পিচ্ছি বর

পিচ্ছি বর

আমি সুলতানা এইবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি..! আজকে আমাকে দেখতে আসবে.. তাই, শাড়ি পড়াচ্ছিল তখনই একটা পিচ্ছি এসে হাজির এএএ আমি চলে এসেছি ( পিচ্ছি) সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে,একটা ছোট পিচ্ছি।বয়স ৬-৭ হবে। আমার আপু প্রশ্ন করলো,তুমি বরের কি হও.? সাথে সাথেই মুখ বেকিয়ে বললো ইস বরের কি হও? আমিই বর।

সবাই তো হাসতে শুরু করল। আপু বললো,আচ্ছা পিচ্ছি বর রুমে যাও বউ নিয়ে আসছি। পরে আমাকে সবার সামনে  নিয়ে গেল  সবাই অনেক রকম প্রশ্ন করল। কথা বার্তায় মনে হল সবার পছন্দ হয়েছে তাই আমাকে আর বর কে একা রুমে কথা বলতে দিল। দুজন বসে আছি তখন সে বলল,আমি সাদিক একটা কোম্পানিতে জব করি!! আমার আপনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে আপনার আমাকে কেমন লাগছে? আমি চুপ করে রইলাম ঠিক তখনই পিচ্ছিটি এসে হাজির!!

দৌড়ে আমার কোলে এসে বসল আর বললো আমার তোমাকে অনেক পছন্দ হয়েছে, আমিই তোমাকে বিয়ে করবো সুলতানা ( পিচ্ছি) আমি পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম বলে কি? আমি জিঙ্গাসা করলাম,,, তো বর তোমার নাম কি..? ( আমি) ইসসসসসসস,,,,,,তুমি এখনও আমার নামটাই জানো না?( পিচ্ছি)  না তো পিচ্ছি বর এখনও জানি না গো..( আমি) বললো,থাক জানা লাগবেনা এমনিতেও বরের নাম মুখে নিতে নেই আমি আম্মুর কাছে শুনছি!! আমি বললাম আর কি কি শুনছ গো পিচ্ছি বর অনেক কিছু, বলবো না বলেই দৌড়ে চলে গেল.!! এইদিকে সাদিক তো হাসতে হাসতে শেষ আমিও হাসতে ছিলাম! সাদিক বললো ওর নাম রবি  এইবার নার্সারিতে পড়ে!! আমি বললাম,যাই হোক আমার ওকে ভালোই লাগছে!! ওরা চলে গেল বিয়ের দিন বরপক্ষ আসার পর থেকে রবি আমার কাছেই ছিল.!!অনেক দুষ্টমি করলো আমার সাথে রবির বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক হয়ে গেল!! আমার জন্যও ভালো হলো ওই বাড়িতে সময় কাটানোর মত কাউকে পেলাম যে আমায় সারাক্ষন-ই মজার মধ্যে রাখবে!! বিয়ে হয়ে গেল।

আমার আর সাদিকের শশুর বাড়ি গেলাম!! আমি বাসর ঘরে একা একা বসে আছি তখনই রবি পাঞ্জাবি- পায়জামা পড়ে এসে হাজির!! আর বললো বউ তোমার কি খুব মন খারাপ..? ( রবি) আমি বললাম,  না তো তবে মুখ গোমরা করে বসে আছ কেন? অঅঅ,,,,বুঝেছি বুঝেছি আমি তোমাকে চকলেট দিচ্ছিনা বলে মন খারাপ( রবি) আমি সাথে সাথে হেসে ফেললাম বললাম হুম ঠিক বুঝেছ,তো পিচ্ছি বর এখন চকলেট দাও সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে ১টা চকলেট নিয়ে আসল আমার  হাতে দিয়ে বলল এইবার তো হাসো,চকলেট দিলাম তো( রবি) আমি গাল দুটো টেনে বললাম তুমি অনেক গুলো ভালো গো আমার পিচ্ছি বর। রবির সাথে কথা বলতে বলতেই সাদিক এসে হাজির এসেই বললো কিরে রবি তুই এখানে কেন? সাথে সাথেই বলে উঠলো আমার বউয়ের কাছে আমি থাকব না তো কে থাকবে..?( রবি) সাদিক বলল খুব পাকা হয়ে গেছো তাই না.?যাও আম্মুর কাছে যাও!!

রবি বলল না আমি আজকে এইখানেই ঘুমাব!! আম্মা এসেও অনেক বুঝালো কিন্তু কোন কাজ হলনা। উনি আজকে এই রুমেই ঘুমাবে!! অনেক বুঝিয়ে ও যখন কোন কাজ হলনা তখন আম্মা বলল,ও ঘুমিয়ে পড়লে আমার রুমে দিয়ে যেও!! বাচ্চা মানুষ একটু পরই ঘুমিয়ে পড়ল আম্মা এসে নিয়ে গেল এই রুম থেকে!! পরে প্রতিদিন ই আমাদের রুমেই ঘুমানোর আগ পর্যন্ত থাকতো! স্কুলে গেলে প্রতিদিন আমার জন্য চকলেট আনতো!! আমিও ওর পছন্দের এটা সেটা রান্না করে খাওয়াতাম আমাকেই খায়িয়ে দিতে হত!! প্রতিদিন স্কুল থেকে আসার পর আমিই গোসল করিয়ে দিতাম!! আর ওই দিন আম্মা ও ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে একটু মার্কেটে গেছে… তাই আমি বললাম পিচ্ছি বর তুমি ওয়াশ রুমে যাও আমি তরকারিটা নামিয়েই আসছি! ১০ মিনিট পর ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি রবি অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে! আমি দৌড়ে গিয়ে ওকে কুলে নিলাম দেখলাম ও অঙ্গান হয়ে গেছে!! মাথায় পানি দিচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা আমি কি করব কিছুই বুজতে ছিলাম না!

সাথে সাথে সাদিক কে ফোন করলাম সাদিক মা কে সাথে করে নিয়ে বাসায় আসল!! রবি কে হসপিটাল নিয়ে গেলাম!! পরে ডাক্তার যা বলল,তা শোনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না আমরা  ডাক্তার বলল রবির নাকি ব্রেন টিউমার হয়েছে!! ওর বাচাঁর সম্ভবনা নাকি একেবারেই কম!! মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল সবাই কাঁন্না করছে! আমার শাশুরি পাগল প্রায় সারাক্ষন রবি বাড়ির মধ্যে দুষ্টমি করতো সবাইকে মাতিয়ে রাখতো!! মাএ কয়েকটা দিন হলো ওই বাড়ি গেছি কিন্তু মনে হচ্ছে রবির সাথে যেন আমার রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি আপন!! পরে শুনলাম রবি নাকি মাঝে মাঝে অঙ্গান হয়ে যেত কিন্তু এইটাকে কেউই তেমন গুরুত্ব দেয়নি!! ডাক্তার এসে বললো রবির নাকি জ্ঞান ফিরেছে সবাই গেলাম!! ও একেবারেই স্বাভাবিক… একটু আগে যে এত কিছু হয়ে গেছে,ওকে দেখে বুজাই যাচ্ছেনা!!

আমার দিকে তাকিয়ে বলল বউ তোমার মন খারাপ কেন,কান্না করছো নাকি? ওওও বুঝেছি আজকে স্কুল থেকে চকলেট আনিনি বলে,বিস্বাস কর আজকে একটু ও মনে নাই..( রবি) আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না.. রবি কে জরিয়ে ধরে কাদঁতে লাগলাম!! দুই দিন পর রবি কে বাসায় নিয়ে আসলাম খুব করে যত্ন নিতে লাগলাম সবাই!! এখন স্কুলেও পাঠাইনা এখন আর ঘুমালেও আম্মার রুমে দেইনা!! এখন আর ঘুমালেও মায়ের রুমে দেইনা আমাদের সাথেই রেখে দেই হঠাৎই ১দিন ঘুম থেকে ডেকে তুললো বউ বউ( রবি)আমি ঘুম থেকে ওঠেই বসে পড়লাম কি হয়েছে পিচ্ছি বর বাবু ( আমি) রবি বললো আমাকে বাবু কেন বলছো?( রবি) আমি বললাম তবে কি বলব গো তোমায় রবি বললো কেন আমি তো তোমার বর।আমাকে বর বলেই ডাকবে( রবি)।

আমি বললাম,ওকে বর কিছু কি লাগবে বর? রবি বললো  আমি নুডলস খাব বউ(রবি) সাথে সাথেই গিয়ে নুডলস রান্না করে ওকে খায়িয়ে ঘুম পারালাম!! পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার দু গালে দুইটা কিস করতে করতে রবি বলছিল বউ, আমি যদি মরে যাই তুমি কি আবার বিয়ে করবে( রবি) রবি এমন প্রশ্নে আমার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠল নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম বর তুমি মরে যাবে মানে,তুমি মরে গেলে,আমাকে কে চকলেট এনে খাওয়াবে বল ?থাকব কি করে আমি?? রবি হেসে বললো আরে না এমনি বললাম!! কিছু দিন পর জানতে পারলাম আমার বাচ্চা হবে বাড়ির সবার মনে যেন,এত কষ্টের পরের ও একটু সুখের ছোঁয়া!! সবার চেয়ে বেশি খুশি যে, সে রবি!! আম্মার মুখ থেকে শুনে দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো বউ তোমার নাকি ছোট্ট বাবু হবে.?আমি অনেক গুলা খুশি হয়েছি জানো?( রবি)  তাই বুঝি?( আমি) রাতে ঘুমাতে গেলাম শরির টা অসুস্থ তাই তাড়াতাড়িই ঘুম লেগে গেল সাদিক ও ঘুমিয়ে পড়ছে!! রবি হঠাৎই ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো আর বললো বউ তুমি ঘুমাচ্ছ কেন…?( রবি) আমি বললাম কি করব গো বর?

রবি বললো চলো বাবুর নাম ঠিক করি? আমি বললাম ওকে তুমিই ঠিক কর পিচ্ছি বর আমার!! জানো না বউ বাবুর নাম নিয়ে আমার যে কি চিন্তা আমি হেসে ফেললাম তাই বুঝি..?তবে সাথে সাথে চোখে জ্বল এসে গেল রবির দিকে তাকিয়ে!! মুখের আগের সেই প্রান চঞ্চলতা টা নেই। কেমন জানি জীর্ন শীর্ন হয়ে গেছে!! পরক্ষনেই ভাবলাম আমি কাদঁলে রবি ও কাদঁবে!!তাই চোখের পানি মুছে বললাম কি নাম রাখবে বল গো পিচ্ছি বর ?( আমি) ছেলে হলে নাম রাখবে অয়ন।আর মেয়ে হলে নাম রাখবে অর্পা ( রবি) আমি বললাম অনেক সুন্দর নাম গো পিচ্ছি বর!! পরে ১দিন হাতে ১টা চকলেট নিয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো বউ আজকে থেকে আর তোমাকে চকলেট দিব না ( রবি) কেন বর.?কাকে দিবে তবে?( আমি)

রবি বললো কেন যে, বাবু হবে তাকে দিব এখন থেকেই রেখে দিব তার জন্য ( রবি) আমি বললাম  কেন এখন আর বউ কে ভালোবাসো না বুঝি?( আমি) বাসি তো অনেক গুলা কিন্তু বাবু কে আমি চকলেট না কিনে দিলে কে দিবে বলো?( রবি) সাদিক রবির গালটা টিপে বলল ওলে বাবা লে,বাবুর জন্য এত দরদ?( সাদিক) হুম অনেক ( রবি) আমরা দৈনিক ডাক্তার দেখাতাম  আমাদের পারিবারিক এক ডাক্তার ছিল সে দৈনিক এসেই রবি কে দেখে যেত! সময় ক্রমশয় ঘনিয়ে আসছে পারিবারিক ভাবে পিকনিকে গেলাম উদ্দেশ্য হলো,রবি কে ভালো লাগানো!! সবাই গুরতে গেলাম অনেক মজা করলাম তবে ভাবিনি ওইদিনই রবির সাথে কাটানো সুখের শেষ দিন!! রাতে বাসায় আসার পর হঠাৎই অঙ্গান হয়ে গেল রবি।হাসপাতাল নিয়ে গেলাম!! সারাটা রাত কেউ দুচোখের পাতা ১করিনি অনেক কাদঁল সবাই!!

ভাবতেই পারছিলাম না রবি কে ছাড়া ওই বাড়িটাতে কিভাবে থাকব! সব আত্বীয় স্বজন রাও আসল ভোর পাচঁটায় রবির মৃত শরিরটা পরে রইল বেডে!! পরিবারের সবার কান্নায় সারা হাসপাতাল, কেঁপে উঠছে মনে হয়!! ৭টায় আমার পিচ্ছি বরটাকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম মনে হচ্ছিল আমার পেটের সন্তান মারা গেলেও এত কষ্ট পেতাম না!! আমার পরিবারের মানুষ আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইল কারন সারাদিন কান্না কাটি করি!! সবার একই অবস্তা কে কাকে দেখবে?

তবে আমি গেলাম না রবি না থাকলেও ওর স্মৃতি গুলো তো আছে.!! আজ ছয় মাস কেটে গেল সবাই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে !! আজকে আমার বাচ্চা হওয়ার ডেট একটু পর হসপিটাল নিয়ে যাবে রাতে বাচ্চা হল খুব ভালো ভাবে ছেলে হল নাম রাখলাম অয়ন !! বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল রবি ই ফিরে এসেছে অয়ন রুপে !!!

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত