প্রচন্ড পরিমানে বৃষ্টি পড়ছে।আকাশের সব অভিমান পানি হয়ে যেনো আজ ঝড়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে । সন্ধাবেলায় বৃষ্টির মধ্যে এই রাস্তায় গাড়ির দেখা নেই বললেই চলে,মাঝে মধ্যে দু-একটা যাও দেখা যাচ্ছে সবগুলো লোকে ভর্তি।আমি হুসাইন।পড়ালেখা শেষ করে সরকারি চাকরী করছি।আজ মিটিং ছিলো এই জন্য দেরী হয়েছে।সকালে যখন অফিসে আসলাম তখন আকাশে মেঘের রেশ মাএ ছিলো না তাই বাসা থেকে ছাতা নিয়ে বের হয়নি।কিন্তু হঠাৎ বিকেল থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে।বিকেল থেকে শুরু করে এই সন্ধা অবধী একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। থামবার কোনো নাম নেই।হঠাৎ করে কারো ছিটানো পানিতে আমার সারা শরীর ভিজে এককার হয়ে গেছে।সামনের দিকে তাকিয়ে যখনি মানুষটাকে ঝাঁড়ি দিতে যাবো তখনি মানুষটা আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুদ এক দৃষ্টি নিয়ে সরি বললো।আমার মনে হলো এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবকিছু থেমে গেছে।অদ্ভুত এক চাহনী আমার মনের সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।টানা টানা চোখ,খোলা চুল,কমলার মত ঠোট।উহু সে এক অন্যরকম অনুভূতি। সরি সরি।আমি আসলে ইচ্ছে করে আপনার গায়ে পানি দিইনি।(মেয়েটি) ইটস ওকে।(আমি) সত্যিই আমি ইচ্ছে করে আপনার গায়ে পানি দিইনি।গর্তের মধ্যে পা পড়া মাএ পানি ছুটে আপনার গায়ে পড়েছে আমি কিছু মনে করিনি। ধন্যবাদ।
মেয়েটি ভুবন ভুলানো একটা হাসি দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে চলে গেলো।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মেয়েটির দিকে।ইস আরেকটু সময় যদি মেয়েটার সাথে গল্প করতে পারতাম? কিরে বাসায় যাবিনা?(শিপন) শিপনের ডাকে ওর দিকে তাকালাম তুই এই বৃষ্টির মধ্যে বাইক নিয়ে কই গিয়েছিলি?(আমি) শুশুর বাড়ি যাবো।যাবি তুই? ইয়ার্কী করার জায়গা পাস না।তোর বিয়েই হলোনা তার শুশুর বাড়ি। বাসায় গেলে তাড়াতাড়ি বাইকে ওঠ নাহলে এখানে দাঁড়িয়ে থাক। আমার ফোন আর ল্যাপটপের কী করবো? আমরাটা পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে রেখেছি।দে তোরগুলো রেখে দিই। আমি ল্যাপটপ আর ফোন শিপনের কাছে দিয়ে বাইকের পিছনে চড়ে বসলাম।অফিস থেকে আমার বাসা একটু দুরে। বাসায় আসতেই আম্মুর ঝাড়ি শুরু।বৃষ্টির মধ্যে ভিজে কেনো বাসায় আসলাম।এই পৃথিবীতে মনে হয় আমিই একমাএ মানুষ যে কিনা ২৪ বছর বয়সেও আম্মুর কাছে ঝাড়ি শুনে।বাসার সবাই আম্মুকে ভয় পায়।আমার বড় ভাই বিয়ে করে ১ সন্তানের বাবা হয়ে গেছে তবুও সে এখনো আম্মুকে ভয় পাই। আব্বুর কথাতো বলবোই না।আম্মু যদি বলে এখন রাত তাহলে রাত আর যদি এখন বলে দিন তাহলে দিন।
আমি আম্মুর কথার কোনো জবাব না দিয়ে রুমে চলে আসলাম।কোনো কথা বলতে গেলেই ঝাড়ি আরো বেশি শুনতে হয়।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।পেটে ক্ষুদা নেই তাই ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলাম গেম খেলতে।আমার আবার একটা বদ অভ্যাস আছে অবসর সময় পেলেই গেম খেলতে বসে যায়। রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ মেয়েটির কথা মনে হলো।মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। সকালে দরজায় ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আজ একুশে ফেব্রুয়ারি তাই অফিস ছুটি।বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতেই রুমকী(বড় ভাইয়ের মেয়ে) আমার কোলে লাফ দিয়ে ওঠে পড়লো। চাচ্চু চাচ্চু আমাকে আজ স্কুলে নিয়ে চলোনা?তোমার সাথে স্কুলে যাবো।(রুমকী) আমার সাথে কেনো যাবে মামুনি?তোমার আম্মুর সাথেইতো যেতে পারো?(আমি) না আম্মুর সাথে যাবোনা।আম্মু আমাকে চকলেট দেয়না।তুমি চলো তোমার সাথে। আমিও চকলেট দিবোনা।চকলেট খেলে দাঁতে পোকা হয়। তুমিও আম্মুর মত পচা হয়ে গেছো।যাও তোমার সাথে আড়ি।
কথাটা বলে আমার কোল থেকে নেমে চলে গেলো।আমি পিছন থেকে ডাকলাম কিন্তু শুনলোনা। দেখোনা না হুসাইন সকাল থেকে কী পাগলামি শুরু করেছে।স্কুলের সময় হয়ে গেছে এখনো রেডিই হলোনা।শুধু বলছে আমি চাচ্চুর সাথে স্কুলে যাবো।(ভাবি) আজ একুশে ফেব্রুয়ারী ওর স্কুল ছুটি না?(আমি) না।আজ স্কুলে খেলাধুলা আছে। তুমি রেডি করে দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি।আমার অফিস নেই আজ। রুমকীকে আমার কাছে খুব কিউটা লাগে। ওকে দেখলে যেকোনো মানুষই কোলে নিবে।চাকরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমিই নিয়ে যেতাম।চাকরী পাওয়ার পর থেকে আর সময় পাইনা তাই ভাবিই নিয়ে যায়।রুমকীর বয়স মাএ ৭বছর।৭ বছর বয়স হলে কি হবে একদম বয়স্ক মানুষের মত বড় বড় কথা বলে।তবে রুমকীর একটা বদ অভ্যস আছে যার উপর একবার রাগ করবে তার সাথে সহজে আর কথা বলেনা।এর আগে একবার আমাকে বলেছিলো অফিস থেকে ফেরার সময় চকলেট আনতে।আমি ভুলে গিয়েছিলাম আনতে।সেদিন সে কী কান্না।এরপর আমার সাথে ২ দিন কথা বলেছিলো না।পরে আমি এক বক্স চকলেট কিনে দেওয়ার পর রাগ ভেঙ্গেছিলো।
যাই রেডি হয়ে নিই।
রেডি হয়ে রুমকীকে নিয়ে বের হলাম।আমার বাসা গলির মধ্যে তাই গলি থেকে বের হয়ে তারপর রিক্সাতে ওঠতে হয়।রুমকী আমার গলা ধরে আছে।আর একের পর এক প্যাচাল পেড়ে যাচ্ছে।আমি শুধু ওর কথায় হু হ্যা এসব বলে যাচ্ছি।রাস্তায় এসে রিক্সা নিলাম।রিক্সাতে ওঠার পর জানো চাচ্চু আমাদের স্কুলে নতুন একটা ম্যাম এসেছে।উনি অনেক ভালো।আমাকে মাঝে মাঝে চকলেট কিনে দেয়।(রুমকী) তাহলে তোমার ম্যামের কাছে থেকে গেলেই পারো।উনি তোমাকে অনেক চকলেট কিনে দেবে।(আমি) না না তা থাকা যাবেনা।আমি চলে গেলে তোমরা ভালো ভালো খাবার রান্না করে খাবে।সেটা হতে দিবোনা আমি। দেখলেনতো কত বুদ্ধি ওর। ম্যামের দেওয়া চকলেট খাবে কিন্তু ম্যামের কাছে থাকবেনা। রুমকীকে নিয়ে ওর স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতেই চমকে ওঠলাম।সেই ভুবন ভুলানো হাসি,টানা টানা চোখ।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।এতো সেই মেয়ে যাকে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে দেখেছিলাম। আজ তোমার আসতে দেরী হলো কেনো?(মেয়েটি) আর বলোনা চাচ্চুকে সকাল থেকে ডাকতে ডাকতে দেরী হয়ে গেলো।(রুমকী) ওদের কথাতে বাস্তবে ফিরলাম। এখন সব দোষ আমার তাইনা?(আমি) তোমারইতো দোষ।তোমার জন্যই আসতে দেরী হলো।(রুমকী) আচ্ছা আমারি দোষ।
আপনাকে কোথায় জানি দেখেছি মনে হচ্ছে।(মেয়েটি) কালকে যেই মানুষকে ভিজিয়ে দিয়েছেন সেই আমি।(আমি) ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আসলে আমি ইচ্ছা করে এমনটা করিনি। জানি। আমি পাখি।আপনি?(হাত বাড়িয়ে) আমি হুসাইন।(রুমকী হাত বাড়িয়ে কথাটা বললো) রুমকীর কথা শুনে আমি আর পাখি দুজনেই হেসে ফেললাম।এতটুকু পিচ্ছি এমন সব ফাজলামি করে না হেসে পারা যায়না।পাখি হাসতে হাসতে বললো তুমি যদি হুসাইন হও তাহলে রুমকী কে?(রুমকীকে বললো) আমি হুসাইন,আমিই রুমকী।ঠিক বলিনি চাচ্চু?(রুমকী) আমি রুমকীর কথাতে মাথা নাড়ালাম শুধু। রুমকী চলো খেলার সময় হয়ে গেছে।আপনিও চলুন ছবি আঁকা দেখবেন।(পাখি) চলুন।(আমি) মাঠের এককোণায় ছাএ ছাএীদের জন্য অঙ্কনের প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।আমার মত আরো অনেকেই এসেছে।কেউ তাদের সন্তানের সাথে,কিংবা বোনের সাথে,কিংবা ভাইয়ের সাথে।সকল গার্জিয়ানদের বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়েছে। আমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম।পাখি রুমকীকে একটা জায়গায় বসিয়ে দিলো।ছবি অঙ্কন প্রতিযোগিতার দায়িত্ব সম্ভবত ওর উপরই পড়েছে।সব ছেলে মেয়েদের বুঝিয়ে দিচ্ছে কি কি করতে হবে।ও আপনাদেরতো বলাই হয়নি রুমকী কিসে পড়ে।রুমকী দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
অঙ্কন প্রতিযোগিতায় রুমকী ১ম হলো।এরপর দৌড় প্রতিযোগিতা,নাচ এই দুটোতে কোনো স্থান পেলোনা।শেষ দৌঁড় প্রতিযোগীতায় ২য় হলো।খেলা শেষ হলে পুরুষ্কার বিতরণের পালা।খেলা শেষে রুমকী আমার কাছে এসেছে কিন্তু পাখিকে কোথাও দেখছিনা।আমার চোখদুটো শুধু ওকেই খুজছে। রুমকী তোমার পাখি ম্যাম কোথায়?(আমি) তুমি কী কানা?(রুমকী) আমি কানা হবো কেনো? ওই দেখো পাখি ম্যাম রুমকী হাত দিয়ে পাখিকে দেখালো।আসলেইতো আমি চোখে কম দেখতে শুরু করেছি।পাখি স্টেজের এককোণে বসে আছে আর আমি খুজছি এদিক ওদিক। পরে আর পাখির সাথে কথা হয়নি।ও আর রুমকীর সাথে কথা বলতে আসেনি হয়তো সময় পাইনি।আমি একবার ভেবেছিলাম ওর থেকে ফোন নম্বরটা চাই কিন্তু পরে ভাবলাম দুদিনের দেখাতে ফোন নম্বর চাইলে খারাপ ভাববে তাই চাইনি।
সেদিনের পর পাখির সাথে আর দেখা হয়নি।পাখির চিন্তা মাথা থেকে ফেলতে পারছিনা।সময়ের অভাবে রুমকীর স্কুলেও যাওয়া হচ্ছেনা।আচ্ছা ভাবিকে বলে দেখি নম্বর জোগার করে দিতে পারে কিনা।আমি রুম থেকে জোরে করে ভাবিকে ডাকলাম।ভাবি আমার ভালো একটা ফ্রেন্ড। কী হয়েছে?এত ডাকাডাকি কেনো?(ভাবি) ভাবি তোমার কাছে পাখির নম্বর আছে?(আমি) পাখি কে? রুমকীর স্কুলের ম্যাম। কী ব্যাপার হঠাৎ পাখির নম্বর?সামথিং সামথিং নাকি। ভাবি মজা করো নাতো।থাকলে দাও। দিতে পারি এক শর্তে! কী শর্ত? আমাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। শধুুমাএ একটা নম্বরের জন্য ৫০০ টাকা?যাও লাগবেনা নম্বর। ঠিক আছে সেটা তোমার ব্যাপার। একটু কম দিলে হয়না? যত কথা বাড়াবে তত রেট বাড়বে। কী আর করার ৫০০টাকা দিয়ে ভাবির কাছ থেকে নম্বরটা নিতে হলো।
নম্বর নিয়ে পাখিকে ফোন দিলাম।দুবার রিং হবার পর রিচিভ হলো।মনে হয় ফোনের কাছে ছিলোনা আসসালামুআলাইকুম।(পাখি) ওলাইকুমআসসালাম।কেমন আছেন?(আমি) জ্বি ভালো।আপনাকে ঠিক চিনলাম না? চেনাটা কী খুব প্রয়োজন? হ্যাঁ। কারণ আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা। কারো সাথে বলেন না তাতে কী হয়েছে আমার সাথে বলবেন। ফোন রাখেন আপনি। আমি রুমকীর আঙ্কেল। ও আপনি।তা ফোন দিলেন কী মনে করে?আর আমার নম্বরইবা পেলেন কোথায়? নম্বরটা ভাবির কাছ থেকে নিয়েছি।আর কারণ ছাড়া কী কেউ ফোন দিতে পারেনা? না পারেনা। হয়তোবা। আপনি হয়তো আমাকে পছন্দ করেন তাইনা? আপনি কিভাবে বুঝলেন? মেয়েরা ছেলেদের চোখ দেখেই বুঝতে পারে ছেলেটি কী চাই। তো আমি কী চাই বুঝেছেন? বুঝেছি বাট আমার পক্ষে প্রেম -ভালোবাসা এসব সম্ভব না। কেনো সম্ভব না জানতে পারি? কারণ আমি আমার বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবোনা।তারা যেখানে আমার বিয়ে দিবে আমি সেখানেই বিয়ে করবো। তাই বুঝি? হ্যা তাই। আচ্ছা রাখি তাহলে। শুনুন বলুন! আপনি চাইলে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারেন। ভেবে দেখবো।
ফোন রেখে দিলাম।ভাবছি কী করা যায়।ভাবিকে বলবো?ভাবি আমার ভালো এলজন ফ্রেন্ড।নিশ্চয় একটা পরামর্শ দিবে।আমার রুম থেকে বেড়িয়ে ভাবিদের রুম গেলাম।ভাবি রুমকীকে পড়াচ্ছে। ভাবি তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।(আমি) বলো।(ভাবি) আসলে কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা। এত ঢং না করে সরাসরি বলে ফেলো। ভাবি পাখিকে আমি পছন্দ করি কিন্তু ও আমার সাথে রিলেশন করবেনা।বলছে একবারে বিয়ে হলে ও রাজি। ও এই ব্যাপার।দাঁড়াও তোমার ভাইয়া আসুক সবকিছু বলবো। না না ভাইয়াকে বলার দরকার নাই।তুমি বরং আব্বুকে রাজি করাও। আমি পারবোনা বাবা।তোমার আব্বু যে মানুষ একবার এসব শুনলে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে। লাগবেনা তোমার সাহায্য আমি করবো সবকিছু। রাগ করে ভাবির রুম থেকে চলে আসলাম।ভেবেছিলাম ভাবি কোনো বুদ্ধি দিবে কিন্তু বুদ্ধিতো দিলোই না উল্টো মনটা খারাপ করে দিলো।
রাতের বেলা খাবার টেবিলে ভাবি বলে ওঠলো বাসায় আরেকজন মানুষ দরকার।(ভাবি) আরেকজন মানুষ কী হবে?(ভাইয়া) না মানে আমিতো রুমকীকে নিয়ে বিজি থাকি।আব্বু আম্মুকে সবসময় দেখার জন্য একজন মানুষ দরকার।একজন কাজের মানুষ রেখে দিলেইতো হয়। কাজের মানুষ রাখলে কতগুলো টাকা খরচ হবে।আমি বলছিলাম ফ্রিতে আব্বু আম্মুর জন্য একজন মানুষ ঠিক করতে। কী বলছো একটু বুঝিয়ে বলোতো? আমাদের বাড়িতে আরেকটা ছেলে আছে বিয়ের উপযুক্ত। তাকে বিয়ে দিলেইতো আরেকজন লোক বাড়বে। ও এই কথা।তো হুসাইন তোর কী পছন্দের কেউ আছে? ওর মতো ছেলেকে পছন্দ করবে কোন পাগলে, যে নিজেই ঠিকমত চলতে পারেনা আরেকজনকে সামলাবে কিভাবে।(আব্বু) আমার খাওয়া শেষ আমি ওঠলাম।(আমি) আমি ওঠে চলে আসলাম।এখানে আরেকটু বসে থাকলে লজ্জা পেতে হবে। রুমে এসে অফিসের কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে দরজায় ধাক্কাধাক্কির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।আজ শক্রবার ভেবেছিলাম অনেকক্ষণ ঘুমাবো কিন্তু হলোনা।বিছানা ছেড়ে দরজা খুলতেই রুমকী আমার কোলে চড়ে বসলো। কি ব্যাপার পিচ্চিটার কী আজ বিয়ে নাকি যার জন্য এত সুন্দর করে সেঁজেছে(আমি) আমার না, তোমার বিয়ে।(রুমকী) সেঁজেছো তুমি আর বিয়ে হবে আমার এটা কেমন কথা? রুমকী আমার গাল টেনে বললো আরে তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো।তুমিও তাড়াতারি রেডি হয়ে নাও। তোমাকে কে বললো আজ আমার জন্য মেয়ে দেখতে যাবে? আম্মু বলেছে। ও তাই বুঝি!তা মেয়ের বাড়ি কোথায়? আমি এতকিছু জানিনা।তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও। কিরে তুই এখনো রেডি হসনি?(আম্মু) আমি রেডি হয়ে কোথায় যাবো?(আমি) সেটা গেলেই দেখতে পাবি।রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি। আম্মু চলে গেলো। মামনি তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি।রুমকী আমার কোল থেকে নেমে চলে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।সবাই কোথায় যাচ্ছে জানিনা।
এখন আমরা সবাই একটা বাসার ড্রয়িংরুমে বসে আছি।আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে এই বাসায় পর থেকে।এখানে সবাই এসেছে আমার জন্য মেয়ে দেখতে।ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় কিন্তু আব্বুর মানসম্মানের কথা ভেবে সেটাও করতে পারছিনা।আমি পাখিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা।অনেকক্ষণ বসে থাকার পর অবশেষে মেয়েকে আনা হলো সামনে।লম্বা এক ঘোমটা দিয়ে আছে মেয়েটি।ভাবি মেয়েটির কাছে গিয়ে ঘোমটা তুললো।ঘোমটা তুললেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।একি দেখছি আমি।এযেনো আকাশের চাঁদ মাটিতে নেমে এসেছে।টানা টানা চোখ,চোখে কাজল,ঠোটে লাল লিপস্টিক, নীল শাড়ি।অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে।আমি চোখ নামাতে পারছিনা।যদি পরীদের সাথে এই মেয়ের তুলনা করি তাও কম হয়ে যাবে।মেয়েটি আর কেউ নয়,পাখি।তোমরা কী আলাদা কথা বলবে?(আব্বু) আমি না সুচক মাথা নাড়ালাম।কারণ আমিতো আগে থেকেই পাখিকে চিনি জানি তাই কথা বলার প্রয়োজন নাই।পাখিও না সুচক মাথা নাড়ালো। আম্মু পাখির হাতে আংটি পড়িয়ে দিলো।বিয়ের দিন ঠিক করা হলো সামনের শক্রবার।আমি আজ অনেক খুশি।আমার স্বপ্নের নায়িকাকে আমি পেতে চলেছি। এর পরের দিনগুলো খুব তাড়াতাড়ি কাটতে থাকলো।অফিস থেকে এসে রাতে কেনাকাটা করতে যাওয়া,পাখির সাথে ফোনে কথা বলা।
আমি রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।বন্ধুরা অনেকরকম পরামর্শ দিচ্ছে।আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছি।একটু আগে পাখিকে নিয়ে বাসায় এসেছি।আমাদের বিয়েটা ধুমধামের সাথেই হয়েছে।অবশেষে বন্ধুরা জোর করে আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দিলো। পাখি ঘোমটা দিয়ে খাটের মাঝে বসে আছে।আমার রুমটা ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাঁজানো হয়েছে।আমি এক দু পা করে খাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।খাটের কাছাকাছি যেতেই পাখি খাট থেকে নেমে এসে আমাকে সালাম করলো।আমি ওকে ওঠিয়ে খাটের উপর আবার বসিয়ে দিলাম।পাখিকে অনেক সুন্দর লাগছে।আজ থেকে আর আকাশের চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই।কারণ আমার সামনেই আরেকটা চাঁদ বসে আছে।হঠাৎ বাইরে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে?(পাখি) হ্যা।(আমি) চলুন বৃষ্টিতে ভিজবো। আমি পাখির কথা শুনে খুব অবাক হলাম।বলে কী এই মেয়ে,বাসর রাতে বৃষ্টিতে ভিজবে। মাথা ঠিক আছেতো? আমার মাথা ঠিকই আছে।চলুন। বাসা ভর্তি মানুষ।এই রাতে বৃষ্টিতে ভিজলে সবাই খারাপ ভাববে। আমি জানিনা কিছু।আপনি যাবেন কিনা তাই বলেন। যাবোনা। ওকে আমি একাই যাচ্ছি।
পাখির আমাকে রেখে একা একাই ছাদে চলে গেলো।এই মেয়ে নিশ্চিত বৃষ্টি পাগলী নয়তে বাসর রাতে কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে চায়। আমি আর কী করবো বসে থেকে তাই আমিও ছাদে গেলাম।পাখি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টির ফোটা এসে ওর মুখে পড়ছে।বেনারসি শাড়ি আর ভাড়ি গহনা মনে হয় ওর বৃষ্টিতে ভেজা ঠিকমত হতে দিচ্ছেনা।আমার দিকে চোখ পড়তেই বললো আপনিও আসুন। আমি ভিজবো না। কে শোনে কার কথা।পাখি দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে বৃষ্টির মধ্যে টেনে আনলো।আমি দাঁড়িয়ে আছি।পাখি হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা করছে।মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানি হাতে নিয়ে আমার দিকে ছুড়ে মারছে।বৃষ্টিতে ভিজলে মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় সেটা পাখিকে দেখে বুঝলাম আজ। বাজ পড়ার শব্দ শুনে পাখি দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে আমাকে। বাজ পড়ার শব্দে ভয় পেলে বৃষ্টি ভেজার কী দরকার শুনি?(আমি) জানিনা।(পাখি)
আবার বাজ পড়লো।এবার পাখি এমনভাবে আমাকে জরিয়ে ধরলো মনে হচ্ছে আমার সাথে মিসে যাবে।পাখি জরিয়ে ধরাতে আমারও খুব ভালো লাগছে।পাখিকে কাছে পেয়ে আমার মাথায় দুষ্টুমি চেপে বসলো। আমার চোখের একবার তাকাবেন?(আমি) পাখি আমার কথার উওর না দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো।আমি দুষ্টুমি করতে মোটেও দেরী করলাম না।পাখির ঠোটের খুব কাছাকাছি আমার ঠোট নিয়ে আসলাম।বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ওর ঠোট জোরা কাঁপাছে।আমার দুষ্টুমি পাখি ধরে ফেললো।ও নিজেকে ছাড়াতে যাবে তার আগেই ওর ঠোট দুটোর মাঝে আমি হারিয়ে গেলাম। ও বাঁধা দিতে গিয়েও দিলোনা।কারণ ওর সবকিছুতে আমার সম্পুর্ণ অধিকার আছে।
*সমাপ্ত*