পাগলী বউ

পাগলী বউ

শোন আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসাতে আসবা(মিতু) কেনো?আজ স্পেশাল দিন নাকি?(আমি) এত বেশি কথা বলবানা।যা বললাম তাই করবা। পারবনা। তা পারবে কি করে?সুন্দরী কলিগ থাকলে কি বউয়ের দরকার পড়ে? তা যা বলছো। ধ্যাত আজই চলে যাবো। কোথায়? বাপের বাড়ি হা হা হা তোমার হাসি পাচ্ছে আমার কথা শুনে? তাছাড়া কি?তুমি তোমার বাপের বাড়িতেই থাকো।তাহলে আবার যাবা কিভাবে! ধ্যাত এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝে গেছেন ইনি আমার মিসেস।আমার মিসেস এর নাম সুমাইয়া ইয়াসমিন মিতু।আর আমি রবি।

আমি একটা কোম্পানির এম ডি।বেতন বেশ ভালোই পাই।মিতু শুধু আমার বউ না আমার বাড়িওলার মেয়ে। আমার আর মিতুর পরিচয়টা অদ্ভুদভাবে।আমি যখন প্রথম চাকরি পাই।তখন বাসা খূজে বেড়াচ্ছিলাম।কিন্তু ব্যাচেলর থাকার কারনে বাসা পাচ্ছিলাম না। একদিন একটা বাসায় টুলেট দেখে গেলাম বাসায় যেতেই বাড়িওলার সাথে দেখা হয়ে গেলো আংকেল আমি বাসা ভাড়ার জন্য আসছিলাম..(আমি) কয়জন (আংকেল) জ্বি আংকেল? কে কে থাকবা? জ্বি আংকেল আমি একা মানে ব্যাচেলর? জ্বি আংকেল তাহলে দুঃখিত ঠিক আছে আংকেল আসি হুম হতাশ হয়ে ফিরে আসছিলাম।

তখনই পেছন থেকে মেয়ে কন্ঠ ডাক দিল।আমিও দাড়িয়ে গেলাম…মেয়েটা অপুরুপ সুন্দরী সেই সাথে মায়াবী। বাবা রবি হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড ওকে বাসাটা ভাড়া দাও(মেয়েটা) ওহ এটা আগে বললেই তো পারতো।(আংকেল) আচ্ছা তাহলে তুমি বাসাতে উঠতে পারো(আংকেল) জ্বি ধন্যবাদ আংকেল।তাহলে কবে উঠবো? তোমার ইচ্ছা থাকলে আজই উঠতে পারো আংকেল চলে গেলেন।আমিও চলে আসছিলাম জিনিসপত্র গুছিয়ে আনার জন্য।কিন্তু মেয়েটি আবার ডাক দিলো। এই যে মি. Selfish সাহেব দাড়াও জ্বি বলুন আপনি এই নাম কিভাবে জানলেন? জেনেছি একভাবে আমি মিতু। জ্বি আমি রবি। জানি।আচ্ছা বাসাতে উঠছেন কবে? আজ আচ্ছা তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে আসেন। জ্বি মিতু চলে গেলো।আমিও জিনিসপত্র নিতে মেসে আসলাম।একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা।ও আমাকে চিনে ক্যামনে।আগে কোনদিন দেখা হয়েছে বলে মনেহয়না।

বিকালে সব জিনিসপত্র নিয়ে ওদের বাসাতে হাজির হলাম।আমি যাওয়ার সাথে সাথে মিতু নিচে নেমে এলো। চলে এসেছেন? দেখতেই তো পাচ্ছেন আসুন আপনাকে রুম দেখিয়ে দিই হুম চলুন মিতু আমাকে রুম দেখিয়ে দিলো।রুম হচ্ছে দুইটা..আমি নিচ থেকে জিনিপত্র উপরে তুলালাম একটু রেষ্ট নিয়ে জিনিপত্র গোছাতে শুরু করলাম।তখনই আবার মিতু আমার রুমে আসলো।বুঝতেছিনা মেয়েটা আমার পিছে কেনো ঘুর ঘুর করছে? রুম গোছাচ্ছেন? না দেখছি আমি হেল্প করি? না থাক অত ভাব নেওয়ার দরকার নেই।বুঝতে পারছি হেল্প লাগবে না আসলে অত পেচানো লাগবেনা আচ্ছা দুজনে মিলে রুম দুইটা বেশ ভালোই সাজালাম।এদিকে সন্ধা হয়ে গেছে।প্রচুর ক্ষিদা লেগেছে।কিন্তু খাবো কি?উপায় না পেয়ে ছাদে গেলাম বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম তাকিয়ে দেখি মিতু। নিচে চলুন কেনো? খাবেন না? হুম কিন্তু খাবার পাবো কই? আমি এনেছি নিছে চলেন। আচ্ছা একদিনের এত কেয়ার করার কারনটা কি? কেয়ার কোথায়?হেল্প করছি সে যাইহোক কিন্তু একটা অচেনা মানুষকে হেল্প করছেন কেনো? হেল্প করতে চেনা অচেনা লাগেনা বেশি কথা না বলে নিচে আসেন।

জ্বি চলেন হুম চলেন নিচে এসে দুজনে মিলে খেলাম।রান্নাটা ভালো ছিলো তাই হিতাহিত জ্ঞান ভুলে একটু বেশিই খেলাম এরপর থেকে মিতুর কেয়ার দিন দিন বাড়তেই থাকে।এসব বিষয়ে মিতুর বাবা মিতুকে বাধা দিতেন না।আর খুব আবাক লাগত।একজন বাবা কিভাবে তার মেয়েকে একটা অচেনা ছেলের সাথে মিশতে দেয়? এভাবেই কেটে যায় তিনটা মাস।ওর সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটা গাড় হয়েছে।ফ্রি টাইমে ওর সাথে আড্ডা,ঘোরাফেরা,খাওয়া­ দাওয়া নিয়ে মেতে থাকতাম। মিতুর বাবার কাছেও বিশ্বাসের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম। হঠাৎ একদিন মিতুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।আমিও দেখতে গেলাম।অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলোনা।তিনি তার শেষ ইচ্ছাটা পুরন করতে বলেছিলেন আমাকে।তার শেষ ইচ্ছা ছিলো শোন বাবা আমি আর বেশিক্ষন পৃথিবীতে নেই..তুমি আমার শেষ ইচ্ছাটা পুরন করবে? জ্বি আংকেল বলেন তুমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে করবে? আমি চলে গেলে ওকে দেখার কেউ থাকবেনা তুমি ওকে দেখে রাখবা কথা দাও জ্বি আংকেল রাখবো।

এতটুকু বলেই আংকেল না ফেরার দেশে চলে গেছিলেন তারপর আংকেলের শেষকাজ করে মিতুকে বিয়ে করি তারপর জানতে পারি মিতু আমাকে আগে থেকে চিনতো।ফেসবুকের মাধ্যামে।তাই মিতু আমার বেশি কেয়ার করতো আর মিতু আমাকে অনেক ভালোবাসে যাক অনেকটা সময় দিয়ে ফেলেছি আপনাদের।এবার বাসায় যেতে হবে।কারন মিসেস সকালেই বলেছে তাড়াতাড়ি যেতে।কারনটা হচ্ছে আজ আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।আবশ্য আমি এটা জেনেও না জানার ভান করেছি মিতুকে সারপ্রাইজ দিবো বলে তাড়াতাড়ি একটা কাপড় কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম সোজা বাড়ি এসে কলিংবেল চাপ দিলাম চাপ দেওয়ার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।আমি আগে আসাতে একটু খুশিই হয়েছে।আমি ওকে তাড়াতাড়ি বললাম এই নাও এই শাড়িটা পড়ে তাড়াতাড়ি ছাদে চলে আসবা আর হ্যা তাড়াতাড়ি আসবা আরে শুনো আমি আর কিছু না শুনে ছাদে চলে আসলাম।ব্যাগ থেকে কেকটা আর মোমবাতিগুলো টেবিলে সাজালাম এবার আমার নীলপরী ছাদে এলো দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব আবাক হয়েছে।

আসেন ম্যাডাম কেকটা কাটেন যাহ এতো দেখি আবেগে কান্দা দিছে আরে আসো কেকটা কাটি..?দেরি হয়ে যাচ্ছেতো তোমার মনে আছে..? কেনো আমি কি দশটা বিয়ে করেছি যে আমাদের বিয়ের তারিখ ভুলে যাবো…এখন আসো কেকটা কাটি হু অতঃপর কেকটা কাটলাম দুজনে…আমি ওকে খায়িয়ে দিলাম…মিতু আমাকে খায়িয়ে দিয়ে কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরলো আরে আবার কাঁদে..কান্না থামাও এখন। খুব ভালোবাসি পাগলটাকে আমিও ভীষন ভালোবাসি পাগলিটাকে অতঃপর দুজনে ছাদে বসে চন্দ্রবিলাস করতে থাকলাম..এখন মনে হচ্ছে মিতুকে পেয়ে সবচেয়ে ভাগ্যবানদের একজন।

THE END

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত