এইতো মাস্টার্স শেষ করলাম ১ বছর হলো এখন বেসরকার একটা কোম্পানীতে চাকরি করি প্রেম ভালোবাসা এগুলার ধারে কাছেও যাইনি এতদিন পড়লেখা করেছি ঘুরেছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি মজা মাস্তি এগুলাই করেছি বিয়ে সাদির কথা মাথাই আসেনি। আমি বাবা মায়ের প্রথম সন্তান তাই আমার বউয়ের রান্না খাওয়ার সখ টাও বাবা মায়ের একটু বেশী। বুঝেনিতো বাড়ির বড় ছেলে হটাৎ মা বলল রেডি হয়ে নে মেয়ে দেখতে যাব আমি বললাম তোমরা যাও আমি যাবনা তোমাদের পছন্দ আমার পছন্দ।
মা:- না তোকেও যেতে হবে আমাদের সাথে। মায়ের জোরাজোরিতে রাজি হলাম। জীবনের প্রথম এই অবস্তার সম্মুখীন হলাম একটু নার্ভাস লাগতেছে। গেলাম মেয়ের বাড়িতে নাস্তা দিল খেলাম মেয়ের বাবা ছিলেন সামনে মনে মনে ভাবতে লাগলাম হবু শশুর যেহেতু সুন্দর তাই তার মেয়েও হইতো সুন্দর হবে। মেয়েটা কি রকম হবে এই ভেবে মনের ভিতর খুচ খুচ করতেছে। কিছুক্ষণ পর শুনলাম কে যেন সালাম দিল মুখটা তুলে দেখলাম মেয়েটা আসল আমার সামনেই বসল তার চোখের ভঙ্গিমাই বুঝতে পেরেছি মেয়েটা বেশ রোমান্টিক হবে মেয়েটার ঠোটের কোণাই একটা তিল আছে একটা কি সুন্দর করে মুছকি হাসি দিল না দিল খুস হ যায়ে ভাবতেই পারিনি আমার প্রথম দেখা মেয়ে এতটা সুন্দর হবে মেয়েটা একটু লাজুক ছিল সব মিলিয়ে খুব কিউট একটা মেয়ে। সত্যি কথা বলতেকি মেয়েটাকে এক দেখাই ভালই লাগল। মা মেয়েটাকে বলল মা তোমার নাম কি। আমার নাম সৌমি। opps নামটাও জোস আর ওর কন্ঠটাও অসাধারণ। মা বলল কোন ক্লাসে পড় মা??..
সৌমি :- অনার্স ২য় বর্ষ। বয়স ২০-২১ হবে হইতো। আমি কিন্তু একদম চুপ একটাও কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা। এই কথা বলে বাবা সৌমির বাবা থেকে বিদায় নিল। চলে আসলাম বাড়িতে। রাতে খাওয়ার সময় মা বলে মেয়েটাকে তোর কেমন লাগল আমি বললাম তোমরা যা ভাল বুঝ। (এমনিতেই আমি একটু লাজুক প্রকৃতির ছেলে বন্দুরা সব সময় বলে তুই বিয়ে করলে কেমনে কি করবি) তা ছাড়া মা বাবারও সৌমিকে ভালই লেগেছিল। এখন আমি বললেই তারা পাকা কথা বলবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম ভাবলাম বিয়ে যখন একটা করতেই হবে করে ফেলি।। সব ঠিকঠাক এখন শুধু ★কবুল বলা বাকি। ২ মাস পর বিয়ে ডেট ফাইনাল। অপেক্ষাই অপেক্ষাই পার হয়ে এই দুই মাস। কাল আমাদের বিয়ে।
কাল আমাদের বিয়ে বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে রোজ কথা হত আমাদের। আমি বুঝতে চেষ্টা করি সৌমির কিসে ভাল লাগে কিসে খারাপ লাগে। সেও খবর নেয় আমার কেয়ার করে। যতা রীতি বিয়ের সব কাজ কর্ম করা শেষ কাল বিয়ে আজ মেহেদী রাত আত্নীয় স্বজনরা আসল নাচ গান হাতে মেহেদী সব কিছুই হল রাত পোহালেই বিয়ে। গেলাম বউ আনতে খাওয়াদাওয়া পরে বিদায় দিল তারা বউ নিয়ে চলেও আসলাম। ফ্রেস হয়ে রাতে খাওয়ার পর শুতে গেলাম জীবনে প্রথম এই অবস্তার সম্মুখিন মনের ভিতর ডর ডর তো লাগবেই না। আমি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম খাটে বসালাম। সৌমির দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকলাম যত দেখতেছি তত বেশী যেন ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি আসলে ওর চেহারাটা অনেক বেশী মায়াবী ছিল। সৌমিকে বললাম চুপ কেন কিছু বলতেছেন না যে.. সৌমি চুপ। আজিব তো এটা কি সৌমি নাকি অন্য কেউ যে মোবাইলে এত্ত এত্ত কথা বলত সে আজ এত চুপ কেন আমি কি সৌমিকেই বিয়ে করেছি নাকি এটা অন্য কেউ এই মেয়ে দেখি মুখ টা তোল তো। আরে এটাতো সৌমি ঠিকই আছে কিন্তু কথা বলতেছেন না কেন আপনি ( এইসব কথা গুলো তাকে হাসানোর চেষ্টা মাত্র) আমার কথা গুলা বলা সার্থকও হল সৌমি মিষ্টি করে মুচকি হাসি দিল।
আমি :- এইবার হলেও একটা কথা বলেন প্লিজ।
সৌমি:- বলবনা
আমি :- কেন??
সৌমি :- আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তার পর সিদ্ধান্ত নিব কথা বলব কি বলবনা। আমি তো মহা টেনশনে পড়ে গেলাম জানিনা কি প্রশ্ন করে বসে।
আমি :- আচ্ছা ঠিক আছে বলেন…
সৌমি :- আপনি কি আমার সাথে আপনি করেই বলবেন??
আমি :- না আপনি করে বলব কেন… যাও তুমি করেই বললাম। এইবার বল তোমার প্রশ্ন কি..
সৌমি:- আপনার ফেসবুকে মেয়ে ফ্রেন্ড কতজন আছে?? আমিতো চিন্তাই পড়ে গেলাম কি বলব ফ্রেন্ড লিষ্টে মেয়েতো অনেক আছে কিন্ত কাউকে আমি চিনিনা আমি সেটা সৌমিকে কি করে বুঝাই। আমি আবার মিথ্যাটা তেমন বলতে পারি না মিথ্যা বলতে গেলে হাসি চলে আসে।
সৌমি :- কি ভাবছেন এত?? মিথ্যা বললে আমি কিন্তু পিটিয়ে একদম শেষ করে দিব বললাম আমি এখন কিন্তু আপনার বউ আমার আপনাকে মারা’র অধিকার আছে হুম। এইরে মরেছে বউ আমার কই কি।
আমি :- না না মিথ্যা বলব কেন আমি সত্যিই বলতেছি আমার ফেসবুকে কোন মেয়ে ফ্রেন্ড নাই কয়েকজন থাকতে পারে কিন্তু আমি কাউকে চিনিনা।
সৌমি:- যারা আছে কাল ঘুম থেকে উঠেই আনফ্রেন্ড করে দিবেন।
আমি:- যতা আজ্ঞা।
সৌমি :- এইবার আমার শর্ত শোনেন এইরে আবার শর্তও। পৃথিবীতে কি শুধু আমার বউ টাই বাসরঘরে এত প্রশ্ন আর শর্ত দিচ্ছে নাকি অন্য কাউকেও দেয়।
আমি:- আচ্ছা বলেন মহারাণী শোনি কি আপনার শর্ত।
সৌমি :- ১ম শর্ত প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতে হবে। নইলে বাড়িতে খাওয়া বন্ধ।
আমি :- ঠিক আছে আনব। আর কোন শর্ত আছে?
সৌমি:- আছে মানে আরো অনেক শর্ত আছে। হে আল্লাহ বাচাও জানিনা আর কি কি শর্ত দেয়। হে আল্লাহ বাচাও জানিনা আর কি কি শর্ত দেয়..
সৌমি:- এই যে শোনেন আমার ২য় শর্ত প্রত্যেক সপ্তাহের শুক্রবার আমাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতে হবে আর ফুচকা খাওয়াতে হবে।
আমি:- আচ্ছা দেখা যাক।
সৌমি :- দেখা যাক বললে হবে না এটা আমার দ্বিতীয় শর্ত এটা মানতেই হবে।
আমি :- আচ্ছা বাবা যাব।
সৌমি:- ৩য় শর্ত হাটার সময় বা গাড়িতে কোন মেয়ের দিকে ভুলেও থাকাতে পারবেন না যদি তাকাইছেন আর আমি সেটা দেখেছি তাহলে চোখ দুইটা গেলে দিব। হাইরে আল্লাহ এই আমি কাকে বিয়ে করলাম বিয়ে করলাম নাকি পুলিশের হাত কড়া পড়লাম কিছুইতো বুঝতে পারতেছিনা।
আমি:- আচ্ছা বাবা তাকাবনা হইছে।
সৌমি:- আচ্ছা আপনি আমাকে কি বলে ডাকবেন??
আমি:- কেন সৌমি বলেই ডাকব।
সৌমি:- না সৌমি বলে ডাকবেন না।
আমি :- তাহলে কি বলে ডাকব শোনি,,
সৌমি:- আপনি আমাকে বাবু বলে ডাকবেন। এইরে কি রোমান্টিক বউ আমার।
আমি:- কেন?? আমরা তো ছোট বাচ্চাদের বাবু বলে ডাকি তুমি তো ছোট না।।(এইটা বললাম শুধু সৌমিকে একটু রাগানোর জন্য দেখি আমার বউ টাকে রাগলে কেমন লাগে)
সৌমি:- তার মানে কি বলতেচাইছেন আমি বুড়ি? দেখতেছি এক ড্রোসে তো কাজ হইছে দেখি আরেকটু রাগাই।
আমি :- তো বুড়ি নও কি??
সৌমি:- আচ্ছা যান যান বুড়ির সাথে আর কথা বলতে হবে না। সত্যি সত্যি সৌমি অনেক রেগে গেছে আর ওর চেহেরা এমনি কি সুন্দর তার চাইতে রাগান্বিত চেহেরা দ্বিগুণ বেশী সুন্দর লাগতেছে।
আমি:- আমার বাবুটা আমার সাথে কথা না বললে কিভাবে চলবে।
সৌমি:- না না আমিতো বুড়ি আমার সাথে কাউকে কথা বলতে হবে না। দেখতেছি সৌমির এখনো রাগ কমেনি।
আমি :- আচ্ছা আর কোনদিন এইরকম বলবনা শুধু বাবু বলেই ডাকব এখন ঠিক আছে??
সৌমি:- না ঠিক নেই কান ধরে ২বার উঠবস করতে হবে তবেই সব কিছু ঠিক হবে। জীবনের প্রথম দেখতেছি বাসরঘরে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কান ধরে উটবস করতে বলতেছে।
আমি :- আচ্ছা বাবা আর কোন দিন হবে না এইবার মাপ করে দাও প্লিজ।
সৌমি :- ঠিক তো আর কোন দিন হবে না তো??
আমি:- না না আর কোন দিন হবে না। আচ্ছা একটা কথা বলব??
সৌমি:- হুম বলেন।
আমি:- তোমাকে রাগলে না বেশ সুন্দর লাগে।
সৌমি :- আবার!!
আমি:- আচ্ছা না না। হইছে তোমার আর কিছু বলার আছে??
সৌমি:- না। উফ বাচলাম কোন রকমে প্রশ্ন উত্তর পর্ব শেষ হল।
আমি :- এইবার ঘুমাই?
সৌমি:- হুম।
আমি :- তুমিও শুয়ে পড়।
সৌমি :- হুম। চোখের কোণাই ঘুম আসতেছে এই মূহুর্তে সৌমি আবার দিল চিল্লানি।
সৌমি :- হাইরে আল্লাহ আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি এখন করি প্রশ্ন টা??? আল্লাহ আমারে উঠাইয়া নেও আবার নাকি প্রশ্ন।
আমি :- আচ্ছা প্রশ্নটা কাল করলে হইনা।
সৌমি:- একটাইতো প্রশ্ন এখন বলে ফেলি।
আমি:- আচ্ছা বললে তাড়াতাড়ি বল।
সৌমি:- ফেইসবুকে রিলেশনশিপ স্টাটাস চেইঞ্জ করেছেন???.
আমি :- এইটা বলার জন্য আমাকে ঘুম থেকে উঠাই ফেললে??
সৌমি :- হুম। বলেননা করছেন??
আমি:- না করিনি।
সৌমি:- কেন করেননাই এখন ডাটা অন করে করে দেন।
আমি:- আচ্ছা বাবা করতেছি কিন্তু এর পর একটা কথাও বলতে পারবেনা সোজা ঘুমাই যাবা। ঠিক আছে??
সৌমি:- ঠিক আছে। অত:পর তার কথা রাজি হয়ে রিলেশনশিপ স্টাটাস চেইঞ্জ করে দিলাম।
আমি :- দেখ করে দিছি। এইবার একটু ঘুমাই।
সৌমি:- ঠিক আছে। কোন রকমে ঘুমাইলাম। সকাল হতে না হতেই আবার ডাক।
সৌমি:- এই উঠ উঠনা ফজরের নামাজ পড়ে নেন তারপর ঘুমাবেন।
আমি :- আরেকটু ঘুমাতে দাও প্লিজ। ঘুম থেকে উটেই পড়ে নিব।
সৌমি:- না সূর্য উঠে যাবে এখনি পড়ে নেন নইলে পানি আনতেছি।
আমি:- এই না না উঠতেছি উঠতেছি। আমার অনেক ভালো লাগল এইটা ভেবে যে ও নিজে নামাজ পড়তে উঠছে আবার আমাকেও তুলছে মেয়েটা সত্যি অনেক অনেক ভাল। আমি তো এইরকম একজন মেয়ে ছেয়েছিলাম যে সব দিক দিয়ে ভাল হবে। দুজনেই নামাজ পড়ে বসলাম।
সৌমি:- চা খাবেন?? নিয়ে আসব??
আমি :- চা বানাতে পার??
সৌমি:- অন্য কিছু তেমন করতে পারি না কিন্তু চা অনেক ভাল বানাতে পারি। ইম্প্রেস করার জিনিশ টা ভালভাবেই শিখছ।
আমি:- গুড তাহলে দেখি কেমন বানাতে পার। সৌমি চা নিয়ে আসল খেলাম দেখতেছি সত্যি অনেক ভাল বানাইতে পারে। তবুও একটু ক্ষেপিয়ে দেখি।
আমি:- এইরকম চা বানাইতে পার আমিতো ভাবলাম আরো ভাল হবে।
সৌমি:- চা ভাল হইনি না??
আমি:- একদম না। বেচারির মুখটা লাল হয়ে গেছে হইত মনে মনে ভাবতেছে বর কে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াইলাম সেটাও ভাল করে বানাতে পারলাম না।
সৌমি:- আচ্ছা পরেরবার মায়ের কাছ থেকে ভাল করে শিখে নিব।
আমি:- না শিখতে হবেনা।
সৌমি:- কেন? ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম কারণ তুমি অনেক ভাল চা বানাতে পার।
সৌমি:- তার মানে আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন আমার বানানো চা ভালো হয়েছে??
আমি:- হুম অনেক। এখন ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বটা সে জয় করে পেলেছে এমন খুশি।
সৌমি:- দেত আমি অনেক নার্ভাস হয়ে গেছিলাম। আর কি ঘুম কথা বলতে বলতেই অনেক বেলা হয়ে গেল। মা বাবার সাথে সকালে নাস্তা করতে বসলাম মাকে বললাম। জানো মা আজকে আমি ফজরের নামাজ পড়ছি তোমার বৌমা আমাকে পানি মারার ভয় দেখিয়ে উঠাই পেলছে। এই কথা শুনে মা বাবা তো মহা খুশি। কেন খুশি জানেন?? এইযে আমাকে জব্দ করার মানুষ এসে গেছে বলে।
মা:- খুব ভাল কাজ করেছ মা প্রতিদিন ওকে ফজরের নামাজ পড়াইবা সকাল সকাল উঠিয়ে দিবা। হঠাৎ সৌমি বলে উঠল মা বাবা আপনারা দুজনেই আমাকে তুমি করে নই তুই করে বলবেন।
বাবা:- আচ্ছা ঠিক আছে তুই করেই বলব। এই চিত্র দেখে মনে হল বিয়েটা এখন কেন করলাম বিয়েটা আরো অনেক আগে করার দরকার ছিল।
মা:- এই শোন সৌমিকে নিয়ে একবার ওর বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আই মেয়েটার মন খারাপ করবে। আমার তো মনে হইনা ওর মন খারাপ করবে এখানেতো মহা খুশিতে আছে মনে হচ্ছে।
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পর দেখি সৌমি বোরকা টোরকা পড়ে রেডি আমাকে বলল রেডি হয়ে নেন। আমিও রেডি হয়ে নিলাম। রাস্তাই বের হতেই সৌমি বলল…
সৌম :- আমরা রিক্সাই করে যাব। এত রোমান্টিক চিন্তা তার মাথায় আসে কোথা থেকে।
আমি :- মানে?? তোমার কি ধারনা আছে এখান থেকে রিক্সাই করে যেতে কতক্ষন লাগবে আর রিক্সাতো যাবে বলে মনে হয়না এতদূর।
সৌমি:- যাবে যাবে আপনি ডাকেন না।
আমি:- একটা রিক্সাই ডাকব যদি সেটা না যায় আর ডাকবনা ঠিক আছে??
সৌমি :- আচ্ছা ঠিক আছে। অত:পর সেই রিক্সাওয়ালাও গুটিবাজি করল আমার সাথে সেও যেতে রাজি হয়ে গেল শর্ত মতে আমার যেতেই হল রিক্সাই করে।
আমি:- নাও তোমার আসা পূর্ন হল উঠ।
সৌমি:- কিছু বলেননা কেন।
আমি:- কি বলব।
সৌমি:- রিক্সাই যেতে কেমন লাগতেছে?? ভালইতো লাহতেছে কিন্তু সেটা ওকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
আমি:- একদম বাজে।
সৌমি:- ভাল না লাগলে বলুন নেমে যায় অন্য গাড়ি করে চলে যাব।
আমি:- এতদূর আসার পর মনে হল কথা টা।
সৌমি:- দ্যাত আপনি একদম আনরোমান্টিক আমি ভাবলাম আপনার ভাল লাগবে আমাকে আরো ট্যানক্স জানাবেন।
আমি :- কি আমি আনরোমান্টিক?? ওয়েট। এই বলে তার গালে একটা আলতো করে চুমু খেলাম।
সৌমি:- অসভ্য।
আমি :- কি আমি অসভ্য?? একটু রাগার ভাব নিয়ে ওর থেকে ডিসটেন্স হয়ে বসার চেষ্টা করলাম।
সৌমি :- কি করছেন কি পড়ে যাবেন তো।
আমি:- পড়ে গেলে তো ভাল এই অসভ্য ছেলের সাথে তোমাকে যেতে হবেনা। এইটা বলার সথে সাথেই ও আমার মাথা টা ঠেনে ওম্মম্মমাহ। রাগ কমানোর ব্যাপারে মেয়েরা অনেক এক্সপার্ট।
আমি:- এই কেউ দেখবে।
সৌমি :-দেখুক আমি আমার বরের গালে চুমু খাচ্ছি। এই রকম একটা বউ পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
আমি:- তুমি না সত্যি পাগলি।
সৌমি:- হুম আমি শুধু আপনার পাগলি।
আমি:- আমার এখন কোন গান টা গাইতে মন চাইছে জান??
সৌমি:- কোন গানটা??
আমি:- এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলত। কিন্তু কি আর করার এসেইতো পড়েছি।
সৌমি:- তার মানে আপনার রিক্সা করে আসাটা ভালই লাগল??
আমি:- অনেক।
সৌমি:- তাহলে থ্যাংকস দেন।
আমি:- হুম থ্যাংকস ফর এভ্রিতিং। আসলাম শশুর বাড়িতে বসলাম সবার সাথে কথাতথা বললাম এর পর থেকে শুরু হল জামাই আদর জানেনিতো বাঙালির জামাই আদর ঘরে ঢুকার পর থেকে আসার আগ পর্যন্ত গলাই গলাই খাওয়াইছে থেকে যাওয়ার জন্য আবদার করছিল সম্ভব নয় বলে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। রাস্তাই বেরিয়ে সৌমিকে বললাম এই বার কি রিক্সাই করে যাবে???
সৌমি:- না না সন্ধ্যা গয়ে গেছে অন্য গাড়ি দেখ। একটা সি এন জি নিয়ে চলে আসলাম। রাতে খাওয়ার পর শুতে গেলাম সৌমিকে বললাম কাল ঘুমাতে দাওনি আজ একটু ঘুমাতে দাও আর কাল শুক্রবার তোমার সাথে কথা অনুযায়ী তোমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু কাল যেতে পারবনা sorry বন্ধুদের সাথে বিয়ের পর দেখা হয়নি কাল সবাই মিলে একটু আড্ডা দিব তোমাকে পরের শুক্রবার থেকে নিয়ে যাব ঠিক আছে বাবু???
সৌমি:- আচ্ছা ঠিক আছে পরের সপ্তাহ থেকে যেন মিস না হয়।
আমি:- ওকে লক্ষি পাগলি আমার। গুডনাইট
সৌমি;- গুড নাইট নামাজ পড়তে ডেকে দিব।
আমি:- ওকে। সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুম। ১০ টার দিকে উঠে ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম আড্ডা দিতে ছোটবেলা থেকেই আড্ডা দিতে ঘুরাঘুরি করতে ভালবাসতাম বিয়ে করেছি বলে এই অব্যাশটা পাল্টে যাবে এটা কখনো হতে পারেনা। দেখা হল বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘুরাঘুরি আর কয়েকটা সিগারেটের টান। ১ টার দিকে ফিরে আসলাম বাসাই। বাসাই ঢুকেই দেখতে পেলাম সৌমিকে সৌমির কানে কানে বললাম এতক্ষণ তোমাকে খুব মিস করছি। অদ্ভুত যে মেয়েটা এত্ত এত্ত রোমান্টিক কথা বলে সে এইরকম কথা শোনে চলে গেল কেন??? দেখলাম সৌমি কেন জানি রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে বললাম কি হইছে তুমি এইভাবে চলে আসলা যে। যে মেয়েটাকে সারাক্ষন হাসি মুখে দেখেছি সে মেয়েটার চেহারা অন্ধকার করে রেখেছে।
আমি:- কি ব্যাপার কথা বলতেছ না কেন..?? কেউ কি কিছু বলছে??
সৌমি:- না কেউ কিছু বলেনাই। একটা সত্য কথা বলবেন..?
আমি:- কি বল আর মিথ্যা কথাই বা বলব কেন।
সৌমি:- আপনি সিগারেট খেয়েছেন..??? অহ শিট চকলেট গালে দিতে ভুলে গেছি এখন কি জবাব দিব মিথ্যা বলারতো উপাই নেই।
আমি:- হুম কয়েকটান দিয়েছি। এই রকম বলতেয় ও আমার হাত টা ধরে ওর মাথাই নিয়ে যায়।
সৌমি:- আমার মাথা ছোঁয়ে শপত করুন আপনি আর কোন দিন সিগারেট খাবেন না।
আমি:- আচ্ছা তোমার মাথা ছোঁয়ে শপথ করলাম আর কোন দিন খাবনা। আচ্ছা তুমি আমাকে ভালবাস
সৌমি:- অনেক বেশী ভালবাসি আপনাকে আর এটাই ছিল আমার সারাজীবনের বাসনা।
আমি:- কেমন??
সৌমি:- আমি আল্লাহর কাছে সব সময় প্রার্থনা করতাম হে আল্লাহ আমাকে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দাও যেন আমি আমার সব কিছু আমার স্বামীর জন্য হেফাজত রাখতে পারি। এই কথা শুনেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম আমার ভাগ্যে এই রকম একটা বউ রাখার জন্য। কারো সথে প্রেম করে নাই কোন কিছু করেনাই এইরকম মেয়েও আছে সত্যি আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।
আমি:- আচ্ছা এত ভাল মেয়ে এখনো আছে পৃথিবীতে..??
সৌমি :- কেন আমাকে কি মেয়ে বলে মনে হয় না। সব মেয়েরা খারাপ তা কিন্তু নই আবার সব মেয়ে ভাল তাও কিন্তু নয় ভাল খারাপ মিলিয়েই তো এই পৃথিবী। একজন খারাপ কাজ করবে আর বদনাম টা সবার উপর চাপিয়ে দেওয়া এইটা কিন্তু ঠিক না।
আমি:- আমার রোমান্টিক বউটা দেখতেছি অনেক কিছু জানে। এত্ত কথা শিখলা কোথায় থেকে??
সৌমি:- এ গুলা শিখতে হয়না।
আমি:- আচ্ছা বুঝলাম। কোন রকমে ম্যনেজ করলাম।
সৌমি :- আচ্ছা তুমি বস আমি গোসল করে আসি তারপর একসাথে ভাত খাব।
আমি:- এই এই দাড়াও আমিও যাব তোমার সাথে।
সৌমি:- কোথায়??
আমি:- কেন গোসল করতে। একসাথে স্বামী স্ত্রী গোসল করলে নাকি আজিবন তারা একসাথে থাকে। (একটু রোমান্টিক হয়ে গেলাম আরকি)
সৌমি:- মাইর ছিনেন মাইর খাবেন বলে দিলাম।ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম দেখি এইবার মার
সৌমি:- আহ কি রোমান্টিক রে আপনি যাই বলেন এই রোমান্টিকতা কিন্তু আমার থেকে শিখছেন।
আমি:- হুম আমি আপনার থেকেই শিখেছি মেডাম আপনিইই তো আমার রোমান্টিক গুরু।
সৌমি:- আচ্ছা হইছে এইবার ছাড়েন আর রোমান্টিকতা করতে হবে না। এইবার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি:- আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি আসিও। সে গোসল করতে চলে গেল আমি বসে ভাবতে লাগলাম সৌমি সত্যিকি এত ভাল আসলে আমার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটা এতটা ভাল ভাবতে ভাবতে দেখলাম সৌমির মোবাইলে ফোন আসছে ওর মোবাইলে কল আসছে আমি কেন রিসিভ করব এই ভেবে রিসিভ করলাম না। দেখি আবার ফোন আসছে এইবার রিসিব করে বলে দেই সৌমি গোসল করতেছে।
আমি:- হ্যালো কে। আমি সৌমির বান্ধবি রিয়া বলতেছি।সৌমি কোথাই.? আর আপনি কে.? আমি সৌমির স্বামি। সৌমি এখন গোসল করতেছে ও আসলে বলে দিব আপনি কল করছেন এখন রাখি কেমন।
রিয়া :- এই না না আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
আমি:- জ্বী বলেন কি কথা..
রিয়া:-আপনিই তাহলে সে সৌভাগ্যবান।
আমি:- কেমন সৌভাগ্যবান.?
রিয়া:- আচ্ছা বলি শোনেন কেমন সৌভাগ্যবান আপনি আমি আর সৌমি ৯ম শ্রেণী থেকে একসাথে পড়ালেখা করেছি ও স্কুলে জীবনে সে থাকত একদম চুপ চাপ শান্ত প্রকৃতির একটা মেয়ে সত্য কথা বলতে কি আমাদের ব্যাচের প্রায় সব মেয়েরাই প্রেম ত্রেম এইগুলা নিয়েই ছিলাম কিন্তু সৌমি একদম ডিফারেন্ট। সেই অনার্স পর্যন্ত সৌমিকে এই বিষয়ে কিছু বলতামনা কিন্তু এখন তো অনার্সে এখন যদি লাইফটাকে ইনজয় না করে কবে করবে এই ভেবে সৌমিকে বললাম আচ্ছা তুই এইরকম কেন এতদিন হইতো ছোট ছিলি তাই প্রেম ত্রেম করসনাই কিন্তু এখন তো বড় হইছস এখন যদি লাইফটাকে ইনজয় না করস কবে করবি সৌমি বলল শোন রিয়া আমি তোর পায়ে ধরি আমার সাথে প্লিজ এই ব্যাপারে কোন কথা বলিসনা আমি এই গুলা আগেও পছন্দ করতাম না এখনো করিনা আর বিয়ের আগ পর্যন্ত করবও না আমার যত ভালবাসা সব আমার বরের জন্য তুলে রাকব। এই কথা শুনার পর তো কোন স্বামী তার স্ত্রীকে সব কিছু দিয়ে না ভালবেসে পারেনা।
আমি:- আচ্ছা বুঝলাম। এখন রাখি কেমন।
রিয়া :-ওকে। দেখলাম সৌমি গোসল করে চলে আসছে ওকে জটিয়ে ধরে বললাম আজ এই মুহুর্তে আমাকে একটা কথা দিতে হবে পারবে।
সৌমি:- কেন পারবনা বলেই দেখেন। আপনার সব কথা আমি রাখতে রাজি।
আমি:- যায় হয়ে যাক আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতো দুরের কথা চলে যাওয়ার কথা কখনো চিন্তাও করতে পারবে না।
সৌমি :- আমি আপনার এই বুকেই মাথা রেখে সারা জীবন টা কাঠিয়ে দিব।
আমি:- আরেকটা কথা দিতে হবে দিবে.?
সৌমি :- আর কি কথা হতে পারে.??
আমি:- সারাজীবন আমাকে তোমার রোমান্টিক কথা শোনাতে হবে। মানে আমার রোমান্টিক বউ হয়েই থাকতে হবে পারবে?.
সৌমি :- হুম আমি আপনার রোমান্টিক বউ আপনি আমার রোমান্টিক জামাই।
THE END