। আজ এমন একটা দিন, যেদিন বাবা তোমার মতো একটা ইডিয়েটের হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিল! আমি জানতাম। কিন্তু একদম এক্সকিউজ দেয়ার চেষ্টা করবা না। তুমি আসলেই একটু স্টুপিড। গাড়িতে ওঠো। আমি বাসায় যাব।
এতো তাড়াতাড়িই চলে যাবা? এইমাত্রই তো আসলাম। এতো তাড়াতাড়ি গেলে তো জায়গাটা মন খারাপ করবে!ওই একদম ন্যাকামো করবা না। এএতো তাড়াতাড়ি গেলে তো জায়গাটা মন খারাপ করবে! ঢং! তুমি আমার ব্যাপারে একটুও সিরিয়াসনেস দেখাচ্ছো না, এতে আমার মন খারাপ হচ্ছে না? বাসায় গেলেই তো ফোনের মধ্যে মুখ গুজেঁ বসে থাকবা! কি কর মোবাইলে তুমি এতো? ওহ বুঝেছি! তাহলে তুমি মেয়েদের সাথে চ্যাট করো? বেয়াদব ছেলে একটা। কালই ফেসবুক, টুইটার, ইমেইল যা কিছু আছে, সব পাসওয়ার্ড আমাকে দিবা। না দিলে আব্বুর বাসায় চলে যাব বলে দিলাম ! আচ্ছা। দিব। রাগ কি এখন কমেছে? রাগ কমেছে মানেটা কি? তোমার কি মনে হয়? আমি কি ইয়ার্কি করতেছি? গাড়িতে ওঠো। আমি বাসায় যাব। সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। আমি আর নীলা ঢাকা ফিরছি। দিনের বেলার তুলনায় এখন আর তেমন জ্যাম নেই। ফাঁকা রাস্তা। আসার সময় নীলা একটা কথাও বলেনি। এখন কাঁদছে । নীলা! প্লিজ আর কেদোঁ না। আমি কিছুদিন ধরেই খেয়াল করছি তুমি আর আমাকে ভালোবাসো না। আজকের মতো একটা দিন, সেটাও তুমি ভুলে গেছিলা! এটাই তো স্বাভাবিক। আমি তো পুরাতন হয়ে গেছি। তাই না?
বাসায় পৌছে গেছি। গেইটের সামনে হর্ন বাজাতেই দারোয়ান গেইট খুলে দিল। গাড়িটা পার্ক করে আমি আর নীলা ফ্লাটে দিকে এগুলাম। দরজার সামনে এসে নীলার দিকে তাকালাম। আগের মতোই মনমরা হয়ে আছে। সে জানেও না যে তার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে! দরজা না খুলে কলাগাছের মতো দাড়িয়ে আছো কেন? (নীলা) আসার সময় হাতে ব্যথা লেগেছে। তুমি খোলো প্লিজ। (আমি)
নিলা দরজা খুলতেই বাসা ভর্তি মানুষ একসাথে চেচিয়ে উঠল, “হ্যাপি ম্যারিজ এ্যানিভারসারি!” প্রতিটি ঘর বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। ঘরের ঠিক মাঝখানটায় একটা টেবিলে বড় একটা কেক। তাতে লেখা ‘Tasfi+Nila’। টেবিলের চারপাশে আমার আর নীলার সব আত্মীয় স্বজন হৈ চৈ করছে। নীলা আর আমি বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে আছি। ভূত দেখলেও মনে হয় না মানুষ এতটা অবাক হয়! নীলার ছোট বোন নিশি ছুটে আসলো নীলার দিকে।
আপুউউউ! সারপ্রাইজ! (নিশি) ও এম জি! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে নাহ! এতো আয়োজন তুই করেছিস?(নীলা) আরে ধুর! আমি তো জাস্ট তোরা চলে যাওয়ার পর ঘরগুলো সাজিয়েছি। বাকিসব প্ল্যান তো দুলাইভাইয়ের! লাভ ইউ দুলাভাই! ! লাবু ঠু (আমি) নীলা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকলো,যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। আমি সুন্দর করে একটা হাসি দিলাম! নীলাও হেসে ফেলল! হাসলে কি সুন্দরই না লাগে মেয়েটাকে! আমি আসলেই ভাগ্যবান,এরকম একজন জীবনসঙ্গি পেয়েছি! আমিও হাসলাম। কেক কাটা শেষে গানের আসর বসলো। নিশি গান গাইছে “ভালোবাসব বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমার হাত ধরে টান দিল। তাকিয়ে দেখি নীলা। হাত ধরে সোজা ব্যালকনিতে নিয়ে গেল।
তুমি আমার জন্য এতো আয়োজন করেছো আমাকে আগে বলো নাই কেনো? সারপ্রাইজ!হুহ! কালই আমি আব্বুর বাসায় চলে যাব। হায় হায়! বলে কি! এতো কিছু করার পরেও? আচ্ছা যাব না। কিন্তু ৩ টা শর্ত আছে। বলো বলো! প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে আমার সাথে লুডু খেলতে হবে! আচ্ছা খেলব! ফেসবুক থেকে শুরু করে সব বুকের পাসওয়ার্ড আমায় দিতে হবে! তোমার গুলাও তাহলে আমাকে দিতে হবে! না। আমি দিব না। তাহলে আমিও দিব না।
তাহলে কালই আচ্ছা আচ্ছা দিব। লাষ্ট শর্ত কিহ? তুমি তো সারাদিন অফিসে থাকো। আমার ভালো লাগে না একা একা! ওই! তোমার জন্য চাকরীটা কিন্তু ছাড়তে পারব না বলে দিলাম! চাকরী ছাড়ার কথা বলেছি নাকি? স্টুপিড একটা! বলছিলাম যে, একটা ‘বাচ্চা তাসফি’ গিফট করলে নীলা বাক্যটা শেষ করতে পারল না। দুই গাল টমেটোর মতো লাল করে আমার বুকে মাথা গুজে দিল। এত্তো রাগি একটা মেয়েরও এত্তো লজ্জ্বা? বাব্বাহ! ধন্য! মেয়েজাতি ধন্য!